শুদ্র দ্য গংরিড: রাজপ্রাসাদে শুদ্র

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১৩:৪৪ রাত



এরপর কি হবে? যা ভেবে লিখতে বসি, লেখার শেষে দেখি পাল্টে গেছে ঘটনা। মন আসলে সত্যিই রহস্যময়। এভাবেই পঞ্চম অধ্যায়ের সমাপ্তি। পরের অধ্যায় দু'এক দিনের মধ্যে।

-মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

--------------------------------


শুদ্রকে যখন বনের প্রাণীরা ধরে নিয়ে যায়, তার বয়স ছিল চার বছর। এখন শুদ্রের বয়স পাঁচ। বনে-জঙ্গলে ঘুরে শুদ্র আগের চেয়ে অনেক বেশি চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে উঠেছে।

রাজার কথা মতো শুদ্রকে পরদিন রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসা হলো। রাজা শুদ্রকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুমি বনে ঘুরে বেড়াও কেন?’

শুদ্র বলে, ‘বনের সবাই আমার বন্ধু। ওদের সাথে খেলা করতে যাই।’

রাজা নির্দেশ দিলেন শুদ্রকে রাজ প্রাসাদে রাখা হোক এবং তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।

সন্না সোমান্দ্র কৃষককে ব্যাপারটা জানালো, ‘রাজা নির্দেশ দিয়েছেন, শুদ্রকে রাজপ্রাসাদে রেখে শিক্ষা-দীক্ষা দিতে। কয়েকদিন পর শুদ্রকে নিতে আসবো।’

কৃষকতো এ সংবাদে মহাখুশী। মুখে খুশির রেখা টেনে বলে, ‘জয় হোক রাজার!’

তবে যেদিন শুদ্রকে রাজপ্রাসাদে নিতে কৃষকের বাড়িতে লোক আসলো, সেদিন থেকে শুদ্র লাপাত্তা। শুদ্র সেই যে বনের ভিতর গেছে আর ফিরে আসে না। প্রতিদিন রাজপ্রাসাদের লোকজন আসে শুদ্রকে নিতে, তবে পায় না। কৃষক জানত, শুদ্র বনে লুকিয়ে আছে, তবে এই বিশাল বনে তাকে খুঁজে পাওয়া বেজায় ভার। তবু খুঁজতে থাকে কৃষক। একদিন শিয়ালের সাথে দেখা হয়ে গেল কৃষকের। কৃষক শিয়াল পন্ডিতকে সব খুঁজে বললো।

শিয়াল পন্ডিত মাথা নেড়ে বলে, সে প্রতিদিন শুদ্রকে বনের মাঝে খেলা করতে দেখে। শিয়াল পন্ডিত কৃষককে কথা দেয়, সে শুদ্রকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে পাঠাবে।

কৃষক শিয়ালের কথা বোঝে না কিন্তু ভাব ভঙ্গিতে বুঝে নেয়।

এদিকে শুদ্র বনের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ায়। বনের সবুজ পরিবেশে প্রাণ ভরে সে নিঃশ্বাস নেয়। হাতি তাকে অনেক পছন্দ করতো, তাই পিঠে করে সারা বন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতো। এছাড়া গাছে ওঠায় পটু হয়ে উঠলো শুদ্র। এগাছ থেকে ওগাছে লাফিয়ে চলাও রপ্ত করে ফেললো। বিভিন্ন গাছের ফল খেয়ে সে বাঁচতে লাগলো। আর রাতের বেলা গাছের ডালে ঘুমাতে লাগলো আকাশের চাঁদ তারা দেখতে দেখতে। প্রতিদিন দূর থেকে সে নিজের বাড়ি দেখে, কিন্তু যখনই ভাবে, তাকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হবে, সে আর বাড়িতে ফিরতে পারে না। কেননা রাজপ্রাসাদ থেকে বন বেশ দূরে।

শিয়াল পন্ডিতের সাথে শুদ্রের দেখা সেদিনই মিলল। শিয়াল পন্ডিত শুদ্রকে নানা কসরতে বুঝিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসলো।

পরদিন রাজার লোকেরা এসে শুদ্রকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেল। রাজপ্রাসাদের জীবন তার কাছে বিরক্ত লাগতে লাগলো।

রাজপ্রাসাদে দামি খাবার আছে কিন্তু, বনে ঘুরে বেড়ানোর সেই আনন্দ নেই। কয়েকদিন পরে তাকে পন্ডিত মশাই-এর কাছে দিয়ে আসা হলো। রাজ পন্ডিতের কাছে রাজা-মন্ত্রী-সেনাপতি-সভাষদদের সন্তানেরা পড়ে। রাজকুমারী ইলিও সেখানে পড়তো। এই ধনীদের পাঠশালায় সবাই তাকে বন্ধু হিসেবে নিতে পারলো না। জঙ্গলে ঘুরাঘুরি করতো বলে ওকে প্রায় সবাই জংলী বলে ডাকতো। ওর সাথে কেউ খেলা পর্যন্ত করতো না। এভাবে শুদ্রের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়লো। মাঝে মাঝে ও ভাবতো পালিয়ে যাবে, তবে কোন পথ খুঁজে পেত না। কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। এর ভিতর আবার শুদ্র তীব্র অসুস্থ হয়ে উঠলো। রাজ বদ্যি তার চিকিৎসা করতে লাগলো।

তার সহপাঠী কেউ তাকে দেখতে আসলো না। এভাবে একদিন গেল, দু’দিন গেল, তৃতীয় দিন দেখে সাদা পোশাক পরে কেউ একজন ভিতরে ঢুকল। শুদ্রতো ভালো করে তাকিয়ে দেখে সে আর কেউ নয়, স্বয়ং রাজকুমারী ইলি। রাজকুমারী ইলি শুদ্রের কপালে হাত দেয়।

শুদ্রকে ইলি বলে, ‘কেমন আছো এখন?’

শুদ্র মুখে হাসি নিয়ে বলে, ‘ভালো, আপনি এখানে মহাশয়া? আমি এটা ভাবতেই পারি নি, আপনি...’ অথচ গত কয়েকদিনে একটিবারও হাসে নি শুদ্র।

ইলি বলে, ‘এটা কিন্তু ঠিক নয়, তোমার আমাকে তুমি করে বলা উচিৎ। তুমি আমার সহপাঠী।’

শুদ্র শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে ইলির দিকে তাকিয়ে থাকে। ইলিও শুদ্রকে কিছুটা সময় দেয়। এই সময়ের ভিতর শুদ্র আর ইলির মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

এদিকে সন্না সোমান্দ্র শুদ্রের এই দুর্দশার কথা রাজা আজাকাকে জানায়। শুদ্রের বনের প্রাণীদের প্রতি আকর্ষণ রাজাকে উৎসাহী করে তোলে। রাজা আজাকা সন্না সোমান্দ্রকে নির্দেশ দেয়, শুদ্রকে তার ইচ্ছে মত বনে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে তাকে রাতে রাজ প্রাসাদে ফিরে আসতে হবে। সকালে পন্ডিতের কাছে শিক্ষা নেবার আগে সে যেতে পারবে না।

সন্না সোমান্দ্র এই খুশির সংবাদ নিয়ে শুদ্রের কাছে গেল।

সোমান্দ্র বলে, ‘বাছা। তোমার ভাগ্যতো খুলে গেলো। রাজা তোমাকে বনে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।’

শুদ্র এই সংবাদে শুনে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে, ‘সত্যি?’, সেসময় মনে হয় যেন মূহুর্তে শুদ্র সুস্থ হয়ে উঠলো।

সোমান্দ্র বলে, ‘সত্যি বাছা। তুমি কাল থেকেই বনে যেতে পারবে। তবে পন্ডিত মশাইয়ের কাছে যথযথভাবে পড়তে হবে। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি তুমি পড়াশুনায় অমনোযোগী।’

শুদ্র সোমান্দ্রকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘লিলু, দেখবা আমি ঠিক করে পড়বো এবার থেকে।’

সন্নারা সবসময় পোশাকের গলায় লাল রঙের কাপড় থাকে। তাই শুদ্র সোমান্দ্রকে লিলু বলেই ডাকে। কথাটা বলতে বলতে শুদ্রের চোখ জ্বল জ্বল করে ওঠে। পরের দিন সকালেই দেখা যায় শুদ্র সুস্থ হয়ে উঠেছে।

সেদিন পন্ডিত মশাইয়ের কাছ থেকে বেরিয়েই দেখে একজন অশ্বারোহী তাকে বনে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। তার পাশে দাঁড়ানো সন্না সোমান্দ্র তাকে হাত ইশারায় ডাকে। শুদ্র লিলুকে ধন্যবাদ দিয়ে অশ্বারোহী সিদু’র পিছনের উঠে বসে। সিদু রাজার একজন যুবক সৈনিক। সেদিন থেকে সিদুর কাজ শুদ্রকে বনে যাতায়াত করানো। এভাবেই শুরু হলো শুদ্রের রাজপ্রাসাদ আর বন্য জীবন। শুদ্র সারা দিন বনে ঘুরে বেড়াত। আর যখন সূর্য অস্ত যেত, সে চলে আসতো বনের ধারে, যেখানে সিদু অপেক্ষা করতো। ঘোড়ার পিঠে উঠে তারা আবার রাজপ্রাসাদে ফিরে আসতো।

এদিকে পন্ডিত মশাইয়ের কাছেও মন দিয়ে পড়তে লাগলো শুদ্র। রাজকুমারী ইলির সাথে কয়েকদিনে ভাব হয়ে গেল তার। ইলি তার কাছে বার বার বনের প্রাণীদের কথা জিজ্ঞাসা করতো। শুদ্র তাকে বলতো কিভাবে সে এগাছে ওগাছে লাফিয়ে বেড়ায়, কিভাবে হাতির পিঠে উঠে খেলা করে বেড়ায়, কিভাবে কুমিরকে নৌকা বানিয়ে নদীতে ঘুরে বেড়ায়। সে ইলিকে জানায়, সে এখন বনের রাতের প্রকৃতিকে খুব মিস করে।

রাজকুমারী ইলির সাথে ভাব হওয়ায়, সেনাপতি পুত্র কেদুকি সহ, মোটা ছেলে সালু, লম্বাটে দরাক ছাড়াও অনেকের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তারাও উৎসাহী হয়ে শুদ্রের কাছে বনের গল্প শুনতো। শুদ্রের সাহসের কথা ভেবে তারা অবাক হতো। অতি দ্রুত রাজপাঠশালায় শুদ্র জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। শুদ্রও হেসে খেলে দিন কাটাতে লাগলো। শুদ্রের বাবা মা তাকে মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়।

এভাবেই একসময় যখন শুদ্রের বয়স নয় হলো। সন্না সোমান্দ্র রাজার কাছে গিয়ে বলে, ‘রাজামশাই, আমি আগেই বলেছিলাম, শুদ্র কোন স্বাভাবিক ছেলে নয়। ও প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে শুরু করেছে, এছাড়া ফুলেদের সাথেও খেলা খেলা শুরু করেছে। প্রাণীদের কাছে শুনেছি ওর ইশারার শক্তি আস্তে আস্তে প্রবল হয়ে উঠছে। আমার মনে হয়, শুদ্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে।’

রাজা আজাকা বলে, ‘তুমি ঠিক বলেছ, ইদানিং শুনেছি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে শুদ্র রাতে প্রাসাদে ফিরছে না।’

সন্না সোমান্দ্র বলে, ‘শুধু তাই নয়, অশ্বারোহী সিদুর কাছ থেকে তলোয়ার চালনাও শিখতে শুরু করেছে। ওর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তে আসতেই হবে।’

রাজা আজাকা বলে, ‘তোমরা সন্নারা কি মনে করছো?’

সন্না সোমান্দ্র বলে, ‘একটাই পথ আছে। সমুদ্র দিয়ে উত্তরে যাওয়া। তারপর আজিলিও দীপপুঞ্জে।’

রাজা আজাকা বলে, ‘শুদ্র আমাদের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। তুমি সমুদ্রযাত্রার প্রস্তুতি নাও। সাথে সিদুকে নাও।’

সন্না সোমান্দ্র রাজার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সমুদ্রযাত্রার আয়োজন করতে লাগলো।

*******************************

বিষয়: সাহিত্য

১১৫৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277203
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৮
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো পড়ে। তবে কি শেষ হয়ে গেলো আজ?
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:১৪
221212
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : না, শেষ হতে এখনো অনেক দেরি। এটা মাত্র পঞ্চম অধ্যায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File