শুদ্র দ্য গংরিড: স্তব্ধ বনরাজ্য
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১০:৪২ রাত
এগিয়ে নিয়ে চলছি কাহিনী। কেমন হচ্ছে ফিকশন শিশুতোষ উপন্যাসটি জানা নেই। একেবারে খসড়াভাবে প্রকাশ করছি। ভুল-চুক ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
-লেখক, মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী
--------------------------------
সন্না সোমান্দ্র বাঘ রাজার কাছে ফিরে আসলো আবার।
বাঘ জানালো, ‘আমরা বনের প্রাণীরা অনুধাবন করছি, আসলে এভাবে চলতে পারে না। আমরা মানুষদের আর ক্ষতি করব না। আবার মানুষেরাও আমাদের ক্ষতি করবে না। আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’
সন্না সোমান্দ্র বলে, ‘বনের সবাই কেমন জানি হয়ে গেছে কয়েকদিন থেকে। মনে হচ্ছে শঙ্কায় আছে। আমি আমার জীবনে শুধু একবার বনের প্রাণীদের এই অবস্থায় দেখেছিলাম। যে বছর আপনার বাবা বনের রাজা হয়েছিলেন।’
এমন সময় শিয়াল পন্ডিত এসে হাজির হলো।
শিয়াল পণ্ডিত এসে বলে, ‘সে বছর কি হয়েছিল বলতো।’
সন্না সোমান্দ্র বলে, ‘সেটা বলা মুশকিল। আমিতো আর বন্য সমাজে থাকি না। তবে একটা কথা ভেসে বেড়াত বনে, তা হলো পুরাণের কথা। শুনেছিলাম, অনেক আগে বনের একটা পুরাণ ছিল। সেই পুরাণ খুব যত্ন করে রাখা হতো এই বনে। এক কুমিরের কাছে সেই পুরাণ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়। তবে হঠাৎ করে একদিন পুরাণটা উধাও হয়ে যায়।’
বাঘ বলে, ‘আমার বাবা অনেকবার চেষ্টা করেছে পুরাণটা ফিরিয়ে আনার জন্য। তবে প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছে। পুরাণ যদি বনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় তবে বন আরো সবুজ হয়ে উঠবে। বনের প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে যাবে।’
শিয়াল পন্ডিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘আমরা আর কোনদিনই হয়তো আমাদের পুরাণ ফিরে পাবো না। সোমান্দ্র, এবারের ব্যাপারটাও পুরাণকে ঘিরে। পুরাণের এক ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে বনের সবাই চিন্তিত।’
সন্না সোমান্দ্র, ‘ভবিষ্যৎবাণী? কি সেই ভবিষ্যতবাণী?’
শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘দুঃখিত সোমান্দ্র, আমাদের পুরাণেরা কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করলে পুরো বনকূলের ক্ষতি হবে। একটা ব্যাপার শুনে রাখো, রাজা আজাকার সাথে আমাদের চুক্তি করা যেমন জরুরী, তেমনি রাজা আজাকারও জরুরী। তা না হলে রাজা আজাকার রাজ্যের পতন হবে। শুধু এই কথাটা রাজা আজাকার কাছে পৌঁছে দাও।’
সন্না সোমান্দ্র রাজ্যে ফিরে যায়। রাজা আজাকাকে সব খুলে বলে।
রাজা আজাকা বলেন, ‘ভবিষ্যৎবাণী? বন পুরাণের? সত্যিই কি ওদের পুরাণ আছে?’
সোমান্দ্র বলে, ‘রাজামশাই, আমরা সন্নারা এই বিষয়টা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলাম এক বছর। বনের প্রাণীদের সাথে কথা বলে বন পুরাণের বাণী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মানুষদের কাছে ওরা কখনো বন পুরাণের বাণীর কথা বলে না। তবে আমরা যেটা বুঝতে পেরেছিলাম, বনের প্রাণীদের মতে এই পুরাণ আছে, আর তা চুরি হয়ে গেছে অনেক বছর আগে। বনে একটা কচ্ছপ শুধু সেই পুরাণের বাণী জানে।’
রাজা আজাকা বলেন, ‘পুরাণের কোন ভবিষ্যৎবাণী কি আজো সত্যি হয়েছে, সোমান্দ্র?’
সোমান্দ্র বলে, ‘পুরাণের কথা মিথ্যে হয় না। পুরাণের সব কথা সত্যি হয় আর বাস্তবতার সাথে মিলে যায়।’
রাজা আজাকা বলে, ‘সব বুঝলাম। কিন্তু এসবের সাথে আমার রাজ্য ধ্বংস হবার কি সম্পর্ক আছে? বঙ্গ পতন এখন কে করবে বলো? বঙ্গের যে সেনাবাহিনী, নৌবহর আর অশ্ববাহিনী আছে। তার কাছে কেউ টিকবে না। রাজা আজাকার রাজ্য পতন সহজ নয়। যাই হোক, এসব ওদের পুরাণের কথা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। বনের প্রাণীদের সাথে আমাদের চুক্তি করতেই হবে। আমার রাজ্যে একটা প্রজার জীবনের দাম অনেক বেশি। শুধুমাত্র বনের প্রাণীদের সাথে ঝামেলার জন্যই প্রতিদিন অনেক প্রজা মারা যাচ্ছে।’
সোমান্দ্র বলে, ‘তাহলে কি আমরা সভার আয়োজন করবো?’
রাজা আজাকা বলে, ‘রাজ্যের সবাইকে জানিয়ে দাও ব্যাপারটা। বনের প্রাণীদের সাথে যে চুক্তি হবে, সে চুক্তির শর্তাদি নিয়ে আমরা শীঘ্রই আলোচনা করবো।’
রাজার কথা মতো পুরো রাজ্যে এই চুক্তিসভার কথা জানিয়ে দেওয়া হলো। সবার উপস্থিতিতে এই চুক্তিসভা আয়োজন করা হবে। প্রজারা এই ব্যাপার নিয়ে নানা মত প্রকাশ করতে লাগলো। যারা বোদ্ধা, তারা রাজার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালো। আর কিছু লোক এটার কঠোর সমালোচনা করতে লাগলো।
রাজা আজাকা তার সভাষদদের নিয়ে আলোচোনায় বসলো চুক্তির শর্তাদি নিয়ে। অনেক চিন্তা-ভাবনা তর্কাতর্কির পর চুক্তির শর্তাদি নির্ধারণ করা হলো। এক কথায়, মনুষ্য রাজ্যে এটা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেল।
অন্যদিকে বন রাজ্য যেমন স্তব্ধ ছিল, তেমন স্তব্ধই থাকলো। শুধু শিয়াল পন্ডিত এদিক-ওদিক বিভিন্ন প্রাণীর কাছে গিয়ে তাদের মতামত নিতে লাগল চুক্তির শর্তাদি তৈরির জন্য। কখনো কুমিরের কাছে বুদ্ধি নিতে যায় শিয়াল, কখনো কচ্ছপের কাছে, কখনো হাতির কাছে।
প্রতিটা দিন শেষে শিয়াল পন্ডিত বাঘের কাছে এসে শর্তাদি শোনায়। বাঘ আর শিয়াল আলোচনা করে শর্তাদি ঠিক করে।
একদিন বাঘ বলে, ‘ভাগ্নে অনেক শর্ত তো শুনলাম। আমার জন্য কি বিধি নিষেধ দিচ্ছ।’
শিয়াল, বলে, ‘কি আর দেব মামা। বনের তৃণভোজীদের জন্য যেমন ত্রাস, তেমনি মানুষের জন্যও ত্রাস। যতই ক্ষুধা লাগুক না কেন, আর তুমি মানুষের গরু-ছাগল খেতে পারবে না। তোমাকে বনের প্রাণী ধরেই বেঁচে থাকতে হবে।’
বাঘ বলে, ‘রাজার প্রতি এ কেমন অত্যাচার ভাগ্নে? এমন শর্ত যোগ কর যাতে রাজা যা খুশী তাই করতে পারবে।’
শিয়াল বলে, ‘তাহলে রাজা আজাকা যদি শিকারীবাহিনী বানায়, তখনতো কিছু বলতে পারা যাবে না।’
বাঘ বলে, ‘সত্যি তর ঘটে বুদ্ধি আছে। তোর জন্য কি শর্ত তৈরি করলি?’
শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘এটাতো এখন বলা যাবে না, মামা। চুক্তিসভার দিনই সব জানতে পারবে।’
এসব চুক্তিসভা নিয়ে যখন বন রাজ্য আর মনুষ্য রাজ্য দুই অবস্থানে আছে, সে সময় শুদ্র বনের প্রাণীদের সাথে আরো ঘনিষ্ট হতে থাকে। প্রতিদিন সকালে উঠেই টই টই করে বনের ভিতর চলে যায় শুদ্র। বানরের সাথে খেলা করে, কুমিরের পিঠে উঠে নদীতে মাছ ধরে, খরগোশের সাথে লুকোচুরি খেলে ইত্যাদি। আর যখন সন্ধ্যা নামে, শিয়াল পন্ডিত শুদ্রকে তার বাড়ির কাছে রেখে আসে। মাঝে মাঝে বনে পথ হারিয়ে দু’একদিন বাড়িতে ফেরে না শুদ্র, হয়তো সেদিন কুমিরের পিঠে চিত হয়ে আকাশের চাঁদ-তারা দেখতে দেখতেই তার রাত কেটে যায়। কৃষকের কাছে তার ছেলের এই আচরণ কেমন বিদঘুটে মনে হয়। তবে প্রতিদিন এসব ব্যাপার খুব দ্রুত নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে যায়। আর শুদ্রকে বেঁধে রাখার কোন চিন্তা কৃষক করতো না, কারণ সে জানত, একমাত্র খরগোশের মহানুভবতাতেই শুদ্র আজ বেঁচে আছে।
এজন্য ধীরে ধীরে মানুষের চেয়ে বনের প্রাণীদের সাথে তার সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ট হতে থাকে। বনের প্রতিটা ব্যাঙ-ফড়িংও শুদ্রকে আপন ভাবতে শুরু করে।
***************
বিষয়: সাহিত্য
৮৬৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন