শুদ্র দ্য গংরিড: খরগোশছানা হত্যা

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১৭:২০ রাত



লেখাটি সম্পূর্ন কল্পিত। চরিত্র-ঘটনা সব কল্পিত। চেষ্টা করব একটি কল্পনার জগত সৃষ্টি করার। থিমটা অনেকদিন ধরে মাথায় ছিল। নামাতে শুরু করলাম আজ থেকে। শুরু হয়ে গেল আমার প্রথম শিশু-কিশোর উপন্যাস। ধারাবাহিকভাবে টুডেব্লগ সহ কিছু ব্লগে এই মাসেই প্রকাশিত হচ্ছে ফিকশন উপন্যাসটি।

-লেখক, মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

--------------------------------------------------------

সে অনেক দিন আগের কথা, সে সময় গঙ্গারিডি বা বঙ্গ ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। এই জঙ্গলে বাস করতো বাঘ, শিয়াল, হরিণ, খরগোশ, বানর, হাতি, বনবিড়াল ছাড়াও অনেক প্রাণী। জঙ্গলে বাঘ ছিল শিয়ালের মামা, আর শিয়াল ছিল বাঘের ভাগ্নে। বাঘ মামা আর শিয়াল পন্ডিতের ভিতর চলতো নানা ঘটনা, শিয়াল বাঘকে বোকা বানাতে পটু ছিল। বঙ্গের লোকজন শিয়াল পন্ডিত আর বাঘ মামার গল্প শুনতো আর মজা পেত।

সেসময় বঙ্গের রাজা ছিলেন আজাকা। বঙ্গ রাজা আজাকা ছিলেন খুব দয়ালু। প্রাণী হত্যা একদম পছন্দ করতেন না। এমনকি নিজেও শিকার করতেন না।

রাজার কিছু সাধক ছিল যারা দিন-রাত ধ্যান করতো। তাদের বলা হতো সন্না। সন্নারা ছিল জাদুবিদ্যায় পারদর্শী। এরা এতটা পারদর্শী ছিল যে নিজেরা শুন্যে ভেসে থাকতে পারতো, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে পারতো, একটা বড় পাথরখন্ডকে হাতের ইশারায় ছুঁড়ে দিতে পারতো, দু’চারটা গাছ হাতের কব্জির ইশারায় উপড়ে ফেলতে পারতো। সন্নারা অনেক ক্ষমতা থাকলেও তারা কখনো অন্যের ক্ষতি করতো না। তারা সবাইকে শান্তিতে থাকতে উপদেশ দিত। সন্নাদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, সন্নারা সকল প্রাণীদের কথা বুঝতে পারতো। সন্নাদের ভয়ে আশে পাশের সব রাজ্য বঙ্গ আক্রমণ করতে ভয় পেত। সে যাই হোক, সন্নাদের সহায়তায় রাজা আজাকা চিন্তা করলেন বন্য প্রাণীদের সাথে এক চুক্তি করবেন।

বনের রাজা বাঘের কাছে সে বার্তা নিয়ে প্রবীণ সন্না সোমান্দ্র জঙ্গলে গেলেন।

সন্না সোমান্দ্র জানায়, ‘বনের প্রাণীরা মানুষদের হত্যা করে, আবার মানুষেরা বনের প্রাণীদের হত্যা করে। তবে এভাবে আর চলতে পারে না। রাজা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সমাধানের জন্য সভা আয়োজন করতে।’

বাঘ বনের রাজা হলেও শিয়াল পন্ডিতের মতামত ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত দেয় না। তাই সন্নাকে বলল, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করে কিছু বলতে পারছি না। এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। মানুষেরা তাদের কথা রাখবে কিনা আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’

সোমান্দ্র পরে আসবে বলে চলে যায়।

বাঘ মামা আর শিয়াল পন্ডিতের ভিতর একটা ব্যাপার ছিল, যদিও শিয়াল পন্ডিত বাঘকে মাঝে মাঝে ঠকায়, তবু বনের ভবিষ্যতের ব্যাপারে বাঘ আর শিয়াল পন্ডিত খুব সিরিয়াস। তারা এ বিষয়ে আলোচনাও করে মাঝে মাঝে। কয়েকদিন আগেও একটা খরগোশের বাচ্চাকে এক কৃষক ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে সেই খরগোশের তো কান্নার শেষ নেই।

কাঁদতে কাঁদতে বাঘ মামার কাছে এসে খরগোশ বলে, ‘মহারাজা! এর একটা বিহিত করুন। আমার একটা বাচ্চাই শুধু বেঁচে ছিল এবার। আর ওই কৃষক আমার বাচ্চাকে খেয়ে ফেলার জন্য নিয়ে গেল।’

বাঘ তাকে সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না সেদিন। এর ফলে যেটা হলো, পরদিন বাঘ রাজার নির্দেশে সেই কৃষকের ছেলেকে ধরে আনা হলো ভুড়িভোজের জন্য। ওদিকে কৃষক রাজা আজাকার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। রাজা দ্রুত সন্নাদের ডেকে পাঠালো।

সন্না আহদ্রি এসে বলে, ‘বনের প্রাণীরা ইচ্ছে করে কোন মানুষের উপর আক্রমণ করে না। নিশ্চয় এই কৃষক এমন কিছু করেছে যার জন্য তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। যদি আমরা সেটা না জানতে পারি তাহলে তার ছেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।’

রাজা আজাকা কৃষককে বলল, ‘হে কৃষক, কি করেছ তুমি।’

কৃষক আরো কান্নায় ভেঙে পড়ে রাজার পা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ক্ষমা করুন রাজামশাই। আমি বড্ড ভুল করে ফেলেছি। আমি আপনার নির্দেশ অমান্য করে একটা খরগোশের বাচ্চাকে ধরে রান্না করে খেয়েছি।’

রাজা আজাকা হুঙ্কার ছেড়ে বলে, ‘চুপ! তোমার জানা নেই, ওই খরগোশের বাচ্চার একটা মা আছে। তুমি এখন আমার পায়ে পড়তে এসেছ কেন?’

কৃষক অনুনয় বিনয় করতে লাগলো। শেষে কৃষকের শোকে মন গলে গেল রাজার। রাজা সোমান্দ্রকে নির্দেশ দিলেন, ‘সোমান্দ্র, তুমি খোঁজ নাও বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারো কিনা।’

সোমান্দ্র তার টিয়া পাখি ইশোকে সব কিছু বুঝিয়ে জঙ্গলে পাঠিয়ে দিল। ইশো দ্রুত উড়ে যায় জঙ্গলে। জঙ্গলের মাঝে যেয়ে দেখে কৃষকের বাচ্চাকে নিয়ে এক মিটিং বসানো হয়েছে। বাচ্চাটা তখন বানরছানাদের সাথে খেলা করছে।

মিটিং-এ শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘তোমরা তাকিয়ে দেখো, এই ছোট বাচ্চাটার দিকে। কত সুন্দর! একে খেয়ে ফেলাটা অন্যায় হবে। খরগোশ, তুমি কৃষককে ক্ষমা করে দাও।’

হিংস্র শ্রেণীরা বলে, ‘ক্ষমা, কিসের ক্ষমা। কোন ক্ষমা হবে না। ওরা আমাদের সন্তানদের খাবে আর আমরা চুপ করে থাকব।’

এসব নানান হট্টগোলের মাঝে টিয়া ইশো এসে শিয়াল পন্ডিতের কানে কানে সব কথা খুলে বললো। শিয়াল পন্ডিত এবার বলে, ‘শোন, এই যে ইশো, আমাদের বনের প্রাণী। কিন্তু মানুষের সাথে বসবাস করে। ও একটা খবর নিয়ে এসেছে, যেটা শুনলে তোমরা আর বাচ্চাটাকে মারতে পারবে না।’

হাতি বাচ্চাটাকে শুঁড় দিয়ে তুলে আদর করতে থাকে আর বলে, ‘কত্ত সুন্দর আর নরম বাচ্চাটা। একে কি খাওয়া যায়!’

হিংস্র প্রাণীরা বলে, ‘যায়। আমাদের কাছে দাও দেখিয়ে দিচ্ছি।’

শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘সবাই একটু চুপ! টিয়ার কাছে রাজা আজাকা একটা বার্তা পাঠিয়েছে। তা হলো, আমরা যদি এই বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিই তাহলে রাজা আমাদের তিনটি গৃহপালিত বকরি দেবে। আর রাজার কাছে কৃষক যেয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা চেয়েছে। এছাড়া কৃষক ক্ষমা চাওয়ার জন্য সন্নাদের সাথে এখানে আসছে।’

বনের প্রাণীরা কানা ঘোষা শুরু করে দিল। হঠাত হিংস্র প্রাণীদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠলো, ‘না, এ বিচার আমরা মানবো না। আমরা বকরি নয়, ওই বাচ্চাকেই খেতে চাই।’

বনের রাজা বাঘ এবার শিয়ালের সাথে কানে কানে কথা বলে বলল, ‘দেখ! খরগোশের বাচ্চাকে কৃষক খেয়েছে এটা আমরা জানি। এজন্য আমরা মর্মাহত। তবে আমাদের ভাবতে হবে মানুষদের প্রতি যদি আমরা নিষ্ঠুর হই, ওরাও নিষ্ঠুর হবে। আর রাজা আজাকা আসার পরে আমরা বনে বেশ শান্তিতেই আছি। রাজা আজাকা বনের গাছও সীমিতভাবে কাটার নির্দেশ দিয়েছে। এজন্য রাজা আজাকার প্রস্তাব আমাদের গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। তবে আমাদের রাজ্যে রাজা আজাকার চেয়ে আমাদের একজন প্রজার কথার মূল্য অনেক বেশি। তাই আমি অনুরোধ করবো, খরগোশ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ঐ বাচ্চাতার জীবন এখন খরগোশের হাতে।’

খরগোশ কিছুটা চমকে উঠলো। এত বড় সিদ্ধান্ত সে নেবে কিভাবে। বানরের গুতোয় নিজের বোধশক্তি ফিরে পায় খরগোশ। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে, সে কি বলে শোনার অপেক্ষায়।

খরগোশের চোখে জল চলে এনে বলে, ‘আমার বাচ্চাটাও এতটুকু ছিল। ওরা ছিড়ে ছুটে রান্না করে খেয়েছে আমার বাচ্চাকে। ওরা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছে। কৃষকের এই বাচ্চাটাকেও চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া উচিৎ। তবু আমি এই কৃষকের বাচ্চাকে মারতে দিতে চাই না। যে কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম, সেটা হচ্ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কম। আর একে মারলেও আমি আমার বাচ্চাকে খুঁজে পাবো না।’

খরগোশের মহানুভবতা দেখে সবাই হাত তালি দেয়। হিংস্র প্রাণীরা খুশী না হতে পারলেও খরগোশের কথায় তাদের বিবেক কিছুটা জেগে ওঠে। তারাও হাততালি দিয়ে ওঠে।

এরি মধ্যে সন্নারা এসে হাজির হয়। তারা তিনিটি বকরি বাঘ রাজাকে বুঝিয়ে দেয়। আর কৃষক ভয়ে ভয়ে বাঘের কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় আর প্রতিজ্ঞা করে আর কোনদিন এমন ভুল আর করবে না।

খরগোশের মহানুভবতার কথা সন্নাদের কাছে রাজা শুনে অবাক হলো। এরপর থেকে রাজা আজাকা বনের প্রাণীদের সাথে চুক্তি করার কথা ভাবতে থাকে। আর সেই কৃষক এরপর থেকে আর কোনদিন বনের প্রাণীদের কষ্ট দেয় না, বরং সাহায্য করে। শিয়াল পন্ডিতকে তো একদিন সেই কৃষক দাওয়াত করে খেতেও দেয়। শুধু তাই নয়, কৃষকের বাড়ি বনের ধারে হওয়ায় তার বাচ্চা ছেলে শুদ্র প্রাণীদের সাথে খেলা করে। বিশেষ করে খরগোশদের সাথে তার সখ্যতা হয়। বনের সব প্রাণীরা শুদ্রকে চেনে, তাই শুদ্র বনের সব প্রাণীদের খুব কাছের একজন হয়ে ওঠে। শুদ্র বানরদের সাথে খেলা করে। আবার হাতি তাকে পিঠে করে বন ঘুরিয়ে দেখায়।

বিষয়: সাহিত্য

১০৯৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

275737
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:১৯
দিশারি লিখেছেন : ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।।
275825
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৫৯
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
275916
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : অবশেষে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করলো। খুব সুন্দর এবং Fantastic লিখেছেন জেরি আপু। অনেক ধন্যবাদ
২২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৯
221096
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ভাইয়া কে আপু বানালেন যে বড়। মোস্তাফিজুর রহমান জেরী তাঁর পুরো নাম
২২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪১
221098
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ভাইয়া কে আপু বানালেন যে বড়। মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী তাঁর পুরো নাম।
২২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪১
221099
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ভাইয়া কে আপু বানালেন যে বড়। মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী তাঁর পুরো নাম।
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:১৮
221144
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
275987
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৩
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সুন্দর লেগেছে। আরো লিখুন। চমতকার হয়েছে।ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File