গল্পঃ প্রেম স্বীকারোক্তি [সম্পূর্ণ]

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৪৯:২১ সন্ধ্যা



প্রেম! সে তো প্রেমের আকুতি! দুনিয়াতে কত রকম ফেরের প্রেম আছে তা আমার জানা নেই। তবে প্রতিটি প্রেমের ঘটনা জীবনের জন্য এক ইতিহাস। প্রেম নিয়ন্ত্রণ করে অনেক মানুষের জীবনী। তাই জীবন সঞ্জীবনী এই প্রেমকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে রাখার অধিকার আমার নেই।

আমি বসে আছি আমার চেয়ারে, আমার সামনে এক প্রেমিক। সে বলে চলছে তার প্রেমের ঘটনা। এভাবে কতজন যে তার আপনজনের কাছে নিজের প্রেমের কাহিনী বলে ভারমুক্ত হয়েছে তা আড়ালেই থেকে যায়। সেই কাহিনী আমার আপনার কাছে মেকি হোক কিংবা ভারযুক্ত হোক তা তার কাছে পর্বতসম।

১.

আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। থাক না! আজকে নয়, অন্য একদিন শুনবেন।

ও আমিই তো বলেছিলাম আপনাকে বলব। দাঁড়ান, একটু ভেবে নিই। লম্বা কাহিনী তো! আজ রাতে শেষ হবে কিনা বলতে পারছি না।

কি যেন বলছিলাম। ও আপনিও ভুলে গেছেন! দাঁড়ান আবার মনে করে নিই। মাথাটা ঠিক মতো কাজ করছে না। আপনাকে যা বলতে চেয়েছিলাম সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

সিগারেট ধরিয়ে।– সেই ছোট্টবেলা থেকে ভাই। আমার তখন বয়স কত আর হবে, নয় কি দশ। ক্লাস থ্রিতে পড়তাম, মেয়েটা পড়ত ক্লাস ফোরে। আমাদের পাশের বাসায় থাকত ওরা। ক্লাসে বড় বলে আমার চেয়ে বড় মনে করবেন না আবার। ও ছিল আমার চেয়ে একদিনের ছোট।

মেয়েটার নাম? পরে বলছি। আগে শুনুন। ওরা ছিল আমার দূর-সম্পর্কের আত্মীয়। ওর মা ছিল আমার একরকমের খালা।

সেই তখন থেকে শুরু। শুরু মানে, ভালো লাগা শুরু। ওকে আমার প্রচণ্ড ভালো লাগত। তবে তখনো বুঝতাম না প্রেম কি জিনিস। তবে বুঝতাম ওকে দেখলে আমার ভালো লাগে।

নামটা শুনে কি করবেন? থাক না!

ও আচ্ছা, লুকিয়ে বা কিই হবে, সে তো আমার কাছ থেকে অনেক দূরে।

এইতো নিন। সিগারেট খেতাম না একসময় বুঝলেন। এখন আর চাইলেও ছাড়তে পারি না। ও জনমেও খেতাম, এ জনমেও খায়।

শুনুন তাহলে, ওর নাম ছিল রোবা। খুব ছোট নাম। তবে কতটা মিষ্টি ভেবেছেন। আমার হৃদপিণ্ডের প্রতিটা স্পন্দন সব সময় ‘রোবা! রোবা!’ করে এখনও। আসুন, বুকে কান পেতে শুনুন।

শুনতে পাবেন জানতাম। যাই হোক। আমি ওকে দেখতাম, দেখতাম আর দেখতাম। ওর সাথে এক পুকুরে গোসল করতাম, এক সাথে স্কুলে যেতাম আর ফিরতাম। দিনগুলো যেন আমার চোখের সামনে ফ্রেম বাঁধানো ফটোর মতো চলে আসছে এখন। ইস! কত সুন্দর ছিল দিনগুলো।

আর বলবেন না। তারপর কি ও আমার কাছে থাকলো। সরকার হল আমার কাল। সরকারের কাজই শুধু ট্রান্সফার করানো। করবি কর, তাই বলে রোবাদের। রোবার মা আমাকে কত আদর করতো। আমাকে ডেকে সেমাই খাওয়াতো, মিষ্টি খাওয়াতো। আর আজ! আজতো সেই রোবার মা আমাকে দেখতেই পায় না। অবশ্য কিছুদিন আগে আমাকে সহ্যও করতে পারত না।

আর বলবেন না, রোবারা চলে গেল সেই সিলেটে। সিলেট কি কম দূরে! আর আমরা পড়ে রইলাম দিনাজপুর। সেই সব দিনগুলোর কথা ভাবলে আমার শীতল রোমগুলোও খাড়া হয়ে ওঠে।

জী, তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়তাম আমি আর রোমান একসাথে পড়তাম। এই রোমানটা হল গিয়ে আমার মামাতো ভাই। একি বয়সি, একসাথে স্কুল-কলেজে পড়েছি।

২.

ঐ যে তারপর থেকে অপেক্ষা। তাহার জন্য অপেক্ষা। অপেক্ষা কি জিনিস তা আমি বুঝতে শিখলাম। বুঝতে শিখলাম প্রেম কি জিনিস, ভালোবাসা কি জিনিস।

কিভাবে আবার! নাটক-সিনেমা দেখে। বিশেষ করে সিনেমার নায়ক-নায়িকা আমাকে বুঝতে শেখাল প্রেম কি জিনিস। আমি তখন একটা ঘোরের ভিতর পড়ে গেলাম। আমার মস্তিকের প্রতিটা কোষ যেন রোবার জন্য পাগল হয়ে উঠল।

হ্যাঁ, অপেক্ষার পালা তো শেষ হতো। ঈদে অথবা কোন অকেশনে যখন আমরা সবাই রাজশাহী আসতাম, তখন দেখা হত। রাজশাহী ছিল আমার নানীর বাড়ি। রোবাদের বাসাও একি তল্লাটে ছিল। আর আমার নানীর বাড়ি তো সবার আনাগোনা ছিল। রোবা তো দিন-রাত আমার নানীর বাড়িতেই পড়ে থাকত।

আমি অভাগা, অকেশনের এক মাস আগ থেকেই দিন গুনতাম। তখনকার প্রতি মিনিট-সেকেন্ড আমার কাছে ছিল মহাকালের সমান।

নানীর বাসায় আসলে তো কথাই নেই, রোবার সাথে গল্প-খেলা সব চলত। আর রোমানের সাথে এদিক-ওদিক ঘোরা-ঘুরি তো ছিলই। আমরা ঘুরতাম মাঠে-রাস্তায়-বাজারে। দেখতাম নানান প্রকার মানুষ। জেলে, চাষি থেকে শুরু করে চামারদের কাজ করা দেখতাম আমরা। আর দুপুরে ডুব দিতাম পুকুরে।

একবার কি হয়েছিল জানেন, এক সাপুড়ে এসে হাজির। ডুগডুগি বাজিয়ে বাজিয়ে আক্কাস সাপুড়ে চিৎকার করে বলে যাচ্ছে, ‘সাপ খেলা! সাপ খেলা!’

রোবাতো কেঁদে কেটে অস্থির। ও সাপ খেলা দেখবেই। ততক্ষণে সাপুড়ে চলে গেছে আমাদের তল্লাট ছাড়িয়ে দূরে। শেষে রোমানের মা মানে মামী যখন দেখলো রোবার কান্না থামছে না, তখন আমাদের সাপুড়েকে ডেকে আনতে বলল। আমি আর রোমান দৌড়ে পাশের পাড়ায় গিয়ে সাপুড়েকে খুঁজে নিয়ে আসলাম। সাপুড়ে তো আসলো, এসে যেই সাপ বের করল, রোবা ভয়ে কান্না জুড়ে দিল। এই ব্যাপারটা নিয়ে হাসাহাসির সীমা থাকল না। তবে আমি সেদিন হাসলাম না বরং মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল। রোবাকে নিয়ে রোমান ঠাট্টা করায় তো ওকে তেড়ে মারতে পর্যন্ত গেলাম।

৩.

আজকে আর নয়! অন্য একদিন বলি?

ঠিকই বলেছেন আপনি। আমি তখন পড়তাম ক্লাস নাইনে। রোমানকে আমি সব বলতাম। ও শুধু আমার মামাতো ভাই ছিল না। ছিল আমার বন্ধু। ও তো আমার সব কথা জানবেই। ও জেনে গেল এক ঈদে।

ওর কাজ কি ছিল শুনবেন? দুষ্টুর হাড্ডি রোমান রোবার ছোট ভাই সুমনকে বলত, আমি নাকি ওর দুলাভাই। এভাবেই একদিন রোবাও জেনে গেল ব্যাপারটা।

জী। তখন তো আমার মনের একদিকে বসন্তের বাতাস, অন্যদিকে বেদনা। একেক সময় একেক রকম অনুভূতি। কখনো ওকে ভেবে আমি হারিয়ে যেতাম স্বপ্নে। দিবাস্বপ্নই বলতে পারেন। শুনতাম, মানুষের দিবাস্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। কিন্তু আজ আমি জানি অনেক দিবাস্বপ্ন পূরণ হয় না। স্বপ্ন পূরণ হতে ভাগ্য লাগে। আসলে ভাগ্যই সব। স্রষ্টা কেন আমাকে ওর সাথে জুটি করে সৃষ্টি করে নি এজন্য আফসোস হয়।

ও! আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি ওকে বিয়ে করব। আমি ওর সাথে থাকব, পাশাপাশি হাটব। আসলে, ওকে ছাড়া আমি কিছু কল্পনা করতে পারতাম না, এখনো পারি না। আর ঐ যে বললাম বেদনার কথা, ওকে না দেখে থাকার বেদনা। দিনের পর দিন ওকে না দেখে থাকার বেদনা আমার মনকে দুঃখে-কষ্টে গ্রাস করে ফেলত।

সেবারের কথা। রাজ্যময় একাকার হয়ে গেল আমি রোবাকে পছন্দ করি। এসব কথা বাতাসের আগে আগে দৌড়ায়। ধামাচাপার চেষ্টা করলে আরো দ্রুত দৌড়ায়।

আমার রাজ্যের সকল পরিবার মণ্ডলীর মাঝে ছড়িয়ে গেল কথাটা।

নাহ! আমি ছড়ায় নি। কিভাবে কি হল জানি না। মনে হয় মিলি খালার জন্য ছড়িয়েছিল।

না, আব্বু কিছু বলে নি। তবে আমার সাথে কথা বলত না অনেকদিন। কিন্তু আম্মু আমাকে এক চড় দিল, আর নানান কথা বলল।

এই যেমন- এত ছোট বয়সে পাকামী। পড়াশুনা সব গোল্লায় যাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমিতো কাঁদতে কাঁদতে গুনগুন করলাম, খালি কি আমার দোষ?

সত্যি বলতে দোষ কি শুধু আমার! মিলি খালা যখন ছাদের উপর আমার নাম আর ওর নাম লিখে মাঝে একটা মাইনাস চিহ্ন দিয়েছিল, সেটা ও প্লাস করে দিয়েছিল।

ও মিলি খালা হল আমার ছোট খালা, বয়স আমাদের মত। মিলি খালার সাথে বড্ড ভাব ছিল রোবার। একদিন মিলি খালা আমাকে এসে বলে, ‘কিরে বড্ড পেকে গেছিস তাইনা। প্রেম করা শিখে গেছিস।’

খালার সাথে আমিও ফ্রি ভাবে কথা বলতাম। সব রকমের কথা বার্তা চলত খালার সাথে। খালাকে বললাম, ‘দ্যাখো না খালা, আমি তো ওকে পছন্দ করি। অনেক ভালোবাসি ওকে। ওকে বলি কিভাবে বলোতো?’

খালারতো একথা শুনে উৎসাহের শেষ নেই। খালা আমার কাছ থেকে সব শুনে রোবাকে বলে দেয়। মিলি খালা রোবাকে বলে, ‘দ্যাখ রোবা, ছেলেটা তো তোকে অনেক পছন্দ করে। জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তোকে। তুই ওর সাথে প্রেম করতে পারিস, ও খুব ভালো ছেলে।’

মেয়েদের চরিত্র বুঝাতে যেন রোবা চুপ ছিল সেদিন। এরপর একদিন মাইনাস প্লাসের সেই খেলা হল।

৪.

আগ থেকেই বলেছিলাম, আপনার এতো সময় হবে না। শুরু করার কি দরকার ছিল? অন্য একদিনও তো শুনতে পারতেন। যাই হোক, সব কিছু ছাড়া পড়ে থাকবে, তবু বলি। এক রাতেও শেষ হবার নয় এ কাহিনী।

সবে তো তিনঘন্টা হলো।

বাবাকে বলে বলে একটা মোবাইল কেনালাম।

কি যে বলেন, সে সময় মোবাইল মানে অনেক কিছু। তখন নতুন নতুন মোবাইল উঠেছে বাজারে।

আমি সুযোগ পেলে মোবাইল থেকে শুধু রোবাদের নাম্বারে মিস কল দিতাম।

না, কল দিতে সাহস হতো না। তখনতো প্রতি মিনিট সাত-আট টাকা করে কাটত। বাবা টের পেয়ে যাবে এই ভয়ে মিস কল দিতাম। একদিন, দু’দিন, তিনদিন। তারপরের দিন রোবা আমাকে ম্যাসেজ করল, ‘সামনে আমার পরীক্ষা। পাগলামি করিস না। আমি পড়া-শুনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত।’

আমিও রোবার ভালোর জন্য মিস কল বন্ধ করলাম। এদিকে মিলি খালার সাথে রোবার নিয়মিত কথা হতো। আর আমি হতভাগা মিলি খালাকে ফোন দিয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করতাম, ‘ও কেমন আছে? ও আসলে আমাকে পছন্দ করে কিনা?’

সদুত্তর আমি পেতাম না। তবে আমার মনে সেই মাইনাস প্লাসের আশা বাসা বেঁধে থাকল।

এরপর আর কি! আমি দশম শ্রেণীতে উঠলাম আর রোবা এস. এস. সিতে গোল্ডেন প্লাসে পাস করল। তারপর একদিন মিলি খালা আমাকে জানিয়ে দিল একটা কথা, যে কথা শুনে আমার হৃদপিণ্ডের স্পন্দন যেন থেমে গেল। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল কিছু সময়ের জন্য।

মিলি খালা আমাকে বলে, রোবা নাকি আমাকে পছন্দ করে না।

কি বলব ভাই! এই একটা বাক্য, যে বাক্যটা আমার জীবনকে দুঃসহ করে দিল। আমার জীবনের রসকে শুষে নিল। সেই মুহূর্তে মনে হতে লাগল, আমি যেন শেষ। অস্থির হয়ে রোমানকে সাথে নিয়ে এক টোঙ দোকানে গিয়ে পাঁচটা সিগারেট কিনলাম।

সেই থেকে শুরু। আমি আর সিগারেট ছাড়তে পারি নি, যদিও ছেড়েছি অনেক কিছু। সিগারেট নিয়ে চলে গেলাম নানীদের আমবাগানে। শুনেছিলাম সিগারেট খেলে নাকি মনের কষ্ট দূর হয়। কিন্তু কই, প্রথম টানে সিগারেট আমাকে দিল কাশি।

একে একে পাঁচটি সিগারেট শেষ করলাম। তবু বুকের জ্বালা সেদিন মিটল না।

৫.

এরপর একদিন। শীতকালের একদিন।

রোমানদের বাসায় আছি। রোবার বাবা-মা, রোবা সবাই রোমানদের বাসায়। তখনকার সময় আজকের মত গ্রাম-গঞ্জে কারেন্ট ছিল না।

সেদিন সন্ধ্যায় সবাই যখন গল্প করছে আমি থ’ মেরে রোবাকে দেখছি। একপলকে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কখন যে পাশের মোমবাতিটার কাছে চলে গেছি টের পাই নি।

হঠাৎ মামা বলে, ‘এই ছেলে, এই ছেলে।’

কথাটি বলতে বলতে মামা আমার জ্যাকেটটা খুলে দূরে ফেলে। আমি দেখলাম, আমার সদ্য কেনা জ্যাকেটটি মোমের আগুনে পুড়ছে।

এরপর মামা-মামীতো আমাকে বকে চলল। তখনও আমার মন কিংবা দৃষ্টি রোবার দিকে ছিল।

ও বুঝতো না তা নয়। ও সব বুঝতো।

আমার মনে হত, এসময় পরিবারে নিজেই একটা উটকো ঝামেলা হয়ে গিয়েছিলাম। কারো দিকে তাকালে ভাবতাম সে যেন আমাকে নিয়ে ক্যামন ক্যামনটি ভাবছে। এক কথায়, পরিবারের ভিতর আমি অপ্রস্তুত হয়ে রইলাম।

এভাবে চলল দিন, মাস, বছর। বছর ঘুরে আসলো আরেক বছর, ডিসেম্বর ঘুরে ডিসেম্বর। তবে আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা আসলো না; আমার হৃদয়ে শুধু ডুকরে ডুকরে কাঁদলো।

৬.

কই? কোথায় গেল ছেলেটি? চেয়ারটি মৃদু দুলছে। বাইরে তাকিয়ে দেখি এই নিঝুম রাতের প্রকৃতিতে বাতাসের টিকিটিও নেই। আমি কি ঘুমিয়েছিলাম? নাকি জেগে ছিলাম? আজ আমি বারান্দায় কেনই বা ছিলাম?

চেয়ারটি দুলছে আর দুলছে।

এইতো ক'দিন আগেই ছেলেটির মরদেহ নদীতে পাওয়া গেছে। কি হয়েছিল ওর? অবাক হলাম। আমার বুঝতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

পড়াশুনা শেষ করে ফ্যারমেসিটিকাল একটা কোম্পনীতে চাকরী করতো ছেলেটি। ও আমার অতি আপনজন ছিলাম, আমি ওর নই। কি ছিলাম নাই বা বললাম!

পরদিন সকালে তড়িঘড়ি করে রোবাকে খুঁজে বের করলাম। প্রতিদিনের মত ডা. রোবা তার কাজ করে চলছে। আমার ডানে কিংবা বামে নয়, রোবার অবস্থান ঠিক আমি যেখানে ঠিক সেখানে। আরেকজন ডাক্তারকে বিয়ে করেছে রোবা। ডাক্তারী চেম্বারে যাবার জন্য দুই ডাক্তারের তড়িঘড়ির শেষ নেই। দুই ডাক্তারের এই একটি সম্পর্ক যে একজনকে নিঃশেষ করে দিয়েছে তা হয়তো কেউ জানে না। জানলেও ওদিকে তাকানোর কোন পথ নেই কারো।

আমি জানতাম সম্পর্কের আগের দিনেও ছেলেটি কেঁদেছিল, ছেলেটি রোবাকে কেঁদে কেঁদে বলেছিল, 'প্লিজ তুমি একটুখানি ভালোবাসো আমায়! তুমি আমার ব্যাপারটা একটু চিন্তা করো! কত বছর তোমাকে আপন ভেবে এসেছি, আমি অন্যকে কিভাবে আপন ভাবি?'

জানি, পরদিন থেকে সে পাথর হয়েছিল। সেই পাথর ক'দিন পরেই জলে সিক্ত হলো, তাই বুঝি রাতের আঁধারে সে এখন ঘুরে বেড়ায়।

ও জগতে গিয়েও আগের চেয়েও পাগল হয়ে গেছে ছেলেটি। তা না হলে, আমাকে বলবে কেন ও? আমাকে বলবে কেন ও?

আজ বড় অপরাধী মনে হয় নিজেকে। নিজের বর্তমানে অন্যের বর্তমানকে কিছুই মনে করি নি আমি। আজ এই ক্ষণে ডুকরে ডুকরে দুদণ্ড কাঁদারও সময় নেই আমার।

দরজায় দাঁড়ানো আমার এসিসট্যান্টটি বলে উঠলো, 'নেক্সট!'

***সমাপ্ত***

বিষয়: সাহিত্য

১৫০৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258192
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ, ভালো লাগলো। Rose Rose
২৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:২৪
201971
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
258326
২৬ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:২৬
কাহাফ লিখেছেন : "কি আশায় বাধি খেলা ঘর-বেদনার বালি চড়ে।" অনুভূতি কে নাড়া দেয়ায়..অনেক ধন্যবাদ। Rose Rose Rose
২৬ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৯
202096
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই
258732
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
ইবনে হাসেম লিখেছেন :
পড়াশুনা শেষ করে ফ্যারমেসিটিকাল একটা কোম্পনীতে চাকরী করতো ছেলেটি। ও আমার অতি আপনজন ছিলাম, আমি ওর নই। কি ছিলাম নাই বা বললাম!

পরদিন সকালে তড়িঘড়ি করে রোবাকে খুঁজে বের করলাম। প্রতিদিনের মত ড. রোবা তার কাজ করে চলছে। আমার ডানে কিংবা বামে নয়, রোবা অবস্থান ঠিক আমি যেখানে ঠিক সেখানে। ডাক্তারী চেম্বারে যাবার জন্য দুই ডাক্তারের তড়িঘড়ির শেষ নেই। দুই ডাক্তারের এই একটি সম্পর্ক যে একজনকে নিঃশেষ করে দিয়েছে তা হয়তো কেউ জানে না। জানলেও ওদিকে তাকানোর কোন পথ নেই কারো।”

কথাগুলো কার এখানে ক্লিয়ার হলো না। গল্প লিখায় বেশ ভালো হাত আছে মনে হয়...

২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:০৬
202422
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : কথাগুলো রোবার, বলতে পারেন রোবার আত্মার বা বিবেকের। আসলে পুরো গল্পটাই আত্মা নির্ভর। নায়কের পাগলাটে আত্মা যাকে তার প্রেম স্বীকারোক্তি দেয়, সে আর কেউ না, সে হচ্ছে রোবা। অথবা গল্পটাকে ধরতে পারেন পুরোটা রোবার স্মৃতিচারণ বা আত্মদংশন।
265469
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৩
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : ভালো লাগলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File