গল্পঃ অবিনাশ রায়

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৩ জুন, ২০১৪, ০৫:৪২:৫১ বিকাল



বাজারে রায় বাবুর বিরাট ব্যবসা। ঢেউটিনের ব্যবসা, স্যালোমেশিনের ব্যবসা, আরো আছে চালের ব্যবসা। রায় বাবুর এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে শিক্ষিত এক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে রায় বাবু। বড় পক্ষকে কাড়ি কাড়ি পণ দিয়ে খুশি রেখেছে। তাই মেয়েকে নিয়ে ভাবনা নেই।

রায় বাবুর বউটাও অনেক লক্ষ্মী। পতির সেবা যত্নেতো কমতি নেই, তার উপর পূজা পার্বন পালনেও যত্নবান।

রায় বাবু ধর্মভীরু মানুষ। দিনে হাজার শতবার ভগবানকে ডাকেন মনে মনে। ভগবানের আশীর্বাদে ব্যবসা বাণিজ্যও সবসময় ভালো চলে রায় বাবুর। তবু রায় বাবুর মনে শান্তি নেই। তার অশান্তির হেতু তার নিজপুত্র অবিনাশ রায়।

দেখতে শুনতে অবিনাশের মত ছেলে দ্বিতীয়টি নেই এ তল্লাটে। তবে কর্ম ছাড়া মানুষের যে কোন মূল্য নেই। কর্মে শূণ্য অবিনাশ, যদিও কর্তায় শূণ্য হবার কথা ছিলো তার। রায় বাবু ছেলের পিছনে অঢেল টাকা ঢেলেছে যাতে ছেলের পড়াশুনা একটু হয়।

মা মায়াবতী অবিনাশকে বলতো, ‘বাবা, একটু পড়ো। তোর বাবার যে মান-সম্মান কিছুই থাকবে না। এ যুগে একটু আধটু পড়াশুনা না জানলে কি হয়!’

রায় বাবু পড়াশোনার কারণে ছেলেকে শাসনও করেছে। সপ্তাহে দু’চার ঘা বেতের বাড়ি অবিনাশের কাছে সাধারণ ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। তবে মায়াবতীর আদর কিংবা রায় বাবুর শাসন কিছুই অবিনাশের হ্যাট্রিক ম্যাট্রিকে ফেলকে ঠেকাতে পারলো না। রায় বাবু বুঝলেন ছেলেকে দিয়ে আর বিদ্যা সাধনা হবে না। তাই ব্যবসা পত্তর বুঝাতে নিজের পাশে পাশে রাখতে লাগলেন।

রায় বাবুর ক’দিনে এটা বুঝতেও বাকি থাকল না যে, অবিনাশের উপর ভরসা করলে তার ব্যবসা শিঁকেই উঠবে। মোটা চাল কিংবা চিকন চালের পার্থক্য তার কাছে দুর্বোধ্য, ঢেউটিনের প্রকারভেদ বোঝা তার কাছে আকাশ চুম্বি ব্যাপার। তাই রায় বাবু ইদানিং শুধু ভগবানকে বলেন, এমন অকর্মণ্য ছেলে যেন আর কারো না হয়। এতকিছুর পরও রায় বাবু তার ছেলেকে ভালোবাসতেন। শাসন করলেও ভালোবাসতেন। তবে শেষ পর্যন্ত এ ভালোবাসা পাবার অধিকারটুকুও হারাল অবিনাশ। ঘটনাটা যখন জানাজানি হলো, তখনি রায় বাবু বুঝলেন অবিনাশের এবার বিনাশ ঘটেছে।

জাত-কুল খেয়ে নিচু জাতের কাছে গেলেও একরকম হতো, এ যে জাতের বাইরে চলে গেছে। হ্যাঁ, অবিনাশ যে এক মুসুলমানের মেয়ের সাথে প্রেম করেছে।

এ কথা জানার পর রায় বাবু ছেলেকে ঘরে তুললে সমাজে যে তার মান-সম্মান কিছুই থাকবে না। মায়াবতী তো শুধু কেঁদেই বুক ভাসালো। তবে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার কথা রায় বাবুকে বলতে সাহস করলো না, শুধু ভগবানকেই বলতে লাগলো মনে মনে।

অবিনাশ সমাজ ছাড়া হল, তবু প্রেমকে ছাড়তে পারল না। তাই আর কোনদিন রায় বাবুর সাথে দেখা পর্যন্ত করলো না। প্রেম যে এমনই জিনিস!

সমাজ ছাড়া হয়ে অবিনাশ পড়ল বিপাকে। কোনমতে শহরের একটা মেচে উঠলো, সাথে সাথে একট টিউশনিও জোগাড় করে ফেলল। পড়াশুনাতেও মন দিল। এক সময় রায় বাবুর শাসনে অবিনাশ ম্যাট্রিকে পাশ পর্যন্ত করতে পারে নি, এবার সেই অবিনাশ ম্যাট্রিকে স্টার মার্ক পেয়ে পাশ করলো। হঠাৎ অবিনাশের এই জ্ঞান বিস্ফোরনের কথা রায় বাবুর কানেও গেল। রায় বাবু তো এবার উতলা হয়ে উঠলো। মায়াবতীকে বলল, ‘তুমি একটু দ্যাখ না, অবিনাশকে ফিরাতে পারো কিনা।’

মায়াবতী শত আশা নিয়ে নাড়ু সন্দেশ বেঁধে অবিনাশের মেচে যেয়ে হাজির। অবিনাশকে বলল, ‘বাবা, আমি তোমাকে নিতে এসেচি। চল বাবা, বাড়ি ফিরে চল।’

অবিনাশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুধু একটা কথায় বলল, ‘আমি যে মুসুলমান হয়েচি মা। তোমাদের পাতে খেলে যে জাত যাবে।’

মায়াবতী আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বাড়িতে ফিরলো। ‍তার আর কিছু বলার ছিল না। ছেলেকে ফিরিয়ে আনারও সাধ্যি ছিল না। রায় বাবুকে ঘটনা বলতেই রায় বাবু আর্তনাদে ফেটে পড়ল, ‘হতচ্ছাড়াটা আর কোন কাজ পায়নি, ওকে আমি ত্যাজ্যপুত্র করলাম।’

এই দিন, শুধুমাত্র এই দিন মায়বতী রায় বাবুর চোখে জল দেখতে পেল। জীবিত ছেলেকে হারানো যে মৃত ছেলেকে চিতায় তোলার চেয়েও অধিক কষ্টের!

ওদিকে রুলীর বাবাতো বেজায় খুশি। তার মেয়ের জন্য ধর্ম বিসর্জন দিয়ে কেউ মুসুলমান হতে পারে এ কথা তার কল্পনাতেও ছিল না। মেয়ে যে বড়ই ছোয়াবের কাজ করেছে। একে যে ঘরজামাই রাখতেও আপত্তি নেই।

একটি ঘটনা, এই একটি ঘটনা একপক্ষকে কাঁদালো, এক পক্ষকে হাসালো। তবে যে পক্ষ ঘটনাটা ঘটালো, সে কেন, কিসের জন্য কি করলো তা কেউ ভাবল না। ওই পক্ষকে নিয়ে কেউ ভাবেও না।

শুধু অবিনাশ আর রুলী জানত কেন কি হল, কেননা তারাই যে প্রেমপক্ষ। প্রেমের জন্য ধর্মকে বিসর্জন ঠিকই দিয়েছে অবিনাশ। অবিনাশ রায় হয়েছে আতিক হাসান। তবু আজো ভগবানকে সে স্রষ্টা মানে, আবার আল্লাহকেও। এতে ভগবান তার প্রতি রুষ্ট হলেও তার কিছু করার নেই, অথবা আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হলেও তার কিছু করার নেই।

*** সমাপ্ত ***

বিষয়: সাহিত্য

১৩৪৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

230116
০৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ
230131
০৩ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩১
মুজাহিদ হোসাইন সজিব লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে পিলাচ, পিলাচ।
230154
০৩ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১১
নোমান২৯ লিখেছেন :









সত্যি লেখকের নিজেরও ভাল লাগার মত ।
চম..........হয়েছে ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
230372
০৪ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪২
নূর আল আমিন লিখেছেন : ভাল্লাক্সে চালিয়ে যা

230753
০৫ জুন ২০১৪ রাত ০৩:৩৪
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ছোট গল্প ভালো লাগলো।
231027
০৫ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৯
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : শুধু অবিনাশ আর রুলী জানত কেন কি হল, কেননা তারাই যে প্রেমপক্ষ। প্রেমের জন্য ধর্মকে বিসর্জন ঠিকই দিয়েছে অবিনাশ। অবিনাশ রায় হয়েছে আতিক হাসান। তবু আজো ভগবানকে সে স্রষ্টা মানে, আবার আল্লাহকেও। এতে ভগবান তার প্রতি রুষ্ট হলেও তার কিছু করার নেই, অথবা আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হলেও তার কিছু করার নেই।
এটা যদি হয় আপনার উপসংহার। তাহলে বলবো বোন আমি একমত নই। অবশ্য আমার দ্বিমত করার অধিকার আছে? কি বলেণ।
২০ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:২৭
183297
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : অবশ্যই আপনার দ্বিমত পোষণের অধিকার আছে। ধন্যবাদ ভাই।
231121
০৫ জুন ২০১৪ রাত ০৯:০৮
আতিকুর রহমান ফরায়েজী লিখেছেন : অনেক সুন্দর গল্পটি। পড়ে ভালো লাগলো।
259270
২৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
মামুন লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। সাবলীল লেখা অনেক দূর পর্যন্ত পাঠককে টেনে নিয়ে যায়। অনেক ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা রইলো। Rose Rose
২৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:২৯
203084
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File