গল্পঃ ডিটেকটিভ শিয়াল পণ্ডিত
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০২ মে, ২০১৪, ১০:৫৩:১২ রাত
১.
শিয়াল পণ্ডিত এখন খুব ব্যস্ত থাকে সব সময়। কারণ সে এখন ডিটেকটিভ শিয়াল পণ্ডিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা মুরগীর রোস্ট খেয়ে চোখে চশমা লাগিয়ে শহরের দিকে বের হয় শিয়াল পণ্ডিত।
শহরে আছে শিয়াল পণ্ডিতের অফিস। লোকজন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কেসের কথা একে একে শিয়াল পণ্ডিতকে বলে। শিয়াল পণ্ডিত ইচ্ছে মত একটা কঠিন কেস বেছে নেয়।
শুনে কি কেউ অবাক হচ্ছো! না! শিয়াল পণ্ডিত গত দু বছরে হয়ে গেছে জগত বিখ্যাত ডিটেকটিভ। বিখ্যাত গোয়েন্দা শারলক হোমস পর্যন্ত শিয়াল পণ্ডিতের কাছে বুদ্ধি নিতে আসে। আসলে শারলক হোমসের যত নাম-ডাক তা শিয়াল পণ্ডিতেরই অবদান।
শিয়াল পণ্ডিত আছে মহাসুখে, কিন্তু ওদিকে বাঘ মামা কেমন আছে? জঙ্গলে শুরু হয়েছে দুর্ভিক্ষ। বাঘ মামাতো খাবার-দাবারের অভাবে চুপসে গেছে। শেষ-মেশ বাঘ মামাও একদিন শহরে গিয়ে একটা দোকানের সামনে গিয়ে গর্জন করতে লাগল, ‘হালুম! হালুম!’
দোকানদারতো এক ছুটে পালাল। তারপর বাঘ মামা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিল- ‘ডিটেকটিভ টাইগার হাউজ’।
দিন যায়! সপ্তাহ যায়! কেউ বাঘ মামার অফিসে আসে না। সবাই ভয়ে থাকে, বাঘ মামা যদি ঘাড় মটকে দেয়!
আর ওদিকে শিয়াল পণ্ডিত দু’দিনেই একটা কেস সমাধান করে ফেলে, সে যত জটিল কেসই হোক না কেন। দু’দিন পর পরই শিয়াল পণ্ডিতের অফিসে উপহারের বন্যা বয়ে যায়। তাই আধুনিক যুগের আধুনিক আধুনিক খাবার শিয়াল পণ্ডিতের ডেরায় পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে বনের পশু-পাখিদের খাবার বিলিয়ে দেয় দয়ালু শিয়াল পণ্ডিত।
২.
বাঘ মামাতো রেগে মেগে অস্থির। একটা কেসও এক সপ্তাহে হাতে পায় নি। তাই শিয়াল পণ্ডিতের সুনাম হটানোর জন্য বাঘ মামা ফন্দী আঁটল। শিয়াল পণ্ডিত যে মার্ডার কেস নিয়ে কাজ করছিল সেটার ভিতর মাথা ঘামাতে লাগল বাঘ মামাও। একরাতে যখন শিয়াল পণ্ডিত তার কাজে বের হল, বাঘ মামা তার পিছু নিল।
শিয়াল পণ্ডিত পা টিপে টিপে হাঁটে আর রাস্তায় কান পেতে পা দিয়ে ঠক ঠক আওয়াজ করে। বাঘ মামাতো দূর থেকে শিয়ালের এ কাণ্ড-কারখানা দেখে অবাক।
এভাবে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সে রাতে ডেরায় ফিরল শিয়াল পণ্ডিত। বাঘ মামা পরদিনই শহরে ছড়িয়ে দিল, ‘শিয়ালের গোয়েন্দাগিরি কান পেতে ঠক! ঠক!’
এরপর আরেকদিন বাঘ মামা শহরে রটিয়ে দিল, এতদিন শিয়াল পণ্ডিত নাকি তার বুদ্ধিতেই চলত। এখন সে চলে এসেছে তাই শিয়াল পণ্ডিতের বুদ্ধিতেও টান পড়েছে। আর কোন কেস সমাধান করতে পারবে না নাকি শিয়াল পণ্ডিত।
শিয়াল পণ্ডিতও এসব কথা শুনে বুঝতে পারল বাঘ মামা তার পিছনে পড়েছে। শিয়াল পণ্ডিত ভাবে, দাঁড়াও মামা! দেখাচ্ছি মজা! এটা কিন্তু জঙ্গল না!
৩.
একবার শহরের একটা বড় কেস নিয়ে চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। শহরের সব নামী-দামী ডিটেকটিভরা রহস্য পরিষ্কার করার জন্য কেসের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। শিয়াল পণ্ডিতও কেসটা নিয়ে খুব মাথা ঘামাতে লাগল।
বাঘ মামাতো গোয়েন্দাগিরির কিচ্ছু বোঝে না। তাই বাঘ মামা এই কেসটা সমাধানের জন্য আবার শিয়াল পণ্ডিতের পিছু নিল।
বাঘ মামা ফন্দী আঁটল, শিয়াল পণ্ডিত যেই দোষীকে খুঁজে পাবে, বাঘ মামা তখন লোকটার টুঁটি ধরে চিৎকার করে জানিয়ে দেবে সবাইকে। আর সবাই ভাববে বাঘ মামাই কেসটা সমাধান করেছে।
তারপর আরেক রাতে বাঘ মামা শিয়াল পণ্ডিতের পিছু নেয়। শিয়াল পণ্ডিত আবার রাস্তায় যেতে যেতে কান পাতে আর পা দিয়ে ঠক ঠক আওয়াজ করে। বাঘ মামা এর কিছুই বোঝে না।
সেদিন সারা রাত বাঘ মামা লুকিয়ে লুকিয়ে শিয়াল পণ্ডিতের পিছু পিছু ঘোরে। ভোরের দিকে শিয়াল পণ্ডিত এক চিড়িয়াখানার কাছে থামে। শিয়াল পণ্ডিত দেখে চিড়িয়াখানার দারোয়ান ঘুমিয়ে আছে। শিয়াল পণ্ডিত কাছে গিয়ে দারোয়ানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল আর শুকতে লাগল। এভাবে কিছুক্ষণ যাবার পর শিয়াল পণ্ডিত চিৎকার করে বলতে লাগল,
‘মামা! মামা! পেয়েছি! পেয়েছি! তাড়াতাড়ি এসো।’
এই কথা শুনামাত্র বোকা বাঘ আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে দারোয়ানের টুঁটি ধরে গর্জন করতে লাগল। সাথে সাথে চিড়িয়াখানার লোকজন জেগে উঠল। তারা এসে বাঘ মামাকে ধরে খাঁচার ভিতর ঢুকাল। বাঘ মামা ভাবল, কেস সমাধান করলে হয়তো লোকজন গোয়েন্দাকে এভাবেই সম্মাননা দেয়।
বাঘ মামা যে বন্দী সে কথা বুঝতে বুঝতেই বাঘ মামার কয়েকমাস লেগে গেল।
মামা এখন বন্দী আর ভাগ্নে শিয়াল দেখা করতে যাবে না, তা কি হয়! তাই এক রাতে একটা বড় মাংসের টুকরো নিয়ে শিয়াল পণ্ডিত বাঘ মামাকে দেখতে গেল।
বাঘ মামা রাগে গর গর করতে করতে শিয়াল পণ্ডিতকে জিজ্ঞাসা করে,‘হতচ্ছাড়া! তুই সেদিন বুঝলি ক্যামনে আমি তোর পিছনে! যদি তুই আমাকে না ডাকতিস, তাহলে কি আমার এই দশা হয়!’
শিয়াল পণ্ডিত মাংসের টুকরোটা খাঁচার ভিতর ফেলে মুচকি হাসে আর বলে, ‘বুঝলে মামা, সব কান পেতে ঠক ঠকের কেরামতি!’
---সমাপ্ত---
বিষয়: সাহিত্য
১৬১৯ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"বুঝলে মামা, সব কান পেতে ঠক ঠকের কেরামতি!"
ALL ABOUT THE CHILDREN
Click this link
দোয়া করি বইটা যাতে বের হয় এবার।
হবে অবশ্যই কারন লিখাগুলো বেসম্ভব মজা।
বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথমে শিশুতোষ অরো-ন্যানো সিরিজ এই ব্লগেই পোস্ট করব।
এককথায় আমি সবচেয়ে বেশী চিন্তিত ভ্যাম্পায়ার অব ব্রিটিশ নিয়ে।
তবে আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আর সাধারণত, আমার কোন রাগ নেই, সো মাইন্ড করার প্রশ্নই ওঠে না।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন