আমাদের পহেলা বৈশাখ ১৪ তারিখে
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৪৩:২২ দুপুর
আমাদের মাতৃভাষা দিবস ৮ ফাল্গুন করা হয় নি, রয়ে গেছে ২১ ফেব্রুয়ারিই। কেন রয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। তবে স্পষ্ট করে আমি বলতে পারি, আমরা বাংলা দিনপঞ্জির প্রতি অনেক আগ থেকেই অবিচার করে আসছি। আমি একটা বিষয় পরীক্ষার জন্য গত দু'দিনে কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি, বাংলা নববর্ষ কত তারিখে? কিন্তু সবার উত্তর একটাই- ১৪ এপ্রিল বা ১৪ তারিখে। আপনিও কাউকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, উত্তর একটাই পাবেন। এতে স্পষ্ট, কিছু বছর থেকে আমরা বাংলা নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই পালন করে আসছি।
আজ যদি আপনি কোন বাঙালীকে জিজ্ঞাসা করেন, আজ বাংলা সন, মাস এবং তারিখ কত? তা কতজনই বা বলতে পারবে! শতকরা ৩-৪ ভাগ হয়তো বলতে পারবে। অনেকে হয়তো বার মাসের নামও বলতে পারবে না। কিন্তু কেন? আমরা কেন ধরে রাখতে পারি নি বাংলা সনের ঐতিহ্যকে। এর দায়ভার কি শুধু আমাদেরই! দায়ভার যার-ই হোক না কেন, ঐতিহ্য ক্ষমা করবে না বাঙালীদের, ইতিহাসও ক্ষমা করবে না। ঠিকই ইংরেজি আর হিন্দীর সংস্পর্শে বাঙালী ঐতিহ্য একদিন বিলীন হয়ে এক অন্য রূপে আবির্ভূত হবে।
কিন্তু পৃথিবীর নিয়ম এই যে, সেই জাতিই গর্বের থাকে টিকে থাকে পৃথিবীতে, যে জাতির ঐতিহ্য যত বেশী নিরেট এবং বিস্তৃতভাবে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকে। প্রতিটি জাতিই তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মরিয়া, কিন্তু আমরা কেন অযত্নবান।
মুসলিম হিসেবে আমরা হিজরি সনের অনেক মাসের নামের সম্মুখীন হই এবং সেগুলো বছরের বিভিন্ন সময় আমাদেরকে নাড়া দিয়ে জানিয়ে দিয়ে যায় সেটা কোন মাস অথবা তারিখ। কিংবা রমজানে আমরা জেনে যায় সেটা হিজরি কত সন। যারা ধর্মের প্রতি অনুরাগী তারা হিজরি সনের সব কিছুই মনে রাখে। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের প্রতি অনুরাগী হিন্দুরা হিন্দু পঞ্জিকা মনে রাখে। কিন্তু আমরা বাঙালি হিসেবে ক'দিনই বা বাংলা সনকে মনে রাখি!
আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে আমরা বাঙালীরা এরকমই, আমরা আমাদেরকে অশ্রদ্ধা করি, সে কারনেই আমরা বাংলা সন, মাস বা তারিখ মনে রাখতে পারি না। আসলে এটা হীনমন্যতা ছাড়া কিছু নয়। আমি বাঙালীদের ভিতর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী যেটা লক্ষ করেছি সেটা হচ্ছে হীনমন্যতা। এই হীনমন্যতার কারণে আমরা জাতি হিসেবে গর্ব করি কম, আমাদের জাতীয়তাবোধ কম। এই একটি মানসিক ব্যাপারের কারণে আমরা আজো পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি নি। এই বিষয় থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।
আসলে মোদ্দাকথা হচ্ছে, আমরা মনে রাখি না কারণ এটার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয়তা বাদে এই পৃথিবীর কোন জিনিসই টিকে থাকতে পারে না।
সর্বশেষ হচ্ছে, আমরা ইচ্ছে করলেই বাংলা সনকে বাঙালিদের ভিতর ছড়িয়ে দিতে পারি। সেটা করতে আহামরি কিছু করা লাগবে তা কিন্তু নয়।
শুধু দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে সর্বক্ষেত্রে বাংলা সনের ব্যবহার শুরু করা। এই একটি পদক্ষেপই এ কাজের জন্য যথেষ্ট। জানি আমার এই কথা কয়েকটা লাইন মাত্র, এটার দিকে দৃষ্টি দেবার কেউ নেই। যদি কেউ নাই থেকে থাকে তবে বলি, বাংলা সন যেহেতু বাঙালী ঐতিহ্যের একটি মৌলিক বিষয় সেহেতু এটাকে ধরে রাখতে বছরের একদিন পান্তা ইলিশ কৌতুক না করে, একে ছুঁড়েই ফেলে দিন ডাস্টবিনে।
বৈশাখের ১ তারিখে পহেলা বৈশাখ দেখার অপেক্ষায় রইলাম, এপ্রিলের ১৪-তে নয়।
[জেরীর ব্লগ]
[ -----সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পোস্টটি স্টিকি করার জন্য এবং সকলকে শেয়ার করার জন্য আমন্ত্রণ রইল----]
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন