বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা নীতি এবং ক্রিকেট-ফুটবল

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৪০:০১ সন্ধ্যা



ব্লগটি যখন লিখছি তখন ব্রাজিলের এক সমর্থক ১৫০ হাত লম্বা একটি পতাকা বানানোর পরিকল্পনা করছে, হয়তো আর্জেন্টিনার এক সমর্থক ব্রাজিলের পতাকার চেয়ে বড় পতাকা বানানোর পরিকল্পনা করছে, আর অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বকাপ টি২০ -তে বাংলাদেশীদের দিকে নির্দেশ করে জানিয়ে দিয়েছে, 'বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা ব্যবহারের আইন মেনে চলুন'।

আসুন আমরা দেখে নিই বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা ব্যবহারের নিয়ম।

বাংলাদেশে বিদেশী পতাকার ব্যবহারঃ

(১) বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহের চ্যান্সারী ভবন এবং কনস্যুলার অফিসসমূহে বিদেশের ‘জাতীয় পতাকা’ উত্তোলন করা যাইতে পারে। অধিকন্তু, কূটনৈতিক মিশনসমূহের প্রধানগণ তাঁহাদের সরকারী ভবন এবং মোটর গাড়ীতে তাঁহাদের ‘জাতীয় পতাকা’ উত্তোলন করিতে পারিবেন।

(২) বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ভ্রমণকালীন সময়ে নিম্নবর্ণিত শ্রেণীর সম্মানিত বিদেশী ব্যক্তিগণ তাঁহাদের নিজস্ব পতাকা (Personal Standards) অথবা নিজস্ব পতাকা না থাকিলে তাঁহাদের দেশের জাতীয় পতাকা তাঁহাদের অফিসিয়াল বাসভবনে এবং মোটর গাড়ীতে উত্তোলন করিতে পারিবেন:

(ক) রাষ্ট্রপ্রধান;

(খ) ভ্রমণরত প্রধানমন্ত্রী;

(গ) বিদেশী সরকারের মন্ত্রীবর্গ।

(৩) বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহ কোন উপলক্ষে, যেমন-জাতীয় দিবসসমূহে কূটনৈতিক মিশন প্রধানের বাসভবন বা চ্যান্সারী ব্যতীত, যে স্থানে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হইবে, সেইস্থানে তাঁহাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করিতে পারিবে, তবে শর্ত থাকে যে, সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘পতাকা’ও সম্মানজনক স্থানে পাশাপাশি উত্তোলন করিতে হইবে।

নোটঃ উপরিউক্ত বিধিতে উল্লিখিত সুবিধাদি কেবলমাত্র সেই সকল দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে যাহারা পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকেও অনুরূপ সুবিধা প্রদান করিবে।

(৪) উপরিউক্ত বিধিসমূহের বর্ণনা ব্যতীত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন ব্যতীত, বিদেশী রাষ্ট্রের পতাকা কোন গাড়ীতে বা ভবনে উত্তোলন করা যাইবে না।

বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা বিষয়ক নীতিতে স্পষ্ট কিছু বিষয় লক্ষ করা যায়। তার একটি হল, খেলার মাঠে বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা থাকবে নাকি থাকবে না? বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা নীতিতে কোন জায়গায় স্পস্ট করে লেখা নেই, খেলার মাঠে বাংলাদেশী অথবা বিদেশীরা বাংলাদেশ ভিন্ন অন্য দেশের পতাকা উত্তোলন করতে পারবে নাকি পারবে না। আজকে সরকার জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশীরা পারবে না। কিন্তু সরকার তার ইচ্ছে অনুযায়ী কোন কিছু বলতে পারে না। কিছু বলার জন্য সরকারের ভিত্তি হল সংবিধান।

এর আগে কখনো এই বিষয় নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠে নি। হর-হামেশে বাংলাদেশীরা বিদেশী পতাকা নিয়ে গ্যালারীতে গেছে। তবে এবারে প্রশ্ন উঠার মূল কারণ বাংলাদেশ দলের ভালো পারফরম্যান্স এবং এদেশের মানুষের ভিতর ক্রিকেটীয় জাতীয়তাবোধের উন্মেষ। আর এটি হয়েছে বাংলাদেশীদের পাকিস্থানের পতাকা নিয়ে লাফালাফি অথবা মুখে পাকিস্থানের পতাকা অঙ্কনের মধ্য দিয়ে।

তবে মজার ব্যাপার হল ক্রিকেটীয় জাতীয়তাবোধের উন্মেষ হয়েছে এক বিচিত্রতায়। এদেশে তিন ধরনের জাতীয়তাবোধ আছে।

এক, নিরেট বাংলাদেশী জাতীয়তাবোধ

দুই, ভারতের প্রতি দুর্বল জাতীয়তাবোধ

তিন, পাকিস্থানের প্রতি দুর্বল জাতীয়তাবোধ

অবাক করার মত ব্যাপার, বাংলাদেশে ক্রিকেটীয় জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটেছে দুই এবং তিন নম্বর জাতীয়তাবোধের অধিকারী তরুণ সমাজ দ্বারা। যারা বেশ এক অপরের প্রতি প্রতিহিংস।

খেলার মাঠে ভারত অথবা পাকিস্থানের পতাকা বহন না করার পেছনে আমি শুধু একটা যুক্তি দেখি। সেটা হচ্ছে, এই দুই দেশ আমাদের সাথে অতীতে ভালো আচরণ করে নি এবং এরা ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে কোন বিশেষ সুবিধা দেবে বলে মনে হয় না। তাই প্রতিবাদস্বরূপ ক্রিকেটে এদের সমর্থন করা থেকে বাংলাদেশীদের বিরত থাকা ভালো। এছাড়া সঠিক জাতীয়তাবোধের দিকে নিজেদের অগ্রসর করার পরামর্শ তাদের কাছে রাখছি।

এতো গেল ক্রিকেটের কথা, এবার ফুটবলের কথায় আসি। কয়েকদিন পরেই ফুটবল বিশ্বকাপ, এদেশ ভরে যাবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা অথবা অন্য দেশের পতাকায়। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট করে লেখা আছে, "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন ব্যতীত, বিদেশী রাষ্ট্রের পতাকা কোন গাড়ীতে বা ভবনে উত্তোলন করা যাইবে না।"

সরকার এই বিষয়ে কোন অনুমোদন দেবে কিনা জানা নেই। তবে ক্রীড়াপ্রেমী দেশবাসীদের বিশ্বকাপ ফুটবলের মওসুমে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দলগুলোর বিদেশী পতাকা উত্তলোনের অনুমতি দান করা দোষের কিছু হবে না বলে মনে করি। অনুমতি না দিলেও এদেশে ফুটবল খেলা দেশগুলোর পতাকা উড়বে, সরকারও কিছু বলবে না, কিন্তু সরকার দেশবাসীকে একরকম বেআইনি কাজ করার দিকেই ঠেলে দিবে।

আর একটা কথা, বাংলাদেশে বিদেশী পতাকা নীতিতে কোথাও দেওয়া নেই যে দেওয়ালে বিদেশী পতাকা অঙ্কন করা যাবে না। তাই ফুটবল প্রেমীরা দেশের সংবিধানের ভিতর থেকেই যত ইচ্ছা দেওয়ালে পতাকা অঙ্কন করতে পারবে।

শেষকথা, খেলা এক ধরনের শিল্প, শিল্পের জনপ্রিয়তা জোর করে হয় না, এমনকি জাতীয়তাবোধ দিয়েও নয়। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে যদি আপনার মনে না ধরে তাহলে আপনার কোন দোষ নেই, আপনার শেক্সপিয়রকেও ভালো লাগতে পারে। শিল্পকে কোন গন্ডীর ভিতর বেঁধে রাখার চেষ্টা একদমই বৃথা। যারা ক্রিকেট অথবা ফুটবলকে শিল্প মানে তারা যে কোন দেশকে সমর্থন করতে পারে। কিন্তু যারা শিল্পকে জাতীয়তাবোধ দিয়ে বিচার করতে চায় তারা শিল্পের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে বলে মনে হয় না। আবার কোন শিল্পগোষ্ঠী যদি বলে, আমরাই জাতীয়তাবোধ তাহলে তাদের সমর্থনের ক্ষেত্রে একটু ভেবে চিন্তে দেখুন। উপমহাদেশের ভারত-পাকিস্থান নামক ক্রিকেট দল দু'টি এমনই করে আসছে।

বিষয়: বিবিধ

২২৬৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

197887
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:০৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : যে দেশে সরকার চলে ভিনদেশীদের কথায়, সেদেশে পতাকা কোন সমস্যা?
197908
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৩০
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : শেষকথা, খেলা এক ধরনের শিল্প, শিল্পের জনপ্রিয়তা জোর করে হয় না, এমনকি জাতীয়তাবোধ দিয়েও নয়। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকেকে যদি আপনার মনে না ধরে তাহলে আপনার কোন দোষ নেই, আপনার শেক্সপিয়রকেও ভালো লাগতে পারে। শিল্পকে কোন গন্ডীর ভিতর বেঁধে রাখার চেষ্টা একদমই বৃথা। যারা ক্রিকেট অথবা ফুটবলকে শিল্প মানে তারা যে কোন দেশকে সমর্থন করতে পারে। কিন্তু যারা শিল্পকে জাতীয়তাবোধ দিয়ে বিচার করতে চায় তারা শিল্পের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে বলে মনে হয় না। আবার কোন শিল্পগোষ্ঠী যদি বলে, আমরাই জাতীয়তাবোধ তাহলে তাদের সমর্থনের ক্ষেত্রে একটু ভেবে চিন্তে দেখুন। উপমহাদেশের ভারত-পাকিস্থান নামক ক্রিকেট দল দু'টি এমনই করে আসছে।

নিরেট সত্য কথাটাই বলেছেন। যখন ভিন দেশে খেলা হয়, তখন ভীন দেশের সমর্থন করলে পতাকা সমস্যা নেই। মুল বিষয় হলো, বাংলাদেশের মানুষ কখনও ইন্ডিয়ার পতাকা ধারণ করেনা। বরং পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে যায়। তাই দাদাদের খূশী করতে মা কালীল পদলেহনকারী সরকারের এ উদ্যোগ।
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৩৪
147845
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ
197921
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৫০
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশীরা হচ্ছে ছাগলের ৩নং বাচ্চা ।

যার খেলা তার খবর নাই , বাংলাদেশীদের ঘুম নাই
197936
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:১২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : লেখাটা শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খুবই ভালো লেগেছে।
197959
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১৫
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : এই দেশের কথা আর বলিয়েন না ভাই! আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়, বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে অন্য দেশের লোকেরা উল্লাস করে কিনা। আমার সােনার বাংলা গাই......
197963
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:২৩
সাদাচোখে লিখেছেন : অন্যান্য মরণব্যাধীর পাশাপাশি - সরকারের সর্বাংগে এ্যালার্জি বিস্তৃত হয়েছে - সুতরাং সরকার যাই করুক না কেন - তাই অস্বাভাবিক রকমের এ্যাবনরমালিটির সাইন হিসাবে সরকারকে আরো নগ্ন, উলংগ ও বেকুব বলেই জনমানুষের কাছে প্রতীয়মান হবে।

197968
২৫ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৪৬
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : অল্প কথায় ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। জাতীয়তা বোধ,দেশপ্রেম বলে আমাদের কিছু নেই,আসল কথা হচ্ছে আমরা হুজুগে মাতি আর কিছুনা।
198063
২৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:১১
ভিশু লিখেছেন : ভালো বলেছেন...Happy Good Luck
203368
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : এগুলো খুবই বাজে দৃষ্টান্ত। আমাদের সরকার কত ভাবে যে ভারতের চরণ তলে আর্ঘ অর্পন করছে। এটা মেরুদন্ডহীন একটি সিদ্দান্ত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File