গল্পঃ বাঘ মামার রাজত্বে আফ্রিকার সিংহ
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৩:৫০ রাত
বাঘ মামা চিন্তায় চিন্তায় শেষ। সুদূর আফ্রিকা থেকে এক সিংহ এসেছে তার রাজত্বে। রাজ্য দখল করেই নাকি ক্ষান্ত হবে সিংহ। শিয়াল পণ্ডিত যেমন বাঘের ভয়ে ভয়ে ঘুরে বেড়াত, তেমনি বাঘ মামা সিংহের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগল। কবে জানি দেখা হয়ে যায়। দেখা হলেই তো বাঘে-সিংহে যুদ্ধ বেধে যাবে। আর সেই যুদ্ধে যে জিতবে, সেই হবে রাজা। বাঘ মামা আগেও শুনেছে আফ্রিকার সিংহ নাকি ভয়ঙ্কর হয়। এদিকে রাজ্য জুড়ে একটা কথা ছড়িয়ে পড়তে লাগল, ‘সিংহ হল বনের রাজা’।
আর একেকজন বাঘ মামাকে এসে একেক রকম কথা বলতে লাগল। বানর এসে বলল, ‘ইয়া বড় বড় থাবা সিংহের।’
বাঘ মামাতো আরো ভয় পেয়ে গেল। এরকম দুর্দিন যখন চলছে হঠাৎ একদিন শিয়াল পণ্ডিত এসে হাজির। এসেই বলে, ‘মামা কিছু কাজে শহরে গিয়েছিলাম। লোকজন এখন পাল্টে গেছে মামা। কত কি নতুন যন্ত্র-তন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে।’
বাঘ মামার মুখে কথা নেই। গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। শিয়াল পণ্ডিত বুঝতে পারে বাঘ মামা চিন্তায় আছে।
শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা কি এমন চিন্তায় আছো?’
তবু বাঘ মামার কথা নেই। শিয়াল পণ্ডিত অবস্থা বুঝে বিদায় নিয়ে চলে গেল সেদিন।
পরদিন দাঁত বের করে হাসতে হাসতে শিয়াল পণ্ডিত হাজির। এসেই বলে, ‘মামা, মামা, সিংহ হল বনের রাজা! তুমি হলে তাহার প্রজা!’
বাঘ মামা বলে, ‘ঠাট্টা মশকরা রাখ, এখন কি করা যায় বল। সারা জীবন তো আমাকে ধোকা দিয়ে গেলি। এবার আমার একটা উপকার কর।’
শিয়াল পণ্ডিত ভাবে, ঠিকই বলেছে মামা। আসলেই মামার জন্য কিছু একটা করতে হবে এবার। শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘নো চিন্তা মামা। তুমি এক কাজ করো, সিংহকে তোমার বাসায় দাওয়াত করো।’
সিংহকে ঘরে ডেকে আনা মানে বিপদকে ঘরে ডেকে আনা। বাঘ মামা বলে, ‘কি সব আহাম্মকের মত কথা বলিস।’
শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘আরে মামা, কাছে না পেলে সিংহকে শায়েস্তা করব কিভাবে? তুমি শুধু দাওয়াত করো। বাকীটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আর সিংহ আসলে তুমি শুধু চুপ থাকবে।’
ভাগ্নে বারবার বাঘ মামাকে ধোকা দিলেও তাকে অগাধ বিশ্বাস করে বাঘ মামা। তাই সিংহকে দাওয়াত করা হল। আর এদিকে শিয়াল পণ্ডিত অনেক খুঁজা-খুঁজি করে একটা ফাঁদ খুঁজে বার করল। ফাঁদের উপর নানা রকম ফুল ছিটিয়ে ফাঁদকে ভালোমত ঢেকে দিল।
সিংহ যথাসময়ে এসে হাজির। শিয়াল পণ্ডিত সিংহকে দেখে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘সিংহ হল বনের রাজা! সিংহ হল বনের রাজা!’
বাঘ তো শিয়ালের মুখে একথা শুনে মনে মনে রেগে গেল। কিন্তু সিংহের বিরাট দেহ দেখে ভয়ে কিছুই করতে পারল না।
শিয়াল পণ্ডিত সিংহকে বলল, ‘আপনি আমাদের রাজা। কিন্তু এ বনের যে একটা রীতি আছে রাজা মশাই। রাজাকে খেতে হয় রাজার আসনে বসে।’
বাঘ মামাতো অবাক। বনের রাজার আসন, একথা তো এই প্রথম শুনল সে। আবার মনে মনে রাগ করল শিয়ালের উপর। এত দিন মামা রাজা ছিল, তার জন্য কোন আসন নেই, আর সিংহ আসতে না আসতেই তার জন্য আসনও তৈরী হয়ে গেল। শিয়াল পণ্ডিত সিংহের এত বেশী চামচামি করতে লাগল যে, বাঘ তাকে সন্দেহ করতে লাগল।
শিয়াল পণ্ডিত সিংহকে সেই ফুলে ঢাকা ফাঁদের কাছে নিয়ে গেল। বাঘও তাদের পিছু পিছু গেল।
শিয়াল পণ্ডিত সিংহকে বলল, ‘ঐ যে রাজার আসন। আপনি ওখানে গিয়ে বসুন, আপনার খাবার চলে আসবে।’
বোকা বাঘ মামা ভাবল- এত বড় সাহস, আমার আসনে সিংহ বসবে!
যেই ভাবা সেই কাজ। বাঘ মামা এক লাফে সেই ফুলে ঢাকা ফাঁদের উপর গিয়ে পড়ল, আর সাথে সাথে ফাঁদে আটকা পড়ল।
শিকারিরা চিৎকার করতে করতে ফাঁদে আটকা পড়া বাঘকে ধরতে আসল। শিয়াল পণ্ডিত সুযোগ পেয়ে সটকে পড়ল সিংহের খপ্পর থেকে বাঁচার জন্য। আর সিংহও শিকারিদের তাড়া খেয়ে প্রাণ নিয়ে আফ্রিকাতে পালিয়ে বাঁচল। আর কোনদিন এদিকে আসল না শিকারিদের ভয়ে। শিয়াল পণ্ডিত শান্তিতে দিন কাটাতে লাগল।
---- সমাপ্ত ---
বিষয়: সাহিত্য
১১৮৯ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন