গল্পঃ বাঘ মামার বিয়ে

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৪৪:৫৫ রাত



১.

অনেক দিন শিয়াল পণ্ডিতের খোঁজ খবর নাই। বাঘ মামাতো শিয়ালের উপর খ্যাপা। শিয়াল পণ্ডিতও ভয়ে ভয়ে আছে। কবে যে ডাক পড়ে, এই ভয়ে আড়ালে আবডালে শিয়াল পণ্ডিত ঘুরে বেড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত রেহায় পেল না শিয়াল পন্ডিত। ডাক পড়ল শিয়াল পন্ডিতের।

শিয়াল পন্ডিত তো ভয়ে আধমরা। কিন্তু শিয়াল পন্ডিত তা বুঝতে না দিয়ে একদিন হাঁপাতে হাঁপাতে বাঘ মামার কাছে এসে হাজির। এসেই অনুনয় বিনয় করে বলে, ‘মামা খুব কষ্টে আছি। দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। লোকজন মুরগীঘর এখন এমনভাবে বানাচ্ছে, আমি বুঝি শেষ। ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছি মামা।’

‘তোর তো এখনো কুমিরের মাংসই হজম হয় নি। আমার রাজ্যে তুই এমন বেয়াদপি করলি, তোকে কিভাবে মাফ করব বল। তোকে তো কুমিরের ডেরায় রেখে আসার হুকুম দেব ভাবছি।’

শিয়াল পণ্ডিতের তো একথা শুনে অক্কা যাবার অবস্থা। বাঘ মামাকে নানা অনুনয় বিনয় করে শিয়াল। কিন্তু কোন লাভ হয় না। বাঘ মামা বলে, ‘অনেক জ্বালিয়েছিস তুই আমাকে। কুমির হচ্ছে জলের মোড়ল। আর সেই কুমিরের সাথে বাটপারি এ আমি মেনে নেব না। আজকেই তোকে কুমিরের ডেরায় যেতে হবে।’

শিয়াল পণ্ডিত মনে মনে কল্পনা করে, সে কুমিরের ডেরায় আর কুমিরেরা তাকে ছিঁড়ে-ছুটে খাচ্ছে। ভাবতেই আতকে ওঠে শিয়াল পণ্ডিত।

শিয়াল পণ্ডিত এবার কান্না কাটি করে বলে, ‘মামা, আমি কুমিরের ডেরায় গেলেতো আমি মরেই যাব। মরার আগে আমার যে একটা শেষ ইচ্ছা আছে।’

‘হাজার হলেও তুই আমার ভাগ্নে, তোর শেষ ইচ্ছা আমি পূরণ করব। বল তোর শেষ ইচ্ছা কি?’

‘সেটাতো এখন বলা যাবে না মামা, আমাকে দুই দিন সময় দাও। আমি আমার ইচ্ছা পূরণ করে তারপর ফিরে আসব।’

‘ঠিক আছে, যা। তবে চালাকি করবি না আবার। তাহলে কিন্তু আমিই তোর ঘাড় মটকে দেব।’

‘তা আবার বলতে মামা।’

২.

পরদিন কথা নাই বার্তা নাই, শিয়াল পণ্ডিত তার ডোল পিটিয়ে সারা রাজ্যে জানিয়ে দিল, ‘বাঘ মামার বিয়ে! বাঘ মামার বিয়ে!’

সবাই জিজ্ঞাসা করে, ‘কি পণ্ডিত সাব, কার সাথে মামার বিয়ে দিচ্ছ?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘বিয়ের সময়ই দেখো সবাই। মামার নিষেধ আছে কণের নাম বলতে।’

এ সংবাদ বাঘ মামার কানে যেতেই রেগে অস্থির। শিয়াল পন্ডিতের ডাক পড়ল আবার। শিয়াল পণ্ডিত আসতেই বাঘ মামা তার থাবা দিয়ে শিয়ালের টুটি ধরে বলে, ‘আমি জানি না আর আমার বিয়ে। তোর ঘাড় আমি এখনি মটকে দেব।’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘দেখ মামা, আজ হোক আর কাল হোক আমি মরবই। জীবনের প্রতি আমার মায়া নেই। কিন্তু মামা, মরার আগে আমি মামীকে দেখে যেতে চাই।’

এ কথা শুনে বাঘ মামার মন গলে গেল। ভাবল, ভাগ্নে তাহলে মনে মনে আমাকে এত ভালোবাসে। ভাগ্নে তো ঠিকই বলেছে, বয়স তো কম হল না, রাজ্য চালানোর ঝামেলা টানতে টানতে বিয়ে করার কথা তো ভুলেই গেছি।

বাঘ মামা এবার নরম সুরে বলে, ‘বিয়ে তো বুঝলাম, কিন্তু কণে কে? রাজ্যের সবাইতো আমাকে ভয় পায়। আমাকে বিয়ে করবে কে বল?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা ভয় দিয়েই তো সব জয় করতে হয়। কণের চিন্তা তোমার করা লাগবে না। কালকেই বিয়ে, তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। পরশুতো আবার আমাকে কুমিরের ডেরায় পাঠাবে।’

এদিকে শিয়াল পণ্ডিত সবাইকে যেয়ে বলে দিল, বাঘ মামার কণে পছন্দ হয়ে গেছে। যাকেই পছন্দ হোক না কেন, তাকে বিয়ে করতেই হবে, তা না হলে সবার কপালে কষ্ট আছে। কণের বাড়িতে গিয়ে কণেকে বিষয়টা জানানো হবে।

৩.

বনের রাজার বিয়ে আর দাওয়াত হবে না। তা কি হয়! বাঘ মামা রাজ্যের সবাইকে দাওয়াত করল। সবাই নাচতে নাচতে বাঘ মামার বিয়েতে চলে আসল। কিন্তু কণের খোঁজ নেই। শিয়াল পণ্ডিতেরও খোঁজ নেই। বাঘ মামা পড়ল বিপাকে। শিয়াল পণ্ডিত কি এবারও তাকে ধোকা দিল!

বাঘ মামা চিন্তায় পড়ে গেল। তবে সূর্য ডোবার ঠিক আগেই শিয়াল পণ্ডিতের দেখা মিলল। তার সাথে একটা হরিণী। শিয়াল পণ্ডিত এসেই বাঘ মামাকে আড়ালে ডেকে বলে, ‘মামা কণের বড় অভাব। তারপর আবার কণেকে হতে হবে সুন্দরী। হাজার হলেও আমার মামী হবে। খুব কষ্টে রাজী করিয়ে তারপর নিয়ে আসতে হল। তাই দেরী হয়ে গেল।’

বাঘ মামা বাইরে বেরিয়ে নাদুস-নুদুস হরিণীটির দিকে তাকাতেই জিভে জল চলে আসে। তারপর শিয়াল পণ্ডিতকে বলে, ‘ভাগ্নে, তোর পছন্দের তারিফ করতে হয়।’

বাঘ করছে হরিণীকে বিয়ে। বিষয়টা মানায় না। তবু সবাই আনন্দ-উল্লাস করে, কারণ পাছে আবার যদি বাঘ ঘাড় মটকে দেয় এই ভয়ে।

পরদিন সকালে সেজে-গুঁজে চোখে-মুখে কান্না নিয়ে শিয়াল পণ্ডিত হাজির বাঘ মামার কাছে। কারণ আজকেই কুমিরের ডেরায় যেতে হবে তাকে। শিয়াল পণ্ডিত যেয়ে দেখে, বাঘ আছে ফুরফুরে মেজাজে। শিয়ালকে দেখেই বাঘ তার ধারলো দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, ‘ভাগ্নে আয়। তোর অপেক্ষাই করছিলাম। পারলে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দে না আমায়। জানিস তো আগের মত দৌড়াতে পারি না এখন।’

ফুরফুরে মেজাজে এসব নানান কথা বলতে বলতে বাঘ ভুলেই যায় শিয়াল পণ্ডিতকে কুমিরের ডেরায় পাঠানোর কথা। শিয়াল পণ্ডিতও বুঝল টোপে কাজ হয়েছে। এ যাত্রায় রক্ষা পেল শিয়াল পণ্ডিত।

বাঘ মামার কাছ থেকে ফেরার পথে শিয়াল পণ্ডিত ভাবল, কিছুদিন শান্তিতে থাকা যাবে তাহলে।

----সমাপ্ত---

জেরী- ০৮/০২/২০১৪

বিষয়: সাহিত্য

৩৪৯৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

174754
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
বিন হারুন লিখেছেন : জঙ্গলের প্রাণীরা বাঘ-হরিণের বিয়ে মেনে নেয় ঘাড়মটকানোর ভয়ে. নেতাদের অন্যায় কাজগুলো আমাদের সয়ে যেতে হয় জেলজুলুমের ভয়ে.
গল্পটি শুধু ছোট নয় আশাকরি বড়দেরও ভাল লাগবে. Rose Rose
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০২
127957
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : প্রতিকী অনেক ব্যাপার যুক্ত করেছি গল্পটিতে। পরে আরো কয়েকটি বাঘ মামা আর শিয়াল পণ্ডিতের গল্প লিখব। দোয়া করেন, যাতে লিখতে পারি।
174761
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১৬
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আসলেই সুন্দর গল্প।
ইন্ডিয়াকে মন্দিরের ফটো লাগানো বাংলাদেশী পাসপোর্ট উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগ আরো কিছু দিন থাকতে পারবে।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৫
127959
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই, প্রতিযোগিতার জন্য বিয়ের গল্প নিয়ে ভাবতে ভাবতে দারুণ এক বিয়ের গল্প পেয়ে গেলাম। সাথে পেয়ে গেলাম আশ্চর্য এক থিম আর প্লট। অবশ্য এমন বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতায় লেখা যাবে কিনা তা নিয়ে এখনো আমি সংশয়ে। যাই হোক, গল্পটা লিখে তৃপ্তি পেয়েছি। এটাই বড় কিছু।
174765
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৪
egypt12 লিখেছেন : অসাধারণ লাগলো!!! আপনার এটাতে মন্তব্য করার জন্যই লগইন করলাম, ভালো থিম চালিয়ে যান।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৭
127960
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই, উৎসাহ দেবার জন্য।
174768
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৩৯
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : অল্প কথায় অনেক কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৩৭
127994
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ
174771
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৪৭
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৩৭
127995
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই
174815
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:০২
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১৭
128131
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে
174946
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
শফিউর রহমান লিখেছেন : এতদিনে বুঝলাম হাসিনার উস্তাদ কে। হাসিনাতো একটা কুকর্মকে ঢাকতে আরেকটা কুকর্মের জন্ম দেয়। তাতে বোকা জনগণ আগেরটা ভুলে পরেরটা নিয়ে আলু সানা (আলোচনা) করে ঢেকুর তোলে। শেয়াল যেমনভাবে বাঘের সিদ্ধান্তকে ভুলিয়ে দিতে হরিণের সাথে বাঘের ...।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
128156
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে
175100
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : হুম,সুন্দর হয়েছে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
128397
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই
175202
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
১০
178228
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:২৯
অজানা পথিক লিখেছেন : thanks
১১
178932
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : বেশ মজার গল্প। আপনার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি।ধন্যবাদ।
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:০৮
139573
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : এইতো একটু আধটু আছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File