আমার দেখা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:১০:১০ দুপুর
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, এটা যে মানে না সেই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক। তাদের মনের ভিতরই লুকায়িত সাম্প্রদায়িকতার বিষ।
আগেই বলে রাখি আমি যে জায়গায় বসবাস করি সে অঞ্চলে অনেক হিন্দুও বসবাস করে। আমাদের গ্রামের পাশেই একটি হিন্দুদের পাড়া বা মহল্লা আছে।
এক বছর আগের কথা, আমি এবং অনেকে ঈদের নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করছিলাম অপ্রশস্ত এক রাস্তার উপর। আমরা রাস্তার এক ধার ঘেঁষে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মুনাজাত করছিলাম। পিছনের দিকে রাস্তা ফাঁকা। সেদিন দেখলাম একটা মটর বাইক চালক থেমে গেল আমাদের মুনাজাতের কাছে এসে। যতক্ষণ মুনাজাত চলল ততক্ষণ থেমে থাকল।
আমি ভাবলাম, লোকটা বোকা নাকি! সেতো চাইলেই আমাদের পিছন দিয়ে চলে যেতে পারত। এর আগে অনেক ঈদেই মটর বাইক নিয়ে মুনাজাতের সময় আমাদের পিছন থেকে যেতে দেখেছি, তাই এমনটি মনে হওয়ায় স্বাভাবিক ছিল আমার কাছে।
কিন্তু মুনাজাত শেষে তাকিয়েই বুঝলাম, আসলে লোকটি হিন্দু। লোকটি সেদিন ওভাবে থেমে গিয়েছিল কিসের জন্য?
১। হতে পারে আমরা সাম্প্রদায়িক, ওভাবে চলে গেলে একটা তীব্র দাঙ্গা বাধতে পারে তাদের সাথে এই ভয়ে
২। অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে
৩। অন্যের ধর্ম পালনে বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে এরকম মানসিক চিন্তা থেকে
আসলে আমার মতে তার মনে কাজ করেছিল তৃতীয় কারণটি। সে হয়তো বোঝে না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংজ্ঞা, কিন্তু তার বোধ শক্তিই তাকে অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে এসেছে। সে হয়তো মানসিক ভাবে চিন্তা করে নি ওদের ধর্মকে শ্রদ্ধা করছি, কিন্তু সে যা করেছে সেটাই অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধা করা।
এক নম্বর কারণটি অমূলক কারণ বাংলাদেশের সমাজে, এরকম ঘটনা খুব কম আছে। আর হিন্দু লোকটি যদি আমাদের পিছন দিক দিয়ে চলেও যেত, আমাদের ধর্মের তেমন ক্ষতি হত না। তাই এরকম ঘটনা ঘটার কোন কারণই ছিল না।
এই হল বাংলাদেশের সমাজের প্রকৃত চিত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কলুষতা মুক্ত সমাজের চিত্র।
এছাড়া যখন পূজার সময়, বিশেষ করে দুর্গা পূজার সময় যে ঘটনা ঘটে তা হল পূজা ডুবানোর জন্য পূজা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হত আমাদের পাশের রাস্তা দিয়ে। সাথে বাজত ঢাক-ঢোলের বাদ্য। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, পূজা যখন ডুবাতে নিয়ে যাওয়া হয় তখন উৎসুক মুসলমানরা পূজা দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
তারা পূজা দেখে মজা পায়, তবে এই পূজা নিয়ে কটূক্তি করে না। আবার তারা মনে মনে এটাও ভাবে না যে এই পূজাতে আমাদের বিশ্বাস আনা উচিৎ। তারা শুধু এটা দেখার জন্যই দেখে। অনেক মুসলমান আবার পূজা ডুবানোর সময় পূজা ডোবানো আর লোক-সমাগম দেখতে যায়।
আবার কিছু কিছু মুসলমানরা আবার পূজা দেখাকে পাপ বলে মনে করে। তারা এটা মনে করে না যে, পূজা দেখা পাপ তাই পূজা হতে দেওয়া যাবে না। যদি বাংলাদেশের ২-৩ ভাগ মুসলমানও এরকম তত্ত্বে বিশ্বাস করত তাহলে হিন্দুদের পক্ষে পূজা করা কঠিন হয়ে যেত। বরং যারা এই পূজা না দেখার দলে, তাদের ইসলাম ধর্মের প্রতি জ্ঞান বেশ ভাল, তাই তারা এটাও জানে অন্যের ধর্মের প্রতি কিভাবে আচরণ করতে হবে।
আসলে উগ্রতা নামক বস্তুটা বাঙালীদের মধ্যে নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত মানুষেরা এদেশে বসবাস করে। শান্তিই তাদের আশা। অশান্তিকে বাংলাদেশীরা তীব্রভাবে ঘৃণা করে।
আমি একসময় একটা ছাত্রাবাসে ছিলাম এক বছর। আমাদের সাথে সেখানে দু'জন হিন্দুও থাকত। পরবর্তীতে তারা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে যায় আমাদের। তাদের একজন ছিল আবার নিরামিষভোজী। আমরা অনেক সময়ই ইচ্ছা থাকলেও গরুর মাংস খুব কম খেতাম, ঐ একজন হিন্দু বন্ধুর জন্য। আর নিরামিষভোজী হিন্দুকে আমার এক বন্ধু সাহায্য করত তার কাজে। তাদেরকে ছোট করে দেখার কেউ ছিল না সেখানে।
আবার হিন্দু বন্ধুটিও বলত, 'তোরা গরু খাস না কেন, তোরা যেদিন গরু খাবি আমি সেদিন না হয় ডিম খাবো।'
আমি জানি, এবং সবাই জানে, মুসলমানরা জানে, হিন্দুরা জানে, বাংলাদেশের সমাজের প্রকৃত এবং স্বাভাবিক দৃশ্য এমনই। কিন্তু এমন একটা বিষ এখন বাংলাদেশের মানুষের মনে ঢোকানো হচ্ছে যা বাংলাদেশের মানুষ চেনেই না ঠিকমত। আর এই বিষ ঢোকানোর কাজটি করছে আমাদের রাজনীতিবিদরা।
বিষয়: রাজনীতি
১২৫৮ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন