রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বর্জ্য নির্গমন কম দেখায় সরকার (পেপার কাটিং)

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:১৮:২৭ রাত

রামপাল বন্ধ কর!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

মানবজমিন ডেস্ক: রামপালে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দূষিত বর্জ্য নির্গমনের মাত্রা কম দেখিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ওই নির্গমনকে অনুমোদনযোগ্য মাত্রায় দেখানো হয়েছে। সমালোচকরা বলেন, এর মাধ্যমে এ প্রকল্পকে ঘিরে মৌলিক কিছু প্রশ্নে

স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে। তা হলো, আসলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা কারা ভোগ করবে। কিভাবে বর্জ্য ও ব্যবহারের পর দূষিত পানি কিভাবে শোধন করা হবে বা এর কি হবে। কিভাবে দূষণ কমানো হবে। গতকাল প্রভাবশালী ম্যাগাজিন টাইম-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এ প্রকল্পের বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে ক্ষতিকর প্রভাববিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয় জানুয়ারিতে। তাতে এর নির্গমন নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ওই রিপোর্টে সুন্দরবন অঞ্চলকে জীববৈচিত্র্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ দেখানোর চেয়ে এটাকে দেখানো হয় আবাসিক ও গ্রাম এলাকা হিসেবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে ৫২ হাজার টন বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। পরিবেশের জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ প্রকল্পের মতো ১৯৭৯ সালে টেক্সাসের ফায়েট-এ একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। তখন সমালোচকদের জবাবে সেখানকার সরকার দাবি করে, এ প্রকল্পের কারণে কৃষি ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হবে তা নগণ্য, এড়িয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু সেই সরকার ভুল ছিল। ২০১০ সালে বিজ্ঞানীরা রিপোর্ট দিলেন যে, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে ৩০ হাজার টন সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যজুড়ে শাকসবজি মারা যাচ্ছে। এতে জনরোষ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে টেক্সাসের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন মানুষখেকো বাঘ বাংলাদেশের সুন্দরবন, এ গ্রহের সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন ও ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা দিয়েছে। বর্তমানে পরিবেশবিদরা এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তা হলো ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি রামপাল শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে নির্মাণের কথা রয়েছে। সরকার বলছে, এ প্রকল্প ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা জরুরি। কিন্তু এর বিরোধীরা বলছেন, কয়লাচালিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্র জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এলাকার এত কাছে যে এতে এ এলাকার পানিপথ ও ভেজিটেশন ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে প্রকৌশলী ও সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্য কল্লোল মুস্তাফা বলেছেন, বিশ্বের সুস্থ কোন ব্যক্তি এ প্রকল্পের বিষয়ে একমত হতে পারে না। একই সময়ে নিজ দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ভারত কেন এমন একটি প্রকল্পে এগিয়ে এসেছে তা নিয়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে আইনগত বাধা ও ব্যাপক প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে দুটি কয়লাচালিত বড় ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ মোশাহিদা সুলতানা রিতু বলেন, এটা এক ধরনের ভণ্ডামি। তারা নিজেদের দেশে কাজ বন্ধ করে অন্য দেশে এসে আইন ভঙ্গ করছে। রামপাল প্রকল্পের প্রথম পরিচালক ও বর্তমানে সরকারের একজন পরামর্শক আজিজুর রহমান এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তেল ও গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ এখন অনেক দামি। এতে ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে কোন চাপ নেই। ভারত সরকার তার নিজস্ব নির্দেশনা অনুসরণ করছে। আমরা আমাদেরটা অনুসরণ করছি। আমরা সব রকম দূষণ নিয়ন্ত্রণ করবো। বাংলাদেশের মানদণ্ড বজায় রেখে তা করা হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File