::আলেয়ার কথা:: [[[সপ্তম অধ্যায়]]]

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৮ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১৫:২৬ দুপুর



অবৈধ! অবৈধ সম্পর্ক করেছে সে। পাপ করেছে সে। মাত্র একবার, তবু তার মনে প্রবল সংশয়। সে যা করেছে তা কি ঠিক? কখনো কখনো তার মনে হয়, সে ঠিকই করেছে। তার আবেগ প্রথমবারের মত ঠিক পথে চালিত হয়েছে। তবে, বিপক্ষের যুক্তিগুলো আরো প্রবল। যে মেয়ে বড় হয়েছে শালীন পরিবেশে, সে আজ অশালীন। যে ধর্মকে নামীয় প্রগতিশীলরা মনে করে গোঁড়ামি, সেই ধর্মের অনুভূতি তার পথে বাঁধ সাধে। ধর্ম বা সমাজ তার মনের সাধ পূরণ করতে পারে না। তাই বলে সে সমাজের বাইরে চলে যেতেও চাই না।

রাজধানীকে ভয় পেত আলেয়া। তার ভয় অন্যকে নিয়ে নয়, নিজেকে নিয়ে। সে বলত, 'আমার সাধ জাগে যেতে। কিন্তু আমি যে নিজেকে হারিয়ে ফেলব ওখানে। তখন আমার যে বাঁচার কোন অবলম্বনই থাকবে না।'

স্নাতক রেজাল্টের পর সে খাপছাড়া হয়ে গেল। ছেলেটার আবেগ আর মখলেছের সঙ্গ ছেড়ে সে রাজধানীতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। এবার কোন আবেগ, কোন পিছুটান তাকে ধরে রাখতে পারে না।

রাজধানী একটা অন্য রকম জায়গা। মানুষের আধিক্যে হাটা-চলা করা দায়। কারো সময় নেই কোন দিকে তাকাবার। পোশাক-আশাকে দেখা যায় পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। আর যানজটের সমস্যাতো আছেই। সব মিলিয়ে এই শহরের নতুন বাসিন্দা আলেয়া। নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ সময় লাগে তার। চাকুরীর খোঁজ করে সে। চাকুরীর প্রথম সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা তার কাছে বেশ অস্বস্তিকর ছিল। ভাইভা রুমে ঢোকার পর।

'বসুন, আপনার নাম কি?'

'আলেয়া বেগম।'

'আপনার বাসা?'

'ক'

'আপনার উচ্চতা?'

'পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।'

'আপনি ফেসে কোন ক্রিম ব্যবহার করেন।'

'খ'

'আপনার পছন্দের রঙ কি?'

'লাল এবং সাদা।'

'আপনার ওড়নাটা তো অনেক সুন্দর, ড্রেসটাও সুন্দর।'

'ধন্যবাদ।'

'কত দিয়ে কিনেছেন?'

এবার আলেয়া আর নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারে না। সে কড়া গলায় বলে, 'আমি কি কসমেটিকসের দোকান অথবা জামা-কাপড়ের দোকানের ভাইভায় এসেছি?'

একথা বলেই কোন উত্তরের আশা না করে সে বের হয়ে গেল ভাইভা রুম থেকে। রুমের আর সবাই থ' বনে গেল।

এর চেয়ে খারাপ ভাইভার অভিজ্ঞতাও তার হয় এ শহরে। সে যখন ভাইভার টেবিলের সামনে বসত, তখন ভাইভা যারা নিত তাদের অনেকেই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। আলেয়া এদের নাম দেয় 'শহুরে শকুন', এই শহুরে শকুনের ভয়েই সে রাজধানীতে আসতে ভয় পেত।

তবে শেষ অবধি একটা ভালো অফিসেই তার চাকুরী হল। সেখানে খাদক ছিল না, তাই তার ভয়ও ছিল না।

পরের বছরই মখলেছকে তালাক দেয় আলেয়া। আজ মখলেছের প্রয়োজন তার কাছে ক্ষীণ। ছেলেটিও ইতিমধ্যে রাজধানীতে এসে চাকুরী শুরু করে। আলেয়াকে ডেকে ছেলেটি অনুনয় করে বলে, এসো আমার সনে।

আলেয়া বলে, যে দরজা বন্ধ হয়েছে সে দরজা কেমনে খুলি।

আলেয়ার মা-ভাইয়েরা সব জেনে তাকে ফিরে আসতে বলে বাড়িতে। আলেয়া ফিরে আসে না। কেননা সেই ঘর, সেই জানালা, সেই আলনা কিছুই আর এখন নেই। বিশেষ করে সেই সময়টা।

অতীতের সেই সময়টাকে আবার সে ফিরে পেতে চাই জীবন সাজাতে। তবে অতীত বড় নিষ্ঠুর, সে আর ফিরে আসে না।

[চলবে]

বিষয়: সাহিত্য

১৭৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File