::আলেয়ার কথা:: [[[ষষ্ঠ অধ্যায়]]]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ১১:০০:০৬ সকাল
সেদিন ভর দুপুরে ভরা বাজারে আলেয়াকে থাপ্পড় বসিয়ে দিল মখলেছ। পছন্দের জিনিসটা কিনতে চাওয়াই তার দোষ। কোন কথায় রাখে নি মখলেছ। কোন দিনই তাকে বলে নি সন্তান নিতে। আলেয়ার মন সেই কবে যে বরফ হয়েছে, তা কেউ গলাতে পারে নি। তবে বরফ যে অগলিত থাকতে পারে না।
বিয়ের পর তার পড়াশুনার ইতি ঘটে ঠিকই কিন্তু মাসুদ যখন বড় হয়ে গেল, আলেয়া আবার পড়াশুনা শুরু করে। এমনিতেই বই পড়ার নেশা ছিল তার। গল্প-উপন্যাসের অনেক বই পড়ত সে। একে কে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সে এখন স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ে। কয়েকমাস পরেই স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা। তাই পড়াশুনাতে ব্যস্ত থাকে সে।
তার মনের বরফ বিগলিত করেছিল কলেজের একটি ছেলে। দেখতে বেশ ভালো, বয়স তার চেয়ে ৪-৫ বছর কম হবে। আলেয়া দেখত ছেলেটা কি রকম দৃষ্টিতে যেন তার দিকে তাকায়। এ দৃষ্টি লোলুপ ছিল না। কয়েকদিন লক্ষ করে আরো নিশ্চিত হয় সে। সে দৃষ্টিতে আলেয়া সত্য এবং আবেগের ছাপ খুজে পায় আলেয়া। তার মনে দোলা দিয়ে উঠে।
আলেয়া একদিন ছেলেটাকে ডেকে বলে, 'তুমি আমার দিকে ওভাবে তাকাও কেন?'
ছেলেটা ইতস্ততঃ হয়ে বলে, 'কই নাতো। এরকম অভিযোগ ঠিক নয়।'
কথা হবার পর তাদের চোখাচোখি বেড়ে গেল। আলেয়ার চোখ মাঝে মাঝেই তার চোখকে আটকে ফেলত, আর ছেলেটি মুচকি হাসত। এভাবেই শুরু। কয়েকদিনেই বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেল তারা।
আলেয়া তাকে সব কথা বলত। তার অতীত-বর্তমান, তৃপ্তি-অতৃপ্তি, সুখ-দুঃখ সব কিছুর কথা বলত সে। মনোযোগ দিয়ে ছেলেটা তা শুনত। তাকে সান্ত্বনা দিত, তাকে আশা দিত। বলত, 'তোমার এ দুখের দিন শেষ হবে একদিন।' মাঝে মাঝেই কাব্য করত ছেলেটি। যা আলেয়ার মনকে আবেগী করে দেয়। নিজের মনেও কাব্য ভাসে তার। একদিন নিজের খাতায় লিখে ফেলে কয়েকটি লাইন।
শুকনো পাতার জঞ্জালে তুমি আসলে
প্রজাপতি হয়ে;
আমি রইলাম চেয়ে।
হে মানব কেনো এ বনে এই বিজনে
আসা আমা সনে;
গেছি আমি তব্ধ বনে।
কেউ আসে না এখানে আর
কেউ আসে না ভুলে,
কেউ শোনে না আমার গল্প
আমি শুকনো বলে।
আজ প্রজাপতি কেন তুমি এলে-
কেন তুমি এলে,
রাঙা রাঙা ওসব বাগান ছেড়ে
এ শুকনো ভুঁইয়ে।
এসো না এসো না আমাকে ছুঁয়ো না
আমা রুদ্রতা নিয়ো না বুকে,
যদি নাও রবে জেনে রেখো তবে
আমি উড়ে যাব তপ্ত শোকে।
সে যে দিনে দিনে ছেলেটার প্রতি দুর্বল হচ্ছে তা বুঝতে বাকী থাকে না তার। প্রেম মানে না ধর্ম-বয়স-ভয়, এ বাক্যে বিশ্বাস আসে তার। তার হৃদয়ের কিশলয়গুলি উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। তবে বলতে পারে না সে।
প্রথমে ছেলেটিই তাকে বলে এক সন্ধ্যায়, 'আমি যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।'
দম বন্ধ হয়ে আসছিল আলেয়ার। দীর্ঘশ্বাস টেনে বলে, 'কি করে সম্ভব বল, আমি যে বিবাহিতা।'
'তাতে কি আমি তোমাকে নতুন জীবন দেব। আমরা চলে যাব দূরে কোথায়। যেথায় রব শুধু আমি আর তুমি। পরিচিতের আনাগোনা থাকবে না সেথায়।'
'এতই কি সহজ?'
'সহজ তো নয়, তবে অসম্ভবও নয়। তুমি শুধু আমার হয়ে যাও।'
এভাবেই তারা ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়। সব বাঁধা, সব নিয়ম ভুলে যায় তারা। প্রেমের শক্তি তাদেরকে এক করে দেয়। এ প্রেম একসময় চুম্বনের রূপ ধারন করে। এ প্রেম আলেয়ার বাসাতেই ধারন করে আরেক রূপ। এক বিছানায় তারা রাত্রি যাপন করে। আলেয়াকে এটা পরম স্বাচ্ছন্দ্য দেয়।
প্রেমের লীলাখেলা এমনই হয়, সব যুগে সব কালে।
বিষয়: সাহিত্য
২৮০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন