::আলেয়ার কথা:: [[[পঞ্চম অধ্যায়]]]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:২৪:৫০ দুপুর
আলেয়া এখন ত্রিশের কোঠায়। এই কয় বছরে এদেশের ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কেননা, পুরাতন নতুনের শ্রী। যে নতুন পুরাতন বর্জিত, সে নতুনই সমাজের পরিবর্তক। নতুনের প্রতিষ্ঠাই সমাজের ধর্ম। সে নতুন খারাপ হোক বা ভালোই হোক, নতুনকে গ্রহণে সকলে উৎসাহী।
বৈদ্যুতিক বাতি, পাখা, টেলিভিশন এখন ঘরে ঘরে। মুঠোফোন নামক আজব যন্ত্রের ব্যবহার এদেশে প্রচুর। এর মাধ্যমে দূর-দূরান্তের মানুষের সাথে সহজেই যোগাযোগ করা যায়। কম্পিউটার নামক গণনা যন্ত্রের ব্যবহার করতেও দেখা যায় অনেকেকে। তবে এদেশের বেশীর ভাগ ছেলে মেয়েরা কম্পিউটারকে নাটক-ছিনেমা দেখার যন্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করে থাকে। কেউ কেউ আবার ইন্টারনেটের আজব পৃথিবীতে ডুবে থাকে।
এই ক’বছরে এদেশের যে কি পরিবর্তন হয়েহে তা ভাবলেই আলেয়া চমকে ওঠে। চারিদিকে দালান-কোঠা ওঠার বহর দেখলেও সে তাজ্জব বনে যায়। সে এখন একটা বড় শহরে থাকে। সে থাকে একা। তার স্বামী পাশেরই একটা শহরে থাকে। আর মাসুদ, আবেদার ছেলে থাকে অন্য আরেক শহরে। সেখানে সে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে। আলেয়াকে ছোটবেলা থেকে মা বলেই ডাকত মাসুদ। তবে দিন যত যায় তার প্রতি যে মাসুদের টান কমে যায় তা বুঝতে পারে আলেয়া। সে তাকে মাসে একবার ফোন দিত আর বাড়িতে আসত কোন বড় ছুটি পেলে। অথচ এই মাসুদই সব জানার পর তাকে বলেছিল- তুমিই আমার মা। আমি আর কিছু বুঝি না।
এন জি ও-এর চাকরী অনেক বছর আগেই ছেড়েছে মখলেছ। এখন ইউ এন ডি পি-এর বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজ করে। প্রথম দিকে আর্থিক সংকটে থাকলেও এখন বেশ ভালো বেতনই পান তিনি। এছাড়া দুর্নীতির টাকার কথা না বললেই নয়। এখানে আপনি দুর্নীতি করবেন না বলে দুর্নীতি থেমে থাকবে তা নয়। আপনি না করলে শুধু আপনিই পিছনে পড়ে থাকবেন। মাসে দু'বার আলেয়ার কাছে আসে মখলেছ। দু'তিন দিন করে থাকে একেকবার। আলেয়ার মনে হয় যৌনসুখ নেবাই তার উদ্দেশ্য। এই পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব মানুষটি আজো তার মনে ঢুকতে পারে নি। তাই আজো মখলেছের সুখ আলেয়ার প্রতি নির্যাতনই হয়ে আছে। ভাবুন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন কাজ করা কতটুকু বিরক্তিকর। যে আপনার মনে দোলা দিতে পারে না, সে কোনদিন আপনার শরীরেও দোলা দিতে পারবে না। যাবার সময় আলেয়ার হাতে টাকা দিয়ে যেত মখলেছ। ভাবখানা এমন যেন কোন পতিতাকে দু'দিন ভোগ করে তার দাম দিয়ে গেল। অবশ্য এ সমাজে পতিতাদের দাম এখন আর কম নয়। তারা একজন কোম্পানীর কর্মকর্তার চেয়েও বেশী টাকা অনায়াসে উপার্জন করতে পারে। আলেয়ার মত কোন সুন্দরী মহিলা যদি পতিতাবৃত্তিতে নামে, তাহলে দু'দিনে সে যে অনেক বেশীই কামাতে পারবে তা নিশ্চিত।
যাই হোক, বাড়ির কারো সাথে তার আর তেমন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে মা ফোন দিলে কিছু নির্লিপ্ত কথা হয়। ইদানীং ছোট ভাই সোহান তাকে ফোন দিয়ে বলে, 'তুই চলে আয় আমাদের কাছে। তোর দায়িত্ব তো শেষ। তোর কষ্ট আর সহ্য হয় না। তুই চলে আয়। তোর আর ওখানে থাকা লাগবে না।'
আলেয়া ম্লান হাসি হেসে বলে, 'বড্ড দেরী করে ফেলেছিস রে ভাই। আমি যে আজ থাকতেও পারি না, যাইতেও পারি না।'
আলেয়া জানে মাসুদ বড় হবার পর থেকে এ সংসারে তার কদর শূন্যের কোঠায়। এই মাসুদকে বড় করার জন্য নিজে সন্তান পর্যন্ত নেয় নি সে। নিজের প্রতি বড় নিষ্ঠুর সে। কোন পাপের ফল সে ভোগ করছে তার তা অজানা।
বছরে একবার বাড়িতে যায় আলেয়া। মা-বাবা-ভাই এর সাথে দেখা করতে। বাড়িতে আসলেই তাকে দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের সাথে মাস্তি করতে। বাচ্চা ছেলে মেয়েদের খুব ভালোবাসে সে। যে সব মেয়ের বাচ্চা থাকে না তাদের নাকি বাচ্চাদের প্রতি দরদ-ভালোবাসা বেশী থাকে। সে জন্যই হয়তো বাচ্চাদের প্রতি এত টান আলেয়ার।
সালেহা বেগম এ দৃশ্য দেখে গোপনে চোখের জল ফেলে। নিজেকে দোষী ভাবে মেয়ের শখ-আহ্লাদ নিজের হাতে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার জন্য।
আরমান সাহেবের অবশ্য এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। বয়স হলেও তার রুটিন একই আছে, তিনি এখন ইরাক ও আফগান যুদ্ধের খবর দেখেন টেলিভিশনে। আমেরিকার সৈন্য মরলে তালেবানদের বাহবা দেন তিনি। তবে জঙ্গীদের পুরোপুরি সমর্থন করেন না। তার মতে, তারা একটু বেশীই উগ্রপন্থী। আর আমেরিকা! সে তো পুরোপুরি খুনী রাষ্ট্র। রক্ত ছাড়া তাদের পেট ভরে না।
বাড়িতে আসলে শ্বশুর বাড়িতেও একবার যায় আলেয়া। শ্বশুরবাড়িতে গেলে তার দেবর তাকে বলে, 'ভাবী, তুমি ভাইকে তালাক দাও। পারলে নতুন করে বিয়ে কর। এভাবে আর কতদিন চলবে! ভাই যে কতটা নিষ্ঠুর তা আমি জানি।'
আলেয়া কথাগুলো শোনে। কোন জবাব না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় সে।
বিষয়: সাহিত্য
২২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন