:: আলেয়ার কথা ::[[[তৃতীয় অধ্যায়]]]::
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৯ জুলাই, ২০১৩, ১২:৫০:৪৮ রাত
‘তোর বিয়ে।’
‘বিয়ে মানে? কীসের বিয়ে?’ তার ভাবীর কথায় চমকে উঠে বলে আলেয়া।
‘হ্যাঁ, সত্যিই তোর বিয়ে।’
‘না ভাবী, আমি বিয়ে করব না। আমি আরও পড়তে চাই।’
‘বাবা-মা যে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।’
‘আমাকে না জানিয়েই!’ তারপর উৎসুকভাবে বলে, ‘কোথায়?’
‘তোর দুলাভাইয়ের সাথে।’
আলেয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে উৎকণ্ঠিত ভাবে বলে, ‘এটা কি বলছেন? না! না! কথাটা শুনেইতো আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে।’
ভাবী বলে, ‘এতে আমারও মত নেই।’
আলেয়া দৌড়ে মায়ের কাছে যায়, বলে, ‘মা, ভাবি এ কি বলছে? আমার নাকি বিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে।’
বার বার জিজ্ঞাসার পরও সালেহা বেগম কিছুই বলেন না। মাথা নিচু করে চাল ঝাড়তে ব্যস্ত থাকে। আলেয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে যায়। আবেদার জন্য মুহূর্তেই তার মন থেকে শোক উবে যায়। তার মৃত্যুই তাকে শেষ অবধি আতঙ্কে ভোগায়। তার মনেরও যেন মৃত্যু হয়। ঝড় যেমনি প্রকৃতির গাছ-পালার ডাল-পালা ভেঙ্গে দেয় অথবা মূল উৎপাটিত করে, তেমনি তার হৃদয়ের প্রকৃতিতেও ঝড় ওঠে। ক্ষত-বিক্ষত হয় তার হৃদয় প্রকৃতির উপাদান।
প্রকৃতির পরিবর্তন এমনই, নিজের রূপ যখন তখন পাল্টাতে পারে। তাই এই এক সপ্তাহের ব্যবধানেই প্রকৃতি পাল্টে গেল। আরিফ ভাই তাকে সেদিন সন্ধ্যায় বলে, ‘দেখ, তোর বোন মারা গেল। আমরা তার জন্য কি কিছুই করব না! বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে দেখ, কত ফুটফুটে হয়েছে। দেখলেই মায়া লাগে। আর মখলেছ মানুষটাও খারাপ না। তা না হলে তোর বোন কি পারে ওর সাথে পাঁচ বছর সংসার করতে? তুই রাজী হয়ে যা।’
শান্ত মেয়ের মত চুপ করে আলেয়া সব শোনে, প্রতিবাদ করে না। এ ক’দিনে নোনা জলও শেষ হয়ে গেছে। তার শুধু মনে হয়, তারা তার কথা একটুও না ভেবেই, তার ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরদিন রাতে আলেয়ার মনে আশার আলো জাগে ছোট ভাই সোহানের কথায়। সোহান তার রুমে এসে বলে, ‘তুই চিন্তা করিস না। এ বিয়ে হবে না। আমি কিছুতেই হতে দেব না এ বিয়ে।’
আলেয়া সোহানের কথায় কেঁদে ফেলে, এ কথা তাকে কষ্ট দেয় নি- তবু সে কাঁদে। কারণ দুঃখ মানুষকে যতটা না কাঁদায় আশা মানুষকে তার চেয়ে বেশী কাঁদায়।
শাহানাজও এ বিয়ের বিরোধিতা করে। সে বলে, ‘চাচা এ কি করছেন, একদমই ঠিক করছেন না তিনি।’
হঠাৎ-ই সুর পাল্টে গেল। মখলেছ তাদের বাসায় এসে কি যেন বুঝিয়ে গেল সবাইকে। সোহানের সুরও পাল্টে গেল। আলেয়া অবাক হল যখন শাহানাজ তাকে বলল, ‘তুই রাজী হয়ে যা।’
আরমান খান আলেয়াকে ডেকে বলে দিলেন, ‘কাল থেকে তোমার স্কুল যাওয়া বন্ধ।’
সে যাকে এত বছর দুলাভাই বলে ডেকেছে, দুলাভাই বলে মেনেছে, তাকে সে কি করে গ্রহণ করবে? এছাড়া তার বয়সের দ্বিগুণেরও বেশী দুলাভাইয়ের বয়স। তবু আলেয়ার কথা শোনার মত কেউ থাকল না। মা সালেহা বেগম তাকে ডেকে অনুরোধ করে বলেন, ‘তুই শুধু ঐ দুধের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রাজী হয়ে যা। আমি জানি এটা ঠিক নয়।’
আলেয়ার মন তবু সাঁয় দেয় না। তার মনে হয়, তার কাছ থেকে আনন্দ কেড়ে নেবার ষড়যন্ত্রে নেমেছে সবাই। স্কুলে ছুটাছুটির কথা, বান্ধবীদের কথা খুব মনে পড়ে তার। রাবেয়া ম্যাডামের বলা স্বপ্নের কথাও তার মনে ঘুরে ফিরে আসে। দাদীকে ইদানিং বেশীই মনে পড়ে। দাদী বেঁচে থাকলে হয়তো কখনোই এই বিয়ে হতে দিত না। ঠিকই রাজপুত্রের মত ছেলে খুঁজে নিয়ে আসত তার জন্য। জীবনের নিয়মই এরকম- কেউ বর্তমানে যখন আশা খুঁজে পাবে না, অতীতের আশা তার মনে জাগ্রত হবে। এতে সে আরও হতাশ হতে পারে, কেননা অতীতের আশাকে সে ধরার চেষ্টা করলেও ধরতে পারবে না। আশা এরকমই। মানুষ আশাকে জড়িয়ে ধরেই হাসতে চাই, আশাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে চাই। আর এটাই মানুষের মনের সাধারণ প্রকাশ।
[চলবে...]
বিষয়: সাহিত্য
১৬২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন