রিমান্ড আমিনুল ::ছোট গল্প::
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ৩১ মে, ২০১৩, ১১:২৪:৩৭ রাত
১.
"আমাদের দাবী মানতে হবে"
"ন্যায্য বেতন দিতে হবে।"
"ন্যায্য বেতন দিতে হবে"
"আমাদের দাবী মানতে হবে।"
সামনে রাজরক্ষী, এদের ভেদ করা দুঃসাধ্য। কারো হাতে দাণ্ডা, কারো হাতে রাইফেল। আর এদের হাত খালি, তবে মুখে বুকে আশা- হয়তো একদিন ওরা বুঝবে। রাজরক্ষীদের সাথে আজ বিতন্ডাই যেতে রাজি নয় আমিনুল, কারণ আজ বাংলাদেশের খেলা। খেলা দেখতে এই তরুনেরা অনেক ভালোবাসে, তরুনিরাও ইদানিং উত্তেজিত, তবে সুযোগ সহজে আসে না খেলা দেখার। মাঝে মাঝে এফ এম রেডিওতে খেলা শোনার চেষ্টা করলেও উচ্চপদস্থ টহলদারিদের ধামকিতে বন্ধ করতে হয়।
তিন রাস্তার মোড়ে একত্রিত হয় সবাই আমিনুলের নেতৃত্বে। সবাই স্লোগান দিতে থাকে। এমন সময় মালিক এসে হাজির। সবাই স্লোগান থামিয়ে দেয়; কেউ ভয়ে, কেউ বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে। আমিনুলকে হাত ইশারাই কাছে ডাকে। আমিনুল ও দু'তিন জন তার কাছে যায়। মালিক আমিনুলকে বলে, সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা ভিতরে গিয়ে আলোচনা করতে পারি, এরকম করলেতো আর তোদের সমস্যা মিটবে না। আমিনুলও জানে এরকমভাবে প্রতিদিন চিৎকার করলেও তাদের কথা কেউ শুনবে না। তাই সে রাজী হয়। এর আগে অনেক আলোচনা হয়েছে, অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছে কিন্তু কিছুই পূরণ হয় নি। মিথ্যা বলায় এই ভদ্র জাতরা ওস্তাদ।
আমিনুল সবাইকে শান্ত হতে বলে, স্লোগান থামে কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আলাপচারিতা চলে। আমিনুলসহ পাঁচ জন চলে মালিকের সাথে।
২.
- আমিনুল, তুই মাথা ঠাণ্ডা কর। কাল থেকে সবাই কাজে যাবে। এটাই পার্টির ডিসিশন।
- আমার কিছুই বলার নেই। আমি আর পার্টির সাথে নেই।
- এরকম করে কি লাভ বল। একদিন ঠিকই ওরা আমাদের মনের দুঃখ বুঝতে পারবে। আর তুই না থাকলে পার্টি চলবে কিভাবে?
সে কিছু বলে না। কিছুক্ষণ মন খারাপ করে বসে থেকে চলে যায় খেলা দেখবে বলে।
- আমিনুলটা আসলেই বোকা। কোন দিনই আমাদের দাবী মানা হবে না এটা ঠিকই জানি, অযথা সময় নষ্ট করে কি লাভ আছে, কি বলিস তোরা?
- ঠিকই কইছেন বস। তবে আমাদের ভাগের টাকা কিন্তু কালকেই চাই, নয়তো আবার বন্ধ। কথাটা মনে রাইখেন বস।
৩.
- সালাম আংকেল, কেমন আছেন?
- ভালো, তারপর কি মনে করে?
- আংকেল, ঝামেলাই আছি, একটা পাখির পাখা গজিয়েছে।
- পাখা গজিয়েছে তো পাখা বেঁধে দাও।
- এ পাখির পাখায় বড্ড জোর, বাঁধতে ব্যর্থ। এখন যা করার আপনিই করেন।
- আগের মত মামলা মিটালে হবে?
- এটা আরো কড়া মাল।
- ওকে, আর বলতে হবে না। নো চিন্তা ভাতিজা।
৪.
- স্যার বলেন।
- কেমন আসিস তুই?
- আপনাদের দোয়ায়। আপনাদের আশীর্বাদ ছাড়া কি আমাদের ভাগ্য খোলে? কি করতে হবে বলেন স্যার?
- এইতো বারোটা আর কি। একটু পরেই আমার পি এস যেয়ে সব ইনফরমেশন দিয়ে আসবে। কাজটা সাবধানে করবি যাতে কাক-পক্ষীও না টের পায়।
৫.
“চুপ! চুপ শালা! তুই বড় বেড়ে গেছিস! চুপ শালা! পাখনামী করিস না!”
মুখে এরকম কথা আর হাতে রাজকীয় লাঠি যা বারংবার পিঠে পড়ছে।
“স্যার, এখানে কোথায় নিয়ে এসেছেন? স্যার!! স্যার!! স্যার!!”
“চুপ শালা! চুপ! চুপ!”
“স্যার! স্যার! স্যার! স্যার!......”
.............................................।
চারিদিকে অন্ধকার, মাঠের ভিতর এই পরিত্যক্ত বাড়িতে শুধু একটি মানুষ আছে, পাশে দুই রাজরক্ষী। নীরব-নিথর সে মানুষ, তার যে কিছুই বলার নেই, হয়তো সেজন্যই কথা বলছে না।
সন্তুষ্টি, সন্তুষ্টি, সন্তুষ্টি এবং সন্তুষ্টি। চারটি সন্তুষ্টির জন্য এই একটি নীরবতা কম হয়ে গেল কিনা তার হিসাব কষতে বসা পাগলামি নয় কি? কেননা, আমরা জানি চার বিয়োগ এক সমান তিন।
বিষয়: সাহিত্য
১৬৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন