দুশ্চরিত্র ::ছোট গল্প::
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৪ মে, ২০১৩, ০৮:০৪:২৩ রাত
১.
রোমানের ডাইরি থেকে
১৮ আগস্ট, ২০০৯
একটি পার্কে প্রথম দেখা করলাম সিমুর সাথে। তার উত্তেজক শরীর আমার আবেগী কোষগুলোকে সজাগ করে দেয়। মন বলে সিমুকে জাপটে ধরি। তবে আমি জানি কি করে কি করতে হয়। আমার এক বান্ধবীর ফ্রেন্ড সিমু। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই টার্গেট করেছিলাম। আজ আমার আশা পূর্ণ হল। আমি সবিনয়ে একটি লাল গোলাপ তাকে দিয়ে বললাম, 'ভালোবাসি তোমাকে।'
সিমু ফুলটি নেয় না। আধা ঘন্টা পর ফুলটি নিল সে। আমি তার সাথে কথা বলছিলাম; নানা স্বপ্নের কথা, নানা আশার কথা।
অবশেষে সন্ধ্যা নেমে আসলো। আমি সিমুর অনেক কাছে গেলাম এবং একটি হাত তার কাঁধে রাখলাম। 'স্পর্শেই সমর্পণ' কথাটি সবসময় মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক হতে দেখেছি। আজো তার ব্যতিক্রম হয় নি।
আমার উষ্ম ঠোঁট দুটি আর দুটিকে যুগল বন্দী করে। আমার বাঁধাহীন হাত বিচরণ করে খুবই অচেতনভাবে। তবে তৃপ্তি হয় নি আজ আমার, কেননা তৃপ্তির চাহিদা অনেক আগেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
২৩ ডিসেম্বর, ২০০৯
সিমুর প্রতি লোমকূপ আমার চেনা হয়েছে। আজকাল সিমুকে আর ভালো লাগে না। অতি কাছে আসার কারণেই হয়তো দূরে চলে যাবে সে।
আবার একটা দর্শন আমাকে তাড়া করে, "যে আমাকে চুম্বন করল, আমার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিল; সে যে অন্যকে দেয় নি, এটা কি করে বিশ্বাস করি।"
২৪ মে, ২০১০
আরেকটা রমণী চলে আসল আমার জীবনে। তার গায়ের বরন সাদা কবুতরের মত। তার গায়ে টোকা দিলেই লাল হয়ে যায় ত্বক। রিক্সাতে মাস্তি ভালোই খোরাক মিটালো আজ আমার।
২২ জুলাই, ২০১০
সিমু, রেশমা অথবা বানীর চেয়ে আফরোজা অনেক শুভ্র এবং মসৃণ।
৩১ ডিসেম্বর, ২০১০
বছরের শেষ দিনেই আফরোজাকে বিদায় দিলাম। এছাড়া উপায় ছিল না। তার পরিবারের সাথে আমার পরিবার একেবারেই যায় না। বিদায় দিয়ে মনটা অনেক হালকা হল। মনে হচ্ছে খুব একটা ভালো কাজ করেছি। আজ আমি স্বাধীন। ভাবছি আর প্রেম করব না।
২২ নভেম্বর, ২০১১
আমি ছাড়ার আগেই লতিকা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। এই প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল।
২.
শর্মীর ডাইরি থেকে
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
রোমান ভাই আমার হৃদয়ের স্পন্দন। রোমান ভাইকে দেখলে আমার নিঃশ্বাস দীর্ঘ হয়ে আসে। কাম্পাসে গেলে রোমান ভাইকে অপলক দৃষ্টিতে দেখতাম। রোমান ভাই আজ যখন আমাকে রেস্টুরেন্টে ডাকল, আমার মনে আনন্দের ঝর্ণাধারা বয়ে গেল। মন বলছিল, নাচ আজ তুমি নাচ রে। রোমান ভাই যখন আমাকে অফার করল। আমার লোম খাড়া হয়ে উঠলো। একটা সুবাতাস বয়ে গেল আমার মনে। এমন মধুর মুহূর্ত আর পাই নি জীবনে। তারপর যখন আমাকে চুমু দিল, আমি যেন হারিয়ে গেলাম স্বর্গে। আমাতে বিদ্যুৎ খেলে গেল। সারা জীবন রোমান ভাইকে জড়িয়ে থাকতে মন চাই।
০৯ এপ্রিল, ২০১২
ইস! অনেক মজা দিল রোমান ভাই আজ। কি লিখব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। চিৎকার করে বলতে মন চাই। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না রোমান ভাই! তোমার মত পবিত্র পৃথিবীতে কিছু নেই।
৩ অক্টোবর, ২০১২
বান্ধবীরাই ঠিক বলে। এ জগতে ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই। আমার মন কেঁদে মরে যাচ্ছে বার বার।
২৯ নভেম্বর, ২০১২
রোমান ভাইয়ের কথা মনে পড়ে না অনেকদিন থেকেই। বাবা মায়ের কথা মতই বিয়ে করব ভাবছি। প্রেমিক থাকাটা একটা ঝামেলা ছাড়া কিছুই না।
৩.
রোমানের সাথে আরেকটি মেয়ে ঘুরে বেড়ায় পার্কে।
সে কি জানে রোমান অথবা শর্মীর ডাইরির কথা! নাকি শর্মীর মত আরেকটি ডাইরি লিখতে ব্যস্ত সে। হয়তো তার কাঁধ স্পর্শ করার অনুভূতি নিয়েই সে লিখে ফেলেছে ডাইরির কয়েকটি পাতা। হয়তো আগের বাক্যের ঐ 'হয়তো'র প্রয়োজনটিও শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।
[ঘটনা প্রবাহ কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
বিষয়: সাহিত্য
৩৫২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন