::অসতী:: (ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১২ মে, ২০১৩, ০৭:২০:৪১ সকাল
১.
বসন্ত তাকে ছুঁয়ে যায় না, গ্রীষ্ম তাকে পুড়ায় না, বর্ষা তাকে আবেগে ভিজায় না, শীত তাকে সংকুচিত করে না। নিষেধ আছে বুঝি তাতে অনুপ্রবেশে। বারান্দার লোহার শিক ধরে মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে থাকে সে। জীবনের আনন্দ তার কাছে ম্লান কেননা ভবিষ্যৎ তাকে আশা জাগায় না। সে থাকে তার বিদগ্ধ অতীত নিয়ে।
হুম! একজন সৈনিকের বর্জিত পত্নী সে। অকালে গর্ভধারণই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তার পতি তাকে ভালোবাসত এবং ভালবাসত। কিন্তু এ ভালোবাসা সব কিছু মেনে তাকে গ্রহনের পর্যায়ে ছিল না। লোক দেখানো সামাজিক এ ভালোবাসা চিরন্তন নয়। হয়তো রাতের সম্ভোগ নিশ্চিত ও সজীব করতেই সামাজিক এ ভালোবাসা।
সমাজের কোন কিছুকেই অতিক্রম করতে পারে নি সে। নিজ পিতা-মাতার ঘৃণা আর কটাক্ষের ভার তাকে এখন বয়ে বেড়াতে হয়। মাত্র একুশ বছরই তাকে একাশি বছরের নির্জীবতা দেয়।
২.
সেদিন সে গিয়েছিল এক শিক্ষকের বাসায়। স্যার নিজেই তাকে যেতে বলেছিল। সে গিয়েছিল একা এবং এটাই তার ভবিষ্যতকে অতীত করে দেয় আজো। শিক্ষক সেদিন রাক্ষস হয়ে তাকে খেয়েছিল।
অবশেষে যখন সে বাসায় ফিরেছিল, কিছুই ছিল না তার। সমাজ তাকে কিছুই বলতে দেয় নি। নিজে নিজেতে কালিমা লেপন করতে পারে নি সে। তাই বলে তার দাগ ঢাকা পড়ে থাকে নি। যখন উন্মুক্ত হয়েছে, সে থমকে গেছে।
এই জীবন ব্যাধি, মরন ব্যাধির চেয়েও ভয়ানক। কেননা এতে তোমার শরীর বেঁচে থাকবে, তবে তোমার আত্মা মরে যাবে, পচে যাবে।
হায়! কি অভিশপ্তই না তার জীবন। তার দাগ মুছে দিতে কেউই এগিয়ে আসে নি। শিক্ষকের বাসায় ধর্না দিতে গেলে যখন তার বাবাকে প্রস্তাব করে, কত টাকা?
এই পশুদের নীচতা এবং দীনতা দেখে চমকে উঠি আমি। ভাবি এ কোন ভবে আনিলে মোরে বিধাতা।
৩.
ঐ দেখ দুশ্চরিত্রা! ঐ দেখ অসতী! ঐ দেখ কলগার্ল! ঐ দেখ মাগী! ইত্যাদি নানা উপমাই প্রাপ্য এখন তার। এটা যেন তার সামাজিক অধিকার।
ছোট্ট শহরটিকে একদিন স্বর্গ মনে হত তার কাছে। আজ প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি স্থান তার কাছে নরক তুল্য।
সে আজ অসতী। সমাজের কলঙ্ক, সমাজের বোঝা। ইদানিং সতীত্বকে অভিশাপ দেয় সে। হয়তো এই অভিশাপের বিপরীতমুখী ভারেই সে একদিন হয়ে যাবে সমাজের একজন স্বীকৃত অসতী।
বিষয়: সাহিত্য
২১৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন