তোমরা যারা গনতন্ত্রের নাম শুনলে নাক সিটকাও -
লিখেছেন লিখেছেন বাচ্চা ছেলে ২১ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:০৪:১৮ রাত
গণতন্ত্রের আসল কথা হল, সমঝোতা, সহিষ্ণুতা, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজের আদর্শ বা মতবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা।
গায্ওয়ায়ে বদর, ওহুদ, খন্দক, হুনাইন ও হুদায়বিয়ার সন্ধি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুগুলিতে রাসুল (সা) বরাবর সাহাবী কেরাম (রাঃ) ও বাকিদের সাথে সলা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন। সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতেই তিনি সকল সিদ্ধান্ত নিতেন।
একটা ঘটনা বলি- বদর যুদ্ধে কুরাইশ মুশরিকরা পরাজিত হলে তারা বদলা নেয়ার জন্য মাতম শুরু করে দেয়। আবু সুফিয়ান তো শপথ করে, বদরের বদলা না নেয়া পর্যন্ত সে গোসল করবে না। ৩ হাজার মুশরিকসহ হিজরি ৩ সনে ওহুদ প্রান্তরে তাবু খাটায় আবু সুফিয়ানের মুশরিক বাহিনী। খবরটি জেনে গেলে রাসুল (সাঃ) অভিজ্ঞ ও বয়োঃবৃদ্ধ সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন আশু পদক্ষেপ কি হবে? সাহাবী কেরামদ্বয় মতামত দেন মদিনায় থেকেই যেন শত্রুর মোকাবেলা করা হয়। বদর যুদ্ধে অংশগ্রহনের সুযোগ হয় নি এমন মুসলিম ও যুবকরাও তাদের মতামত প্রদান করেন। যুবকরা বলেন, মদিনার বাহিরে গিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করা উচিত। এমন সময় রাসুল (সা) মজলিস ছেলে উঠে গেলে বয়োঃবৃদ্ধ সাহাবীগণ যুবকদের তিরস্কার করতে থাকে তাদের মন্তব্যের কারনে। কিছু সময় পর রাসুল (সা) মজলিসে ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর নাম নিয়ে মদিনার বাহিরে ময়দানের দিকে রওয়ানা দেয়া হউক। এক হাজার সৈণ্যসহ ওহুদ প্রান্তে যাওয়ার পথে মুনাফিক সর্দার এই বলে সৈন্যদল ত্যাগ করলো, রাসুল (সা) অভিজ্ঞ ও বয়োঃবৃদ্ধ সাহাবীদের কথা না শুনে যে যুবকদের কথা শুনলেন তা অপমানের তাই আমরা ফিরে যাচ্ছি। মতান্তর ৩০০-৩৫০ মুনাফিক মদিনায় ফিরে গেল। পরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা---
পরের আরেকটি ঘটনা সংক্ষেপে বলছি, খন্দকযুদ্ধে সকল কাফির শক্তি একজোট হয়ে মুসলিমদের নাম নিশানা মুছে ফেলার সংকল্প নেয়া হলো। রাসুল সাঃ জানার পর সবার সাথে সলাপরামর্শ করার পর সিদ্ধান্ত নিলেন মদিনার চারপার্শে খনন করার। বাকি আনসার মুহাজিরদের সাথে তিনি নিজেও খননকার্যে অংশগ্রহন করলেন। এসব উদাহরন কি অর্থ বহন করে তাদের কাছে প্রশ্ন রইলো। গনতন্ত্রী না স্বৈরতন্ত্রী
আমার প্রশ্ন কুরআন হাদীস বা আমাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে যারা বিশ্ববিখ্যাত আলেম ছিলেন তাদের কোন কিতাবে গণতন্ত্র হারাম এমন কথা লেখা আছে বলে আমার জানা নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে আমি আমার চিন্তাধারা সংশোধন করে নিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করবো না। গণতন্ত্রের মূল অর্থ যদি হয়ে বাক স্বধীনতা, অন্যের ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধকে গালিগালাজ না করে নিজের মত যুক্তি সহকারে প্রচার করার পর যদি জনগণ তা গ্রহণ করে এবং সেই মতাদর্শকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে তার সাথে ইসলামী ধারণার বিরোধ কোথায়? রাসূলে পাক (সা.) মক্কার তের বছর অনেক কষ্ট ও নির্যাতন ভোগ করেও ইসলামকে অন্যেদের মাঝে এমন পরিমাণ গ্রহণ যোগ্য করতে সক্ষম হলেন না যাতে তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। অন্যদিকে নিজের জন্মভূমি থেকে বহুদূরে মদিনার লোকজনের আমন্ত্রণে আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানে গিয়ে ইসলামকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। অর্থাৎ জনগণের কাছে ইসলাম যখন গ্রহণযোগ্য হল এবং জনগন যখন ইসলামী জীবনব্যবস্থা মেনে নিয়ে তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করতে আগ্রহী হল, তখন নবী করীম (সা.) পূর্ণাঙ্গ দীন কায়েম করার ব্যবস্থা করলেন। তার এ কর্মসূচি কি সশস্ত্র বিপ্লবের সমার্থক নাকি গণতন্ত্রের বেশি কাছাকাছি ব্যাপারটি আমি ভালভাবে চিন্তা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ রাখছি।
যা বলতে চাইছিলাম, রাসুল (সা) এর কি এমন ঠেকা পড়েছিল সবার সাথে সলা পরামর্শ করার? যাকে ওহির মাধ্যমে আল্লাহ সব কিছু জানিয়ে দেন তার তো অন্য কারো সাথে সলা পরামর্শ করার কোন প্রয়োজনই ছিল না। আমরা যারা লিংকনের তন্ত্র, কুফরতন্ত্র বলি এর শুরু রাসুলের জামানায়। আমরা ইসলাম চর্চা গবেষনা করি না বিধায় অল্প পানির মাছ ফাল মারি দশ হাত ব্যাপার সেপার। লিংকনরা ঠিকই ইসলাম থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের মত করে পদ্ধতি দাড় করিয়ে আমাদের গিলিয়েছে। এখন আমরা লিংকনের গনতন্ত্র বলে ইসলামিস্টদের ঘৃণা করি যা একমাত্র কাফিরদের মানায়!! আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক।
অনেকের সাথে আমার প্রায়ই বাক বিতন্ডা হয় গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে, তাদের জন্য এই ছোট্ট লেখনি। ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই।
বিষয়: বিবিধ
১২২৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই লেখাটা পড়তে পারেন কারণ এখানে হয়ত আপনার অনেক উত্তরই পাবেন।
প্রথম কথা - আব্রাহাম লিঙ্কন গনতন্ত্র আবিস্কার করেনি। গনতন্ত্রের আবিস্কার হয়েছে প্রাচীন রোম সভ্যাতার সময়।
দ্বিতীয় কথা - নারিকেল ও তাল দুটি ভিন্ন ফল। এখন আমাকে বলুন, নারিকেলের মধ্যে কি তাল আছে? নারিকেলের মধ্যে তাল হারাম নাকি হালাল? ঠিক নারিকেল ও তালের মতন, ইসলামিক শাসনতন্ত্র ও গনতন্ত্র দুটি সম্পুর্ন ভিন্ন জিনিস। একটা আরেকটার মধ্যে থাকেই না, হালাল হারাম তো অনেক পরের কথা।
তৃতীয় কথা - রাসুল (সাঃ) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন এটা ভুল ধারনা। বরং সাহাবীরা সারাদিন রাসুল(সা) এর কাছে পরামর্শের জন্য আসতেন এবং তার কথামতন সিদ্ধান্ত নিতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি যে পরামর্শ করেছেন সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নয়, বাস্তবায়ন করার জন্য। আল্লাহর হুকুমে তিনি যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলেন। সাহাবীদের সাথে তার পরামর্শ হল সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য। সেনাবাহিনীর কমান্ডার এমন পরামর্শ তার অধীনস্ত সেনাদের সাথে করেন। এটা কোন গনতন্ত্র নয়, এটা যুদ্ধ সফলভাবে পরিচালনা করার একটা কৌশল।
গনততন্ত্র ও ইসলামিক শাশন এ দুটর কোন্টাই আপনি চেনেন না বলেই ব্যাপারটা গুলিয়ে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে আমার ছোট একটি লেখা পড়ুন - http://smelite.blogspot.com/2014/04/blog-post_23.html
আপনার লিখার শেষের অংশটুকু বড় বেশী অহংকারী অহংকারী হয়েছে। আমার কাছে এক পর্যায়ে মনে হল 'সুরা কাহাফের সেই বাগানের মালিকের মত নয়তো'?
রাসুলুল্লাহ সঃ এর সূরা কিংবা পরামর্শ নিয়ে আপনি যে উদাহরন গুলো দিলেন তার একটাও গনতন্ত্রের সাথে যায় না - তথা মেজরিটির মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া - হয়েছে এমন উদাহরন একটি ও হয় নি।
ওহুদের যুদ্ধে ইয়াংদের মতামত মেজরিটির ছিল এটা কোথায় পেলেন - রেফারেন্স দিন।
খন্দকের যুদ্ধে এক সালমান ফার্সির মত গ্রহন করা কোথায় মেজরিটির সিদ্ধান্ত হল - রেফারেন্স দিন।
ইসলামকে বিকৃত করে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা অন্যায়। দয়া করে তা করবেন না। আপনি নিজে প্রতারিত হবেন এবং অন্যকেও প্রতারিত করবেন।
গনতন্ত্রের কোন ইউনিভার্সাল প্রাকটিক্যাল সংজ্ঞা নেই। এটা স্থান, কাল, পাত্র ও সময় ভেদে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু কোরান ও এর দ্বারা সৃষ্ট ইসলাম স্থান, কাল, পাত্র ও সময় ভেদে কোন পরিবর্তন হয় না।
গনতন্ত্র মেজরিটির (আলেম ও জালেম ও নির্বোধ ও অশিক্ষিত) মতামতকে আমলে নেয়। কিন্তু ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিষয়ের এক্সপার্ট এর মতামতকে আমলে নেয়।
গনতন্ত্রের মেজরিটির সিদ্ধান্ত যথার্থ। কিন্তু ইসলামে আল্লাহর আইন কিংবা শরীয়ার সাথে কমপার্টিবিলিটি / সামন্জস্য না থাকলে - সব কিছুই ত্যাজ্য তথা ভ্রান্ত।
গনতন্ত্রে জনগন হল সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু ইসলামে আল্লাহই শুধু সকল ক্ষমতার উৎস।
গনতন্ত্রে সংসদ সার্বভৌম এবং সেই সংসদ তার দেশে যে কোন কিছুকে বৈধ তথা হালাল করতে পারে (যেমন বাংলাদেশে সুদ, জুয়া, মদ, বেশ্যা বৃত্তি, শিরক, কুফরী, ব্লাসফেমী করা ইত্যাদি হালাল করা হয়েছে) এবং চাইলে যে কোন কিছুকে হারাম করতে পারে (যেমন বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হারাম, নির্দিষ্ট মানুষের জন্য ওয়াজ মাহফিল হারাম, কর্পোরেট অফিসে দাড়ি রাখা হারাম, কিছু স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব হারাম ইত্যাদি)। কিন্তু ইসলামে কোরান তথা শরীয়া বিরোধী কোন কিছুকে হালাল করা যায় না কিংবা হারাম করা যায় না।
গনতন্ত্রে দেশ ও জনসাধারনের নিরাপত্তা ইউ এন এর সিকিউরিটি কাউন্সিল এর উপর নির্ভরশীল। সরকার ও প্রশাসন তার কার্যক্রম এর জন্য ইউ এন বডি র (যেমন আই এল ও, আই এম এফ, ইন্টারন্যাশানাল ক্রিমিনাল কোর্ট, মানবাধিকার কমিশন, ইউনিসেফ ইত্যাদি) কাছে জবাবদিহী করতে বাধ্য। কিন্তু ইসলামে সরকার ও প্রশাসন নিরাপত্তা ও জবাবদিহীতার জন্য শুধু মাত্র আল্লাহর উপর নির্ভরশীল ও জবাবদিহী করতে বাধ্য।
দেখুন দল কানা হবেন না। যা পড়ছেন, যা শুনছেন তা অন্ধের মত বিশ্বাস করবেন না। আল্লাহ আপনার মাথায় গিলু দিয়েছেন এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করার শক্তি দিয়েছেন। দেখুন আল্লাহর যে ৯৯ টি নাম আছে তথা আল্লাহর বৈশিষ্ট্য আছে - তার কয়টি শুধু মাত্র 'গনতন্ত্রের জন্য' 'গনতন্ত্রের নামে' আল্লাহ র পরিবর্তে অন্য কিছু কে দিয়ে তা রিপ্লেইস করা হয়েছে।
লিটারেলী যে সমাজ গনতন্ত্র গ্রহন করেছে - সে সমাজ অন্য কিছুকে (সংস্থা হোক কিংবা মানুষ হোক কিংবা মতবাদ হোক) আল্লাহর পরিবর্তে রিপ্লেইস করেছে। সে সমাজ মক্কার কোরাইশদের মত আল্লাহকে মানে ঠিক ই কিন্তু সে সাথে ৩৬০টি মূর্তির মত ৩৬০টি স্বত্তাকে ইতোমধ্যে আল্লাহর প্যারালাল এ প্রতিস্থাপন করেছে।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন