বিএনপি-আ’লীগে জামায়াত ফোবিয়া!

লিখেছেন লিখেছেন বাচ্চা ছেলে ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:১৮:৪০ দুপুর

জামায়াতের এই এক দোষ। চুপচাপ থাকলে বিএনপি সন্দেহ করে “গোপন আতাঁতের”। আ’লীগ ভোগে নাশকতার আশংকায়।

আর জামায়াত মাঠে সোচ্চার থাকলে মিডিয়ার প্রচারণায় তকমা যোগ হয় সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের। বিএনপি পায় স্বস্তি। বিশেষ করে বিএনপির ময়দান বিমুখ নেতারা বজ্রকন্ঠে বলতে পারে জামায়াত না পারলে আমরা নামবো। কিংবা আ’লীগ জামায়াতই সামলাতে পারে না, আর বিএনপি নামলে তো কথাই নেই।

আর মিডিয়াপ্রেমিক কতিপয় শীর্ষ নেতা ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলতে পারেন, ম্যাডাম, জামায়াত তো এখন মাঠে আছে। এ অবস্থায় আমরা নামলে লোকজন আমাদেরকে “যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী” ভাববে। আমাদের এখন মাঠে নামা ঠিক হবে না।

সাম্প্রতিককালে বিএনপি কেবল ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত থেকে একটার পর একটা ”জ্যোতিষবানী দিয়েই যাচ্ছে। নেতাদের কেউ বলছেন এ বছরের মধ্যেই আ’লীগ সরকারের পতন হবে। কখনও বলা হচ্ছে- দল গুছিয়ে আন্দোলনে নামবে বিএনপি। আবার অতীতে বলা হচ্ছিল উপজেলা নির্বাচনের পরে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

একমন ঘিও পোড়ানো হলো না, আর রাধারও নাচা হলো না। বিএনপিরও সেই অবস্থা। ঢাকা মহানগর কমিটিও করতে পারলো না বিএনপি। গুলশান আর প্রেসক্লাবের বাইরে দলীয় চেয়ারপার্সনকে এখনও যেতে দেয়নি নীতি নির্ধারণী ফোরাম। সারাদেশ সফর তো দূরের কথা।

এরকম অবস্থায় মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুচ্ছামান দুদুরা ঘর সামলাতে না পেরে জামায়াত-আ’লীগ সমঝোতা নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলছেন। তাদের সাথে সুর মেলাচ্ছেন আরও অনেকেই। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের সাফল্য এবং বিএনপির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যাপক ব্যবধানে জামায়াত প্রার্থীর বিজয় স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না অনেক ডাকসাইটে নেতা। তৃণমুল বিএনপি নেতাদের এলাকায় নিজদলের বাইরে অভিমান করে জামায়াতকে ভোট দেওয়ায় এই নেতারা চটেছেন জামায়াতের উপরে।

আপাতত ময়দানে শান্ত জামায়াতকে নিয়ে তাই সমঝোতা আর গোপন আতাঁতের বাতাস ছড়াচ্ছেন বিভিন্নভাবে।

প্রশ্নটা এখানেই। ফলাফলতো জামায়াত-আ’লীগ আতাতের কথা বলে না। এখনও প্রতিদিন কোনো ঘটনা ছাড়াই সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের শতাধিক গ্রেফতার হয়। গুমের শিকারও হয় প্রতি সপ্তাহেই জামায়াত শিবিরের লোকজন।

আজও (২৭ এপ্রিল, ২০১৪) সাতক্ষীরা শহরের একটি মেসে দুপুরের খাবার খাওয়া অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন শহর শিবির সেক্রেটারী।

নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানরা শপথ নিতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন।

জামায়াত নেতা কর্মীরা জামিনের পর জেলগেটে আবারও গ্রেফতার হচ্ছেন।

তাহলে সমঝোতা কোথায়? জামায়াতের ভাষায়, সমঝোতা হলে তো কেন্দ্রীয় নেতাদের কারাবন্দী থাকা লাগতো না। দলের নিবন্ধন বাতিলের কোনো মামলাও এদেশে হতো না।

কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। তাহলে জামায়াত-আ’লীগ আতাত কি করে হলো? আতাত হলে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দল হতে পারতো। বিএনপির অনেকেই তখন বিদ্রোহী হয়ে জামায়াতের পক্ষে প্রচারনায় অংশ নিতো। আন্দোলনবিমুখ অতিকথন প্রিয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি জামায়াতের পক্ষে কাজ করেছে এমন নজির তো আছেই।

বিএনপির ভয় হলো, তৃণমূল বিএনপি আস্তে আস্তে জামায়াতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মিডিয়াতে গলাবাজি করে আর কর্মীদের কথা শুনানো যাচ্ছে না।

এবারের লংমার্চে জামায়াত অংশ না নেওয়ায় মির্জা ফখরুরের নেতৃত্বে কেমন সাড়া পড়েছে তা জাতি দেখেছে। এমনকি বগুড়া বিএনপিও লংমার্চে সাড়া দেয়নি।

হতাশ মির্জা ফখরুল- জনগণ অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে কেনো এতটা সহনশীল হলো তা ভেবে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন।

তার হতাশা আজ আরও একবার প্রকাশ পেয়েছে গুলশানের কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনসমুহের বৈঠকে অংশ না নিয়েই বেরিয়ে আসায়।

জামায়াত নিয়ে বিএনপির ভীতি প্রকাশ পেয়েছে জোরালো ভাবেই। জামায়াত মাঠে থাকলে মাঠে না থেকে বিএনপি নেতারা বলতে পারতো আমরা মাঠে আছি। কিন্তু এখন জামায়াত না থাকায় তারা বড় বেকায়দায়। এখন মাঠে না থাকার কিংবা না নামার আরও অযুহাতের সন্ধানে তারা। তাই মনোযোগ অন্যদিকে দেওয়ার জন্য “জামায়াত-আ’লীগ” আঁতাতের প্রচারণায় একবারে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সবাই। এতে যে নিজেদের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে পুরোটাই বেখেয়াল তারা।

আওয়ামী লীগের ভিতরেও জামায়াত ভীতি তীব্রভাবে কাজ করছে। গণজাগরণ মঞ্চের বহু বিভক্তি, ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, তৃণমূল আ’লীগের নিষ্ক্রীয় ভাব, এক কেন্দ্রিক কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব, দলে সাধারণ সম্পাদকের নীরবতা, একাত্তরে আ’লীগ আর বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা নিয়ে তারেক রহমান আর তাজউদ্দিন কন্যার বক্তব্য ইত্যাদির সাথে জামায়াতের রহস্যময় নীরবতা ভাবিয়ে তুলছে আ’লীগকে।

আ’লীগের ধারণা, তলে তলে জামায়াত কঠোর আন্দোলনের প্রস্ততি নিয়ে রাখছে। সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে জামায়াত।

আ’লীগের জামায়াত ফোবিয়াতে ঘি ঢেলে দিচ্ছে কাগুজে, অনলাইন পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলগুলো। কেউ লিখছে “শিবিরের সুইসাইড স্কোয়াড” প্রস্তুত।

আবার কোনো পত্রিকা লিখে ফেললো “৩৪ জেলাকে আতংকের জনপদে” পরিণত করবে জামায়াত।

সবমিলিয়ে জনগণ ভালবাসলেও জামায়াত “ফোবিয়া” গ্রাস করছে আ’লীগ আর বিএনপিকে।

লেখকঃ জ. হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও কলামিস্ট।

বিষয়: বিবিধ

১১১৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214368
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪৯
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : বাস্তবিক পোষ্ট।
214429
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : ১৯৯১ এ বিএনপি পেয়েছিল ১৪৪/১৪৬ টা সিট । আওয়ামী লীগ পেয়েছিল সম্ভবত ৮৮ টা । জাতীয় পার্টি ৩০/৩২ টা । জামায়াত পেয়েছিল ১৭/১৮ টা ।

ফলে বিএনপি জামায়াতের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করে ।

এই আমলেরই শেষের দিকে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে তত্ত্বাবধায়কের দাবীতে আন্দোলন করে তাদেরই পার্টনারকে বিপদে ফেলে ।

ফলে ১৯৯৬ এ ৩ টা আসন পায় , লাভের গুড় কিন্তু লীগ আর এরশাদ ভাগ করে নেয় ।

২০০১ এ আবারও বিএনপির সাথে ৪ দলীয় জোট করে মন্ত্রীত্ব লাভ করে ।

এর ফলে বিএনপির রেপুটেশন অনেক নেমে যায় ।

জামায়াতই হল ডিগবাজী মার্কা দল । বিএনপির সাথে গেলে তবুও তো কিছু পায় । আর আওয়ামী লীগের সাথে গেলে পায় ছোবড়া ।

আর এখন তো আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দৌড়ানীর উপরেই আছে যাদের সাথে ১৯৯৬ এ জোট করেছিল সরকার পতনের ।

সদা জোট পরিবর্তনকারী জামায়াতকে তাই সন্দেহ করা বিএনপির জন্য খুবই যুক্তিযুক্ত ।

ভাল হয় এটাকে গা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File