শাহবাগে আজকের প্রজন্মের ঘোষণা ও কিছু কথা !
লিখেছেন লিখেছেন বাচ্চা ছেলে ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:২৬:০০ বিকাল
শাহবাগে কতিপয় কিছু মানুষকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে তাদের বিচারের রায় যেন ফাঁসি হয় এ দাবিতে গণজাগরনে আজকের প্রজন্ম নামক একটি লিফলেট বিলি করা হয়। সেখানে যেসকল বিষয় ফুটে উঠে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ সংক্ষেপে ----
আজকের প্রজন্মের ঘোষণা
২৩ মাঘ, ১৪১৯ (07 February, 2013)
১. সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী কার্যকর দেখতে চাই,
‘ভুলি না ভুলিও না, ফাঁসী ছাড়া কিছু মানি না’।
অভিযোগ উঠলেই যে তা সত্য তা বলা অসম্ভব, একমাত্র তথ্য উপাত্তের মাধ্যেমেই তা প্রমান করা সম্ভব। তাছাড়া উত্থাপিত তথাকথিত অপরাধীর অপরাধ কতটুকু সত্য তা একমাত্র বিবেচনা করার ইখতিয়ার আদালতের ছাড়া আর কারও না থাকারই কথা, যেহেতু রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে চায়। তথাপি বিচারাধীন একটি মামলা তথা রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে আদালতের উপর চাপ প্রয়োগের ফলে বিচারকে প্রভাবান্বিত করা হচ্ছে। তাই এ ধরনের দাবি ঘৃনিত অপপ্রয়াস বলে বিবেচিত হওয়া অতি স্বাভাবিক।
২. আমরা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনকারী পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ব না, এই প্রজন্ম এগুলোকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করছে।
যুদ্ধাপরাধী জেনেভা কনভেশন অনুযায়ী যাদের গণ্য করা হয় তাদের একজনও বাংলাদেশে রয়েছে কিনা সন্দেহ। তথাপি যারা যুদ্ধাবস্থায় মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার না করে পেনাল কোর্ট বা ফৌজাদারী মামলার মাধ্যমে বিচার করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করে মানবতা বিরোধী অপরাধকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে ভ্রান্ত দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তারা আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত, বহুল পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একটি বিশেষ আদর্শের ধারক বাহক। অতীতে তাদের একটি রাজনৈতিক সীদ্ধান্ত আজকে তাদের মানবতা বিরোধী অপরাধী বানিয়েছে। ইতিহাস উল্টো খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। অন্যান্য সমাজ সেবকদের ন্যায় তাদেরও সামাজিক কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রয়েছে এবং অন্যান্যদের থেকে তুলনামুলক বেশী। এরই পরিপেক্ষিতে তারা ও তাদের রাজনৈতিক ও বিশেষ মতাদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে মানুষের অংশগ্রহন যা ভিন্ন মতাবলম্বীদের নাক শিটকানোতে পরিনত হয়েছে। যখন তাদের গড়ে তোলা সেই সব প্রতিষ্ঠান থেকে জনসাধারণ সুফল পাওয়ার পাশাপাশি বিশেষ আদর্শ লালন ও পালন করছে তখন আজকে যারা দাবি তুলেছে তাদের বিচারের, তাদের গাত্র দাহ হওয়া অতি স্বাভাবিক। তাই তারা তাদের ভিন্ন মতাদর্শকে সহ্য করতে না পেরে এই দাবী তুলেছে।
৩. আমরা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনকারী পরিচালিত কোন ব্যাংকে টাকা রাখব না, এই প্রজন্ম এ ব্যাংক গুলোকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করছে।
বোকার স্বর্গে যারা বাস করে তারাই এ ধরনের দাবি তুলতে পারে। মানুষ তখনই বিকল্প পথে হাটে যখন কোন উপায় থাকে না। বর্তমান সমাজে বিশ্বাস পাওয়ার মত ব্যাক্তিত্ব এবং প্রতিষ্ঠান খুব কমই রয়েছে। একটি বিশেষ মতাদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বিপরীত মতাদর্শের মানুষের সহ্য না হওয়াই স্বাভাবিক। যখন বিপরীত মতাদর্শ বিকল্প কোন সঠিক ও সৎ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ব্যার্থ তখন জনগনের আগ্রহ সেই বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি হওয়া অতি স্বাভাবিক এবং এই বৃদ্ধি পাওয়াকে তারা সহ্য করতে না পেরেই এ ধরনের দাবি।
৪. আমরা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনকারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করছি।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বাজেয়াপ্ত করা কখনই সম্ভব নয় কারণ সেই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি কোন না কোনভাবে জনগনের মদদে পরিচালিত হয়। জনগনের একটা বিরাট অংশ সেখান থেকে লাভবান হয় আবার লোকশান গোনে। এখন সেসব প্রতিষ্ঠান যদি ভালো কিছু উপহার দিয়ে থাকে তা বাজেয়াপ্ত করলেই শুধু হবে না তার বিকল্প কিছু খুজে বের করতে হবে।
৫. আমরা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনকারী পরিচালিত কোন কোম্পানির উৎপাদিত কোন পণ্য আমরা ব্যবহার করব না এবং এই মঞ্চ এগুলোকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করছে।
ইতিহাস স্বাক্ষী একসময় ব্রিটিশ পণ্য বর্জনকে কেন্দ্র করে মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দন্দ শুরু হয়েছিল এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তুলনামুলক বেশি প্রতাপশালী হওয়ায় তারা ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করলেও মুসলিমরা নিম্ন বর্ণের হওয়ায় তা না পারার ফলে একটি বিশৃংখলা তৈরি করেছিল উগ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। একটি রাষ্ট্র গঠনে অবদান শুধু একজনের পক্ষেই সম্ভব নয়। আজকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা যদি সঠিক কোন পদ্ধতিও অবলম্বন করে তা মিথ্যা দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা এক ধরনের গোয়ার্তুমি ছাড়া বৈ কিছু না। রাষ্ট্রে চোর থাকে এবং চোর ধরতে পুলিশও থাকে। চোর তখনই চুরি করতে অনেক সাচ্ছন্দবোধ করে যখন পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে। ভাল যখন থাকবে না তখন খারাপ প্রতাপের সহিত ভালোর তকমা নিতে পারবে। এজন্য ভালোকে আগে খারাপ বলে প্রচার করা আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে ভালর সকল ভালো কাজকে খারাপ বলে চালিয়ে দেয়া।
৬. আমরা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনকারী পরিচালিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানির থেকে জমি বা ফ্লাট কিনব না, এই প্রজন্ম এ কোম্পানি গুলোকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করছে।
রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলোতে একধরনের ভাওতাবাজী ও ছলচাতুরী অতি সাধারণ বিষয়। এক জায়গা দশ জনের কাছে বিক্রি করারও রেকর্ড রয়েছে। অনেক সময় টাকা নিয়ে লোপাট হওয়ার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানুষের আলাদা একটা আগ্রহ থাকা অতি সাভাবিক বিষয়। জনসাধারনের অতি কষ্টের টাকা তাই কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতেই যায়। এদিকে একটি আদর্শবান মতাদর্শের অনুসারীরা রিয়েল এস্টেট কোম্পানী নামক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সততার সহিত অগ্রসর যখন হচ্ছিল, তখন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষেরা তা সহ্য করতে পারে না। কারণ তাদের বিপরীত আদর্শ থেকে সেই তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বলে যাদের গণ্য করা হচ্ছে তাদের মতাদর্শের প্রচার হচ্ছে অনেক দ্রুতগতিতে।
৭. আমরা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনকারীদের সাথে আত্মীয়তা করবনা।
যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে বহুল পরিচিত এবং একমাত্র দাবিদার তিনি সম্পর্ক করেছেন সেখানে আমাদের করতে বাধা কোথায়। আর তাছাড়া যাদের আমরা যুদ্ধাপরাধী বা তাদের সমর্থনকারী বলছি তাদের চরিত্র, নৈতিকতা অন্যান্য চেতনাধারীদের থেকে উত্তম এবং বিকল্প কোন উপায় না পেয়ে সীদ্ধান্ত নিতে তাই বাধ্য হই। এ ধরনের দাবি একজন বিকারগ্রস্থ মানুষের পক্ষেই সম্ভব। আমরা পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করবো, এটাই মানবিক শিক্ষা।
বিষয়: বিবিধ
১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন