কাদের মোল্লা নিরাপরাধ, বিবেক ও তথ্য উপাত্ত সহকারে যাচাই করুন।

লিখেছেন লিখেছেন বাচ্চা ছেলে ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:২০:০৬ দুপুর

কাদের মোল্লা নিরাপরাধ, তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়েছে- বিবেক ও তথ্য উপাত্ত দিয়ে যাচাই করুন।

জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ই আগষ্ট। রাজনৈতিকভাবে একজন বহুল পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে ডিইউজে এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান সরকার ১৩ই জুলাই ২০১০ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন থেকে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে পল্লবী পুলিশ স্টেশন কেস নং- ৬০(১)০৮ এবং পরবর্তীতে কেরানীগঞ্জ থানাধীন মামলা নং- ৩০(১২)০৭ এ গ্রেফতার দেখায়। এরপর ২২শে জুলাই ২০১০ তারিখে আইসিটিবিডি মিস কেস নং- ০১/২০১০ এ কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার দেখানো হয়। অতপর তখন থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অবৈধভাবে আটক রাখা হয় যার কারণে ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অব আর্বিট্রেরি ডিটেনশন তাকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দেয়ার জন্য বলে বর্তমান সরকারকে।

২৮শে ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় এবং ২৮শে মে ২০১২ তারিখে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করে ৬টি অভিযোগের ভিত্তিতে। ৬টি অভিযোগের উপর প্রসিকিউশন সর্বমোট ১২ জন স্বাক্ষীকে হাজির করেন। এর বিপরীতে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের প্রদত্ত ৯৬৫ জন স্বাক্ষীর মধ্যে শুধুমাত্র ৬ জন স্বাক্ষীকে হাজির করার অনুমতি দেয়।

৩রা জুলাই ২০১২ থেকে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের স্বাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহন শুরু করেন। জুলাই মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল সর্বমোট ৫জন প্রসিকিউশনের স্বাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এবং নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত বাকি ৭জন সহ সর্বমোট ১২ জন প্রসিকিউশন স্বাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

ট্রাইব্যুনাল জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৬টি অভিযোগ গঠন করে তার উপর বিচার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম চার্জটি হলো মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পল্লবকে নবাবপুর থেকে ধরে এনে মিরপুরে ঈদগাহ মাঠে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করা। এই চার্জে পিডাব্লিউ-২ সৈয়দ শহিদুল হক মামা ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষী প্রদান করেন। তিনি বলেন যে তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নির্দেশে আক্তার গুন্ডা পল্লবকে টাটারি বাজার থেকে ধরে এনে মিরপুর হত্যা করে। কিন্তু তিনি কার কাছ থেকে শুনেছেন এ ব্যাপারে সঠিক কোন উত্তর তিনি দিতে পারেন নি। পিডাব্লিউ-১০ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম বলেছেন যে, তিনি শুনেছেন শহীদ পল্লবকে কাদের মোল্লার নির্দেশে মারা হয়। কিন্তু তিনি কার কাছ থেকে শুনেছেন এই ব্যাপারে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। সর্বশেষ ডিডাব্লিউ-৪ শাহেরা যিনি প্রসিকিউশনের স্বাক্ষী ছিলেন যার অন্যতম পরিচয় হচ্ছে তিনি পল্লবের ভাবী । তিনি কখনও শহীদ পল্লবের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কাদের মোল্লার নাম শুনেনি। শুধু তাই নই তদন্তকারি কর্মকর্তা তার কোন প্রকার জবানবন্দি গ্রহন না করে কাদের মোল্লার নাম জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি প্রদান করেন।

দ্বিতীয় চার্জে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার্জে স্বাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ- ২ ঃ সৈয়দ শহিদুল হক মামা, পিডাব্লিউ-৪ ঃ কবি কাজী রোজী, পিডাব্লিউ- ১০ ঃ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম।

পিডাব্লিউ- ২ বলেন তিনি শুনেছেন কবি মেহেরুন্নেসাকে কাদের মোল্লার নির্দেশে হত্যা করা হয় কিন্তু তিনি কার মাধ্যমে শুনেছেন কিভাবে শুনেছেন তা আসামী পক্ষের প্রশ্নের উত্তরে জাবাব দিতে পারেন নি। পিডাব্লিউ- ৪ কবি কাজী রোজী বলেন তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারীরা শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেন। কিন্তু কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছেন কিনা তিনি তা শুনেননি। অপরদিকে তার ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত “শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা” নামক বইয়ে তিনি শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার মৃত্যুর ব্যাপারে বিষদভাবে লিখেন। কিন্তু তিনি তার বইয়ে কাদের মোল্লার নাম কোথাও উল্লেখ করেননি। পিডাব্লিউ- ১০ বলেন শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছে বিহারীরা এবং এই হত্যার ব্যাপারে তিনি কোন ভাবেই কাদের মোল্লাকে জড়িত করেননি।

তৃতীয় চার্জে আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেবকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে স্বাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ- ৫ খন্দকার আবুল আহসান এবং পিডাব্লিউ- ১০ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম। তারা উভয়ে শোনা স্বাক্ষী এবং তারা কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারে নি খন্দাকার আবু তালেব হত্যাকান্ডের সাথে কাদের মোল্লা জড়িতর ব্যাপারটি।

চতুর্থ চার্জে কেরানীগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মওলা এবং ওসমান গনি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে স্বাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ- ১ মোজাফফর আহমেদ খান, পিডাব্লিউ- ৭ আব্দুল মজিদ পালোয়ান, এবং পিডাব্লিউ- ৮ নুর জাহান। এই তিনজন স্বাক্ষীর কেউই আব্দুল কাদের মোল্লার কেরানীগঞ্জের ঘটনার সময় উপস্থিত থাকার কথা এবং ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি। পিডাব্লিউ- ১ তার প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছেন ঐ সময় তিনি কাদের মোল্লাকে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে দেখেন নি। পিডাব্লিউ- ৭ আব্দুল মজিদ পালোয়ান তার পদত্ত জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ঐ সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর। এবং তার পুরো পরিবার এবং এলাকাবাসি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র তিনিই ঘটনা দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যান। তিনি ঘটনার সাথে কাদের মোল্লার জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে বলেন কাদের মোল্লা সাহেব ঘটনার সাথে জড়িত ছিল এ কথা তিনি শুনেছেন। সর্বশেষ তিনি আরো উল্লেখ করেন তিনি ঐ এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। পিডাব্লিউ- ৮ নুর জাহান তার পদত্ত জবানবন্দিতে বলেন তার স্বামীর হত্যাকান্ডের ব্যাপার উল্লেখ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি যখন লাশ দেখতে যান তখন তিনি একজন খাটো এবং কালো লোকের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন ঐ ব্যাক্তিটি ছিল কাদের মোল্লা। অথচ ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ হলো ১৯৭৬ সাল এবং ট্রাইব্যুনাল ও তদন্তকারি অফিসার তার বাড়িকে কোন ঘটনাস্থল হিসাবে নিধারণ করে নি এবং সুনির্দিষ্ট ঘটনাস্থল থেকে তার বাড়ির দুরুত্ব হলো ৫ কি: মি: যা তদন্তকারি কর্মকর্তা তার স্বাক্ষে বলে গেছেন।

পঞ্চম চার্জে পল্লবীর আলোকদি গ্রামের হত্যাকান্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে স্বাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ- ৬ শফিউদ্দিন মোল্লা এবং পিডাব্লিউ- ৯ আমির হোসেন মোল্লা। পিডাব্লিউ- ৬ তার প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছেন তিনি পাশ্ববর্তী ঝোপ থেকে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে গুলি করতে দেখেছেন। অপরদিকে তার অপর ছোট ভাই পিডাব্লিউ- ৪ আলতাফ উদ্দিন মোল্লা বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের সামনে বলেন যে, ঘটনার দিন তাদের পুরো পরিবার পালিয়ে গিয়েছিল সাভারস্থ শারলিয়া গ্রামে। সেখানে তার বড় ভাই আলতাফ উদ্দিন মোল্লাও তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন। পিডাব্লিউ- ৯ আমির হোসেন মোল্লা মিরপুর এলাকার লাট ভাই হিসাবে পরিচিত। তিনি হাই কোর্টের বর্তমান একজন বিচারপতির জায়গা দখল করে সাম্প্রতিক জেলে গেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদখল এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে শতাধিক মামলা বিচারাধীন আছে।

ষষ্ঠ চার্জে প্রসিকিউশন জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হযরত আলী লসকর এবং তার পরিবারকে হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ আনেন। যার একমাত্র স্বাক্ষী হল মমেনা বেগম পিডাব্লিউ- ৩। তিনি বলেন যে তিনি কাদের মোল্লাকে দেখেননি শুনেছেন তিনি এই নাম শুনেছেন তার আব্বার মুখ থেকে। এবং পরবর্তীতে তিনি কামাল খার কাছে শুনেন যে তার পিতার মৃত্যু জন্য কাদের মোল্লাই দায়ী। (অসমাপ্ত)

বিষয়: বিবিধ

১০৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File