রক্তাক্ত ফিলিস্তিন ও ঘরের ইঁদুর
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক ফেরদৌস ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:৫২:০৬ সকাল
মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানের অশান্তি ও অস্থিরতার একটি ঐতিহাসিক পটভূমিকা আছে। সেই পটভূমিকার সাথে মেলালে আরব বিশ্বে এখনকার দালাল শাসকগোষ্ঠী এবং তাদেরকে নিয়ে আরব জনগণের যন্ত্রণার বিষয়টি অনুধাবন করা সহজ হয়। ফিলিস্তিন সহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এখনকার রক্তপাত যে অনেকটাই সেই পটভূমিকার জের বা ইতিহাসের দায় -এই সত্য এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সম্প্রতি ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যা ইস্যুতে সৌদি সরকারের সরাসরি ইসরাইলের পক্ষাবলম্বনের বিষয়টি বিশ্ব মুসলিমকে চরমভাবে আহত করেছে। সৌদি যুবরাজ ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তুর্ক ফয়সাল গাজার হত্যাযজ্ঞের জন্য হামাসকে দায়ী করে বলেছেন ইসরাইলে রকেট নিক্ষেপ করে হামাসই অপরাধ করছে। ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মত অমুসলিম দেশগুলো ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। কিছু দেশ ইসরাইল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত ফেরত এনেছে। বলিভিয়া ইসরাইলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে ইসরাইলের সাথে কিছু চুক্তিও বাতিল করেছে। বিপরীতে আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদের বেশিরভাগই ইসরাইলি গণহত্যার সরাসরি নিন্দা জানাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। মিশরে সিসির সেনা সরকার গাজাবাসীর চরম দুর্ভোগকে ষোলকলায় পূর্ণতা দেয়ার জন্য রাফাহ ক্রসিংয়ে অবরোধ জোরালো করেছে এবং ইসরাইল বেষ্টিত গাজাবাসীর লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত মিশর সীমান্তের সুড়ঙ্গগুলো খুঁজে খুঁজে ধ্বংস করেছে। এই ঘটনাগুলো সাময়িক কোন বিচ্যুতি বা বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক ঘটনা নয়। প্রকৃত ব্যাপার হলো আরব শাসকরা চাকতি পাগড়ি আর লম্বা জোব্বার আড়ালে বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রকৃত মনিবেরই নেমকহালালি করে আসছেন। উপরে খাদেমুল হারামাইন, খাদেমুন নবীর মত চটকদার লকব ঝুলিয়ে ভেতরে ভেতরে তারা আসল মনিবের নিষ্ঠাবান দাসই থেকে গেছেন। সাবেক ইসলামী খেলাফতের সাথে বেঈমানির পুরস্কার হিসেবে যে মসনদ তারা পেয়েছেন সেই মসনদে বসে এরচে’ ভালো কিছু যে করা সম্ভব নয়, তাদের কাছে বিপরীত কিছু আশা করা যে বোকামি, এই সত্য বুঝতে আমাদের সময় লাগে। লম্বা জোব্বার মেকি পবিত্রতা দেখে আমরা ভক্তিতে গদগদ হই। বিনে পয়সায় সুন্দর ছাপার কোরান শরিফ পেয়ে মুগ্ধ হয়ে যাই। কিন্তু অস্থির মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ চাপা পড়া বা চেপে ধরা ইতিহাসকে ক্রমেই সামনে টেনে আনছে। ২০১২তে মধ্যপ্রাচ্য নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পর থেকেই ঐতিহাসিক দালালদের মুখোশ খুলে যেতে থাকে। মিশরের মোবারক সরকারের পতন ও ইখওয়ানের ক্ষমতায় আরোহণ আরবের দীর্ঘ দিনের একনায়কদের চরমভাবে ভীত করে তোলে। যে কোন ভাবে ইখওয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এরা নানাভাবে চক্রান্ত করতে থাকে। অন্যান্য আরব দেশ বিশেষ করে সৌদি সরকারের অর্থ সহায়তা ও চক্রান্তে একবছরের মাথায় নির্বাচিত জনগণের সরকারের পতন ঘটিয়ে আবার সেনা শাসনে ফিরে যায় মিশর। গত বছর কায়রোয় ইসলামপন্থী নিরস্ত্র জনগণের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের সময় ইউরোপ থেকে প্রতিবাদ হলেও খাদেমুল হারামাইন তখন যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করেছিলেন যেন সিসির সরকারের উপর কোন ধরণের চাপ সৃষ্টি করা না হয়। অর্থাৎ হত্যাকাণ্ড যেন অবাধে চলতে পারে। মিশরে ইখওয়ান সরকারের পতন ঘটিয়ে এক বছরে ইখওয়ানকে দমিয়ে দেয়া সম্ভব হলেও এখনও স্বস্তিতে নেই আরব শাসকরা। জনগণের হাতে ক্ষমতা হারানোর ভয় তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পশ্চিমের দালালি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার দিন যে ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে ঐতিহাসিক দালালরা এটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। এই কারণেই আরব বিশ্বে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোকে ভীতির চোখে দেখছে আরব শাসকরা। গাজার ভয়াবহ দুর্দিনেও তারা হামাসের পাশে দাঁড়ালেন না। সমর্থন করলেন সন্ত্রাসী ইসরাইলকেই।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১৮৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন