অনেক অনেক দিন পর... (গল্পটি আপাদমস্তক কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে যাওয়া কাকতালীয়)
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক ফেরদৌস ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৪৯:২৫ রাত
মৌলবাদী হুজুরদের তাড়া খেয়ে সেদিন তাকে সেলুনে ঢুকতে হলো। অনেক অনেক দিন পর তিনি সেলুনে ঢুকলেন।
একটা সময় ছিল যখন দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে সেলুনেই কাটাতে হতো। তখন তিনি মুরগি বেচতেন। সেলুন দোকানের সামনে মুরগির ঝাঁপি বিছানো থাকত। উপরে মড়ার মত মুরগিগুলো সুন্দর করে সাজানো। সারাদিন তো আর টাকসোজা দাঁড়িয়ে থাকা যেত না। মাঝে মাঝেই সেলুনে ঢুকতেন। চেয়ারে বসে পা দোলাতেন। সেলুন ওয়ালা মতি নাপিতের সাথে তার ভালই খাতির ছিল। মাঝে মাঝেই চা শিঙাড়া আনিয়ে খাওয়াত। সেসব সময়গুলো দুঃস্বপ্নের মত। তার এখন দিন ফিরেছে। দশাসই গোঁফে তা দিয়ে তিনি এখন দেশের মুখচেনা সুশীলদের একজন। রীতিমত বুদ্ধিজীবী। টেনে টেনে কথা বলেন। কথা বলার সময় চেহারায় উদাসভাব ফুটিয়ে রাখতে হয়। দুঃখিত বিমর্ষ ভঙ্গিতে তাকাতে হয়। এসব কায়দা কানুন রপ্ত করতে কষ্ট হয়েছে। প্রথম প্রথম ভুলভাল হয়ে যেত। আজকাল অভ্যাস হয়ে গেছে। বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাকে অনেক সাবধানে চলতে হয়। দীর্ঘদিন সেলুনে না ঢোকা এরকম সাবধানতার অংশ। তার চুল কাটিং, গোঁফ স্টাইলিং হয় পার্লারে। মুরগি ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সেলুনে বসতে পারেন, পা দুলিয়ে দুলিয়ে চা শিঙাড়া খেতে পারেন, বুদ্ধিজীবী হিসেবে পারেন না। এছাড়া দেশ গিজ গিজ করছে মোল্লা মৌলবাদী আর শিবির দিয়ে। এরা মোচ দাড়ি তো সেলুনেই কাটে। তিনি বুদ্ধিজীবী কিভাবে এইসব নেটিভদের পর্যায়ে নেমে সেলুনে ঢুকতে পারেন! প্রেস্টিজের সাথে আপোষ অসম্ভব। নিরাপোষ দৃঢ়তা নিয়েই দীর্ঘদিন তিনি সেলুনে ঢুকছেন না।
সেদিন সকালে বুদ্ধিজীবী হিসেবে কিছু দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমেছিলেন। নেমেই তার চোখ ছানাবড়া। এটা তিনি কী দেখছেন! রাস্তা জুড়ে মানুষ আর মানুষ। দেশের সব মোল্লা সব মৌলবাদী সব শিবির আজকে রাস্তায় নেমে গেছে। কোন মতে মুখ ঢেকেঢুকে দু’একবার নারায়ে তাকবীর দিয়ে এলাকা পার হলেন। মেইন রোডে উঠে দেখেন একই অবস্থা। অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে দেখলেন বাঁশ লাগিয়ে কয়েকজন এতিমের মত বসে আছে। সবার মুখে আতংকের ছাপ। তিনি, এত বড় বুদ্ধিজীবী, বাঁশের উপর উঠলেন, কেউ তেমন উচ্চবাচ্য করল না। একজন কাষ্ঠহাসি হাসল।
দূরে আবছাভাবে মিছিলটি দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল। তিনি ইতস্তত করছিলেন। বুদ্ধিজীবী মানুষ। কিন্তু একটু পরেই আর হিতাহিত জ্ঞান রইল না। পড়ি মরি করে ছুটলেন। সামনে একটা খোলা দোকান পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন সেখানে। মেঝেতে এগুলো কি! তিনি কি কোন সেলুনে ঢুকে পড়েছেন? তার সারা গায়ে সব শিবিরের সব মোল্লার সব মৌলবাদীর চুল দাড়ি মোচ লেগে গেছে। হাচড়ে পাচড়ে উঠে চেয়ারে বসলেন। ঘেমে নেয়ে একাকার। সেলুন ওয়ালা হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। এটা কি হাসার সময়! বাইরে কারা মুরগি মুরগি বলে চেঁচাচ্ছে। এরা কি মুরগির খদ্দের? তিনি কি সময় অতিক্রম করে পেছনে ফিরে গেছেন? মুরগির খদ্দেররা তাকে ডাকছে? তিনি অসহায়ভাবে এদিক ওদিক তাকালেন।
(গল্পটি আপাদমস্তক কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে যাওয়া কাকতালীয়)
বিষয়: সাহিত্য
১৪৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন