সীমান্তে লাশের সারি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য

লিখেছেন লিখেছেন ফারুক ফেরদৌস ১৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:১২:৪১ দুপুর

আমাদের স্বনামখ্যাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর সীমান্ত হত্যা নিয়ে মন্তব্য করে আলোচিত হচ্ছেন। পরপর দুদিনে চারজন বাংলাদেশী নিহত হওয়ার পর দেশের দায়িত্বশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মন্তব্য, বিএসএফের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। আরেকটু আগে বেড়ে, বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালিয়েছে। এর আগে আমরা শুনেছিলাম সীমান্ত হত্যা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। এবার জানলাম রাষ্ট্র চিন্তিত বটে কিন্তু তার নিরীহ নাগরিকদের নিয়ে নয়। সশস্ত্র ভিনদেশী খুনিদের নিয়ে। এর পর সেই রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে নিয়েই চিন্তিত হওয়া ছাড়া জনগণের আর কী করার থাকে।

আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অজানা নয় ভারতের সাথে চরম বৈরী চিন এবং পাকিস্তান সীমান্তে গুলি হত্যা বিরল ঘটনা। শুধু আমাদের সীমান্তে এসেই ভারত বন্ধুদের আত্মরক্ষা প্রয়োজনীয় হয়। তবু দু’জন নাগরিকের লাশের উপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতবন্ধুর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলেন।

এই ধরণের আত্মবিক্রিত শাসকশ্রেনী আমাদের কাছে নতুন নয়। বাংলাদেশ জগৎশেঠ উমিচাঁদদের ষড়যন্ত্র মীর জাফর রায় দুর্লভদের গাদ্দারি দেখেছে। কিন্তু এই শ্রেণীর গাদ্দারদের গলাবাজি আত্মগরিমা দেশপ্রেমের বাকোয়াজ অবশ্যই নতুন বলতে হবে। ইতিহাসের গাদ্দাররা জনতার সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতেন না। ক্ষমতার অন্ধ মোহে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে অনুশোচিত হতেন। হালযামানার গাদ্দাররা বুক ফুলিয়ে দাঁড়ান তাই নয় - প্রতিপক্ষকে দেশের শত্রু সাব্যস্ত করে প্রতিহতের ঘোষণা দেন। দেশবিরোধী চুক্তি করে জনগণের রক্তকে অসম্মান করে বিদেশী সেনাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়েও নিজেকে দেশপ্রেমিক প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। জলজ্যান্ত কফিনের ওপর পর্দা টেনে চার যুগ আগের শহিদদের জন্য মায়া কান্না কাঁদেন। আহা দেশপ্রেমিক!



এই সরকার ক্ষমতায় এসে ভারতের সাথে স্থাপন করেছিল বিশেষ সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিরল সেই সম্পর্কের নাম বিশ্বাস ভালোবাসার সম্পর্ক। পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো নাকি অহেতুক সন্দেহের নজরে দেখে ভারতদাদার সাথে অন্যায় বেয়াদবি করে আসছিল। আওয়ামী সরকার চেয়েছে সেটা সুদে আসলে পুষিয়ে দিতে। ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়েছেন এবং সব সন্দেহ সংশয় ঝেড়ে ফেলে বিশ্বাস করে ভালবেসে আমাদের সড়ক রেলপথ নৌপথ ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাত রাজ্যের স্বাধীনতাকামীদের বাংলাদেশ জায়গা দেবেনা। বিনিময়? বিনিময় আবার কি! ভালবাসার উপহারের বিনিময় হয় না। ট্রানজিটের মাধ্যমে দেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর স্বপ্ন যারা দেখিয়েছিলেন, তাদের মুখেই আমাদের শুনতে হয়েছে ট্রানজিট ফি চেয়ে বাংলাদেশ অভদ্র হতে পারবেনা। অর্থাৎ প্রেমিকবন্ধুর মনে ব্যথা দিতে পারবে না। এই অগাধ বিশ্বাস গভীর ভালবাসা নিঃশর্ত নিঃস্বার্থ প্রেমের প্রতিদানে প্রেমিকবন্ধুর কাছ থেকে পৃথিবীর সবচে’ রক্তক্ষয়ী সীমান্তটি আমরা উপহার হিসেবে পেয়েছি। গত চার বছরে প্রাণ দিয়েছেন ছশ’র বেশি বাংলাদেশী।

এই বাস্তবতার পরও ভারত-প্রেমপ্রবক্তা নির্লজ্জ বুদ্ধিব্যাপারি কলমবাজরা মুখে কুলুপ আঁটবেন এরকম আশা দুরাশা মাত্র। খটখটে দিনকে রাত প্রমাণে তাদের জুড়ি নেই। চল্লিশ বছর আগের কথিত পাকিস্তানী গণহত্যার কথা বলে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোয় এই কলমবাজদের যথেষ্ট পারঙ্গমতা দেখা গেলেও চোখের সামনে কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশ দেখে তাদের কলমে একটি শব্দ যোগায় না। এই ধরণের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতির কিছু ভণ্ড দালালকে আমরা সুশীল সমাজ বলে ডাকি।



ভারতকে প্রেম ভালবাসা দিয়ে আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই ধারণা করেছিল দেশের জন্য কিছু না হোক- দল হিসেবে ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থন আওয়ামী লীগ পাবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তলাহীন জনপ্রিয়তা দেখে ভারত ঠিকই পিঠটান দিয়েছে। একটি দলের আঁচল ধরে এদেশে তাদের স্বার্থ বিসর্জন দিতে চায়নি। খালেদাকে ডেকে নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে সংবর্ধনা ভারত দিল, এটাকে আওয়ামী লীগের জন্য একটি সরল চপেটাঘাত ছাড়া আর কী বলা যায়। এরপরও আওয়ামী মন্ত্রীদের ভারতীয় উক্তির বার্তা অনেকটা ছ্যাঁকা প্রেম কাব্যের মত।যতই জ্বালাও যতই পোড়াও...’।

বিষয়: রাজনীতি

৮৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File