“ইবাদত” হতে হবে “রিয়া” মুক্ত।
লিখেছেন লিখেছেন গাজী হাসান ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৪৯:০৮ রাত
রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত কি? অতি সহজভাবে বুঝতে হলে বলা যায় শরিয়ত সমর্থিত যে কোন কাজ করা (মনে রাখতে হবে শরিয়ত সমর্থিত নয় এমন কাজকে ইবাদত মনে করে তা পালন করার নাম “বিদায়াত”।এখানে সেটা আলোচ্য নয়।) যার সাথে মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের সন্তোষ অর্জন ই একমাত্র কাম্য নয় বরং মানুষের কাছ থেকেও প্রশংসা,কৃতজ্ঞতা ইত্যাদির মুখাপেক্ষী থাকা আর কারো অকৃতজ্ঞতা,কটাক্ষ্য বা অবমূল্যায়নে মনে কষ্ট পাওয়া।
সাথে এটাও মনে রাখতে হবে মুমিনের সকল কাজই ইবাদত যদি তা হয় আল্লাহ্র হুকুম এবং রাসুল সঃ এর দেখানো পন্থায়।
ইবাদত হতে হবে একমাত্র (খালেছভাবে)আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্য।এটাই ইখলাছ।আল্লহ বলেছেন,নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত একমাত্র আল্লাহরই জন্য। (সূরা ঝুমার-৩)।
যেখানে ইখলাছ নাই সেখানেই রিয়া’র অনুপ্রবেশ।
ইখলাছ না থাকলে তাঁর পরিনতি কি হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, আমি ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য তাঁরা যে আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকনা করে দেবো।ফুরকন-২৩।
যে মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে তাঁর উপমা হলো, ঐ ব্যক্তির মত যে পাথর কণা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে বাজারে গেলো, তখন লোকেরা তাঁর ব্যগ দেখে বললো, দেখো তার থলিতে কত টাকা।এতে সে খুশি হলো।অথচ এই পাথর ভর্তি থলে দিয়ে সে কিছুই করতে পারবে না, শুধুমাত্র মানুষের প্রশংসা ব্যতীত।
রাসুল সঃ বলেছেন, আমি তোমাদের ব্যপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি।সাহাবিরা বললেন, ছোট শিরক কি? রাসুল সঃ বললেন, তা হলো রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত।যেদিন মহান আল্লাহ মানুষকে তাদের নেক আমলের পুরষ্কার দান করবেন, সেদিন রিয়াকারীদের বলবেন, যাও দুনিয়ায় যাদের দেখানোর জন্য আমল করেছো তাদের নিকট যাও, দেখো তাদের নিকট কোন পুরষ্কার পাওকিনা।
রাসুল সঃ বলেছেন, কতিপয় লোককে বেহেশতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হবে, তখন তারা তাঁর (বেহেশতের)খুব কাছাকাছি গিয়ে সুগন্ধ পাবে এবং বেহেশত বাসীদের প্রাসাদ গুলো দেখতে পাবে এবং আল্লাহর অনুপম নেয়ামতরাজি প্রত্যক্ষ করবে সে মুহুর্তে ফিরিশতাদের হুকুম দেয়া হবে ওদের কে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।বেহেশতের কোন কিছুতেই তাদের অধিকার নেই।অনন্তর তারা চরম হতাশ ও অনুতপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।অতপর তারা আরজ করবে হে আল্লাহ তোমার প্রিয়জনদের নিমিত্তে প্রতিশ্রুত নেয়ামতরাজি দেখানোর আগেই যদি আমাদের দোযখে পাঠাতে তাহলে ভালো হতো।আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদের সাথে এ আচরন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।পার্থিব জীবনে যখন একাকী থাকতে তখন কবীরা গোনাহে নিমগ্ন হয়ে আমার চরম বিরুদ্ধতা করতে, আর মানুষের সামনে ধর্মিভীরুদের মত আচরন করতে।স্বীয় কৃতকর্ম দিয়ে নিজেদের মানুষের সামনে যে মনোভাব প্রকাশ করতে আমার প্রতি আদৌ সে মনোভাব প্রকাশ করতে না। তোমরা লোকদের ভয় করতে, আমাকে ভয় পেতে না।মানুষের জন্য তোমরা কোন কাজ বর্জন করতে, আমার জন্য নয়।তোমরা মানুষকে সন্মান করতে , আমাকে নয়।তাই আমি আজ তোমাদের অগাধ নিয়ামতরাজি থেকে বঞ্চিত করবো এবং পীড়াদায়ক আযাব দেবো।
অন্য হাদিসে এসেছে এক লোক রাসুল সঃ এর কাছে এসে নিবেদন করছিলেন, মুক্তি কোন পথে? তিনি এরশাদ করলেন, তোমরা আল্লাহকে ধোকা দিও না তবেই মুক্তি পাবে।প্রশ্নকারী পুনরায় নিবেদন করলো, আল্লাহ কে কিভাবে ধোকা দেয়া হয়? রাসুল সঃ বললেন, যদি তুমি আল্লাহ ও রাসুলের কোন কাজ আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে তুষ্ট করার জন্য করো তবে তাই আল্লাহকে ধোকা দেয়ার গন্য হবে।
তিনি আরো ইরশাদ করলেন, তোমরা রিয়া বা লোক দেখানো কাজ থেকে দূরে থাকো।কেননা রিয়া হলো ছোট শিরক।রিয়া বা লোক দেখানো আমলকারীকে হাশরের দিন সমবেত জনতার সামনে ৪ টি বিশেষ নামে ডাকা হবে।১।ওহে রিয়াকার ২।ওহে বিশ্বাসঘাতক ৩।ওহে অবাধ্য অপরাধী ৪। ওহে ক্ষতিগ্রস্থ তোমার আমল নাকচ হয়ে গেছে অতএব তোমার প্রতিদান নষ্ট হয়ে গেছে।আমার কাছে তোমার কোনই কর্মফল পাওনা নেই।ওহে প্রতারক তুমি যার জন্য সৎ কাজ করেছো তাঁর কাছে গিয়ে তোমার প্রতিফল গ্রহন করো।
তাই আমাদের সকল ইবাদতের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি বিধান।
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে তারা অযুহাত তৈরী করে না।কারন তারা জানে আল্লাহ কারো উপরে তাঁর সাধ্যের অতীত বোঝা চাপান না।
মানুষ যখন মানুষের জন্য কাজ করে তখন দায়সারাভাবে কাজ করে এবং তাঁর পিছনে নানা প্রতিকূলতা, অসহায়ত্বকে প্রকাশ করে।
এর থেকে বাচার জন্য কোন কাজ করার আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে সে আমল সংক্রান্ত যাবতীয় ইলম।অর্থাত সে আমলের ফরজ,ওয়াজীব,সুন্নাত।নিয়ম জেনে তারপর আমল শুরু করতে হবে।তারপর আমি আমল করছি এই চিন্তা একেবারে ভুলে যেতে হবে এবং তখন শুধুমাত্র দেখতে হবে সেই আমলে ইখলাছ আছে কিনা।
একটা বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে যে, আমল করার চেয়ে সেই আমল সংরক্ষন করা আরো কঠিন।আমাদের যত নামায,রোজা এবং অন্যান্য আমল থাকুক সেটা যদি লোক দেখানোর জন্য হয় তাহলে সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহন হওয়াতো দূরের কথা তাঁর কারনে জাহান্নামে শাস্তি পেতে হবে।
এমন যদি হতো যে, আমল গ্রহন করা হবেনা এবং শাস্তি ও দেয়া হবে না তাহলে কম আতঙ্কের ব্যাপার হতো।কিন্তু ব্যাপারটা এইখানে সীমাবদ্ধ নয়।গ্রহন তো করা হবেই না সেই সাথে কঠোর শস্তি দেয়া হবে।
অনেক সময় এমন হয় যে, একটা আমল শুরু করার সময় ইখলাছ ছিলো। একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই তা শুরু করা হয়েছিলো কিন্তু আমল করতে করতে তারা এক সময় ভুলেই যায় যে তারা কি উদ্দেশ্যে আমল শুরু করেছিলো।এবং পরবর্তিতে শয়তানের ধোকায় পড়ে বা অন্য কোন পার্থিব উদ্দেশ্যে সেটা কনটিনিউ করে।
আরো একটা জিনিস মনে রাখতে হবে কারো ইবাদতে যদি রিয়া থাকে তাহলে রিয়ার কারনে তা বাদ দেয়া যাবে না।বরং মন থেকে রিয়া দূর করার চেষ্টা করতে হবে।কেননা রিয়ার ভয়ে ইবাদত পরিত্যাগ করা ও রিয়া।
আর রিয়া থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে আমল ঠিক করার চেয়ে ইখলাছ ঠিক করা।কারন আমল দেখা যায় এবং ঠিক না ভুল হচ্ছে তা নিজে না বুঝতে পারলেও অপরে বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী সংশোধন করা যায়।
কিন্তু ইখলাছ দেখা যায়না এবং অন্যরাও এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিতে পারে না।এটা একান্তই সবার নিজস্ব ব্যাপার। তাই সংশোধনের জন্য নিজেকেই এগিয়া আসতে হবে।
আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন বলেন, যে কেউ ইহকাল কামনা করে আমি সে সব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই অতঃপর তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারন করি।ওতে তারা নিন্দিত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায়, তাঁর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা সাধনা করে এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।বানী ইসরাঈল-১৬.১৭।
ভাবুন তো নিম্নের কোন কাজ/আমলগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় করে ফেলেন কি না?
এই উদাহরনগুলো আমার উপলদ্ধি থেকে লিখলাম।আপনারা সবাই ব্যক্তিগতভাবে দেখলে আরো অনেক খুঁজে পাবেন। খুজুন, উপলব্ধি করুন এবং আত্নসমালোচনার মাধ্যমে সংশোধন করুন।
১. মৌলিক ইবাদতসমূহ যেমন-নামজ পড়লে নামাজী বলবে,রোজা রাখলে রোজাদার বলবে,যাকাত দিলে দানশীল বলবে,হাজ্জ করলে হাজ্জী বলবে ইত্যাদি ভাবনা মনের কোনে উঁকি দেয় কি?
দিলে আর দেরী নয় তাওবা করুন সঠিকভাবে আর ইখলাছ তৈরী করুন ইবাদতে।
২.আপনি যখন মসজিদে নামাজ পড়েন তখনকার নামাজ আর একা একা যখন ঘরে নামাজ পড়েন তখনকার নামাজে কি মৌলিক কোন পার্থাক্য লক্ষ্য করেন ? অর্থাৎ মসজিদে নামাজে একাগ্রতা বেশী দেন যে, কোন ভুল হচ্ছে কিনা, কেউ দেখে ফেললো কিনা আমার ভুলটা কিংবা মানুষ দেখছে আমি নামায পড়ছি সুতরাং যেমন তেমন নয় ভালোভাবে পড়ি। আর বাসায় কিংবা যেখানে কেউ খেয়াল করে না সেখানে যেমন তেমন ভাবে নামায আদায় করেন।কোনমতে দায় সারা আর কি।
এমন যদি হয়,তাওবা করুন।কেননা আপনি ইবাদতে খুলুছিয়াত হারিয়েছেন।অর্থাত রিয়া প্রবেশ করেছে।
৩.আপনি একজন ভালো লেখক।ইসলামের দাওয়াতের জন্য কিছু লিখলেন। ইসলামকে প্রচারই আপনার উদ্দেশ্য কেননা এটাও একটি ইবাদত নিঃসন্দেহে। অতঃপর কি মনে হয় যে মানুষ আপনার লেখাটা পড়ে আপনার প্রশংসা করুক কিংবা অন্তত ধন্যবাদ আপনি প্রাপ্য কিংবা আপনার লেখাটা অন্যের লেখার চেয়ে বেশিবার পড়ুক?
লিখার পর কেউ যদি ভালো মন্তব্য করে তাতে আপনি খুশী হন কিংবা উৎসাহ পান এতে দোষের কিছু নাই কিন্তু কেউ যদি খারাপ মন্তব্য করে,কিংবা প্রথম পাতায় যদি স্থান না পায় আপনার লিখা কিংবা সম্পাদক আপনার লেখা পছন্দের মধ্যে রাখলোনা কিংবা এমন হলো যে আপনার লেখা বাদ ই দিয়ে দিলো আর এ সকল কারনে মনে কষ্ট পেলেন,ভাবলেন আমার লেখা এত ভালো তাঁর এ অবস্থা হলো কেন? কাউকে বলার দরকার নেই আপনি মনে মনে যে কষ্ট পেলেন এতেই আপনি আল্লাহ’র জন্য নিবেদিত খালেছ ইবাদত থেকে সরে পড়লেন।
৪.আপনি ইসলামের দাওয়াত দাওয়াত দিচ্ছেন, অতঃপর কি আপনি অনুভব করেন যে আপনি এত সুন্দর করে বুঝান যে প্রভাব না পড়ে পারেনা, কিংবা আপনি বুঝাতে পারেন না বলে প্রভাব পড়েনা কিংবা আপনার মত আর কেউ বুঝাতে পারে না, কিংবা অন্তত আপনাকে একটা ধন্যবাদ দেয়া হোক কিংবা কেউ আপনাকে এই কাজের জন্য পছন্দ বা অপছন্দ করুক?
যদি এমন অনুভব করেন বুঝবেন আপনি রিয়া’য় আক্রান্ত হয়েছেন।অতএব ফিরে আসুন।
৫.আপনি কাউকে কিছু দান করার পর অথবা কাউকে কোন রকম উপকার করার পর তার কাছ থেকে আর কিছু না হোক অন্তন কৃতজ্ঞতা আশা করেন কি?অথবা সে যদি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাতে কি আপনি দুঃখিত হন?
যদি এমন হয় মনে করবেন আপনি শুধু মাত্র আল্লাহ’র সন্তোষের জন্য এ কাজ করেন নি।
৬.আপনি কি কারো মন রক্ষার জন্য কিংবা কি মনে করবে এই ভেবে কাউকে উপহার দেন? কিংবা আপনি কাউকে কিছু উপহার দিলেন যা দিতে আপনার কষ্ট হয়েছে বা হয়নি, অতঃপর তার কাছ থেকে ধন্যবাদ আশা করেন কি?অথবা সে যদি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাতে কি আপনি দুঃখিত হন?
মনে রাখতে হবে উপহার দেয়া নেয়া সুন্নাতে রাসুল সঃ।সুতরাং আপনি সুন্নাত পালন করছেন।কোন ভাবেই দুঃখিত হবেন না।নতুবা ইবাদত আর খালেছ থাকবে না।
৭.আপনি আপনার কোন আত্নীয় কে ফোন করলেন, বা সর্বদা খবরা খবর নেন, অতঃপর তার কাছ থেকে ধন্যবাদ আশা করেন? অথবা সে যদি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাতে কি আপনি দুঃখিত হন?
মনে রাখবেন আত্নীয়ের হক আদায় করা আপনার কর্তব্য।এর ব্যতিক্রম কিছু চাইলে আল্লাহ্র কাছে প্রতিদান পাবেন না।
৮.আপনি নফল রোজাদার কিংবা তাহাজ্জুদ পড়েন এ কথাটা কেউ কেউ জানুক যাতে আপনার প্রতি ভক্তি বৃদ্ধি পায়, কিংবা সন্মান করে, কিংবা রোজার কারনে দূর্বল সুতরাং সহানুভূতি প্রকাশ করুন আপনার প্রতি এমন ধারনা মনে জন্মায় কি?
যদি এমন হয় তাওবা করতে দেরী করবেন না।নতুবা আপনার সকল কষ্টই বৃথা যাবে।
৯.আপনি ভাল কাপড় পড়েন পরিষ্কার কিংবা দামী। এতে দোষের কিছু নাই। আল্লাহ্ আপনাকে যে নিয়ামত দিয়েছে সেটার প্রকাশ করতে পারেন এবং করা উচিৎ। কিন্তু এটা মানুষ দেখুক এবং বুঝুক আমি কৃপন নই, কিংবা আমি পরিপাটি থাকতে পছন্দ করি কিংবা আমি খুব গোছালো মানুষ,এতে মানুষ আমাকে অপেক্ষাকৃত বেশী পছন্দ করবে ইত্যাদি। এমনটা আপনি চান কি?
তাহলে কিন্তু রিয়া হয়ে যাবে!
১০.আপনি ভালো বাসায় থাকেন,বাসা খুব গোছালো এক্ষেত্রে আপনার কি মনে হয়, আমাকে মানুষ অকৃপন,স্বাস্থ্য সচেতন,পরিচ্ছন, পরিপাটি ইত্যাদি ভাবুক এটা কি আপনার মনের গহীনে লুকায়িত থাকে?
খবরদার এমনটি যেন না হয়।বরং আপনাকে দেয়া অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাকে আল্লাহ্র দেয়া নিয়ামত ও আমানত হিসেবে দেখুন।পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,পরিপাটি থাকা ইসলামের শিক্ষা এটা ভাবুন। নতুবা এটা ইবাদত থাকবে না।
১১.আপনি কাউকে দাওয়াত দিলে আপনার রান্নাটা কি ভালো করার চেষ্টা এ জন্য করেন যে, খেয়ে যাতে ভূয়শী প্রশংসা করে?
কিংবা খেয়ে যদি প্রশংসা না করে কিংবা যদি অপছন্দ করে তাহলে কি আপনি মনে মনে কষ্ট অনুভব করেন?
কিংবা অন্য সবার চেয়ে আপনার বাসার আয়োজন ভালো,গোছালো, রুচি সন্মত এটা যাতে ফুটে উঠে এ জন্য কি আপনি চেষ্টা করেন?
বরং মনে রাখুন মেহমানকে সর্বাত্নক মেহমানদারি করা আমাদের নবীর সুন্নাত।তখন মেহমানদারিটা ইবাদতে পরিনত হয়ে যাবে।নতুবা লোক দেখানো হবে।
১২.আপনি কোন দ্বীনের মাহফিলে গেলেন যে না গেলে আপনার বন্ধুটি কিংবা অন্যরা খারাপ মনে করবে এমনটি হয়?
না।এমনটি হলে চলবে না।কেননা দ্বীনি মাহফিলে যাবেন দ্বীন শিখতে আপনার নিজের জন্য।অন্যের মতামতের মুখাপেক্ষি থেকে নয়।
১৩.আপনি জ্ঞান অর্জন করছেন আর ভাবছেন মানুষ অন্তত বুঝুক আমি মূর্খ নই কিংবা মানুষ আমাকে জ্ঞানী ভাবুক কিংবা একটু হলেও প্রশংসা করুক এমন চিন্তা কি ক্খনো মনের কোনে বাসা বাধে?
না।এটা হতে পারবে না।মনে রাখতে হবে জ্ঞান অর্জন করা আপনার উপর অপরিহার্য্য কর্তব্য।এর ব্যতিক্রম ভাবনা আপনাকে রিয়া’য় প্রবেশ করিয়ে দিবে।
১৪.আপনাকে কেউ খাওয়ার দাওয়াত দিলে আপনি কি সেখানে তার মন রক্ষার জন্য যান, যে না গেলে কি মনে করবে কিংবা সম্পর্কে ভাটা পড়বে?
না।দাওয়াত খাওয়া সুন্নাত।তাই সে নিয়তেই আপনি জাবেন।অন্য কারো সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির জন্য নয়।
১৭.আপনি কি লোক লজ্জার ভয়ে কোন গোনাহ থেকে দূরে থাকেন?
মানুষের ভয়ে নয় একমাত্র আল্লাহ্র ভয়তে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকুন।আল্লাহ আপনাকে সর্বদা দেখছেন।এই ভয়তে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারলেই আল্লাহ্র কাছ থেকে মাফ পাওয়া যাবে।
১৮.আপনি কি মানুষ দেখে ফেলবে কিংবা আপনার আমল প্রকাশ হয়ে পড়বে এ কারনে কোন নেক কাজ থেকে বিরত থাকেন?
এটা তো রিয়া।কেননা আপনি তো আমল করবেন একমাত্র আল্লাহ্র জন্য।কেউ দেখলেই কি আর না দেখলেই কি?আমল প্রকাশের নিয়ত না থাকলেই চলবে।আমল শুধুই আল্লাহ্র সন্তোষের জন্য।
১৯.আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করছেন তার জন্য কি তাদের কাজ থেকে অন্তত কৃতজ্ঞতা আশা করেন কিংবা তারা খুশি হয়ে আপনাকে সন্মান করুক এ মনোভাব পোষণ করেন?
না এটা পোষন করতে পারবেন না।কারন এটা আপনার প্রতি আল্লাহ্র দেয়া দায়িত্ব।সুতরাং দায়িত্ব পালনের জন্য পুরস্কার তাঁর কাছেই চাইবেন যিনি দায়িত্ব দিয়েছেন।
২০.প্রতিবেশীর খোজ নিয়ে কিংবা কোন পথচারীর সামান্যতম উপকার করেও কি কখনো ধন্যবাদ আশা করেন?
কেন করবেন ইসলাম তো মানবতার ধর্ম।প্রতিবেশী খোঁজ খবর নেয়া,কাউকে উপকার করা সব ই আপনার কাজ।এর জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে পুরস্কার রয়েছে যদি একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই করেন।নতুবা রিয়া’যুক্ত কাজের প্রতিদান পরকালে পাবেন না।
এমনি অনেক বিষয় যা প্রতিদিন আমরা করে থাকি।আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজে থেকে চিন্তা করি তাহলেই বুঝতে পারবো কোনটি আমি লোক দেখানোর জন্য করেছি আর কোনটি একমাত্র আল্লাহ্র সন্তোষ অর্জনের জন্য করেছি।সুতরাং আমাদের খুব সচেতন থাকতে হবে যাতে এর কোন একটির মধ্যে রিয়া না থাকে।
আমরা যখন রিয়া মুক্ত আমল করতে পারবো তখন আমরা সকল কাজের মধ্যে আত্নতৃপ্তি খুঁজে পাবো।কোন হতাশা,দুঃখ আমাদের গ্রাস করতে পারবে না।কেননা সকল কিছুর প্রতিদান তো কেবল আল্লাহ’র কাছেই চাইবো।আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারবো আন্তরিকভাবে।
আনাস (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুল (দ) বলেছেন, তোমাদের কেউ ঈমানদার হয়না যতক্ষন না আমি তার নিকট তার পিতা,পুত্র এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয়তর না হই। সহীহ বুখারী।
এ জন্য ই বলা হয়েছে,মুমিনের বিষয়টা আশ্চার্য্য।সে যখন আল্লাহ্র নেয়ামত পায় তখন ও আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করে আবার যখন বিপদে পতিত হয় তখনও আল্লাহ’র উপরই ভরসা করে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন যাতে আমরা রিয়া মুক্ত থাকতে পারি,মহান আল্লাহ্ কে ধোকা দেয়া থেকে বাচতে পারি।আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৩০০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন