সন্মুখ প্রশংসা করবেন না, কৃতজ্ঞতা অবশ্যই প্রকাশ করবেন।
লিখেছেন লিখেছেন গাজী হাসান ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩১:০৪ বিকাল
সকল প্রশংসা সেই মহান রব্বুল আলামীনের যিনি সমস্ত জগত এবং জগতে যা কিছু আছে সকল কিছুর একক সৃষ্টি কর্তা।যার সৃষ্টিকর্মে কেউ শরিক নাই।
আমরা যারা মুমিন তারা তাদের সকল কাজকে ইবাদত হিসেবে দেখতে চাই। হোক সেটা লেখা-লেখি, কারো অধিকার আদায়,কারো উপকার ইত্যাদি যা কিছুই করিনা কেন।তাদের সকলের উদ্দেশ্যেই এই লেখা। ব্লগে একের প্রতি অন্যের মন্তব্য করার ধরন (প্রশংসামূলক) দেখে ভাবলাম এ রকম একটা কিছু শেয়ার করা দরকার যাতে সকল মুমিন উপকৃত হতে পারে।
আমরা আমাদের এই ছোট্ট জীবনে বিভিন্ন মানুষকে পছন্দ করি। তা সে হতে পারে পিতা-মাতা, স্ত্রী,সন্তান,শিক্ষক,লেখক,সহকর্মী,কর্মচারী কিংবা মালিক কিংবা অন্য কেউ। আবার যাদের কে আমরা বেশী পছন্দ করি তাদের কাছে আমরা কোন না কোনভাবে ঋণী।তাই এদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আমাদের জানাতেই হবে।সমস্যাটা হচ্ছে “কৃতজ্ঞতা” আর “প্রশংসা” কে আমরা গুলিয়ে ফেলি।ফলে ঘটে যায় বিপত্তি।যাকে যত বেশী ভালোবাসি তাঁর “প্রশংসা” আমরা ততো বেশী করি এটাই স্বাভাবিক।কিন্ত এটা যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন এর ফাকে শয়তান অনুপ্রবেশ করে।ফলে ভালোবাসার মানুষটিকেই আদর্শ কিংবা মাপকাঠি হিসেবে মূল্যায়ন করা শুরু হয়ে যায়।তখন শরীয়তকেও তাঁর দ্বারা বিচার করতে থাকে।ব্যাপারটা এমন যে সে যা করছে বা বলেছে সেটাই ঠিক অন্য সব বেঠিক।আমাদের সমাজে ব্যক্তিপূজা,নেতাপূজা,পীরপূজা সহ সকল পূজার পিছনে যতগুলো কারন রয়েছে তাঁর মধ্যে অন্যতম একটি কারন এই অন্ধ ভালোবাসা।
সন্মুখ প্রশংসার ক্ষেত্রে আমাদেরকে যা মনে রাখা উচিৎ তা হচ্ছে আমরা যাতে আমদের লিমিট ক্রস না করি এবং “কৃতজ্ঞতা” আর “প্রশংসাকে” যাতে মিলিয়ে না ফেলি।
যেমন মনে করুন,আপনি কারো সহযোগীতায় বিপদের সময় একটা চাকুরি পেয়েছেন।এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে বলবেন আপনার সহযোগীতায় এ সময়ে আমার চাকুরিটা হওয়াতে আমি বেশ উপকৃত হয়েছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিফল দিন।কিংবা এ কথাটাকে আরো সুন্দরভাবে যে যেভাবে পারি বলতে পারি। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আপনি যদি আমার চাকুরিটার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে আমি মারা যেতাম,আপনার কোন তুলনা নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে!
আবার ধরুন একজন খুব ভালো লিখে তাঁর লেখা পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন বা হচ্ছেন।সে ক্ষেত্রে লেখক আপনার কৃতজ্ঞতা পাওয়ার হকদার। আপনি বলতে পারেন আপনার লেখায় আমি উপকৃত হয়েছি,আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিফল দান করুন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আপনি যদি বলেন,আপনার লেখার কোন তুলনা হয়না,আপনার লেখা না হলে আমি হেদায়াত পেতেম না ইত্যাদি ইত্যাদি তা হলে ব্যাপারটা কেমন হবে।
লাগামহীন প্রশংসা আপনাকে শিরকে’র পর্যায় নিয়ে যেতে পারে আর
সন্মূখ প্রশংসা যার প্রশংসা করছেন তাকে ছোট শিরকে’র (রিয়া) মধ্যে নিয়ে যেতে পারে।ফলে তাঁর ধ্বংস অনিবার্য।
(পরবর্তিতে কখনো যদি সুযোগ হয় তাহলে রিয়া’র একটা লিষ্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, ইনশাআল্লাহ্)
যারা আল্লাহ’র সন্তোষের জন্য কাজ করে তারা মানুষের প্রশংসার মুখাপেক্ষী হতে পারে না। কিন্তু সন্মুখ প্রশংসা এমন জিনিস যা মানুষ কে রিয়া’র মধ্যে প্রবেশ করায় তাঁর অজান্তে। অথচ তাঁর শুরু হয়েছিলো বিশুদ্ধ নিয়তে,একমাত্র আল্লাহ’র ভালোবাসা,প্রশংসা পাওয়ার জন্য।এজন্যই রাসুল সঃ সন্মূখ প্রশংসা করা হতে এত সাবধান করেছেন।এ সম্পর্কিত বহু হাদিস বর্নিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে।আমি এখানে সাহীহ বুখারী থেকে ২টি হাদিস তুলে ধরলাম।
হযরত আবু বকর রা থেকে বর্নিত তিনি বলেন নবী সঃ এর সামনে এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তির প্রশংসা করলো। তখন নবী সঃ বললেন তোমার জন্য আফসোস! তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে,তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে।এ কথাটা তিনি কয়েকবার বললেন। এর পর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি তাঁর ভাইয়ের (মুসলমান) প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তাঁর (এভাবে) বলা উচিৎ - অমুক কে আমি এরুপ মনে করি তবে আল্লাহ’ই তাঁর সম্পর্কে অধিক জানেন।আর আল্লাহ’র প্রতি সোপর্দ না করে আমি কারো সাফাই পেশ করি না। তাঁর সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে আমি তাকে এরুপ এরুপ মনে করি। (বুখারী)
আবু মুসা রা থেকে বর্নিত, নবী সঃ এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বললেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে কিংবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেন তোমরা লোকটির মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেললে। (বুখারী)
আপনার সন্মুখ প্রশংসার কারনে একজন ভালো লেখক হয়তো একদিন মনে করবে,আমার চেয়ে ভালো তো কেউ লিখেনা,আমি এত এত কমেণ্ট পাই,অন্যেরা আমার ধারে কাছেও না,আমার লেখা নির্ঘাত সম্পাদক পছন্দ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার কখনো যদি এর ব্যতিক্রম হয়ে যায় মনে কষ্ট পাবে। অথচ কোনটাই তাঁর জন্য ঠিক না।হয়তো শুরুতে সে এগুলোর মুখাপেক্ষী ছিলেন না কিন্তু আমাদের সন্মূখ প্রশংসার কারনে এখন সে এগুলোর মুখাপেক্ষি।
ফলে ক্ষতিগ্রস্থ সে আর তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে আপনার সন্মূখ প্রশংসা।
প্রশংসা যদি করতে হয় তাঁর অগোচরে করুন আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাটুকু তাকে বলুন।যদি কোন সংশোধোনী থাকে (গঠনমূলক) সেটা তাকে বলুন।যদি আপনার সংশোধনী মেনে নিতে না পারে তা তাহলে তাঁর ব্যাপারে কোন কথাই নাই (আপনার পছন্দের লিষ্ট থেকে বাদ পরার যোগ্য)।
তবে যেই সংশোধনী তাকে অপমানিত করতে পারে, ছোট করতে পারে এমন সংশোধনী সবার সন্মুখে অবশ্যই করবেন না।এটা আরো মারাত্নক গোনাহ।আল্লাহ বলেছেন,
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। সূরা- হুজরাত-১১
প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ (পরনিন্দা,কাউকে ছোট করা,অপমান করা,কাউকে খোটা দেয়া এ সকল কিছুই হুমাঝাহ এবং লুমাঝা’র অন্তর্গত)। সূরা হুমাঝাহ-১
আমরা যদি গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারি তাহলে সত্যিকারের মুমিন ব্যক্তি উপকৃত হবেন।আর যে গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করতে পারবে না তাঁর অবস্থা আর যাই হোক আমি /আপনি তো নানাবিধ গোনাহের হাত থেকে বাচতে পারবো আর সেই সাথে অন্ধ অনুসরন,অন্ধ ভালোবাসার তালিকাও ছোট হয়ে যাবে।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন