সন্তানের জন্য চাই ভালোবাসা মিশ্রিত শাসন।
লিখেছেন লিখেছেন গাজী হাসান ২৩ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:০০:৪৯ রাত
লেখালেখির অভ্যাস আমার কোন কালেই তেমন ছিলোনা। নিজে পড়তে এবং মুখে বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমি। আমার নাছোড়বান্দা মিষ্টি বউ নিজ থেকে আমাকে একটা একাউন্ট খুলে দিয়ে বললো এখন থেকে শুধু মুখে নয় কলমেও বলতে হবে। আমাকে সৎ কাজ করতে যত সহযোগিতা করে আমার স্ত্রী তাঁর জন্য মহান আল্লাহ'র কাছে শুকরিয়া জানাই আর দোয়া করি আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিফল দান করুন। আজকের লেখাটা খুবই সাধারন মনে হতে পারে কিন্তু আমরা যারা পিতা-মাতা হয়েছি তাদের চিন্তার খোরাক আছে বৈকি। আমাদের মনে রাখতে হবে সন্তানদের শাসন করতে যেয়ে যেন তাদের শত্রু তে পরিনত না হই। আমি বলতে চাই শাসন হতে হবে ভালোবাসা মিশ্রিত। ইদানিংকালে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। সবগুলোই সত্য।
ঘটনা ১
আমার এক বন্ধুর মেয়ের বয়স ৪ বছর। বন্ধুটি কাজে একটু বেশীই ব্যস্ত তথাপি মেয়েকে যতটুকু পারে সময় দেন। অপরদিকে তাঁর স্ত্রী সারাদিনই বাসায় থাকেন, মেয়ের সাথে সময় কাটান আবার শাসন করেন। তবে তাঁর শাসনের মাত্রাটা বেশ বেশী। লাঠিপেটাও করেন। মেয়েটির মনে মায়ের প্রতি ভালো সৃষ্টি না হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। ফলে সেদিন সে তাঁর বাবাকে বলছে আব্বু তুমি মাকে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দাও।মেয়ের এই ক্ষোভ মিশ্রিত কথাতে কিন্তু মা'র হুশ আসেনি। এই ক্ষোভ যদি লালন করতে থাকে তবে ভবিষ্যতে কি হবে মা-মেয়ের সম্পর্ক, তা আমরা জানিনা তবে ভালো কিছু আশা করাটা কঠিন।
এই মা কিন্তু তাঁর সন্তান কে কম ভালোবাসেনা। কলিজার টুকরা তাঁর বাচ্চা। কিন্তু শাসনের সাথে ভালোবাসা নেই বলে এই আশঙ্কা।
ঘটনা ২
আমার এক বন্ধুর ছেলের বয়স ৭। বন্ধুটি ব্যবসা করেন। কাজের কাছেই বাসা। ছেলেটিকে শাসন করেন অতিরিক্ত। মারেন কথায় কথায়। ছেলেটির মনে জমতে থাকে পিতার প্রতি ক্ষোভ। সে সর্বদা তাঁর মাকে বলতে থাকে বাবা কখন কাজে যাবে? বসা থেকে বের হয়না কেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ইদানিং তাঁর বাবা বাংলাদেশে যাবে একা স্বপরিবারে নয়। তাই যেদিন বাবা এসে ছেলে কে বললেন তাঁর দেশে যাওয়ার কথাতে ছেলের কোন প্রতিক্রিয়াই হলোনা। পক্ষান্তরে বাবার অগোচরে মাকে বলছে বাবা বাংলাদেশে গেলে ভালো হবে। সে সেখানেই থাকুক। এই বাচ্চা কখনো কখনো পুলিশে ফোন করার কথাও বলে তাঁর বাবা তাকে শাসন করে বলে।
এই বাবা কিন্তু তাঁর ছেলেকে কম ভালোবাসেনা। না চাইতেই সকল জিনিস হাজির করে। স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটায় তারা। তথাপি এক আশংকা ঘোরপাক খায় এই ছেলে বড় হয়ে কিনা কি করে বসে। বাবাকে ঠিক মত অন্তত প্রাপ্য সম্মানটুকু করবে তো !
ঘটনা ৩
আমার ছেলের বয়স ৮। আমি ব্যবসায়ী এবং খুবই ব্যস্ত মানুষ। ছেলের পুরো দায়িত্ব তাই ওর মায়ের উপরই। আমি যতটুকু সময় বাসায় থাকি চেষ্টা করি ছেলের সাথে খেলাধুলা ও গল্পগুজব করতে। তবে ওকে শাসনের ভার পুরোটাই ওর মায়ের। আমি মনেকরি যেহেতু সময় কম দেই তাই শাসন করাটা আমার সাজে না। আমার স্ত্রী শারীরিক ভাবে বেশ অসুস্থ থাকে প্রায়ই। একদিন শারীরিক ব্যথার কারনে দুষ্টামি করে বলছিলো বাবা আমি মরে যাবো। একথা শুনে ছেলে চিৎকার করে বলে উঠলো, তুমি আর কখনো এই কথা বলবে না। তাহলে কিন্তু আমিও মারা যাব। যেখানে তুমি নাই সেখানে আমিও থাকবো না। আমরা দুজনই থমকে গিয়েছিলাম ছেলের রিঅ্যাকশন দেখে। আর ও যখন ওর ছোট্ট ছোট্ট হাতে মাকে জড়িয়ে ধরেছিল সর্বশক্তি দিয়ে, দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছিল ওর মায়ের। তবে সে অশ্রু আনন্দ-প্রাপ্তি আর ভালোবাসার। আমার স্ত্রী কিন্তু তার ছেলেকে অন্যদের তুলনায় কম শাসন করেনা। বরং বেশী ই করে। তবে তার শাসন হয় ভালোবাসা মিশ্রিত। তাই প্রাপ্তি ও ভালোবাসায় তাকে ছাপিয়ে দেয়।
কথাগুলো যদিও খুব সাজিয়ে লিখতে পারলাম না কেননা সাজিয়ে লেখার লোক আমি নই। তবে পিতা মাতা'রা যদি একটু ভাবেন,যদি একটু সচেতন হন যে আমার সন্তান কে আমি শাসন অবশ্যই করবো তবে সেই শাসনের কারনে সন্তান আমার শত্রু হবে না বরং বন্ধুই থাকবে। এবং শাসনটা হবে ভালোবাসা মিশ্রিত শাসন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন