মা এক নির্ভরতার নাম
লিখেছেন লিখেছেন গাজী হাসান ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:২১:২১ বিকাল
আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট বাবু আমার ভিতরে একটু একটু করে বড় হচ্ছে অথচ সেটা আমি দেখতে পারছি না। কিন্তু দেখো যখন ও বাইরে আসবে তখন আমি ওকে এক মুহুর্তেও জন্যও চোখের আড়াল করবো না। ওর মুখের প্রথম হাসি, প্রথম বলা শব্দ, উঠে বসা, হামাগুড়ি দিয়ে চলা, এক’পা দু’পা করে হাঁটতে শেখা সবকিছু আমি দেখবো। আগে মা বলবে না বাবা বলবে সেটা নিয়ে তোমার সাথে গবেষণা করবো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমার সন্তান হাঁটতে শেখার পর প্রথম যখন ওর পা বেসামাল হয়ে যাবে, আমার স্বপ্ন জীবনের প্রথম সাহায্যকারী হিসেবে আমার হাত বাড়িয়ে ধরবো ওর সামনে। আমার হাত ধরে ও উঠে দাঁড়াতে শিখবে, চলতে শিখবে। জীবনের উঁচু-নিচু পথে কিভাবে হাসি মুখে হাঁটতে হয় সে শিক্ষা তো ছোটবেলা থেকেই দিতে হয়। আমি ওর হাতে হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে সেই শিক্ষা দিতে চাই। এই কথাগুলো আমার জীবনসঙ্গিনীর।
যখন আমার স্ত্রী মা হবার সফর পারি দিচ্ছিলেন মাকে ঘিরে আমার চিন্তা-ভাবনায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা তখন এসেছে। সারাজীবন জেনেছি মায়া, মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা আর ত্যাগ এই ধারণায় জড়িয়ে আছে মাতৃত্বের অনুভূতি। কিন্তু আমার স্ত্রীকে মা হতে দেখে মনে হয়েছে মা হচ্ছেন এমন একজন মানুষ যার প্রতিটি শব্দের মাঝে লুকিয়ে থাকে জীবন বিষয়ক অভিজ্ঞতার জ্ঞান। যার সাহস আর ধৈর্য্যের সামনে সমস্যা-বিপদ-দুঃখ-ব্যথা হার স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। যে প্রেরণা যোগায় সকল পরাজয়ে, সাহস দেয় আবার চেষ্টার। যে সন্তানকে স্বপ্ন দেখতে শেখায় খোলা চোখে কিন্তু আকাশে উড়ার না জমিনে শক্ত পায়ে দাঁড়ানোর। যে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমপাড়ানি গান যেমন শোনায়, তেমনি সন্তানের বুকে মুখ গুঁজে গল্প শোনার আবদারও করে। আদর-ভালোবাসায় সন্তানের মনকে যেমন সিক্ত করে দেয়, আবার কখনো সন্তানের উপর অভিমানে যার আঁখিদ্বয় হয় সিক্ত। যে বন্ধুর মতো সর্বাবস্থায় পাশে থাকার আশ্বাস তো দেয়, কিন্তু সুযোগ পেলে ঝগড়া করতে ছাড়ে না সন্তানের সাথে।
আমার আট বছর বয়সি ছেলে আর তার মায়ের কর্মকান্ড দেখেই এইসব ধারণা হয়েছে আমার। অবশ্য মা-ছেলে না বলে দুজনকে বন্ধু বললেই ঠিক বলা হবে। কারণ দুজন সারাক্ষণ যা কিছু করে একসাথে করে। কখনো দুজনকে দেখা যায় গম্ভীর মুখে গল্পের বই পড়ছে, কখনো কার্টুন দেখছে আর হাসতে হাসতে লুটপুটি খাচ্ছে, কখনো দুজনের করে রাখা পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাকে বিরক্ত করা, আবার কি রান্না হবে সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয় কখনো দুজনের মধ্যে, কখনো স্কুলে কি হয়েছে সেটা নিয়ে কথোপকথন চলতে থাকে। সবচেয়ে ভালো লাগে মা-ছেলে যখন একে অন্যের সাথে রাগ বা অভিমান করে। দুজন দু’রুমে বসে থাকে কখনো বা একই রুমে দু’দিকে ফিরে। চলতে থাকে প্রতিযোগিতা কেউ কারো কাছে না হারার। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ছেলেকেই ছুটে যেতে হয় মায়ের কাছে। কারণ আমার ছেলেটির দুনিয়া তার মাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
২৮২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন