ইসলামিক বিয়ে! ইসলামী অর্থনীতি! আছে-নেই?
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ নিজামী ১৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০৪:১০ সকাল
পূর্ব লন্ডনের এক বন্ধুর বাসায় ভোজন শেষে আড্ডা চলছে, অভ্যাগতদের সবাই প্রবাসী তরুণ। এ ধরণের আড্ডায় সংগত কারণেই দেশোদ্বার পর্ব থাকে,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুন্ডু চটকানো চলতে থাকে। অবশেষে কথা গড়াতে গড়াতে চলে অর্থনীতি তে, আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মন্তব্য করে বসে দুনিয়াতে ইসলামী অর্থনীতি বলতে কিছু নেই, এটা বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের মাল কামানোর ধান্ধা।কম্পিউটার সায়েন্স এ ,M.Sc ডিগ্রীধারী আমার বন্ধুর ,অর্থনীতি বিষয়ক জ্ঞান নিয়ে হতাশা বোধ করলেও খুব একটা অবাক হইনি, সম্ভবত এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে যে তত্ত্বের উপর আমার কোন জ্ঞান নেই, সেটাকে কোনো ধরনের তথ্য ছাড়াই উড়িয়ে দেয়া।
তবে মজলিশের এক ছোকরা ছিল নাছোড়বান্দা সে এর পেছনে যুক্তি দাবি করে বসে,বেচারা বন্ধুটি কথাটা হয়ত বলেছিল কথার কথা হিসেবে,আসর জমানোর জন্য। চ্যালেজ্ঞ যখন আসলই পাল্টা যুক্তি দিতে হল,ইসলামী ব্যাংক আবার কি?
সাধারণ ব্যংক যা করে ইসলামী ব্যংক ও একই ধরনের ব্যবসা করে, এবং ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক কে দেয়া মুনফার হার সাধারণ ব্যংকের দেয়া সুদের হার প্রায় সমান।ইসলামী ব্যংক ও অন্যান্য সাধারণ ব্যাংকের মতো একই উপায়ে গ্রাহক থেকে টাকা যোগাড় করে শুধু নামগুলো ই আরবী,মুদরাবা,মুশরাকা এই যা পার্থক্য। এটা তাদের একটা মার্কেটিং পলিসি মাত্র।সোজা বাংলায় প্রথাগত ফিন্যান্স ও ইসলামীক ফিন্যান্স এর কোন পার্থক্য নেই, যা আছে তা কাগজে কলমে ধাপ্পবাজি। এক নি:শ্বাসে যুক্তিগুলো উগড়ে দিয়ে বন্ধু দম ফেলে। এবার সেই আগের ছোকরা টি যুক্তির সামনে কিছুটা অসহায় বোধ করে। এতক্ষণ আমি শুনছিলাম, এবার আমি বন্ধুটি কে শুধাই, পৃথিবীতে ইসলামিক/মুসলিম বিয়ে বলতে কিছু আছে নাকি?
বলে হ্যা,
আমি বলি,সত্যিকার অর্থে পৃথিবীতে ইসলামিক বিয়ে বলতে কিছু নেই এটা স্রেফ ধাপ্পাবাজি!
বন্ধু-তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেল, কিসের সাথে কি? বিয়ের সাথে অর্থনীতির কি সম্পর্ক?
আছে ,আলবৎ আছে!
অন্তত তোর যুক্তি মানলে,বিয়ের ক্ষেত্রে এ থিয়োরী মানতে হয়।
একজনা অমুসলিমের সাথে আমদের দাম্পত্য জীবন,যৌনজীবন, সন্তান-উৎপাদন-প্রক্রিয়া,ভালোবাসা কোন কিছুর কি পার্থক্য আছে? সব একই
বয়ফ্রন্ড-গার্লফ্রেন্ড একসাথে থাকছে বছরের পর বছর,বাচ্চা-কাচ্চা নিচ্ছে,নাতিপুতি হচ্ছে। সব একই।
সব যেহেতু একই তো আর শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করার দরকার কি?
একজন মুসলিম আর অমুসলিমের বিয়ের প্রক্রিয়ার মাঝে সুস্পশ্ট পার্থক্য টেনে দিচ্ছে একটা কলেমা আর বিয়ের স্বাক্ষী।
ইসলামী শরীয়াহ এর পদ্বতি একই কাজের মাঝে হালাল হারাম পার্থক্য করে দিচ্ছে।
ঠিক একই কথা প্রযোজ্য ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে।
আমি অস্বীকার করছি না ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছু পদ্বতিগত কিছু মতপার্থক্য আছে আর এটি নিরসনের জন্য বিশ্বের ৩৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ব্যাপক সংখ্যক গবেষক কাজ করে যাচ্ছেন।
বন্ধু এবার তীর্যক ভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, তোর এত ভাল অর্থনীতি উন্নত বিশ্ব গ্রহণ করছহে না কেন?
হক কথা।আমি মুচকি হেসে জবাব দিই।
চল দেখি উন্নত বিশ্বে কি হচ্ছে?
২০০৮ সালে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার পর, ইসলামী অর্থনীতিকেই একমাত্র বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
ব্রিটেনের প্রথম ইসলামিক ব্যাংক
২০১১ সাল পুরো বিশ্বজুড়ে ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল সম্পদের পরিমাণ ছিলো 1.3 $ trillion.আর বিশ্বজুড়ে Sukuk (করপোরেট ইসলামিক লোন) এর পরিমাণ $84 billion
ব্রিটেনে প্রথম ইসলামিক ব্যাংক চালু হ্য় ২০০৪ সালে,বর্তমানে সম্পূর্ণ ইসলামিক ব্যাংকের সংখ্যা ৫ টি, এছাড়া আরো ১৭ টি ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে।
INCEIF UNIVERSITY,Malyasia সম্ভবত এটাই বিশ্বের একমাত্র স্পেশালাইজড ইউনিভার্সিটি,যেখানে শুধুমাত্র ইসলামিক ফিন্যান্স পড়ানো ও গবেশণা হ্য়।প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সাল,সেন্ট্রাল ব্যাংক অব মালয়েশিয়ার অর্থায়নে।
বর্তমানে বিশ্বের ৩৮ টি বিশ্ববিদ্যালয় বছরে ৫,০০০ ইসলামিক ফাইন্যান্স গ্রজুয়েট তৈরী করছে,যদিও মোট চাহিদা ৫০,০০০ এর তুলনায় অপ্রতুল।
বিশ্বের বিখ্যাত ৪ টি অডিট ফার্ম ,যা "বিগ ফোর" নামে পরিচিত, ইসলামিক ফাইন্যান্স এর উপর কাজ করে যাচ্ছে।
এখানে কথা প্রসন্গে একটা বিষয় উল্লখ করি,বিগ ফোর এর একটি বিশ্বখ্যাত অডিট ফার্ম " Pricewaterhouse coopers" London এর ইসলামিক ফিন্যান্স ডিরেক্টর মি: ইকবাল খান একজন বাংলাদেশী।
নিম্নে দেখুন তার সাক্ষতকার:
http://www.youtube.com/watch?v=zWnnaXJbSdU
বিষয়: বিবিধ
২৩৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন