টিউশনি র সেকাল- একাল
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ নিজামী ১২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:২২:৫৯ সন্ধ্যা
এস বি ব্লগে টিউশনি লইয়া চমৎকার একখানি পোস্ট দেখিয়া আমার ও সাধ জাগিল এ বিষয়ে খানিকটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করিবার,মধ্যবিত্ত বন্গসন্তানের টিউশনি অভিজ্ঞতা নাই এমনতর ভাবা কঠিন, আর অভিজ্ঞ মাত্রই বলিতে পারে ইহা কি পরিমাণ মধুর,বেদনার আর বিব্রতকর হইতে পারে।
আমাদের কালের কথা কহিতেছি,(আমি বৃদ্ব নই,ত্রিশোধ),বড়জোর বছর দশেক হইবে তখনো ফ্রেন্ডশিপের দৌরাত্ম্য এতখানি প্রবল হইয়া ওঠেনি, শিক্ষক বলিতে কিছুটা সম্মানের পাত্র ছিল হোক না সে গৃহশিক্ষক।আমরাও মহান পেশায় নাম লেখাইয়াছি এমনতর বোধ করিয়া কিছুটা পুলকিত হইতাম, খানিকটা ভাব লইতাম।মাস শেষে বেতন লইয়া টানাটানি কর চুলোয় যাক কিন্তু সম্মান লইয়া উহা চলিবে না। যাক আর ধৈয্যচু্তি ঘটাইব না-
তখন আমার টিউশনি পেশার ২/৪ বৎসর চলিতেছে, সমাদর ও সম্মানী দুটো ই ভাল, আমার মধ্য খানিকটা আত্মবিশ্বাস জন্মি্য়াছে বোধ করি আত্মম্ভরিতা য় বেশী।
একদিন প্রস্তাব আসিল চট্টগ্রাম শহরের স্হানীয় এক খান্দানী পরিবারে দুটো শিশুর মেরুদন্ড(পড়িতে হিবে শিক্ষা) সোজা করিবার দ্বায়িত্ব লইতে হইবে।
এক শুভক্ষণে গিয়া ছাত্রী এবন্গ তাহাদের অভিভাবিকার সাথে পরিচয় সারিয়া আসিলাম।
উক্ত পরিবার ও পরিবেশের খানিকটা বিবরণ না দিলেই নয় পরিবারটির নিবাস চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক এলাকায় বেশ খানিকটা জায়গা জুড়িয়া, মুল বসতবাড়ির সামনের অংশ দোকানপাট পেছনের অংশে যৌথ পরিবারের বসবাস, বোঝাই যায় দেবী স্বরস্বতী র অরাধনা এ বেশিদিনের নয়।
নীচে বসার ঘর, লম্বা বারান্দা পার হইয়া উপরে পড়ানোর ঘরের সিড়ি,
প্রতিদিন উপরে উঠিবার সময় দেখিতাম এক বৃদ্ব নীচের বারান্দায় বসিয়া আছে সামনে আধকোলা কোরানশরীফ ঊহাকে দেখিয়া বোঝার উপায় নেই তিনি ধ্যান না অধ্যায়ন করিতেছেন। যাই হোক প্রতিদিন বারান্দা পার হইবার সময় সালাম দিতাম (পরে জানিয়াছিলাম উনি আমার ছত্রীদের দাদা)
জবার হিসাবে দেখিতাম -কখনো কখনো আধবোজা চোখটা মেলিয়াছেন, পরক্ষণে আবার নিজ জগতে ফিরিয়া গিয়াছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই আমার সালামের এমনতর অবহেলা দেখিয়া এক সময় সালাম দেওয়ার আগ্রহ হরাইয়া ফেলিলাম, ২/১ দিন পর বারান্দা পার হইতেছি,
হঠাৎ একটা ডাক শুনিলাম-- অই, অই
সিড়িততে দু পা দি্ইয়ছি এবার চট্টগ্রমের স্হানীয় ভাষায়--- অই তোরে হইদ্দে( তোকে বলছি)
ভাষার প্র্ য়োগে না যতখানি না বিস্মিত হইয়াছিলাম তার চাইতে ঢের বিস্মিত হইয়াছি বুড়ো র মুখে বোল ফুটি্য়াছে দেখিয়া
হাসিমুখে বুডোর দিকে তাকাইয়া বলিলাম, জি আমাকে বলছেন?
(আমি নিশ্চিত ছিলাম বুড়ো র ভাষার উপলক্ষ্য আমি নই,কিন্তু ভুল সবি ভুল.)
অ তোরে হইদ্দে (তোকে বলছি)
তোরে তোর মা-বাপে আদব-কায়দা ন শেখায়
জ্বি - (ততক্ষণে শোকে বরফ হইয়া গিয়াছি)
তুই সালাম দি ত ন জানস( তুই সালাম দিতে জানিস না)
আমি তো আসমান হইতে পড়িলাম,বুড়া কি বলিতেছে!
সালাম সালাম দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হইয়া গেলাম,কোনদিন জবাব পাই নি
যাই হোক ,সে দিনের সে তরুণ গৃহশিক্ষক ভাবিয়া লইল এ অপমান শুধু তাহা র একার নহে (!)পুরো শিক্ষক জাতির, অবশেষে শোক কে শক্তি তে পরিণত করিয়াছিল,
সম্মানীর লোভ ছাড়িয়া , অনিবায্ কারণ দেখাইয়া ইস্তফা দিইয়াছিল।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন