' মুনাজ'
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ নিজামী ২১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:০৮:৫৬ সকাল
দেশে যাওয়া হয় না অনেকদিন,প্রায় চারবছর ।হাবিজাবি প্রবলেম লেগে থাকে ,যাওয়ার আর ফুরসত হয় না,স্কাইপিই ভরসা,ভেবেছিলাম এবার যাওয়া হবে,আমাদের নতুন মেহমান কে দেখার জন্য সবাই অস্হির,যাওয়ার ঠিক আগের মাসেই একটা সমস্যায় যাওয়াটা আবার আটকে যায়, এবার বউ বাচ্চাকে আটকে রাখা আর সমীচীন মনে হলো না, ওদের জন্য টিকেট করা হয়ে গেছে,শুরু হয় কাউন্টডাউন,মাত্র চার মাস আগে জন্ম নেয়া 'মুনাজ' কে ছাড়া থাকতে হবে প্রায় দুমাস, ভাবতেই মনটা ভারী হয়ে ওঠে,কিছু ভাল লাগে না ,প্রতিদিন কাটা ঘা'য়ে নুনের ছিটা'র মত রুমি মনে করি্যে দেয় যাওয়ার আর কদিন আছে।
দেশে যাওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে 'মুনাজ ' কে কট থেকে আমাদের বেডে নিয়ে আসি রুমি চেচিয়ে ওঠে ,অভ্যাস হয়ে যাবে ,পরে রাখা যাবে না,বলি থাক না, কদিন পর চাইলেও তো আর পাব না।
পিচ্চিটা ও কম যায় না, ও বুঝে গেছে এটাতো ভারী মজার জায়গা বাবা-মাকে একসাথে পাওয়া যায়, রাতে আমাদের বেডে ছাড়া ঘুমায় না,কট-কাম-আলনা টা হয়ে ওঠে পুরনো কাপড়ের আশ্রয়স্হল।
রাতে ওর পাশে আমার ঘুম হয় না, ওর তুলতুলে নরম হাতের স্পর্শ নিই,শরীরের গন্ধ নিই ওর কপোলে নাক ঘষি।
এক অদ্ভুত পাগলামিতে আমাকে পেয়ে বসে,মাঝরাতে ওঠে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি,বালিশের কাভারে চোখ মুছি, রুমির হাতে ধরা পড়লে মাঝরাতে চেচিয়ে ওঠে আর কেউ বুঝি সন্তানকে দেশে রেখে প্রবাসে থাকে না? ঢং করো!
কিন্তু আমি কি করব? আমার ভেতর টা এরকম হাহাকার করে ওঠে কেন?
অবশেষে যাওয়ার দিন চলে আসে,আগের রাত প্রায় নির্ঘুম গেছে,সকালটা নিমিষেই হারিয়ে যায়,বিকালে ফ্লাইট।
এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করি যথাসময়ে,বাংলাদেশ বিমান সুনাম বজায় রাখে ,ফ্লাইট লেট কবে ছাড়বে কেউ বলতে পারে না এবার অন্তত বাংলাদেশ বিমানকে ধন্যবাদ দিই। কিছুটা সময় তো বেশী থাকতে পারবো ছেলের সাথে।
ছেলেটাও যেন আজ হঠাত করে সবকিছু বুঝে গেছে,মুখ ভার কোনকিছুতেই আর হাসে না। ঘন্টাখানেক আমার কাধে ঘুমায়।
তারপর মোবাইলের মেমোরি ভরাতে থাকি,আমার অবসরের খোরাক।
অবশেষে প্লেন ছাড়ার সময় হয়,রুমির কোলে তুলে দিই 'মুনাজ' কে। শেষবারের মত গভীর আবেশে আদর করি, আ উ উ করে কি জানি বল্ল ,হ্য়ত ওর ভাষা্য় 'আব্বু আবার দেখা হবে গোছের কিছু'।
রুমি চোখ মুছতে মুছতে সিকিউরিটি গেটের দিকে হাটে ,আমার ঝাপসা চোখ ওদের আর খুজে পায় না,আমার পুরো বুকটা হাহাকার করে ওঠে,মনে হয় কেউ যেন ভেতরে ধারালো ছুরি দিয়ে কাটাকুটি খেলছে। এয়ারপোর্টে তীব্র আলোর মাঝেও আশপাশটাও আমার কাছে অন্ধকার মনে হয়।
ট্রেনে ফিরতে ফিরতে পুরো প্রবাসজীবনকে রিভিও করতে থাকি
কেনে এসেছিলাম,কিসের মোহে, মা-বাবা সবাইকে ফেলে তারাওতো আমি আসার সময় এভাবে কষ্ট পেয়েছিলো,তাদের ভেতরেও তো আমার না থাকাটা নিত্য হাহকার তোলে, নিজেকে স্বার্থপর মনে হয় ভীষণ।
রাত এগারটার দিকে বাসায় ফিরি ,কোথায় কেউ নেই পুরো ঘর শুন্য,ঘরের দে্যালে তাকিয়ে থাকি,দেয়ালগুলো সবকিছুর নীরব স্বাক্ষী,আমাদের আবেগের ,ভালবাসার,ঝগড়ার।
হঠাত সোফার উপর চোখ আটকে যায়, যাওয়ার সময় তাড়াহড়ায় ফেলে গেছে,মুনাজের ছোট্ট এক পাটি জুতো,আমি জানি না হঠাত আমার কি হলো, আমার আবেগ ওথলে ওঠে, আমি হাউমাউ করে কেদে উঠি, দীর্ঘক্ষণ ফুফিয়ে কান্না করি, আমার কান্না দেখা বা শোনার জন্য কেউ থাকে না নিশ্চল দেয়ালগুলো ছাড়া।
'আব্বু মুনাজ' মিস করছী খুব খু উ ব!
পুনশ্চ: গভীরভাবে সমবেদনা প্রকাশ করছি সেইসব মা-বাবার প্রতি যারা সন্তানকে রেখে প্রবাসে আছেন বা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন
দেশে যাওয়া হয় না অনেকদিন,প্রায় চারবছর ।হাবিজাবি প্রবলেম লেগে থাকে ,যাওয়ার আর ফুরসত হয় না,স্কাইপিই ভরসা,ভেবেছিলাম এবার যাওয়া হবে,আমাদের নতুন মেহমান কে দেখার জন্য সবাই অস্হির,যাওয়ার ঠিক আগের মাসেই একটা সমস্যায় যাওয়াটা আবার আটকে যায়, এবার বউ বাচ্চাকে আটকে রাখা আর সমীচীন মনে হলো না, ওদের জন্য টিকেট করা হয়ে গেছে,শুরু হয় কাউন্টডাউন,মাত্র চার মাস আগে জন্ম নেয়া 'মুনাজ' কে ছাড়া থাকতে হবে প্রায় দুমাস, ভাবতেই মনটা ভারী হয়ে ওঠে,কিছু ভাল লাগে না ,প্রতিদিন কাটা ঘা'য়ে নুনের ছিটা'র মত রুমি মনে করি্যে দেয় যাওয়ার আর কদিন আছে।
দেশে যাওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে 'মুনাজ ' কে কট থেকে আমাদের বেডে নিয়ে আসি রুমি চেচিয়ে ওঠে ,অভ্যাস হয়ে যাবে ,পরে রাখা যাবে না,বলি থাক না, কদিন পর চাইলেও তো আর পাব না।
পিচ্চিটা ও কম যায় না, ও বুঝে গেছে এটাতো ভারী মজার জায়গা বাবা-মাকে একসাথে পাওয়া যায়, রাতে আমাদের বেডে ছাড়া ঘুমায় না,কট-কাম-আলনা টা হয়ে ওঠে পুরনো কাপড়ের আশ্রয়স্হল।
রাতে ওর পাশে আমার ঘুম হয় না, ওর তুলতুলে নরম হাতের স্পর্শ নিই,শরীরের গন্ধ নিই ওর কপোলে নাক ঘষি।
এক অদ্ভুত পাগলামিতে আমাকে পেয়ে বসে,মাঝরাতে ওঠে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি,বালিশের কাভারে চোখ মুছি, রুমির হাতে ধরা পড়লে মাঝরাতে চেচিয়ে ওঠে আর কেউ বুঝি সন্তানকে দেশে রেখে প্রবাসে থাকে না? ঢং করো!
কিন্তু আমি কি করব? আমার ভেতর টা এরকম হাহাকার করে ওঠে কেন?
অবশেষে যাওয়ার দিন চলে আসে,আগের রাত প্রায় নির্ঘুম গেছে,সকালটা নিমিষেই হারিয়ে যায়,বিকালে ফ্লাইট।
এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করি যথাসময়ে,বাংলাদেশ বিমান সুনাম বজায় রাখে ,ফ্লাইট লেট কবে ছাড়বে কেউ বলতে পারে না এবার অন্তত বাংলাদেশ বিমানকে ধন্যবাদ দিই। কিছুটা সময় তো বেশী থাকতে পারবো ছেলের সাথে।
ছেলেটাও যেন আজ হঠাত করে সবকিছু বুঝে গেছে,মুখ ভার কোনকিছুতেই আর হাসে না। ঘন্টাখানেক আমার কাধে ঘুমায়।
তারপর মোবাইলের মেমোরি ভরাতে থাকি,আমার অবসরের খোরাক।
অবশেষে প্লেন ছাড়ার সময় হয়,রুমির কোলে তুলে দিই 'মুনাজ' কে। শেষবারের মত গভীর আবেশে আদর করি, আ উ উ করে কি জানি বল্ল ,হ্য়ত ওর ভাষা্য় 'আব্বু আবার দেখা হবে গোছের কিছু'।
রুমি চোখ মুছতে মুছতে সিকিউরিটি গেটের দিকে হাটে ,আমার ঝাপসা চোখ ওদের আর খুজে পায় না,আমার পুরো বুকটা হাহাকার করে ওঠে,মনে হয় কেউ যেন ভেতরে ধারালো ছুরি দিয়ে কাটাকুটি খেলছে। এয়ারপোর্টে তীব্র আলোর মাঝেও আশপাশটাও আমার কাছে অন্ধকার মনে হয়।
ট্রেনে ফিরতে ফিরতে পুরো প্রবাসজীবনকে রিভিও করতে থাকি
কেনে এসেছিলাম,কিসের মোহে, মা-বাবা সবাইকে ফেলে তারাওতো আমি আসার সময় এভাবে কষ্ট পেয়েছিলো,তাদের ভেতরেও তো আমার না থাকাটা নিত্য হাহকার তোলে, নিজেকে স্বার্থপর মনে হয় ভীষণ।
রাত এগারটার দিকে বাসায় ফিরি ,কোথায় কেউ নেই পুরো ঘর শুন্য,ঘরের দে্যালে তাকিয়ে থাকি,দেয়ালগুলো সবকিছুর নীরব স্বাক্ষী,আমাদের আবেগের ,ভালবাসার,ঝগড়ার।
হঠাত সোফার উপর চোখ আটকে যায়, যাওয়ার সময় তাড়াহড়ায় ফেলে গেছে,মুনাজের ছোট্ট এক পাটি জুতো,আমি জানি না হঠাত আমার কি হলো, আমার আবেগ ওথলে ওঠে, আমি হাউমাউ করে কেদে উঠি, দীর্ঘক্ষণ ফুফিয়ে কান্না করি, আমার কান্না দেখা বা শোনার জন্য কেউ থাকে না নিশ্চল দেয়ালগুলো ছাড়া।
'আব্বু মুনাজ' মিস করছী খুব খু উ ব!
পুনশ্চ: গভীরভাবে সমবেদনা প্রকাশ করছি সেইসব মা-বাবার প্রতি যারা সন্তানকে রেখে প্রবাসে আছেন বা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হুমম, নিজেরা বাবা-মা না হওয়া পর্যন্ত আসলে বাবা মার কস্টটা বুঝা যায় না.....
সুন্দর অনুভুতি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ..
ভাই, একই লেখা দুই বার এসেছে...এডিট করে দিতে পারেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন