সলিসিটরদের কনভোকেশনে কয়েক ঘন্টা

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ নিজামী ০২ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৪১:০৯ বিকাল





সদ্য গ্রাজুয়েটদের একাংশ

পড়ি মড়ি করে বাস হতে নেমে চ্যান্সেলরী লেন খুজতে আরো মিনিট দুয়েক লাগলো,সোজা ঢুকে পড়ি ,আমাকে যেতে হবে ১১৩ নম্বর ব্লকে,কিংস কলেজের অপজিট বিল্ডিং।অদ্ভুত ,পুরো লন্ডনে এই কিংস কলেজ ছড়ানো ক্যাম্পাস, আর একেকটা ক্যাম্পাস বিশাল বিশাল।এদিকে দুটা বাজে প্রায় ,আমকে বলা হয়েছিল ল সোসাইটি 'র বিল্ডিং এর সামনে দুটো বাজে থাকতে ,ব্রিটিশ দের দুটো মানে ১টা ৫৫।নাহ, রাস্তার শেষ মাথায় এসে আর খুজে পাই না,পকেট হাতড়ে ফোনটারে দুইটা গুতা দিই,পথ বাতলে একেবারে প্রায় দুশো বছরের পুরনো রাজকীয় বিল্ডিং এর সামনে এনে দেয়।হাফ ছেড়ে বাচি, কাটায় কাটায় দুই টা।

ঢুকতেই দেখি সদ্য কোয়ালিফাইড সলিসিটর রা কালো গাউন পড়ে ছোটাছুটি করছে,রিসিপশেন নাম বলতেই গেষ্ট লিস্ট এ চেক করলো।নাম কনফার্ম করে জানলো প্রোগ্রাম শুরু হবে তিনটায় ততক্ষণে আমি চা কফি খেতে পারি।



ল সোসাইটি'র লাইব্রেরী

কিছুক্ষণ পরেই দেখা মেলে মইন ভাইয়ের,মইন ভাই ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস এর আইনজীবি হিসাবে পাশ করেছেন চার বছর আগে , এরপর আরো সাড়ে তিনবছর শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ করেছেন, এরপর ইংলিশ ল ইয়ার হিসাবে সার্টিফিকেট পেলেন আজ তাদের সার্টিফিকেট এ্যাওয়ার্ডিং সিরমনি ,মূলত সে অনুষ্ঠান দেখতেই আমার আসা।এদেশে আইনজীবি হিসাবে প্র্যাকটসিং সার্টিফিকেট পাওয়া একটি কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, এবন্গ সে প্রক্রিয়ার একটি অংশ হল সাড়ে তিনবছর কাজের অভিন্গতা অর্জন ,এই ধাপটুকু খুবই কঠিন প্রথমত কোন ভাল ল ফার্মে এ শিক্ষানবীস হিসাবে কাজ করার জন্য দুই থেকে তিন বছর আগে হতে সিরিয়াল দিতে হয়,তো শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে এমন কোন গ্যারান্টী নেই। আর যদিও বা পাওয়া গেল সে অভিন্গতা অর্জন আসলেই অর্জন,দিন্-রাত গড়ে ১৮ ঘন্টা খাটুনি, অনেকে এটা সহ্য করতে না পেরে মাঝ পথে রণে ভন্গ দেয়।

মইন ভাই আমাদের বান্গালীদের মধ্য অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা,খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে ধৈর্য্য আর মেধা দিয়ে এদেশে কিভাবে প্রতিশ্ঠিত হলো সে এক বিশাল উপাখ্যান। না হয় আরেকদিন করা যাবে সে গপ্পো।

প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগে হাতে কিছুটা সময় থাকাতে বিল্ডিং টা ঘুরে ঘুরে দেখি।

দি ল সোসাইটি মূলত ইন্গল্যান্ড এন্ড ওয়েলসের এর সলিসিটরদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংষ্হা,আইনজীবিদের প্রশিক্ষণ ,মাণ নিয়ণ্ত্রণ করে থাকে। এটি ২রা জুন ১৮২৫ সালে প্রতিষ্টিত হয়,বর্তমান ভবন টি তারা ব্যবহার করছে ১৮৩২ সাল হতে।

ভবনের দক্ষিণ পাশের ভিক্টোরিয়ান সিড়ি বেয়ে দোতলায় লাইব্রেরী রুমে ঢুকে পড়ি,পুরো লাইব্রেরীটাই ডিজিটাল ,মেম্বাররাই সাধারণত অনলাইন এক্সেস পেয়ে থাকে।আইনের অন্যতম লাইব্রেরী বলে পুরো ইন্গল্যান্ড জুড়ে এর খ্যাতি আছে।এখানে ১৮০১ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ব্রিটশ পার্লামেন্টের বিভিন্ন আইনের কপি সংরক্ষিত আছে।

সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে,অনুষ্ঠান শুরুর পনের মিনিট আগে আমাদেরকে হল রুমে ঢুকতে হবে,আস্তে আস্তে হল রিমের দিকে এগুতে থাকি,রিসিপশেনর পাশেই নীচতলা হতে বিশাল রাজকীয় সিড়ি উঠে গেছে,পুরো সিড়ি জুড়ে লাল গালিচা বিছানো, আর দেয়াল জুড়ে বিশাল বিশাল সব পোট্রেট।

সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠলেই মাঝারি মানের একটি হলঘর,বেশ উচুতে ছাদ,বড় বড় ঝাড়বাতি ঝুলছে।

আমরা নির্ধারিত আসনে বসে পড়লাম। স্টেজে একটা মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড ,আর কোন কিছুই নেই। বুঝলাম না ,অতিথি রা কোথায় বসবেন।আমাদের দেশে সাধারণত এ ধরনের প্রোগ্রামে অতিথিদের কম্বিনেশন টা আনেকটা এ রকম।ন্যুনতম আধডজনের মত অতিথি, এরা হবেন প্রধান অতিথি,বিশেষ অতিথি, সভাপতি ।বলাবাহুল্য এরা সবাই রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ।

স্টেজের একেবারে সামনের সারিতে বসলেন গ্রাজুয়েটরা ।

ঠিক তিনটা বাজার ৫ মিনিট আগে উপস্হাপক এলেন স্টেজ, প্রথমে বাতলে দিলেন এমার্জেন্সী এক্সিট পথ,তারপর অনুষ্ঠানের আদবকেতা,ঘোষণা করলেন প্রধান অতিথির নাম,যিনি ল সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।আমার জন্য সপ্তামাশ্চর্য ছিল ,আজকের অনুষ্ঠানে মাত্র একজন অতিথি।যিনি বক্তা তিনিই সনদ দিবেন

অবশেষে ,প্রধান অতিথি শুরুতে হাল্কা কিছু রসিকতা করলেন, একটা জিনিস আমি খুব লক্ষ্য করেছি,ব্রিটিশদের রসবোধ খুব টনটনে, যে কোন পরিস্হিতিতে এর হাল্কা রসিকতা পছন্দ করে।

নতুন সলিসিটরদের দ্বায়িত্ব কর্তব্য স্মরণ করিয়ে বক্তব্য শেষ করলেন। এরপর এলো সার্টিফিকেট বিতরণের পালা,একেকজনের নাম ঘোষনা হয় আর করতালিতে ফেটে পড়ে পুরো হল।

সর্বেশেষ পর্ব ছিলো হাল্কা আপ্যায়ন।

আমরা যখন হল থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম একটা ফাস্টফুডর সামনে এসে মইন ভাই থমকে যান,আমার দিকে ফিরে মুখ নিচু করে বলেন, আমি যখন প্রথম এসেছিলাম লন্ডনে এরকমই এক ফাস্টফুডের দোকানে দিনের পর দিন খেটেছি, শুধুমাত্র আজকের দিনটের জন্য,ঠোটের কোণ এক চিলতে বিজয়ী হাসি ফুটে ওঠে। আমি আরেকবার কংগ্র্যাচুলেশন ! বলে পা বাড়াই স্টেশনের দিকে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

301207
২২ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:৩০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পড়ে দারুন লাগল
301209
২২ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৮:০৬
আহমেদ নিজামী লিখেছেন : অশেষ ধন্যবাদ। আগ্রহ নিয়ে পুরনো পোষ্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ,অনেক দিন পর ব্লগে এসে আপনার নিয়মিত পদচারণা দেখে ভাল লাগল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File