জি এস পি প্রত্যাহার ও আমাদের আড্ডা- ১

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ নিজামী ২৯ জুন, ২০১৩, ০৮:৪৭:২৩ সকাল

আমি আগেও উল্লেখ করেছি,প্রবাস জীবনের দাওয়াতের আড্ডাগুলো মূলত হয়ে ওঠে দেশ ও দেশের রাজনীতির মুন্ডু চটকানো, তেমনি এক আড্ডায় হাজির হয়েছিলাম গতকাল।অবধারিত ভাবে উঠে আসে জি এস পি কাহিনী।

কেউ একজন শুধোয় ,ভাই কাহিনীটা একটু গোড়া থেকে বুঝয়ে বলেন।

Generalised System of Preferences (GSP) ১৯৭৬ সালে আরম্ভ হওয়া এই প্রগ্রামের অঅতায় বিশ্বের ১২৭ টি দেশের পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে আমেরিকায়।উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক গ্রোথ কে সহযোগিতা করার জন্য এটি চালু করা হয়।

বলা বাহুল্য এটি যে উন্নয়নশীল দেশ এর জন্য সহায়ক তা নয়,খোদ আমেরিকার বিপুল সংখ্যক চাকরি,ব্যাবসা বাণিজ্য এর সাথে জড়িত।ামেরিকার চাম্বার অব কমার্সের এক সমীক্ষা মতে আমেরিকাতেই ৮০ হাজার চাকরি জি এস পি এর সাথে জড়িত। ও হ্যা ভালো কথা শুধু ২০১২ সালেই এই সুবিধার অআওতায় ১৯।৫ বিলিয়ন পণ্য আমদানি হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সুবিধা বাতিল করা হয়েছে,যা কার্যকর হবে আগামী ৬০ দিনের মধ্য।

এখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এর ফলে বাংলাদেশ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

উত্তর টা সহজ আবার কঠিন ও।

কারণ এর অর্থনৈতিক ক্ষতিটা আমরা নির্ণয় করতে পারবো কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষতির পরিমাপ ও পরিমাণ নির্ণয় দুটো ই দুরহ।অর্থনৈতিক ক্ষতিটা বোঝার জন্য নিচের চার্ট টা দেখা যাতে পারে

2012 Top GSP Products (by value):

1. Ferroalloys ($ 1 billion)

2. Motor vehicle parts ($ 938 million)

3. Rubber radial tires ($ 883 million)

4. Silver and gold jewelry ($ 748 million)

5. Crude petroleum oil ($ 664 million)

6. Aluminum plate and related products

($ 427 million)

7. Iron and steel tube and pipe fittings

($ 359 million)

8. Insulated and fiber optic wire and cable

($ 330 million)

9. Transmission parts ($ 324 million)

10. Machines fittings for pipes and vats and

related products ($ 291 million

উপরে ২০১২ সালে আমেরিকার জিএসপি সুবিধা পাওয়া প্রথম ২০ টি পণ্যর নাম, লক্ষ্য করলে দেখবেন এর কোনটিই আমাদের প্রধান রপ্তানিদ্রব্য নয়, আরো সুখকর তথ্য হলো যে শীষস্হানীয় ২০ টি এই সেবা নিয়েছে তার মধ্য বাংলাদেশের নাম নেই।সেই বিশটি দেশের তালিকায় প্রথমে আছে ভারত(৪।৫১ বিলিয়ন ডলার) ১১ তম স্হানে আছে পাকিস্তান ,রপ্তানীর পরিমাব ১৯৫ মিলিয়ন। আমি ইচ্ছে করেই এই দুটি দেশের অবস্হান উল্লেখ করেছি,কারণ বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকেরা এই দুটির যে কোন একটি দেশ জিএসপি সুবিধা বাতিলে কাজ করেছেন বলে মনে করে থাকেন। একটু খেয়াল করলেই ধারণাটির অসারতা বোঝা যায়।লিস্টের ১ম এবং ১১ তম খেলোয়াড়ের র জন্যা টপ ২০ এর বাইরে থাকা কোন দেশ প্রতিদ্বন্দী হতে পারে না। আমেরিকায় রপ্তানীক্রিত

বাংলাদেশী পণ্যর ১ % এর ও কম পন্য জি এস পি সুবিধা পেয়ে থাকে।

সুতরাং এইষিদ্বান্তে আসা যায় এটা অর্থনৈতিক ভাবে ভয়ের কোন কারন নেই

রাজনৈতিক ক্ষতি:

মূলত বাংলাদেশে ও জনগণের সবচে বড় ক্ষতিটা হয়েছে এখানেই,প্রথমত এই দেশ কর্মী অধিকারের ক্ষেত্রে আমেরিকার গুড বুক থেকে বাদ পড়েছে আর এই খবর সমগ্র বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো,রানা প্লাজার কারণে এমনিতে বাংলাদেশ ছিলো বিশ্বমিডিয়ার কাছে নেতিবাচক খবরের খনি,আর জি এস পি প্রত্যাহারের খবর ষোলকলা পূর্ণ করেছে।পশ্চিমা বিশ্বের সচেতন ক্রেতাদের কাছে এই মেসেজ চলে গেছে বাংলাদেশ হলো এমনি এক দেশ যেখানে শ্রমিকদের মিনিমাম অধিকারের ব্যাপারে খুব উদাসীন।স্বাভাবিক ভাবেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে য়ুরোপের বাজারে।

অবশ্য তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী যুক্তরাষ্ট্রের মত এত কঠিন সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেবে না বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, তারা তুলনামূলক সহনশীল। শ্রমিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা আমাদের সাথে একযোগে কাজ করছে।

আব্দুস সালাম মোর্শেদী স্রেফ গলাবাজি করছেন, তিনি নিজেও ভালো করে জানেন ,তার মনে করার উপর কোন সিদ্বান্ত নির্ভর করবে না। তার এই বক্তব্য শুনে কোন গার্মেন্ট শ্রমিক যদি তার মুখে থু থু নিক্ষেপ করে আমি অবাক হবো না।

এই লোকগুলো শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে ছিলো বরাবরই উদাসীন। এই বিজিএমই যদি প্রতি বছর দশটি ফ্যাক্টরীর মানোন্নয়নের জন্য চেষ্টা করতো,তবে আজ এই দশা হতো না, শ্রমিকদের লাশ লুকানো আর লাশের সংখ্যা কমানো ই হলো এদের প্রধান কাজ।

এখন কি হবে

এটা আনুমাণ করা কঠিন কিছু নয়, জিএসপি সুবিধা থেকে বাদ পড়া অন্য ১৩ টি দেশের ক্ষেত্রে যে প্রসিডিওর অনুসরন করা হয়েছে ,বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হবে।

আর বাংলাদেশে ,সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে নিশানা বানানো হবে , এ ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ ড:ইউনুস। অবশ্য বিএনপি কে সাথে নেয়া যেতে পারে।

আর বিরোধী দল আপাতত বুকে হাত তুলে সরকারের দোষ নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে ক'টা দিন।

বিজিএমইএ চাপাবাজি,দলবাজি চলতে থাকবে।

চ্যানেলগুলো আনন্দে আটখানা তরতাজা নতুন ইস্যু।

বিষয়: বিবিধ

১৮৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File