দাদুর পাঠশালা-২
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ৩১ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৫৯:৩৯ দুপুর
বারান্দায় বসে বাগানে খেলাধুলা করতে থাকা নাতি-নাতনীদের দিকে তাকিয়ে পাঠশালার কথাই ভাবছিলেন আরমান সাহেব। শেষ পর্যন্ত পারবেন তো স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে? সেদিনের পর আর রিসাবের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি। অসম্ভব কাজ পাগল এই ছেলেটিকে চাইলেই কাছে পাওয়া যায় না। যদিও পরিবারের সবার যথাযথ খেয়াল রাখতে কখনোই ভুল করে না রিসাব। যখন যার যা কিছু প্রয়োজন সাধ্যানুযায়ী মেটাতে চেষ্টা করে। আরমান সাহেব স্বপ্ন দেখে তাঁর প্রতিটা নাতি-নাতনী রিসাবের মতো হবে। ঘরে-বাইরে সবার প্রতি দায়িত্বশীল। এই সময় ছেলের বউকে আসতে দেখে মনেমনে অনেক খুশি হলেন। ছেলের মতো ছেলের বউটিও ভীষণ প্রিয় তাঁর। কাছে এসে সালাম দিয়ে মিষ্টি হেসে আরমান সাহেবের বউ মা বলল, বাবা আপনার ঔষধের সময় হয়েছে। ঔষধ নিয়ে-
-তোমার সময় থাকলে আমার কাছে একটু বসো তো মা।
-কিছু বলবেন বাবা?
-রিসাব কি তোমাকে আমার পাঠশালার কথা কিছু বলেছে?
-(হেসে) জ্বি বাবা বলেছেন। আমার তো ভীষণ পছন্দ হয়েছে আপনারা পাঠশালার আইডিয়াটা।
-কিন্তু রিসাব তো আর কিছু বললো না আমাকে।
-আসলে উনি এতো বেশি ব্যস্ত থাকেন যে অনেক সময় ইচ্ছে হলেও সবদিকে সমান নজর দিতে পারেন না। ইনশাআল্লাহ! বাবা আমি আপনাকে সাহায্য করবো পাঠশালার ব্যাপারে। মার সাথে কথা বলেছেন?
-প্রথমেই তোমার শাশুড়িকে বলতে চাইছি না। জানোই তো আমার সব কাজে ভেটো দেয়া তাঁর স্বভাব।
-(হেসে) আমি তো দেখি মা সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করে আপনাকে সবক্ষেত্রে। মা তো ভীষণ সুইট।
-সুইট তোমাদের সামনে সেজে থাকে। আমার কাছে তো সে নিমপাতার সাথে করলা মেশানো শরবত।
-(হেসে) আমি জানি আপনি মাকে চমকে দিতে চাইছেন তাই এখনি বলতে চাইছেন না।
-(হেসে) তোমার শাশুড়ি তো সারাজীবন ধরেই চমকের পর চমক দিয়েছে আমাকে। দেখি বেলা শেষের দিনগুলোতে আমি একটু আধটু চমক দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারি কিনা।
-মাকে আপনি খুব ভালোবাসেন তাই না বাবা?
-ভালো না বেসে যে কোন উপায় নেই রে মা। গত পঁয়ত্রিশ বছরে জীবনের সব পরীক্ষায় তোমার শাশুড়ি আমার হাতে হাত আর কদমে কদম মিলিয়ে পথ চলেছে। কন্টকাকীর্ণ পথ দেখে কখনো থমকে তো যায়ই নি উল্টো আমাকে সামনে এগোনোর সাহস যুগিয়েছে মনে।
-আল্লাহ যখনই কোন পরীক্ষা নেবেন জীবনসাথী যেন দুঃখের অমানিশাতে ধৈর্য্য না হারিয়ে শুধু মাত্র আল্লাহ্র উপরে নির্ভর করে বিপদ ও দুঃখকে অতিক্রম করতে পারে তার প্রেরণা যোগানোও তো দাম্পত্য সম্পর্কের একটা দাবী তাই না বাবা?
-একদম ঠিক বলেছো মা। যে জীবনসাথী পৃথিবীর জীবনে চরিত্রকে সমুন্নত রাখতে সাহায্য করে, যার সাহচার্য মনকে সমৃদ্ধ করে, যে সর্বাবস্থায় প্রেরণা যোগায় ক্ষণকালীন এই জীবনকে চূড়ান্ত সাফল্যের পানে নিয়ে যেতে তোমার শাশুড়ি তেমনই একজন সাথী আমার জন্য।
-বাবা আপনাদের কাছে আছে জীবনযাপনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। হীরা-জহরতের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান আপনাদের সেই অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। আমি নিজের সাথে সাথে আমাদের সন্তানদের জন্যও সেই ভাণ্ডার থেকে অমূল্য সব রতন তুলে নিতে চাই। তাই আমিও আপনার পাঠশালার ছোট্ট একটু অংশ হতে চাই।
-(হেসে) আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে তো আমার আর চিন্তার কিছু নেই। বিনয়ের মাধ্যমে আল্লাহ্র শোকর গোজারী করে এবং সকল অবস্থায় আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীল, আল্লাহ্র প্রতি একান্ত নিবেদিত এমন মানুষ হিসেবে গড়তে চাই আমি আমার নাতি-নাতনিদেরকে। কারণ মানুষ যখন আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত এবং নির্ভরশীল এমন মানসিক ও আত্মিক অবস্থা লাভ করে, তখন তার চরিত্রে দুর্লভ সব গুণাবলী জন্ম লাভ করে। ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, সংযম, সাহসিকতা,একাগ্রতা, অধ্যবসায়ী প্রভৃতি বিভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলী তাঁর চরিত্রকে করে উজ্জ্বল ও সমুন্নত।
-ইনশাআল্লাহ! বাবা আমরা সবাই এমন কিছু মানুষ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করবো আমাদের পাঠশালাতে।
-আমিও সেটাই চাই মা কিন্তু আবার চিন্তা করি যা চাইছি যেভাবে চাইছি সব ঠিকঠাক মতো হবে তো?
-সফল হবো কি হবো না সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করবো না বাবা এবং চেষ্টা করা ছেড়ে দেবো না কখনোই। ইনশাআল্লাহ! তাহলে ব্যর্থতা এলেও আমরা দুর্বল হবো না।
-(হেসে) তোমার সাথে কথা বললে মনটা সত্যিই অন্যরকম হয়ে যায় মা। বুড়ো হাড্ডিতে শক্তি জুগিয়ে যায় তোমার কথা।
-(হেসে) আলহামদুলিল্লাহ! আমি তাহলে এখন উঠি বাবা রান্না করতে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ! রাতে রিসাব ফিরলে আমি উনার সাথে কথা বলবো এই ব্যাপারে।
পুত্রবধূ চলে যাবার পর আনন্দিত চিত্তে নাতি-নাতনীদের খেলা দেখাতে মন দিলেন আরমান সাহেব। তার দুচোখে ঝলমল করছে স্বপ্ন। বেলা শেষের দিনগুলোকে বর্ণিল আর অর্থবহ করে তোলার স্বপ্ন।
চলবে..............(ইনশাআল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
১৯৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন