ভাবনা যখন সুর তুলে যায় জীবন বীণার তন্ত্রীতে-১০
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৬ মার্চ, ২০১৩, ১২:০৯:৪২ দুপুর
বিছানায় অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করার পরও ঘুম তো দূরে থাক এক ফোঁটা তন্দ্রাও এলো না রিনিলার চোখে। তার ঘুমের স্বভাবই হচ্ছে এমনিতে সময়ে অসময়ে হানা দিয়ে বিরক্ত করে মারে কিন্তু যখন ঘুমোতে ইচ্ছে করে তখন চোখের মধ্যে ছিপ ফেলেও ঘুমকে ধরা যায় না। উঠে কিছুক্ষণ বইপত্র নাড়াচাড়া করেও কাজ হলো না। একদমই ইচ্ছে করছে না পড়তে। চুপ করে বারান্দায় এসে বসলো তখন। তিনদিন হলো রিসাব শহরের বাইরে গিয়েছে একটা কাজে। ব্যস্ততার কারণে খুব বেশি কথাও হয়নি গত কদিন। খুব মনে পড়ছে রিসাবের কথা। ভীষণ ইচ্ছে করছে কথা বলতে। দেবে কি দেবে না ভাবতে ভাবতে শেষে ফোন দিলো। মিষ্টি হাসির সাথে রিসাবের সালাম মনের সব ক্লান্তি যেন পলকে দূর হয়ে গেলো রিনিলার। অভিমানী কণ্ঠে বলল, তুমি কবে আসবে?
-(হেসে) তোমার কণ্ঠের অস্থিরতা তো বলছে ভীষণ মিস করছো আমাকে। অবশ্য আমিও এতক্ষণ তোমার ফোনের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলাম।
-ফোন না করে প্রতীক্ষার প্রহর কেন গোনা হচ্ছিলো শুনি?
-(হেসে) প্রতীক্ষার আনন্দটা উপভোগ করতে ইচ্ছে করছিলো খুব। রিনিলা তোমার মনেআছে আমাদের বিয়ের পরপর একসপ্তাহের জন্য তুমি বাবার বাসায় গিয়েছিলে? ব্যস্ততার কারণে আমি সাথে যেতে পারিনি। সেই একসপ্তাহে আমরা কত ঘণ্টা ফোনে কথা বলেছিলাম তা কি জানো?
-(অবাক কণ্ঠে) নাতো! তুমি কি সময়কে গুণে রেখেছো? কতো ঘণ্টা কথা বলেছিলাম আমরা?
-(হেসে) ২৩ ঘণ্টা ২৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড।
-(হেসে) আজ তো তুমি আমাকে মুগ্ধ করে দিলে।
-আলহামদুলিল্লাহ! তবে কথা কিন্তু তোমার চেয়ে আমি বেশি বলেছি। অবশ্য ঐ সময়টাতে কথা শুধু আমিই বলতাম। তোমাকে বলার তেমন সুযোগই তো দিতাম না। অবশ্য এখনো তুমি আমার তুলনায় কথা কমই বলো বেশির ভাগ সময়।
-(হেসে) কারণ তুমি এতো সুন্দর করে কথা বলো যে শুনতেই বেশি ভালো লাগে। কিছুক্ষণ আগে যখন ঘুম আসছিলো না, মনেহচ্ছিলো বালিশটা তুলার বদলে যদি তোমার কথা দিয়ে ভর্তি থাকতো, তাতে কান পেতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে পারতাম।
-(হেসে) স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনটা খুব অদ্ভুত তাই না? দুজন মানুষ কিভাবে একে অন্যের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। নিজের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা জীবনে কত মানুষের কাছেই তো বলেছি বিভিন্ন কারণে কিন্তু তোমাকে নিজের কথা বলে যে আনন্দ যে তৃপ্তি পাই তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
-(হেসে) এখন তো আমার মনেহচ্ছে মাঝে মাঝে শহরের বাইরে যাওয়াটা মন্দ কিছু না। ক্ষণিকের দুরুত্ব ভালোবাসার অনুভবে রংধনুর পরশ বুলিয়ে দেয়। আমিও যে গত তিনদিন কতকিছু ভেবেছি তোমাকে নিয়ে।
-যেমন?
-কক্ষনো বলবো না।
-(হেসে) রাসুল (সঃ) কি বলেছেন তা কি ভুলে গিয়েছো? তিনি বলেছেন-“ তোমরা কাউকে ভালোবাসলে তা মুখে প্রকাশ করো এতে তোমাদের মোহাব্বত আরো বৃদ্ধি পাবে।” তিনি আরো বলেছেন-“যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া জানায় না সে আল্লাহর শুকরিয়া জানায় না।”
-হুম...দিলে তো আমাকে আটকিয়ে।
-(হেসে) কি করবো বলো আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রাগৌতিহাসিক ভালোবাসা প্রকাশের এই পুরনো কথাটা তোমার মুখ থেকে বার বার শুনতে ইচ্ছে করে আমার।
-কেন ইমোশনাল করতে চাইছো আমাকে?
-যাতে আমাদের ভালোবাসার ঐ মুহুর্তগুলোতে কখনোই অতীতের স্পর্শ না লাগে। ঐ মুহুর্তগুলোকে আমরা দুজন মিলে সবসময় জীবন্ত রাখতে চেষ্টা করবো। ঐ আবেগকে কখনোই কমতে দেবো না। তুমি আমাকে কখনোই অচিনপুরের অচেনা রাজকুমার হতে দিয়ো না। আর আমিও তোমাকে কখনোই উদাসপুরের উদাসী রাজকন্যা হতে দেবো না, ইনশাআল্লাহ।
-তুমি এতো দূরে কেন? আমার এখন কান্না পাচ্ছে।
-(হেসে) আমি কি চাই জানো আমাদের ভালোবাসায় আবেগ সবসময় দুরন্ত শিশুর মতো থাকবে। কখনোই বয়সের ছাপ যাকে স্পর্শ করবে না। আমি আল্লাহর কাছে সবসময় বলি আমার মন যাতে কখনোই ঝিমিয়ে না পড়ে। আমি যেন যতবার তোমাকে দেখি নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ে যাই। আমার ভালোবাসা প্রকাশের ধরণ তোমাকে মুগ্ধ, বিস্মিত করবে, চমকে দেবে এরকম কিছু যেন আমি সবসময় করতে পারি।
-দরজা নক হচ্ছে এতো রাতে কে এলো? দেখবো?
-দেখা তো উচিত। আমি লাইনে আছি তুমি দেখে এসো।
আই হোলে চোখ রেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলো না রিনিলা। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখলো সত্যি সত্যিই ফুলের তোড়া হাতে রিসাব দাঁড়িয়ে আছে। হাসতে হাসতে রিসাব বলল, তোমার বিস্ময়, মুগ্ধতা আর আনন্দের সংমিশ্রণের এই চেহারাটা দেখার জন্যই আমার এই আয়োজন। আরো আগে আসতাম কিন্তু তোমার জন্য ঘাসফুলের তোড়া যোগাড় করতে পুরো দুই ঘণ্টা লেগেছে। ছলছল নয়নে তাকিয়ে না থেকে নাও তোমার উপহার। তোমার স্পর্শ পাবার জন্য আমার মতো ওরাও অধীর প্রতীক্ষায় আছে। ফুলের তোড়া, ফোন সব ফেলে রিনিলা তখন ঝাপিয়ে পড়লো রিসাবের বুকে।
চলবে............(ইনশাআল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
২২০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন