দাদুর পাঠশালা-১

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৩:১৩:৩২ দুপুর



ক’দিন থেকেই আরমান সাহেব তাঁর নাতি-নাতনীদের নিয়ে খুব চিন্তিত। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য মন মতো কাউকে পাচ্ছেন না। অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ছেলে রিসাবকে কখন ফ্রি পাওয়া যায়। প্রচণ্ড ব্যস্ত তাই চাইলেই ছেলেটিকে সবসময় পাওয়া যায় না। আজ ছেলেটা বাইরে যায়নি তাই সকাল থেকেই অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলে রুম থেকে বেরোবে। খবরের কাগজ নিয়ে বাগানে বসেছেন ঠিকই কিন্তু তাতে মনোযোগ দিতে পারছেন না। বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছেন দোতলা থেকে নিচে নামার সিঁড়ির দিকে। অবশেষে তাঁর প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো। ছেলে বাবার কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল-

-তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন বাবা? শরীর খারাপ করেছে?

-আলহামদুলিল্লাহ! শরীর ভালো আছে আমার। তবে চিন্তিত এটা ঠিকই ধরেছো। আমি আমার নাতী-নাতনীদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। ভাবছি ওদের জন্য একটা পাঠশালা বানাবো।

-(হেসে) পাঠশালা বানাবে?

-এটা হাসির কথা না রিসাব। একথা তো তুমিও জানো যে অমীয় সম্ভাবনার আলো নিয়ে পৃথিবীতে আসে প্রতিটি শিশু। এই সম্ভাবনার বিকাশ নির্ভর করে তাদেরকে কিভাবে গড়ে তোলা হয় তার উপর। শিশুদের মধ্যের সম্ভাবনা বিকাশের জন্য প্রচুর সহমর্মিতাময় আবেগের প্রয়োজন। শিশুর বেড়ে উঠার পরিবেশ যদি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতাময় হয় তাহলে তারা আত্মবিশ্বাসী, মহৎ ও মুক্তমনা হয়ে বড় হয়। আর মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” বর্তমানের স্কুলগুলোতে কি এসব শিক্ষা দেয়া হয় বলো?

-আমি দুঃখিত বাবা। তুমি আসলে কি করতে চাচ্ছ বলো।

-কি করতে হবে বুঝতে পারছি না বলেই তো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি। আমি গত কয়েকদিন থেকে বাচ্চাদের ক্লাসের বইপত্র ঘেঁটে দেখেছি অনেক কিছু শেখানো হয় ওদেরকে। কিন্তু জীবনের জন্য যা কিছু দরকার তার বেশির ভাগই অনুপস্থিত। ওদেরকে সবার আগে শেখাতে হবে সু-শিক্ষাই জাতি গঠনের চাবিকাঠি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, অন্যায়ের কাছে পরাজয় স্বীকার না করাই জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের ভালোবাসা, কখনো লোভ না করা, মিথ্যা বলা, কাউকে ঠকানো, চুরি করা মহাপাপ, সততাই সবথেকে ভালো পন্থা, জীবনে দুঃখ-কষ্ট-ব্যথা- বেদনা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ।

-আমরা তো বাচ্চাদেরকে এসব শেখাতে চেষ্টা করি বাবা। তবে তোমার কথা শুনে মনেহচ্ছে এই বিষয়গুলোকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত তা হয়তো আমরা করছি না। ইনশাআল্লাহ! আমি তোমার সাথে আছি। তোমার কিছু একটা প্ল্যান তো আছে সেটা আমাকে বলো।

-দেখো আমি আর তোমার মা তো সারাটা দিন শুয়ে বসেই কাটাই। আমাদের কিছু বন্ধু-বান্ধবও আছে। আমরা সবাই ভাবছি অন্তত নিজেদের নাতী-নাতনীদেরকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো। এতে করে আমাদের সময়টাও ভালো একটা কাজে ব্যয় হবে। বার্ধক্য আমাদের মনকে নিস্তেজ করে দিতে পারবে না। আর ওদেরকে শেখাতে গিয়ে আমাদেরও জ্ঞানার্জন করা হবে। আমি চাইনা যে আমার নাতী-নাতনীরা জ্ঞানার্জনকে কিছু বইপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলুক। ওদের মধ্যে জ্ঞানার্জনের পিপাসা তৈরি করে দিতে হবে। তাহলে ওরাই ছুটে বেড়াবে সেই পিপাসা মেটানোর সন্ধানে।

-(হেসে) তোমার কথা শুনে পরমহংস যোগানন্দের একটা বাণী মনে পড়ছে-“চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হও। তোমার আত্মজ্ঞানের পাখা রাঙিয়ে নাও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে।” আমি অবশ্যই চাই আমাদের বাচ্চারা চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হোক। তুমি কাজ শুরু করো তোমার পাঠশালার।

-কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাদের কিভাবে শেখাতে হবে সেই সম্পর্কে তো আমাদের ধারণা কম। আমার এক বন্ধু বলছিলো মাইক্রোটিচ নামে নাকি কি একটা ট্রেনিং আছে শিক্ষকদের জন্য। তুমি কি জানো নাকি মাইক্রোটিচ ব্যাপারটা আসলে কি?

-মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি বাবা। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে সল্পসময়ে পাঠাদান করা হয়। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ। মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম।

-কিন্তু পদ্ধতিটা আসলে কি?

-(হেসে) এটা আসলে শিক্ষাদানের সব কৌশলকে একত্রে আয়ত্ত না করে বরং পুরো শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা এবং এছাড়াও আরো কিছু পয়েন্ট আছে। প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয় এই পদ্ধতিতে। প্রথম ধাপ হচ্ছে- জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান অর্জন, দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় ধাপটি হচ্ছে স্থানান্তর ধাপ।

-তারমানে এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। এটাই তো আমাদের দরকার সবার আগে। নিজেরা দক্ষ না হয়ে তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ার কাজে হাত দেয়া ঠিক হবে না। তুমি আগে আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করো।

বিষয়: বিবিধ

১৬৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File