আনন্দধারা বহে যখন ভুবনে......
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৬:৪২ দুপুর
এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে পছন্দের সবচেয়ে ভালো লাগার জিনিসগুলোর একটি হচ্ছে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো। ছোট ছোট বাচ্চার কথা মনেহলেই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলো নিয়ে ছুটে বেড়ানো জোনাকির কথা। পার্থক্য শুধু জোনাকি আলো ছড়ায় আর বাচ্চারা আনন্দ ছড়ায়। ওদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাতের ছোঁয়ায় মুঠো মুঠো আনন্দ ছড়িয়ে দেয় চারপাশে। নির্মল আনন্দের ধারা বইতে থাকে তখন পৃথিবীর বুকে। ছোটবেলা থেকেই আমার শখ বাচ্চাদের টিচার হবার। পড়াশোনা শেষ করার আগেই নিজের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা, তার পরপরই চন্দ্রীয় এক পাখীর আগমনে শখটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার সেই শখটা পূরণের সুযোগ এলো আমার জীবনে। আমার ছেলের স্কুলে ভলান্টিয়ার টিচার হবার মাধ্যমে মনের কোণে ঘাপটি মেরে বসে থাকা স্বপ্নটা আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠলো। আমার ধারণা প্রতিটা মানুষের মধ্যেই একটা ছোট বাচ্চা চুপটি করে বসে থাকে। একজন মানুষ যতই বড় হোক না কেন, মনের এক কোণে বসে থাকা বাচ্চাটি কখনোই বড় হয় না। তাছাড়া আমি নিজেও যেহেতু অনেক বছর পর্যন্ত বাচ্চা ছিলাম, সেহেতু বাচ্চাদের বোঝাটা খুব কঠিন কিছু মনেহয় না আমার কাছে।
প্রথম যেদিন ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে ক্লাসে গেলাম সাত বছর বয়সি ছাব্বিশটা বাচ্চাকে দেখে মনে হয়েছিল হরেক রকম ফুলের কোন বাগানে ঢুকে পড়েছি। আমাকে দেখার সাথে সাথে ছেলের মুখ আনন্দে ঝলমল করে উঠলো। গর্বিত ভঙ্গিতে বন্ধুদের বলতে লাগলো ঐটা আমার আম্মু। একটা সময় নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেড়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো আমাকে।(বাসায় এসে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এমন করেছো? জবাব দিয়েছিলো কি করবো আম্মু তোমাকে দেখে আমার মন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গিয়েছিলো) হরেক রকমের ফুলগুলোর নাম-পরিচয় জানার সময় যখন এলো। আমি আর কি জিজ্ঞেস করবো ফুলেরাই শুরু করলো একের পর এক প্রশ্ন। তোমার নাম কি, দেশ কোথায়, তোমাদের ভাষায় হ্যালো কিভাবে বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। একজন বেশ গাম্ভির্য নিয়ে বলল, তুমি নাকিবের আম্মু? নাকিব দেখতে একদম তোমার মতো।(আমার ছেলে তাঁর বাবার কার্বন কপি) ছোট মানুষ শখ করে বলেছে তাই আমি আনন্দিত হলাম ওর কথায়। হিজাব করার কারণে একজন জানতে চাইলো তোমার কি চুল আছে? আছে জানানোর পর চুল দেখার জন্য শুরু করলো ঘ্যানঘ্যান। সবার চোখকে এড়িয়ে ওকে চুল দেখাতেই চিৎকার করে পুরো ক্লাসকে জানিয়ে দিলো যে, আফরোজার চুল আছে। আফরোজা টাক না।
প্রতিটা বাচ্চার মধ্যেই কোন কোন স্পেশালিটি আছে। কেউ অংক খুব ভালো বোঝে, কেউ ইংরেজি, কারো ড্রইং দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, কেউ বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে সবার চেয়ে এগিয়ে, কেউ অনেক সুন্দর করে কথা বলে, কারো আছে অন্যের জন্য ত্যাগ করার মানসিকতা, কারো হাসি দেখলে মনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় তো কারো চেহারা থেকে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। এক কথায় প্রতিটা ফুলেরই আছে নিজস্ব রঙ-রূপ আর বৈশিষ্ট্য। আমি তো মনে মনে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাকে এই ফুলদের বাগানের মৌমাছি হবার যোগ্যতা দান করেন। যাতে প্রতিটা ফুলের মধ্যে থাকা মধু রূপি স্পেশালিটিকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারি। মাত্র একমাসেই বাচ্চাগুলো আমার অনেক আপন হয়ে গিয়েছে। এখন তো আমি ক্লাসে ঢুকলেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে সবাই আমাকে। আফরোজা আমার কাছে এসো এই একই বাক্য থাকে সবার মুখে। ওরা যখন ছুটে এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ওদের কাছে বসা নিয়ে বায়না ধরে, আমার মনের ভুবনে তখন আনন্দ ধারা বইতে থাকে। এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে যায় মন..............
বিষয়: বিবিধ
১৩৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন