জীবনের সার্থকতা

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২৬:৫৪ দুপুর

মানুষের মধ্যে রয়েছে বিবেক ও বুদ্ধি। এই বিবেক ও বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ জ্ঞান ও মনুষ্যতের বিকাশ ঘটাতে পারে। জীবনে বয়ে আনতে পারে কল্যাণ। তবে জীবনে কোন কিছুই হঠাৎ অর্জন করা যায়না। বিবেক ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগের জন্য ধীর ও কঠোর অনুশীলন ও চর্চার প্রয়োজন। আর এরজন্য দরকার গভীর আত্মিক সাধনা। মানুষের মন যখন স্থবির, নিশ্চল ও গতিহীন থাকে তখন নানা সঙ্কীর্নতা-কুসংস্কার তার মধ্যে বাসা বাঁধে। তাদের মন হয়ে পড়ে ক্ষুদ্র ও জরাগ্রস্ত। এই অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে হলে মনকে গতিশীল ও সচল করতে হবে। আর মনকে সচল ও গতিশীল করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে বই পড়া। কারন বইয়ের মধ্যে জ্ঞানী-গুনীদের ভাবনা-চিন্তা নিহিত আছে। সমুদ্রের ঢেউ রাশির মতোই এসব চিন্তা প্রবাহিত হয় বইয়ের মধ্যে। কেউ যদি একনিষ্ঠ মনে চায় তাহলে অনুভব করতে পারে সেইসব চিন্তার গর্জন।

বিভিন্ন কারণে আমদের মনে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে নানা ধরণের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সেটা যখন থামানো যায় না তখন আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। নানারকম মানসিক কষ্ট, হতাশা, দুরাশা, ক্লান্তি মনকে তখন ঘিরে ধরে। আমরা ভীষণ অসহায় বোধ করতে থাকি। চরমভাবে বিঘ্নিত হয় মনের শান্তি। নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে মন অনেক সময়। আসলে আমাদের সবার মনেরই দুটো দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে আবেগপুর্ন, অন্যটি হচ্ছে যুক্তিনির্ভর। এই দুটি দিকের ভারসাম্যপুর্ন সহাবস্থানই পারে মনের শান্তিকে অক্ষুন্ন রাখতে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা চিন্তার দ্বারা আমাদের আবেগগুলোকে চিহ্নিত করে যুক্তির দ্বারা সেগুলোকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। নিজেকে চেনা-জানা-বোঝা এবং নিজের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস-শ্রদ্ধা বোধ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের জীবনকে তখনই সার্থক করে তুলতে পারবো যখন সার্থকতা কোথায় সেটা জানা থাকবে।

আমার কাছে জীবনের সার্থকতা মানে হচ্ছে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী না থাকা। আমরা অনেক সময় দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগি কোন একটা কাজ করবো কি করবো না। মানুষ যতগুলো মানসিক দ্বিধায় ভোগে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবেগ এবং বাস্তবতার দ্বন্দ্ব। বাস্তবতা বলছে কাজটি করোনা, আবেগ হয়তো বলছে করো। এরফলে আমরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। কিন্তু তখন আমাদের উচিত স্থির হয়ে বসা এবং ঠাণ্ডা মাথায় বিবেকের সাথে কথা বলা। বিবেক যে কাজ করতে নিষেধ করে, সে কাজ কখনোই করা উচিত নয়। সব মানুষের জীবনদর্শন যেহেতু একরকম নয় তাই একেক জন জীবনের সার্থকতাকে একেক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিবেকের কাছে দায়ী না থাকাটাকে কেউ অনৈতিক বলতে পারবে না। বরং বিবেককের কাছে যদি স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলা যায় তাহলে প্রতিটি মানুষই তার মূল্য বুঝতে পারে।

মানুষের মূল্য তার চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। মানুষের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে। সুশৃঙ্খল জীবন, সুন্দর আচার-ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে একজন মানুষের চরিত্রমাধুর্য ফুটে ওঠে। পৃথিবীতে কোন কিছুই ক্ষুদ্র বা সামান্য নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্ত যেমন যুগ-যুগান্তরের জন্ম দেয় তেমনি ক্ষুদ্রের মধ্যেই বৃহৎ এর অবস্থান। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ ও সাহায্যের দ্বারা মানুষের উপকার করতে পারি। স্নেহপুর্ন ছোট ছোট সান্ত্বনার বাণী ও আন্তরিকতাপুর্ন দান পৃথিবীতে এনে দিতে পারে সুখ। আমরা একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়ে অন্যের মনে আশা জাগাতে পারি। করে তুলতে পারি নিজেদের জীবনকে সার্থক।

বিষয়: বিবিধ

২০৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File