সেলফ মোটিভেশন
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৩২:৪৪ রাত
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা অনেক শক্তি ও যোগ্যতা দিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই নিজের সম্পর্কে সচেতন নয়। নিজের শক্তি ও যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি অপরাজেয় বীরের মতো। কোন মানুষ যদি নিজের উন্নয়নে নিজে আগ্রহী না হয় তাহলে অন্য কারো অনুপ্রেরনার তার উন্নতি সম্ভব হয়না। রাসুল (সঃ) বলেছেন-“তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল, প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” এই হাদিসটি মনে রেখে একজন ব্যক্তির মধ্যে যদি এই সচেতনতা সৃষ্টি হয় যে, আল্লাহ আমাকে যে মেধা দিয়েছেন তা বিকশিত করার দায়িত্ব আমারই- এমন অনুভূতি কারো মনে সৃষ্টি হলে সে তার সার্বিক উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান এবং সেলফ মোটিভেটেড থাকেন। তারা তখন নিজের দায়িত্ববোধ থেকে অন্য কারো মোটিভেশন ছাড়াই নিজেকে গঠনের চেষ্টা করেন। নিজেই নিজের সেলফ মোটিভেটেড করতে হলে কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে। যেমন-
যখনই কোন সমস্যা আসবে সরাসরি নিজেকে বা অন্যকে দায়ী না করে আগে ভেবে চিন্তে দেখতে হবে কে দায়ী এবং কেন দায়ী। এরফলে সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে এবং কারণে-অকারণে নিজেকে দোষারোপ, অপরাধ প্রবণতায় ভোগা, হতাশা ইত্যাদি থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।
চিন্তা আছে বলেই আছে মানুষের অগ্রগতি। সঠিক চিন্তার দ্বারাই সম্ভব হয় সমস্যার সমাধান। তবে দুশ্চিন্তা পরিহার করতে হবে। চিন্তার স্থান যদি দুশ্চিন্তা দখল করে নেয় তাহলে তা মানুষকে হতাশার দিকে ধাবিত করে।
একই পথ ধরে আমরা যাই আবার ফিরেও আসতে পারি। কিন্তু মানুষের জীবনের পথ এমন যে, সে পথে কেবল যাওয়াটাই আছে। ফিরে আসার কোন উপায় নেই। এরথেকেই বোঝা যায় জীবন পথের মূল্য কতখানিক। তাই জীবনের লক্ষ্য স্থির রেখে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে।
ব্যর্থতাকে দূরীভূত করে যুক্তি, শৃঙ্খলা, পরিশ্রম ও সততা। যে কোন সমস্যাকে মোকাবিলা করার জন্য এই চারটি গুণই যথেস্ট। লক্ষণীয় হচ্ছে, কেউ অল্প সময়ে বাঁধা-বিপত্তি পার হয়ে যায়। কেউ বা পার হতে একটু সময় নেয়। নিজেকে এই সময়টা দেবার ব্যাপারে কখনোই অনুদার হওয়া যাবেনা।
একটি পুরনো প্রবাদ আছে-“ কোন কিছু যদি আপনাকে নিঃশেষ করে তবে তা থেকে বেড়িয়ে আসুন।” অনেক সময় নেতিবাচক আবেগ মানুষকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়। মনে রাখতে হবে সে আবেগই কল্যাণকর যাতে ইতিবাচক ভাবনা থাকে। নেতিবাচক আবেগের ঢেউ এসে যাতে নিজের ভালো কাজগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মানুষের জীবনে অনেকসময় এমন অনেক সমস্যা আসে যা একটু ধৈর্য্য ধরে থাকলে আপনা থেকেই মিটে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে সমাধান করতে গিয়েই বরং সমস্যাটাকে জটিল-কঠিন করে ফেলা হয়। তাই মনে রাখতে হবে যে, জীবনের বিপর্যয়গুলো কোন না কোন ভাবে কেটেই যায়।
যে কারো সাথেই মতের অমিল হতেই পারে। সেক্ষেত্রে কারো সাথে দ্বন্দ্বে জড়ানোর আগে নিজের মনের দ্বন্দ্বটা দূর করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে কোন সম্পর্কে আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের ছোট ছোট মতের কোরবানি দিতেই হয়। এভাবে বলা যায় বড় কিছু ধরতে গেলে হাতের তুচ্ছ জিনিসটা আগে ফেলে দিতে হয়। কাজেই কেউ তখনই বড় কিছু পাবে যখন ত্যাগ করতে পারবে তুচ্ছ কিছু আঁকড়ে থাকার মনোভাব।
জীবনে কখনো এক মুহুর্তের জন্যও বিষণ্ণ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। মনের আকাশে তাই ভুল-ভ্রান্তি-দুঃখ-কষ্ট-হতাশা-নিরাশা-ব্যর্থতার মেঘ জমাট বাঁধা চাপের সৃষ্টি করতেই পারে। এতে অস্থির হবার কিছু নেই। কারণ গতির উৎসই হচ্ছে চাপ। এই চাপকেই পুঁজি করে তৈরি করতে হবে সংকট জয়ী সাহস।
ভবিষ্যতের চিন্তা করা মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাসের একটা। তবে ভবিষ্যতের ভাবনায় অতিরিক্ত ব্যাকুল না হয়ে সুপরিকল্পিত ও সুবিবেচিত পরিকল্পনা গ্রহন করে সেই লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই মানসিক শান্তি অক্ষুণ্ণ থাকবে।
পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা একজন মানুষকে যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছেন তা বিপুল। অথচ নিজ ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সারা জীবনে একজন মানুষ নিজ ক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার করতে পারেনা। তাই তো সব ব্যাপারেই ভাগ্য নয়তো সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করে। এটা না করে যদি সচেতনতার সাথে সবাই নিজ নিজ করনীয় ও দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে তাহলে জীবনটা সুন্দর হয় এবং এতো নেয়ামত দিয়েছেন যিনি তাঁর প্রতিও অকৃতজ্ঞ হওয়ার মতো অন্যায় করা থেকে নিজকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
বিষয়: বিবিধ
৫০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন