শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ-১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:২৪:৫৩ বিকাল
অফ ক্লাসে যে কোন এক ক্লাসে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে জ্ঞানার্জন করাটা আমার সবচেয়ে প্রিয় শখগুলোর মধ্যে একটি! ঘাপটি মেরে বসার জন্য সবসময়ই আমার ফাস্ট চয়েজ থাকে যুক্তিবিদ্যার ক্লাসগুলো! একদিন যুক্তিবিদ্যার ক্লাসে প্রফ প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তিবিদগণ কাদের কাছ থেকে অতি উন্নত মানের যুক্তির টিউশন নিতে পারে বলো তো? ক্লাসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলেও আমি অনেকটা অজান্তেই বলে উঠেছিলাম, শিশুদের কাছ থেকে। প্রফ বিকট শব্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, একদম ঠিক বলেছো! আমি বই পড়ে যতটা না যুক্তি শিখেছি তারচেয়ে বেশি শিখেছি আমার তিন ছেলে আর দুই মেয়ের কাছ থেকে! প্রফের সাথে সুর মিলিয়ে বললাম, আমিও পড়াশোনা না করেই যুক্তিবিদ্যার উপর বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করে ফেলেছি আমাদের পরিবারের বিচ্ছুকূল আর আমার শিষ্যকূলদের কারণেই!
শিশুদের সাথে যারা নিয়মিত কথা বলেন, তারা সবাই এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করে নেন যে, নিজের কর্মের পেছনে যুক্তি প্রদর্শনে শিশুদের কোন তুলনা চলে না! তারা এমন সব অকাট্য যুক্তি দেয় যে বাবা-মাকে গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন হতে হয়! ঠিক তেমনি এটাও ঠিক শিশুদেরকে কোন কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে যুক্তির প্রয়োগ করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরি ও ফলপ্রসূ হয়! যেহেতু শিশুরা নিজেরা ওদের কাছে পেছনে যুক্তি দেখায়! সেহেতু কোন কাজের পেছনে ওদেরকেও যুক্তি দেখাতে পারলে বেশ সহজেই মেনে নেয়! আমার পুত্রকে যেমন কোন কিছু করতে বলার সাথে সাথে প্রশ্ন করে, কেন করবো? যদি কারণটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি অপছন্দনীয় বা একটু কষ্টকর হলেও যে হেলে দুলে কাজটা করে বা অন্তত চেষ্টা করে!
বাংলা লেখা ও পড়া শিখতে নাকীব ছোটবেলা থেকেই নারাজ। আমিও খুব একটা প্রেশার দেইনি যেহেতু তার যুক্তি ছিল সে তো বাংলাদেশে থাকে না, মাঝে মাঝে শুধু বেড়াতে যাবে! সেজন্য বাংলা কথা বলতে পারাটাই যথেষ্ট। কিন্তু যখন ইসহাক খান ভাইয়ার অফিস থেকে আমার বই বাসায় নিয়ে আসা হলো। নাকীব লাফাতে লাফাতে গিয়ে সবার আগে বই হাতে নিলো। কিন্তু উল্টে পাল্টে দেখার পর যখন কিছুই বুঝতে পারলো না খুবই ব্যথিত হলো! এরপর যখন শুনলো যে আমি বইতে তার কথাই লিখেছি! সে খুবই উৎসাহিত বোধ করছিল জানার জন্য। কিন্তু যেহেতু বাংলা পড়তে পারে না তাই কি লেখা আছে বুঝতে পারলো না কিছুই। কাঁটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দেবার জন্য আমি দুঃখী কন্ঠে বললাম, কত শখ করে আমি তোমার কথা লিখেছি বাবাসোনা! কিন্তু তুমি কিছুই পড়তে পারবে না! সাথে সাথে নাকীব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাংলা শেখার! এখন তো আমি সময়ের অভাবে ফাঁকি দিতে চাইলেও সে খোঁচাতে থাকে বাংলা শেখার জন্য।
যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন, তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য? তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য? তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য? খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য? ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য? প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য? এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন? আমার কেন ডানা নেই? দাদুর কেন দাঁত নেই? বাবা কেন রোজ অফিসে যায়? ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না? আচ্ছা দিদার চামড়াকে আয়রণ করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?
ব্লগে শিশুদের মনোজগত ভ্রমণকারী দু’চার জনই পাবো জানি! তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেই বলছি, চলুন কয়েকটা দিনের জন্য ডানা মেলে ঘুরে বেড়াই সেই জগতে...! একসময় আমরাও যার বাসিন্দা ছিলাম! দুনিয়ার নানান ম্লানতায় আমাদের যে মনোজগতের ব্যাপ্তি আজ বড় বেশি সংকীর্ণ! প্রায় নিভু নিভু যার আলো......
বিষয়: বিবিধ
৩১৬১ বার পঠিত, ৫৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিশুদের যুক্তি দিয়ে বুঝাতে যে সময় এর প্রয়োজন হয় আমাদের দেশের অনেক অভিভাবকই সেটাকে অপচয় মনে করেন। তারা বরং শিক্ষা দেন বড়দের কথা কেবল শুনতে হয় সেটা। যার ফলে আমাদের মধ্যে অন্ধ অনুকরন প্রবনতার সৃষ্টি।
অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে! শুভকামনা ও দোয়া রইলো।
তাই সবারই আসলে কিছুটা সময় শিশুদের সাথে কাটানো উচিত! জীবনের কোমলতা আর সরলতার শিক্ষা নেয়া উচিত এই ক্ষুদে পন্ডিতদের কাছ থেকে......
অনেক ধন্যবাদ! দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
বহুদিন পর তোমাকে ব্লগে দেখে আনন্দিত অনুভব করছি শিষ্যা!
এই মাত্র আমার কন্যা এসে বলে গেলো, অর্কিড নাকি এক প্রটেক্টেক প্রজাতি ! যদি কেউ অর্কিড নষ্ট করে তার জরিমানা নেয়া হবে! আমি আগ জানতাম না! জনে ভালো লাগলো! তোমার স্টিকি পোস্টে প্রটেক্টেক অর্কিডের শুভেচ্ছা!
মামণিকে দেখে দেখেই আমিও একসময় অর্কিডের ভক্ত হয়ে গেলাম। অর্কিড কালেকশনে লেগে গেলাম আমিও।
একদিন মামণি জিজ্ঞেস করলেন, তোর অর্কিড পছন্দের কারণ কি? বললাম, অদ্ভুত সুন্দর আর বর্ণিল তাই ভীষণ ভালো লাগে। এরপর মামণিকে প্রশ্ন করলাম তোমার কেন অর্কিড এত পছন্দ? মামণি মৃদু হেসে বলেছিলেন, তুই কি কখনো খেয়াল করেছিস আর কোন ফুলই অর্কিডের মত এত দীর্ঘ সময় তাজা থাকে না? একটি সংসারকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার পুরো দায়িত্বটাই মেয়েদেরকে পালন করতে হয়। আর সেজন্য মেয়েদের নিজেদেরকে তরতাজা রাখাটা খুব বেশি জরুরি। জীবনের উত্থান-পতন ও ঘাত-প্রতিঘাতে মুষড়ে পড়লে বা ঝরে গেলে চলবে না। বরং নিজের সজীবতা দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে সকল ম্লানতার। দীর্ঘ সময় নিজের তরতাজা, সজীব আবেশে অন্যেদেরকে মুগ্ধ করার প্রেরণা পাই আমি অর্কিডের কাছ থেকে। তাই অর্কিড আমার এত পছন্দ।
সেদিনের পর থেকে যখনই কোথাও অর্কিড দেখি মামণিকে দেখতে পাই তার মাঝে। তাই হয়তো অর্কিড আমার এত, পছন্দের এত ভালোবাসার! অনেক অনেক শুকরিয়া আপুনি।
স্টিকি পোষ্টে অনেক অভিনন্দন আপুজী।
অনেকদিন পর আজ রোদ উঠেছে আপুমণি! আপনার জন্য এক টুকরো মিষ্টি রোদেলা আকাশ...
ঠিক আছে তবে শুরু হয়ে যাক নানা রংয়ের ফুল,পাখিদের মনের আকাশে উড়ে ঘুরে বেড়ানো আম্মুতার গল্পতা।
মোড়ক উন্মোচিত করে ছড়িয়ে দেবো কল্পনা
জাগাবো প্রাণে স্বপ্ন,আশা নিত্যনতুন ভাবনা
করবে সবাই কাজ ভুলে অকারণ জল্পনা...
বুনে দেয় ওরা রঙ-বেরঙের স্বপন
শিখিয়ে দেয় করতে সবাইকে আপন
দেখায় কি করে উপভোগ করতে হয় জীবন....
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
তো, শিশুদের এই নরম অনুসন্ধানী মনজগতে যদি উপর থেকে একক কোন বিধিবদ্ধ বিশ্বাস অথবা অগ্নিকুন্ডের ভয়ভিতি চাপিয়ে দেয়া হয় তা শিশু মনবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় "ব্রেন ওয়াস"। এই "ব্রেন ওয়াস" মূলত শিশুর চিন্তাশিল মনজগতকে ধ্বংস করে দেয়। এ বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন @ আফরোজা হাসান?
আজ বিজয় দিবস। এই দিবসটির কথাই চিন্তা করেন। স্বাধীনতার লক্ষ্যে পুরো দেশবাসী একাত্মতা পোষন করেছিল বলেই ছিনিয়ে এনেছিল আরাধ্য স্বাধীনতা। ঠিক এমন একটা লক্ষ্য যদি সব মানুষের মনে থাকতো এবং নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী কাজ করতো! তাহলে হয়তো দুনিয়া জুড়ে বিরাজ করতো আরাধ্য মানবিকতা, সহমর্মিতা, ত্যাগ, দয়া-মায়া-ভালোবাসা।
যাইহোক, আপনার ব্রেনওয়াশ সংজ্ঞার সাথে একমত হতে পারলাম না। অনেক কথা হয়তো বলতাম কিন্তু আপনার ব্লগে গিয়ে পোষ্ট সমূহ দেখার পর সেই ইচ্ছে চলে গিয়েছে। যেটুকু লিখেছি এইটুকুও লিখতাম না। শুধু প্রথমবার এসেছেন বলে লিখলাম।
আমার বিশ্বাস নিয়ে আমি সুখী ও আনন্দিত। না কোন দ্বিধা আছে মনে, না আছে কোন সংশয়। সুতরাং, কারো সাথে অপ্রয়োজনীয় যুক্তি তর্ক করে সময় নষ্ট করার চেয়ে সেই সময়টুকু আমি আমার বিশ্বাসকে আরেকটু মজবুত করার লক্ষ্যে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করবো ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : ভাবতে অবাক লাগে, এই আপনারাই শিশুর মন জগৎ নিয়ে কথা বলেন!A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : মিথ্যার দম্ভ! অংকুড়ে 'ব্রেন ওয়াস' হয়ে গেলে যা হয় আরকি, ধন্যবাদ।দরদময় আপনার প্রতিটি উপস্হাপনাই বিষয়ের গভীরে গিয়ে ভাবতে বাধ্য করে পাঠক কে!
আন্তরিকতার এমন বহিঃপ্রকাশ মুগ্ধতার শেষ প্রান্তে নিয়ে যায়!
অন্তর থেকেই বেড়িয়ে আসে-'জাযাকিল্লাহু তায়ালা খাইরাল জাযাই।
আভিনন্দন ষ্টিকি পোস্টে!!!
আলহামদুলিল্লাহ! আমি অনেক ভাগ্যবতী বলেই ছোট ভাইবোনেরা অকারণ প্রশংসার বেড়াজালে আমাকে কখনোই আটকায়নি! প্রশংসা লেখার গতি ব্যহত করে দারুন ভাবে! আপনারা আমাকে সাহায্য করছেন অবিরাম লিখে যেতে। সেজন্য জাযাকাল্লাহ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন