অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা......শেষপর্ব
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৪০:২৮ রাত
একজন মুসলিমের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত চিন্তা ও কর্মের দ্বারা দুনিয়াতে কল্যাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আখিরাতে জান্নাত প্রাপ্তি। অনেক ভাবার জন্য জীবনের লক্ষ্য কি সেই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছিল সাহিল। তখন আরেকটা ম্যাজিকাল ব্যাপার লক্ষ্য করলো। বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে তার আর মোটেই কষ্ট হচ্ছে না। সময়কে কাজে লাগিয়েই দুনিয়াতে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুতরাং, সময় তার কাছে এমন এক নেয়ামত যার যথাযোগ্য ব্যবহার সুগম করবে তার অভিষ্ট লক্ষ্য পানে চলা পথকে। আর এরজন্য তাকে রুটিন মেনে চলতেই হবে। এখানে পছন্দ বা অপছন্দের কোন অবকাশই নেই। মানুষের জীবনের কল্যাণকর সবকিছুর সূচনা জ্ঞানের দ্বারাই সম্ভব বলেই হয়তো মানুষের উদ্দেশ্যে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালার বলা প্রথম শব্দটি ছিল “পড়ো”। আল্লাহ তায়ালার প্রথম নির্দেশ হচ্ছে পড়া। তাই পড়াশোনাকে ভালো লাগা ছাড়া জীবন তো বৃথা। আর সাহিল চায় না তার জীবনকে বৃথা যেতে দিতে। এরপর থেকে ক্লাসের বইয়ের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব সহকারে সাহিল ইসলামী সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস, মনীষীদের জীবনী পড়তে শুরু করেছে। কুরআন, হাদীস, তাফসীর আগে পড়তে হবে তাই পড়তো কিন্তু এখন অন্তর থেকে ভালোবেসে পড়ে। এমন প্রতিটা প্রশ্নের জবাবই সাহিল খুব সহজেই খুঁজে পেলো যখন শরীয়তের আলোকে চিন্তা করলো।
হঠাৎ যদি কোনদিন খাবারের টেবিল সামান্য এলোমেলো দেখে খাবার নিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সাহিল। আর বাড়িতে যেদিন স্পেশাল কোন মেহমান আসে খাবারের আইটেমগুলোর চেহারাই বদলে যায়। গার্নিশিং প্রতিটা খাবারের শোভা বর্ধন করে একশো গুণ বেশি। সেদিন খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনেহয় যেন ক্ষুধা মিটে যায়। শরীরের খোড়াকের সৌন্দর্য যেখানে মনের উপর এমন প্রভাব ফেলে। যেখানে সেই মনের খাবারের সৌন্দর্য অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগে নিজের রুম এলোমেলো করে রাখতো সাহিল। কিন্তু যেদিন থেকে তার ঘরের পরিবেশ সুন্দর সাজানো গোছানো। সেদিন থেকে মনও অনেক প্রফুল্ল লাগে। আগে একটা বই খুঁজতে হলে দশটা নামিয়ে দেখতে হতো। এই খোঁজার আলসেমির কারণেও অনেক সময় পড়তে বসা হতো না। কিন্তু এখন পড়াশোনার সমস্ত উপকরণ সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। পরিবারের গুরুত্বও অনুধাবন করেছে সাহিল। জীবনের চলার পথে পরিবার প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে ট্র্যাফিক সিগন্যাল আর স্টীট লাইটের মত। হলুদ বাতি জ্বালিয়ে সাবধান করা, লালবাতি জ্বালিয়ে থামতে বলা আর সবুজ বাতি জ্বালিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে এগিয়ে যাও তোমার চলার পথ এখন নিরাপদ। আর আঁধারে স্টীট লাইটের মত আলোকিত করে পথ। সাহিল জেনেছে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সে নিজেই। কারণ সে আছে বলেই তার জীবন আছে। আর জীবন আছে বলেই তো এত হিসাব নিকাশের প্রয়োজনীয়তা।
খুব কষ্ট হয়েছে অনলাইন জগতের অভ্যাসটি কমাতে। তাড়াহুড়া করেনি একদমই সাহিল। আস্তে আস্তে অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। আগে যেখানে সাত-আট ঘন্টা সময় কাটাতো। প্রতি সপ্তাহে একঘন্টা করে কমিয়ে একমাসে সেটাকে তিন ঘন্টায় নামিয়ে এনেছে। আরো কমানোর চেষ্টা জারি রেখেছে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ হয়ে যাবার পর পড়াশোনায়ও মনোযোগ বাড়তে শুরু করেছে। মনোযোগের ব্যাপারে আপা বলেছিল, এটা একশো ভাগ ঠিক যে মনোযোগ সহকারে না পড়লে কখনোই জ্ঞানার্জনে বরকত আসে না। মনোযোগ কেন আসে না জানিস? কারণ মনের সামনে একাগ্র হবার মত কোন লক্ষ্য থাকে না। যেমন ধর তুই যখন পরীক্ষার হলে। প্রশ্নপত্র হাতে পাবার পর তুই কি করবি? সবকিছু ভুলে ঝাপিয়ে পড়বি উত্তর লিখতে। কারণ তোর হাতে সময় মাত্র দুইঘন্টা। এরমধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। এমন অবস্থায় কিন্তু কখনোই তোর মনে অন্যকোন চিন্তা জায়গা করে নিতে পারবে না। তোর ইচ্ছে করবে না ফেসবুকে ঢুকতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে কিংবা একটু ঘুমিয়ে নিতে। কারণ তোর লক্ষ্য নির্ধারিত এবং তোর কাছে সেটা স্পষ্টও। আসলে আমরা মনোযোগ আনতে পারি না বা ধরে রাখতে পারি না এর কারণ আমাদের সামনে স্পষ্ট কোন লক্ষ্য থাকে না। আমরা আমাদের ভাবনাগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখি চারপাশে। কিন্তু যখন বাধ্য হই তখন কিন্তু ঠিকই আমরা মনোযোগ একটি বিষয়ের উপর ধরে রাখতে পারি।
মনকে তাই কখনোই তার ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। তাহলে মন ডালপালা ছাড়িয়ে একাকার করে ফেলে।মনোযোগ যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না পড়তে যেটা বোঝাতে আপা বেশ মজার একটা গল্প বলেছিল সাহিলকে। এক রাজা ছিলেন যার সিংহাসনের পাশে সবসময় একটা বানর বাঁধা থাকতো। রাজা প্রতিদিন দরবারে বসার পর একটা চাবুক দিয়ে বানরটার পিঠে সপাৎ করে একটা বাড়ি দিতেন। বানরটা ব্যথায় কিচকিচ করে উঠতো তারপর চুপচাপ বসে থাকতো বাকিটা সময়। দিনের পর দিন একই কান্ড দেখে একদিন রাজদরবারীরা বললেন, রাজা মশাই এত ভদ্র একটা বানরকে আপনি প্রতিদিন কেন চাবুক দিয়ে আঘাত করেন? রাজা বললেন, এই বানরটা আমার খুবই প্রিয়। তাই সবসময় আমি ওকে পাশেই রাখি। আর প্রতিদিন কেন মারি সেটা জানতে চান? ঠিকআছে আপনাদেরকে জানানোর ব্যবস্থা করছি। পরদিন দরবারে বসে রাজা বানরকে মারলেন না। বানর সারাদিন চুপ করে বসে রইলো। এরপর দিনও মারলেন না। তৃতীয় দিনও যখন মারলেন না বানর নড়াচড়া শুরু করলো। চতুর্থ দিন বানর রাজার সিংহসনের হাতলে চড়ে বসলো। পঞ্চম দিন রাজার ঘাড়ে, ষষ্ট দিন রাজার মাথায় এবং সপ্তম দিনে রাজার মাথা থেকে মুকুট কেড়ে নিয়ে সে রাজ সিংহাসনে বসে পড়লো। সেদিন রাজা আবার চাবুক হাতে নিলেন। বানর কিচকিচ করতে করতে আবার তার স্থানে ফিরে গেলো।
মানুষের মনটাও নাকি অনেকটা এই বানরের মত। মনকে যদি ছেড়ে দেয়া হয় সে যা ইচ্ছে তাই করে ধীরে ধীরে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। তাই বানরের মতই মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও দরকার নিয়মিত চাবুকের বাড়ি। কিন্তু মন তো ধরা ছোঁয়ার বাইরের জিনিস। আর যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না তাকে চাবুক কিভাবে মারা সম্ভব? তাহলে উপায়? উপায় হচ্ছে, অধরা মনের দায়িত্ব এমন কাউকে দেয়া যে নিজেও অদেখা কিন্তু অধরা মনকে দেখতে ও ধরতে সক্ষম। সে হচ্ছে আমাদের বিবেক। মনের লাগাম যদি বিবেকের কাছে থাকে তাহলে বেসামাল হবার সুযোগ অনেক কমে যায়। আর বিবেককে পরিচালিত করে আমাদের জ্ঞান। আমাদের অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতেই বিবেক কোন সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আমরা যদি আমাদের বিবেককে শরীয়তের জ্ঞান দ্বারা সজ্জিত করতে পারি। তাহলে বিবেকও মনকে প্রতিটি কর্মের পেছনে একটি অভিষ্ট লক্ষ্য দিতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ। তবে সাথে সাথে আপা সাহিলকে অভয় দিয়ে একথাও বলে দিয়েছিল যে, এমনটা কখনোই একদিনে সম্ভব না। মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে আয়ত্ত্ব করতে হবে। যেমন বাংলা রিডিং পড়ার আগে অ, আ, ক, খ ইত্যাদি শিখতে হয়েছে, আ-কার, ই-কার শিখতে হয়েছে, এরপর বেশ কিছুদিন বানান করে পড়তে হয়েছে ঠিক তেমন। মনোযোগের ব্যাপারেও তেমন আগে ইনগ্রিডিয়েন্স সমূহকে একত্রিত করতে হবে ধীরে ধীরে। অতঃপর সবকিছুর সংমিশ্রণে তৈরি হবে উৎকৃষ্ট, মজাদার এবং আরাধ্য কিছু।
সাহিলও এখন খোলা চোখে স্বপ্ন দেখে। অনন্ত জীবন চির শান্তির জান্নাতে সকল প্রিয়জনদের নিয়ে একসাথে কাটাবে সেই স্বপ্ন.........
বিষয়: বিবিধ
১৯২২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময় ।(Surah 67. Al-Mulk, Verse 2)
Yea Allah help us Guide us Protect us from evil
জাযাকাল্লাহু খাইরান পিপীলিকা।
'চিন্তা-চেতনায় ও কর্মকান্ডে বৈষয়িক-পরকালীন উন্নতির প্রচেষ্টা চালানো প্রতিটা মুমিন মুসলিমের আবশ্যিক কর্তব্য।'
অনেক ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম!
আল্লাহ যেন আমাদের কে তাওফিক দেন এমন ভাবে চলার!!!
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
"মনোযোগ কেন আসে না জানিস? কারণ মনের সামনে একাগ্র হবার মত কোন লক্ষ্য থাকে না।"
" আর যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না তাকে চাবুক কিভাবে মারা সম্ভব? তাহলে উপায়? উপায় হচ্ছে, অধরা মনের দায়িত্ব এমন কাউকে দেয়া যে নিজেও অদেখা কিন্তু অধরা মনকে দেখতে ও ধরতে সক্ষম। সে হচ্ছে আমাদের বিবেক। মনের লাগাম যদি বিবেকের কাছে থাকে তাহলে বেসামাল হবার সুযোগ অনেক কমে যায়।"
"আমরা যদি আমাদের বিবেককে শরীয়তের জ্ঞান দ্বারা সজ্জিত করতে পারি। তাহলে বিবেকও মনকে প্রতিটি কর্মের পেছনে একটি অভিষ্ট লক্ষ্য দিতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।"
চমৎকার কথামালা
Will work accordingly
Insha Allah
মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করবার জন্য যে, “কর্মে কে উত্তম"। এই জীবন আমরা শুধু আনন্দ-উৎসব করার জন্য পাইনি। আমাদের এই জীবনের একটি বৃহত্তর ও মহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাওফীক দিন সেই উদ্দেশ্যকে হাসিল করার। আমীন।
জাযাকাল্লাহু খাইরান ।
আমীন। আমীন আমীন
শুকরান আপু
অনেক অনেক শুকরিয়া ছোট্ট ভাই অবাক মুসাফীরকে। জাযাকাল্লাহ।
মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করবার জন্য যে, “কর্মে কে উত্তম"। এই জীবন আমরা শুধু আনন্দ-উৎসব করার জন্য পাইনি। আমাদের এই জীবনের একটি বৃহত্তর ও মহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাওফীক দিন সেই উদ্দেশ্যকে হাসিল করার। আমীন।
জাযাকাল্লাহু খাইরান ।
ভেবে পাচ্ছিনা একটু সদুপদেশ দিন হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে
তাছাড়া আপনারা একেবারেই না এলে ব্লগ তো ঘুমিয়ে যাবে। আপনি, আওণ, হারিকেন, লজিকাল ভাইছা, অবাক মুসাফির, ভিশুজ্বি সহ আরো অনেকেই ব্লগের সোনার কাঠি আর রূপার কাঠি। যাদের অদল বদলে জেগে ওঠে ব্লগ। করে আনন্দের বিচ্ছুরণ! তোলে পিহু পাপিয়ার গুঞ্জরন! দোয়া ও শুভকামনা রইলো আপনাদের সবার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন