চেতনায় নতুন উপলব্ধি
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৩ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২২:৩০ বিকাল
আটমাস ধরে ধীরে ধীরে ছোট্ট যে প্রাণটি তিথির মধ্যে বড় হচ্ছিলো, তার সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য গাইনোকোলজিস্টের কাছে যাবার পর ইকোগ্রাফী শেষে মুখ গোমড়া করে ডাক্তার জানালেন যে, ছোট্ট বাবুটির যতটুকু বড় হবার কথা ছিলো সে তা হয়নি। সাথে সাথেই তাই তিথিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হলো। একদিকে স্বামীর ভয়ার্ত চেহারা আর অন্যদিকে ডাক্তার-নার্সদের অস্থিরতা দেখে তিথির মনেও ভয় দানা বাঁধতে শুরু করলো। একজন নার্স তখন কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন যে, পাশের মেশিন যে মৃদু শব্দটা ভেসে আসছে জানো ওটা কিসের শব্দ? প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তিথি তাকাতেই নার্স হেসে জবাব দিলেন, ওটা তোমার বাচ্চার হার্টবিটের শব্দ। পুরো পৃথিবীটা হঠাৎ করে যেন সাইলেন্ট হয়ে গেলো তিথির কাছে। ঐ হার্টবিটের শব্দ ছাড়া আর কিছুই সে শুনতে পাচ্ছিলো না। মৃদু ঐ জীবনাস্পন্দন মুগ্ধতা আর ভালোলাগার অদ্ভুত এক আবেশ ছড়িয়ে দিলো তার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে। মনেহতে লাগলো প্রতিটা হার্টবিট যেন একবার করে মা বলে ডেকে যাচ্ছে তাকে।
হঠাৎ আম্মুর কথা মনে পড়লো তিথির। আম্মুর আদর-শাসন-ভালোবাসা-রাগ সবকিছু মনে পড়তে শুরু করলো এক এক করে। আম্মুর অতিরিক্ত সাবধানতা-সতর্কতা মাঝে মাঝে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিতো মনে। তখন আম্মু হেসে বলতেন, যেদিন তুই মা হবি সেদিন বুঝবি আমার এই সতর্কতা এরজন্য নয় যে আমি তোকে সন্দেহ করি বা তোর প্রতি আমার ভরসা নেই। এই সাবধানতাটুকুও আমার মাতৃত্বের মমতারই প্রকাশ। এখনো তিথির সন্তানটি ওর ভেতরেই কিন্তু তারপরও তিথি বুঝতে পারছে আম্মুকে। কারণ জন্ম না নেয়া সন্তানটিকে ভালো রাখার জন্য কতো কিছুই না করেছে সে গত আটমাসে। মাছ আর সবজি ছিল দুই চোখের বিষ, দুধ দেখলেই বমি পেতো অথচ সন্তানের সুস্বাস্থ্যের চিন্তায় হাসি মুখে সব খেয়ে নিয়েছে। এমন আরো কতকিছুই তো করেছে সে সন্তানের ভালোর চিন্তায়, যা শত বুঝিয়েও তাকে দিয়ে কেউ করাতে পারতো না। আম্মুও নিশ্চয়ই এমন হাজারো ত্যাগ স্বীকার করেছে তারজন্য। কোনদিন সেসব বুঝতে তো চায়ইনি, উল্টো কত অভিমান, কত অভিযোগ-অনুযোগ ছিল আম্মুকে ঘিরে। সেসব মনেহতেই চোখ বেয়ে ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো তিথির। ভীষণ জোরে বাচ্চাটা নড়ে উঠলো হঠাৎ, ব্যথার প্রচণ্ডতায় শ্বাসবন্ধ হয়ে যাবে মনেহচ্ছিলো। কিন্তু শরীরের এই ব্যথার চেয়েও তিথিকে বেশি কষ্ট দিচ্ছিলো আম্মুকে বুঝতে চেষ্টা না করার ব্যথাটা।
স্বামীর দিকে চোখ পড়তে দেখলো চোখের অশ্রু মুছে নিচ্ছে অন্য দিকে তাকিয়ে। গত আটমাস শারীরিক কষ্ট না করলেও মানসিক কষ্ট কোন দিক দিয়ে কম করেনি এই ছেলেটা। বরং তারচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা-অস্থিরতায় মধ্যে থেকেছে সবসময়। ডাক্তারের সমস্ত কথা মেনে চলেছে এবং সংসারের সমস্ত কাজে যতটা সম্ভব সাহায্য করেছে। আব্বুর কথা মনে পড়লো তখন তিথির। সাধ্যর মধ্যে আছে এমন সবকিছু সবসময় দেবার চেষ্টা করেছেন আব্বু। তারপরও সারাটা জীবন শুধু আব্বু-আম্মু কি দেয়নি বা দিতে পারেনি সেই হিসাবই বেশি করেছে সে। অথচ আব্বু-আম্মু কি কি দিয়েছেন তার হিসাব তো কখনো করা হয়নি…!!! কয়েকদিন আগে আম্মুকে নিয়ে লেখা কবিতাটা মনে পড়লো......
অনেকদিন শুনিনা মা তোমার ঘুমপাড়ানী গান
তোমার জন্য কাঁদছে দেখো আমার ছোট প্রাণ
তোমার স্পর্শ মনের আকাশকে ভাসায় জোছনায়
মন যে স্বপ্ন-আশা-সুখ-ভালোবাসা তোমাতেই পায়
তোমার কণ্ঠের সুর যে হৃদয়ের সুখ সাগরে ঢেউ তোলে
খেলার সাথী প্রিয় খেলনা সব ভুলে যাই তোমায় পেলে
তোমার মতো করে কেউ বাসবে না ভালো উদার চিত্তে
আমার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা তাই মাগো ঘোরে শুধু তোমারই বৃত্তে
তিথির চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো, আব্বু-আম্মু তোমাদেরকে আমি ভীষণ ভালোবাসি………………………..
বিষয়: Contest_mother
১৭২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন