আপনার সন্তান আপনার ভবিষ্যৎ....
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৪:৩৪ সকাল
বর্তমান এই বৈরী সময়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামের পথে চলতে উৎসাহিত করাটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পারিবারিক অঙ্গনেও এই চেষ্টাটা থাকা উচিত। কারণ পারিবারিক সুশৃঙ্খল পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্যে যদি শিশুরা বড় হয় তাহলে তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কোন আচরণ ঢোকে না। তাই পারিবারিক পরিবেশে ন্যায়, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, সত্যবাদিতা, সহমর্মিতা, স্বাস্থ্য-সচেতনতা, জ্ঞানানুরাগ এবং ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতিনীতির মধ্যে শিশুদের বড় করে তুলতে হবে। কেননা মানবজীবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলতে এবং সত্যিকার মানুষ হতে প্রয়োজন নৈতিক মূল্যবোধ। দরকার মনুষ্যত্ব অর্জন। নীতিবানের সংজ্ঞায় পড়েছিলাম, সত্যকে যে সত্য বলে, অন্যায়কে অন্যায় বলে এবং ন্যায়–অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার ভেদাভেদ জেনে, বুঝে এবং মেনে চলে সেই হচ্ছে নীতিবান। নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং অনুসৃত জীবনের মূল্যবোধকে নৈতিকতা বলে। আর শোভন রীতিনীতি ও আদর্শ অনুসারী জীবনচর্চার অভিব্যক্তি হচ্ছে নৈতিক মূল্যবোধ।
অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই দেখেছি যে, বাচ্চাদেরকে যদি সুন্দর কোন কথা বলা হয়, ওরা চোখ বড় বড় করে মুগ্ধ চোখে তাকায়। একই কথা বড়দেরকে বললে চোখ সরু করে বুঝতে চেষ্টা করে, এত সুন্দর করে কথা বলছে কোন উদ্দেশ্য নেই তো পেছনে? বাচ্চারা অতিরিক্ত আন্তরিকতা দেখলে খুশি হয় আর বড়রা দ্বিধায় পড়ে যায়। তাই যে কোন কিছু বাচ্চাদেরকে বোঝানো ও শেখানো অনেক বেশি সহজ। কারণ বাচ্চারা বিচারক হয়ে বিচার করতে বসে না, সমালোচক হয়ে সমালোচনা করে না। আর শিশুদের মন যেহেতু পবিত্র সেহেতু নিন্দা, গীবত বা অপবাদের স্বীকারও হতে হয় না। তাই শুদ্ধ ও সুন্দর এক পৃথিবী গড়ার যে স্বপ্নটা আমি দেখি তা শিশুদেরকে ঘিরেই। কিন্তু শিশুরা তখনই পৃথিবীকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারবে যখন ওদের মানসিক ও আত্মিক বিকাশ যথাযথ হবে। তখনই ওরা সাজাতে পারবে স্বপ্নিল ভুবন যখন ওদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরণ হবে। এই স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে থেকেই আমার কলম হাতে তুলে নেয়া।
ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুর স্বচ্ছতা, জোছনার মায়াবীয়তা, রোদের হাসি, বর্ষার আকুলতা, রংধনুর বর্নালী ছটা, বাবা-মা ও সন্তানদের বন্ধনের মধ্যে মনেহয় এইসব সৌন্দর্য আছে। আছে রক্ত ও মমতার বন্ধনের নিজস্ব কিছু সৌন্দর্যও। এই সম্পর্কের মধ্যে ঘটে ভালোবাসা-ত্যাগ ইত্যাদি আবেগের জীবন্ত প্রকাশ। নিদিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই একে অন্যের সংস্পর্শে হাসি-খুশি-আনন্দে মেতে থাকাও এই বন্ধনের সৌন্দর্যেই এক রূপ। কি অদ্ভুত এই আকর্ষন! অন্যের খুশির জন্য নিজের খুশি ছেড়ে দেবার কি তীব্র আকাঙ্খা ছড়ানো এই বন্ধনের মাঝে! ভালোবাসার কি মায়া কাড়া অভিব্যক্তির প্রকাশই ঘটে চলে এই সম্পর্কের ভাঁজে ভাঁজে। সন্তানের সুখী ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় বাবা-মা অবলীলায় যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই বাবা-মায়েরা সন্তানদের আসল ভবিষ্যৎ অর্থাৎ, পরকালের কথা ভুলে যান। যারফলে শুধু যে সন্তানদের পরকাল ঝুঁকির সম্মুখীন হয় সেটিই নয়, দুনিয়ার জীবনেও ভুল পথে চলা সহজ হয়ে যায়।
বাবা-মার সাথে যদি বাচ্চাদের খুব সুন্দর একটা সহজ সরল বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক থাকে। খুব আন্তরিক একটা ভালোবাসা মেশানো শ্রদ্ধাবোধ যদি বাবা-মায়েরা সন্তানদের মনে জন্ম দিতে পারেন তাহলে বাচ্চাদের গড়ে তোলাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। আর এই কথাটি দেশ-বিদেশ সবজায়গাতেই সমান ভাবে প্রযোজ্য। তবে এটি কেবল মাত্র তখনই সম্ভব যখন আমরা বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের সঠিক জীবনবোধ দিতে পারবে। ওদেরকে জাগ্রত বিবেকের আলোয় আলোকিত পথে চলতে শেখাতে পারবে।আর এরজন্য সবার আগে প্রয়োজন বাবা-মাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন। আমি মনেকরি বাচ্চাদেরকে যদি শুধু একটি বাক্য অর্থসহ শেখানো যায় তাহলেই তারা সমস্ত বৈরিতা তুচ্ছ করে নিজ প্রবৃত্তিকে জয় করতে পারে। “তুমি মুসলিম” এই একটি বাক্যটির প্রকৃত উপলব্ধিই যথেস্ট যে কোন মানুষকে সমস্ত দীনতা-হীনতা, স্বার্থপরতা, অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য। ইসলাম সেই ধর্ম যার মধ্যে শুধু আছে কল্যাণময়তা। আর ইসলাম তথা শরীয়তের পুর্ন জ্ঞান হচ্ছে মানুষের রক্ষা কবজ।আর বাচ্চাদের মনে এই জ্ঞান ঢোকানো কোন কঠিন কিছুনা। বাচ্চাদের মন হচ্ছে পানির মতো। যে পাত্রে রাখা হবে তারই আকার ধারণ করবে।
ব্যক্তিজীবনে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি আমার সন্তানকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলতে। বইটি মূলত সেসব অভিজ্ঞতার সমন্বয়। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী বোনের হাত ধরে অনলাইন জগতে প্রবেশ করেছিলাম। তাদের উৎসাহে লিখতে শুরু করেছিলাম নিজের অভিজ্ঞতাগুলোকে। এসবি ব্লগ দিয়ে অনলাইনে যাত্রা শুরু করলেও বিডিটুডে ব্লগ কাছে টেনে নিয়েছিল আপন আলোয়। ক্রমাগত উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়ে গিয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষী ব্লগার ভাই ও বোনেরা। যা আমাকে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে সাহসী ও উৎসাহী করেছে। লেখিকার কথা লিখতে গিয়ে বেশ বিপদেই পড়তে হয়েছে আমাকে। কারণ লেখিকা হবার কোন স্বপ্ন ও ইচ্ছা কখনোই আমার ছিল না। জীবনকে ঘিরে নানাধরণের পরিকল্পনা আছে কিন্তু লেখিকা হবার ভাবনা সেখানে নেই। বই প্রকাশের পথে প্রথম কদম রাখতে গিয়ে আজ তাই আবারো উপলব্ধি করলাম যে, জীবনকে ঘিরে আমাদের হাজারো পরিকল্পনা থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবায়িত সেটাই হয় সেটি আল্লাহর পরিকল্পনা থাকে।
এই বইটি প্রকাশের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার কয়েকজন বোনের। যারা সারাক্ষণ তাগাদা না দিলে হয়তো এখন অন্তত এই পথে পা বাড়াতাম না আমি। শ্রদ্ধেয় ইসহাক খান ভাইয়াকে আন্তরিক ধন্যবাদ। কারণ তিনি নিজ থেকে বই প্রকাশের উদ্যোগ না নিলে এবং আমাকে নতুন করে লিখতে হবে না ব্লগের লেখাগুলো একসাথ করে দিলেই হবে, এই ভরসা না দিলে হয়তো এখন বইটি বের করা সম্ভব হত না। আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে উনাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।
পরিশেষে আমার আজকের এই পর্যন্ত আসার পেছনে পরিবার ও পরিবারের বাইরে, পরিচিত-অপরিচিত যারা আমার জন্য দোয়া ও শুভকামনা করেছেন, যারা অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়েছেন,গঠনমূলক সমালোচনা ও সুপরামর্শ দিয়েছেন,তাদের প্রত্যেকের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা, দুআ ও সালাম। আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবী দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২৯০৫ বার পঠিত, ১০৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহামদুলিল্লাহ বইটি অবশেষে পেতে যাচ্ছি।
আলহামদুলিল্লাহ আপুর নতুন পোষ্ট দেখে ভালো লাগছে।
অভিনন্দন আপু বইটির সফলতা কামনা করছি দুনিয়াতে এবং আখিরাতে।
জাজাকাল্লাহ ।
অন্নেক দিন পর আপনাকে ব্লগে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগলো!
অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইল আপু!
আরও সুন্দর সুন্দর বই এর প্রজেক্ট হাতে নিবেন, এ দোয়া রইলো নতুন করে ...
প্রথমে ছোট করে এই লেকচারটি দেখতে পারেন Introduction হিসেবে
http://www.youtube.com/watch?v=zMLNgugZjME
অনেক অনেক শুকরিয়া।
আমাদের বেশিরভাগ মা বাবাই এখন সন্তান কে হয় অতি আদর নয় অতি শাসন করেন। তাদের ব্যাক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ দেননা।
আমি জানি না|!
আমার কম্পু এক অজানা কারনে ছবি আপলোড করতে দিচ্ছে না!
আরু
ভাল কথা শুনে, তাহলে ভাল বলতে পারবে।
ভাল কথা শুনলে, ভাল পথের সন্ধান পাবে।
ভাল কথা শুনলে, ভাল দিক নির্দেশনা পাবে।
এভাবে বাচ্চারা মানুষের প্রতিটি আচরন কে লক্ষ্য করে এবং হুবহু সেভাবে বলতে, করতে ও মানতে সচেষ্ট হয়।
আপনার লিখাটি যুগোপযুগী ও দরকারী। আপনি বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছেন বলে লিখতে মনোনিবেশ করেছনে। এক জন ব্যক্তির প্রতিটি ভাল কাজই সাদকা। আর আল্লাহ বলেছেন, 'আমি কোন মানুষকে সহজে জান্নাতে পৌঁছাতে চেয়েছি তো তাকে নরম ও সুন্দর মন দিয়েছি'। নরম ও সুন্দর মন পেতে পিতা মাতার অবদান জরুরী আর পিতা মাতার জন্য জ্ঞান জরুরী আর জ্ঞানের জন্য এই জাতীয় বই জরুরী।
আল্লাহ আপনার প্রচেষ্টাকে সার্থক ও বাস্তবমুখী করুন। আমীন।
খবর আগেই পেয়েছি। ইনশাল্লাহ, দ্রুত কালেকশন করবো।
দোয়া
জাজাকাল্লাহ দারুন বই উপহার দেওয়ার জন্যে।
তোমার জন্য একটা ভার্চুয়াল উপহারঃ
মু'আয ইবনে জাবাল (রা) বলেন, রাসূল (সা) আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন । তিন বলেছেনঃ
(১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে নিহত করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ।
(২) তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি তারা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন ও মাল-মাত্তা ছেড়ে যেতে বলেন ।
(৩) ইচ্ছা করে কখনও ফরয সালাত ছাড়বে না । কেননা যে ইচ্ছা করে ফরয সালাত ছেড়ে দেয়, তার (হেফাজতের) পক্ষে আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব উঠে যায় ।
(৪) কখনও শরাব পান করবে না । কেননা তা সসমস্ত অশ্লীলতার মূল ।
(৫) সাবধান! গোনাহ হতে বেঁচে থাকবে । কেননা গোনাহ দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ পৌঁছে থাকে ।
(৬) খবরদার! জিহাদ হতে পলায়ন করবে না! যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায় ।
(৭) যখন লোকের মধ্যে মহামারী দেখা দিবে আর তুমি সেখানে থাকবে, তখন তথায় অবস্থান করবে (পলায়ন করবে না) ।
(৮) তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (কার্পণ্য করে তাদের ভরণ-পোষণে কষ্ট দিবে না)।
(৯) তাদের (পরিবারের লোকদের) আদব-কায়দা শিক্ষা দান ব্যাপারে শাসন হতে কখনও বিরত থাকবে না ।
(১০) এবং আল্লাহ সম্পর্কে তাদের ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে ।
- আহমাদ, মিশকাত হা/ ৫৫
বইটি কোথায় পাওয়া যাবে?
আরো দুজনকে আগামিকাল উপহার দিবো এবং আগামি মাসে আরো কয়েকজনকে উপহার দেবো।
অনেককে উপহার দেব ইনশাআল্লাহ ।
আপু আপনি কেমুন আছেন ?
সবাই কেমন আছে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন