ভাবনা যখন সুর তুলে যায় জীবন বীণার তন্ত্রীতে-৩

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:১৭:২৭ দুপুর



অফিস থেকে ফিরে কোনমতে নাস্তাটা সেরেই আবার ফাইলপত্র নিয়ে বসলো রিসাব। বিকেলটা একসাথে কাটাবে এমন ইচ্ছে ছিল, তারপরও স্বামীকে বিরক্ত না করে বই নিয়ে চুপচাপ বারান্দায় গিয়ে বসলো রিনিলা। কিন্তু কিছুতেই বইতে মন বসাতে পারলো না সে। জানালা দিয়ে বারবার আড়চোখে তাকিয়ে রিসাবকে দেখছিলো। মনেহচ্ছে যেন কাজের জগতে ঢুকে গিয়েছে একদম। যতদিন যাচ্ছে রিসাবের ব্যস্ততা বেড়েই চলছে...। রিসাব বলেছিলো পড়াশোনাটা আবার শুরু করতে কিন্তু রিনিলাই আপত্তি করেছিলো তখন। ভেবেছিলো আগে সংসারটা গুছিয়ে নিয়ে তারপর ভেবে দেখবে কি করবে। সেদিন অবশ্য রিসাব বলেছিলো, বুদ্ধিমানেরা কোন জিনিস গড়ার জন্য কোন জিনিস ছাড়ে না বরং সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করে। তা না হলে পরবর্তিতে হতাশার মুখোমুখী হতে হয় নানা কারণে। কথাটা যে কতটা সত্যি এখন সেটা বুঝতে পারছে। কিন্তু বছরের এই মাঝামাঝি সময়ে কি করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না এখন রিনিলা। রিসাবের সাথে কথা বললে অবশ্যই কোন না কোন একটা সুন্দর পরামর্শ দেবে তাকে এই ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। কাজ শেষ হলে কথা বলে দেখবে এই ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে আবার বই খুলে বসলো। কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখলো রিসাব দাঁড়িয়ে। রিনিলা হেসে বলল, কাজ শেষ হলো তাহলে?

-(পাশে বসে) আমি চেষ্টা করবো এখন থেকে অফিসের কাজ বাসায় না আনার জন্য। খুব দুঃখিত তোমাকে একা একা বসে থাকতে হলো আমি বাসায় থাকার পরও।

-তুমি দুঃখিত বলছো কেন? জরুরি কিছু না হলে যে তুমি বাসায় আনো না সেটা তো আমি জানি। আর আমি একা ছিলাম কে বললো তোমাকে? বইয়ের কমপক্ষে দশ-বারোজন চরিত্র ছিল আমার সাথে। অর্থাৎ দশ-বারোটি মনের সাথে ভাব বিনিময় চলছিলো।

-(হেসে) চমৎকার বলেছো তো। একজন লেখকের সৃজনশীলতা আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে। অনেক গুলো চরিত্রের সঠিক বিন্যাসে পরিপুর্নতা পায় একটি উপন্যাস। প্রতিটি চরিত্রকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে অনেক দক্ষতার প্রয়োজন। আমার কাছে তো লেখকদেরকে জাদুকর মনেহয়। তবে তাদের জাদু ছড়িতে নয় বরং মননে। যাইহোক, এখন লেখকদের কথা থাক। তোমার কথা বলো।

-আমার আবার কি কথা?

-(হেসে) তোমার ছয় মাসের সংসার জীবনের অভিজ্ঞতা বলো শুনি। আমার মনেহয় স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে মাঝে সাংসারিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করা উচিত একে অন্যের সাথে।

-(হেসে) তাহলে তুমিই আগে বলো।

-গত ছয়মাসে আমার মনে হয়েছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা বিশ্বাসের। বিশ্বাসের শক্ত দেয়াল দিয়ে মানুষ ভালোবাসার ঘর বাঁধে। আর সে ঘরে ভাঙ্গন ধরায় আমাদের ছোট ছোট কিছু আচরণ, কিছু চিন্তাধারা। সুখী হতে হলে এসবকে আমাদের ওভারকাম করতে হবে। আর এরজন্য আমাদেরকে কিছু বিষয় বুঝে ও মেনে চলতে হবে।

-কোন কোন বিষয়গুলো?

-দেখো আমরা সম্পুর্ন ভিন্ন দুজন মানুষ তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই চলো আমরা দুজন দুজনের কাছে ওয়াদা করি যে, কোন বিষয়ে মতের অমিল হলে আমরা রাগ বা হৈচৈ না করে একে অন্যের অপরাগতাকে বোঝার চেষ্টা করবো। কেউ কারো কাছে খুব বেশি কিছু আশা করবো না। কিন্তু যতটুকু সাধ্যে কুলাবে তা একে অন্যের জন্য করার চেষ্টা করবো। একে অন্যের উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবো না। চেষ্টা করবো কথা দিয়ে কথা রাখতে। না রাখতে পারলে অবশ্যই বুঝিয়ে বলবো। আমাদের মাঝে যদি কখনো কোন সমস্যা হয় তার সমাধান আমরাই করবো। কখনোই বাইরের কাউকে আমাদের মাঝে টেনে আনবো না। কখনো যদি একে অন্যের কোন কথা, কাজ বা আচরণ অপছন্দ হয়, সেটা মনের মধ্যে পুষে না রেখে, সঠিক সময় দেখে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলবো। ঠিকআছে?

-ইনশাআল্লাহ! অবশ্যই ঠিকআছে। তোমার ভাবনাগুলো সবসময় এতো সুন্দর হয় কিভাবে বলতো.....?

-(হেসে) আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে এমন একটা বন্ধন যে বন্ধনে রক্তের সম্পর্ক থাকে না, থাকে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক। যা ভালোবাসা ছাড়া পুর্নতা পাওয়া সম্ভব না। আর সত্যিকারের ভালোবাসা তখনই সৃষ্টি হয় যখন স্বামী-স্ত্রী একে অন্যেকে সম্মান করে, একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। এই বিষয় গুলো শুনতে অনেক জটিল শোনায় হয়তো কিন্তু সুখী হবার তীব্র ইচ্ছে যদি থাকে তাহলে এসব মেনে চলাটা তেমন কঠিন কিছু হয় না বলেই আমার বিশ্বাস।

-আমার বিশ্বাসটাও এমন। ইনশাআল্লাহ! সুখী হবার তীব্র ইচ্ছাটাই আমাদেরকে এসব বিষয় মেনে চলার প্রেরণা যোগাবে। আমি ভাবছিলাম অবসর সময়টা কাজে লাগানোর জন্য কিছু একটা করবো।

-(হেসে) আমিও আজ এই ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম তোমার সাথে। কি করতে চাইছো?

-পরামর্শের জন্যই তো তোমার কাছে বলা।

-আমাকে এখন একটু বেড়তে হবে। ফিরে এসে আলোচনা করবো। এখন এটা নাও তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার। তবে আমি বেড়িয়ে যাবার পর খুলবে এটা।

রিসাবকে বিদায় দিয়ে উপহারের প্যাকেট নিয়ে বসলো রিনিলা। চকলেট আর কার্ড দেখে মনে পড়লো আজ তাদের বিয়ের ছয়মাস পুর্ন হয়েছে। এতো ব্যস্ততার মাঝেও রিসাব মনে রেখেছে অথচ সে ভুলে গিয়েছে। কার্ডের ভেতর গুটি গুটি হরফে রিসাব লিখেছে, আমি জীবনে কোনদিনও কবিতা লিখিনি। তারপরও আজ চেষ্টা করলাম তোমার জন্য কবিতা লেখার........



তোমার জন্য হবো আমি প্রভাত জাগা পাখী

মিষ্টি গানের সুর তুলে খুলবে তোমার আঁখি

তোমার জন্য হবো সূর্যের প্রথম কিরণ

পরশে যার উজ্জ্বল হবে দিনের প্রতিটি ক্ষণ

শীতের হিমেল হাওয়া যখন ছুঁয়ে যাবে তোমায়

সোনা মাখা কাঁচা রোদ হয়ে পরশ বোলাবো গায়

দক্ষিণা বাতাস হয়ে করে যাবো কেশ তব এলোমেলো

সবুজ পাতায় শীষ কেটে মন করে দেবো ভালো

তপ্ত দুপুরে হবো কচি ডাবের শীতল জল

তৃষিবে তুমি স্পর্শে তোমার আঁখি মোর ছলছল

হতে চাই আমি নীল আকাশের ভাসন্ত মেঘমালা

যার পানে চেয়ে কাটবে তোমার অলস বিকেল বেলা

মনের মাঝে লুকিয়ে আছে সহস্র প্রেমধারা

পরশে যাদের করবো তোমার মনটা বাঁধনহারা.........

চলবে............(ইনশাআল্লাহ)

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File