নিজের অবস্থানে খুশি থাকা
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:২৯:২৮ বিকাল
পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই জীবনে যা পেয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। নিজের প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট না থাকার কারণে মানুষের মনে সুখ থাকেনা।আমার কেন জানি মনেহয় জীবনে সুখী হতে চাইলে প্রত্যেকটি মানুষকে সবার আগে নিজের সীমাবদ্ধতা জানতে হবে। নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা কতোটুকু এবং তা দিয়ে সে কতদূর যেতে পারবে তা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকতে হবে। যা আমার সাধ্যের অতীত তা পেতে চাইলে তো মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হবেই। এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা বিশ্বাস করতেই নারাজ যে তাদের যা আছে তা নিয়েই সুখী হওয়া সম্ভব। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রাপ্তিকে অবমূল্যায়ন করেন। আর এই কারণে তাদের পক্ষে অসংখ্য উপকরণ থাকা সত্ত্বেও সুখী হওয়া সম্ভব হয়না জীবনে। এরা সবসময় ভাবে তাদের আশেপাশের সবার জীবনে প্রাপ্তির ছড়াছড়ি আর তার নিজের ভাঁড়ার শূন্য। তখন মনেকরে তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই জগতে। চোখ মেলে নিজের প্রাপ্তিকে না দেখার ফলে নিজেকে হতভাগা ভাবতে ভাবতে তারা এক সময় নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। অথচ জীবনে সুখী হবার জন্য প্রয়োজন নিজের উপর বিশ্বাস। নিজের উপর কখনোই আস্থা হারানো যাবেনা। যোগ্যতা নেই এমন স্বপ্ন দেখা যেমন ঠিক নয়, তেমনি নিজের যোগ্যতাকে মূল্যায়ন না করাও উচিত নয়।
জগতের সুখী মানুষদের যদি একটা তালিকা করা হয়, তবে দেখা যাবে তারা সকলেই নিজের অবস্থানে খুশি ছিলেন। অথচ তাঁরা কিন্তু একই পরিবেশ-পরিস্থিতি বা জীবনবোধের ছিলেননা। অসংখ্য ভিন্নতার মধ্যে তাদের মিল ছিল শুধু একজায়গাতে আর সেটা হচ্ছে নিজ নিজ অবস্থানে খুশি থাকা। সুখের তো আসলে কোন সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেক মানুষই তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার-বিশ্লেষন করে সবকিছুর। সুখের সংজ্ঞা তাই একেকজনের কাছে একেক রকম। পানি যেমন পাত্রভেদে তার অবস্থান ধারণ করে, সুখও ঠিক তাই। সুখ বলতে কে কি ধারণা করে সেই দৃষ্টিভঙ্গির উপরই নির্ভর করে সবকিছু। আর এখানেই হচ্ছে সমস্যা। আমি হয়তো খুব ভালো রান্না করতে পারি বা সাংসারিক যে কোন কাজে খুব পারদর্শী কিন্তু গল্প-কবিতা লিখতে পারিনা। সবাইকে আল্লাহ সবগুণ দেননা এটা মেনে নিয়ে যদি নিজের অবস্থানে খুশি থাকতে পারি তাহলে হতে পারি সুখী। আবার নিজের গুণসমূহকে অবমূল্যায়ন করে কবিতা-গল্প লিখতে না পারার শোকে মশগুল থেকে হতে পারি দুঃখী। অর্থাৎ, আমাকে সুখ খুঁজতে হবে আমার যা যা আছে তারমধ্যে থেকে। আমার যা নেই সেটাকে যদি সুখের শর্ত হিসেবে ভাবি তাহলে কোনদিনও সুখী হতে পারবো না। মানুষ যেমন ভিন্ন তাদের মধ্যের উপকরণও ভিন্ন। এক রান্নার উপকরণ দিয়ে আরেক রান্না করতে গেলে রেসিপি বিস্বাদ হয়ে যায়। যেমন, মাছ খাবার সময় যদি গোশতের স্বাদ পেতে চাই তাহলে ইচ্ছে তো পূরণ হবেই না বরং মাছের স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হতে হবে।
আমার কাছে মনেহয় এক অবস্থানে থেকে অন্য অবস্থানের সুখ পেতে চাওয়াটা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই না। আমরা যখন যে অবস্থানে থাকবো বা যে ব্যক্তির সাথে থাকবো, সুখ চাইতে হবে সেই অবস্থান বা সেই ব্যক্তির উপকরণ অনুযায়ী। যদিও সুখের অর্থ সবার কাছে একরকম নয়। জীবনের নানামুখী জটিলতায় সুখ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে সুখের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়না। পৃথিবীতে আমাদের দুঃখ, ব্যথা, বেদনা, বিপদ, বিপর্যয় সব কিছুই আল্লাহ্র পরিকল্পনার অধীন। আপাতঃদৃষ্টিতে যা দুর্যোগময় ও বিপদ সঙ্কুল মনে হয় ভবিষ্যতে তা কল্যাণকর ও মঙ্গলময় হতেও পারে। সুতরাং বিপদে দুর্যোগে সাহস না হারিয়ে আল্লাহ্র উপরে ভরসা রাখা ও ধৈর্য্য অবলম্বন করা প্রয়োজন। আল্লাহ্র প্রতি অবিচল বিশ্বাসই ধৈর্য্যের দীপ শিখা জ্বালিয়ে রাখতে সাহায্য করে। মুমিন বান্দার অন্যতম প্রধান গুণ হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস রেখে অবিচল ধৈর্য্য ধারণ। যারা প্রকৃত মুমিন দুঃখে ধৈর্য্য ধারণ হচ্ছে তাদের জন্য পরীক্ষা। দুঃখ-কষ্টে মনের সংযম না হারিয়ে তারা আল্লাহ্র উপর ভরসা করে। সামান্য দুঃখ-কষ্টে আমাদের ধৈর্য্যহারা হওয়া উচিত নয়। কারণ সব কাজের শেষ ফলাফল তো আল্লাহ্রই হাতে। তিনি তো মঙ্গলময় - সকল কল্যাণের তিনিই মালিক । দুঃখ- কষ্টের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে তার কল্যাণের উপযুক্ত করে নেন। আল্লাহ্র প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে অন্তরে অনুভব করা যায় যে শেষ পর্যন্ত সব কিছুরই সফল ও সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটবে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন