করি পুষ্প রে বিকশিত-৪
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৪৬:৫১ বিকাল
ফুটবল নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকা বাচ্চাদেরকে দেখে নায়লারও ইচ্ছে করছিল ওদের সাথে গিয়ে যোগ দিতে। এরআগেও খেয়াল করেছে বাচ্চাদেরকে হাসি আনন্দে মেতে থাকতে দেখলে তারও ইচ্ছে করে বাচ্চা হয়ে যেতে। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়তেই একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নায়লা। এত বেশি রক্ষনশীল ছিল তাদের পরিবার যে শৈশবের কোন রঙকেই ছুঁয়ে দেখতে পারেনি সে। মনটা শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু কোনদিনও ডানা মেলা হয়নি। এমন আত্নমগ্ন হয়ে কি ভাবছো? প্রশ্ন শুনে অন্তরার দিকে তাকিয়ে হাসলো নায়লা। মনের ভাবনা গোপন করে বলল, তোমার কখনো বাচ্চা হয়ে যেতে ইচ্ছে করে অন্তরা?
অন্তরা হেসে বলল, ইচ্ছে করুক বা না করুক প্রত্যেকটা মানুষের মনের মধ্যে এক খন্ড শৈশব লুকায়িত থাকে। জীবনের সফরে একজন মানুষ যতই এগিয়ে যাক না কেন, ঐ এক খন্ড শৈশব গাট হয়ে বসে থাকে নিজের জায়গাতে। আর যখনই কোথাও খুঁজে পায় তার মনের মত পরিবেশ আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠে। তোমার মনে কি এখন শৈশব আড়মোড়া ভেঙ্গেছে?
নায়লা হেসে বলল, আমি ভাবতাম যে আমি আমার শৈশবকালকে তেমন ভাবে উপভোগ করতে পারিনি বলেই হয়তো এমন ইচ্ছে জাগে মনে।
অন্তরা বলল, এটাও একটা কারণ। আসলে কি জানো ভাবী যারা জীবনের প্রতিটি স্তরকে যথাযথ উপভোগ করে তাদের মনে অতৃপ্তি থাকে না। তারা অনেক বেশি শক্তিশালী মন ও মননের অধিকারী হয়। জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী ইতিবাচক থাকে। তাই শিশুদেরকে বয়স অনুযায়ী মনের খোঁড়াক দিতে পারাটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে। আর যে কলিটিকে পৃথিবীতে এনেছেন তাকে যথাযথ বিকশিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস, পানি ও সূর্য কিরণের ব্যবস্থা বাবা-মাকেই করতে হয়।
নায়লা হেসে বলল, তোমাদের ছেলেবেলাটা অনেক সুন্দর ছিল তাই না অন্তরা? সেজন্যই হয়তো তোমরা সব ভাইবোনেরা এত সুন্দর করে ভাবতে পারো।
হেসে, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের ছেলেবেলাটা সত্যিই ভীষণ মজার ছিল। এখন বুঝি বাবা কত যত্ন করে আমাদের মনের মাঝে বুনে দিয়েছিলেন কল্যাণকামীতার বীজ। ছয় বছর বয়স ছিল আমার তখন। দুষ্টুমি করার জন্য বাবা আদ্রিতাকে বিশবার কান ধরে উঠবোস করার শাস্তি দিয়েছিলেন। তারপর আমার পাশে বসে বলেছিলেন, আদ্রিতাকে শাস্তি দিয়েছি বলে কি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে? অবশ্য তোমার জায়গায় থাকলে আমারো কষ্ট হতো। আর আমার বোনকে কষ্ট পেতে দেখলে আমি চেষ্টা করতাম সেটা ভাগ করে নিতে। আমি তখন ছুটে গিয়েছিলাম আদ্রিতার কষ্টকে ভাগ করে নিতে। এভাবে আরো কিছুদিন চেষ্টার পর বাবাকে আর বলতে হতো না আমরা নিজ থেকেই ছুটে যেতাম ভাইবোনদের দুঃখ-কষ্ট-শাস্তি সব ভাগ করে নেবার জন্য। যে অভ্যাসটা এখনো আমাদের মধ্যে বিদ্যমান।
নায়লা হেসে বলল, বিয়ের পর তোমাদের বাড়িতে আসার এসে প্রথম প্রথম আমি খুবই অবাক হতাম তোমাদের ভাইবোনদের ভালোবাসা থেকে। এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও ত্যাগ আমি সত্যিই এরআগে দেখিনি কোন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
আলহামদুলিল্লাহ। এসবই বাবা আর মামণির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ভাবী। সুখ-আনন্দ ও জীবনের চালিকা শক্তি হচ্ছে জ্ঞান। এই জ্ঞানকেও একে অন্যের সাথে ভাগ করে নিতে বাবাই শিখিয়েছেন আমাদেরকে। সমবয়সী যে কয়েকজন ভাইবোন ছিলাম আমরা প্রত্যেককে হাতে একটি করে বই ধরিয়ে দিয়ে বাবা বলতেন, বই থেকে তোমাদের কাছে যা যা শিক্ষণীয় মনে হবে সব লিখে রাখবে। পড়া শেষ হলে আমাকে দেখাবে। আমরা সবাই তাই করতাম। বাবা তারপর সবার শিক্ষাকে একসাথে লিখে আমাদের সবাইকে এক কপি করে দিতেন। আর বলতেন, একা একা জ্ঞানার্জন করার চেয়ে যদি সম্মিলিত ভাবে করো তাহলে তোমরা অনেক দ্রুত অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে জীবন সফরে। এরপর থেকে আমরা সবসময় তাই করেছি। একা একা কেউ কিছুই করতে চাইনি। আমরা একা একা কিছু করতে পারিও না কেন জানি না। একতাই বল এই বোধের বীজটা বাবা খুব শক্তভাবে বুনে দিয়েছিলেন আমাদের কচি মনে। আর যত্নের কোন কমতি বা ঘাটতি বাবা হতে দেননি। সেই বীজ এখন তাই মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। আমরা ভাইবোনেরা একে অন্যের সাথে ঝগড়া করি, যুক্তিতর্ক করি, মারামারি করি, একে অন্যকে নানা ধরণের হুমকি ধামকি দেই কিন্তু দিন শেষে পাখীর নীড়ে ফেরার মত আবার একসাথে হয়ে যাই। আর এই বন্ধন আমাদের বাবা-মাদের সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন যা তারা আমাদের জন্মের সময় দেখেছিলেন।
আলহামদুলিল্লাহ তোমার কথা শুনে আমার মনোবল আরো বেড়ে যায় সবসময়ই। মনেহয় যে ইনশাআল্লাহ আমিও পারবো এমন মা হতে। যে তার কুড়ি গুলোকে ঝরে যেতে দেবে না বরং বিকশিত হতে সহায়তা করবে।
অন্তরা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ তুমি অবশ্যই পারবে ভাবী। তবে নিজে চেষ্টা করার সাথে সাথে বাচ্চাদের মনেও লাগিয়ে দিতে হবে ডানা। কারণ ওরা যদি ডানা না ঝাঁপটায় তাহলে অনুকূল পরিবেশ পেলেও উড়তে পারবে না।
কিভাবে লাগাবো ওদের মনে ডানা?
অন্তরা হেসে বলল, আসফিন নিয়মিত কুরআন পড়লেও সূরা মুখস্ত করতে চাইতো না একদম। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কথায় কথায় ওকে বললাম, তুমি কি জানো আসফিন বাবার যে পুরো কুরআন মুখস্ত? চোখ বড় বড় বলল, বাবার পুরো কুরআন মুখস্ত? বললাম, হ্যা। ভেবে দেখো বাবার কত্তো মজা। আল্লাহ আমাদেরকে কি কি বলেছেন বাবা তার সব জানেন। প্রশ্ন করলো, আম্মুতা আমি যদি একরুমে বসে কুরআন পড়ি বাবা কি আরেক রুম থেকে না দেখে বলতে পারবে আমি ঠিক পড়ছি নাকি ভুল পড়ছি? অমি হেসে জবাব দিলাম, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই পারবে। আসফিন ঠিক করলো ওর বাবাকে পরীক্ষা করে দেখবে। এবং সত্যি সত্যিই ওর বাবা বাসায় এলে পরীক্ষা নিলো। বাবাকে পাশ করতে দেখে অনেক আনন্দ পেলো। আর ওর বাবা যখন একজন কুরআনে হাফেজের মর্যাদা ওকে বুঝিয়ে বললো সিদ্ধান্ত নিলো সেও পুরো কুরআন মুখস্ত করবে এবং বাবার মত একজন কুরআনে হাফেজ হবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কবুল করে নিন আমার ছোট্ট বাবাটাকে এই দু’আ করি সবসময় আমি।
আমীন। আমিও দোয়া করি আসফিনের জন্য।
হেসে, জাযাকিল্লাহ ভাবী। এখন চল আমরা উঠি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাকে আবার আজই ফিরতে হবে বাসায়। সেই অনুমতি পাবার জন্য তো আবার মুসআব আর মাশফিয়ার সাথে মিটিংয়েও তো বসতে হবে।
নায়লা হেসে বলল, হ্যা। চলো উঠি আমরা।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫২ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পিচ্চি মুখে হাত দিয়ে কি করে??
@আওণের জন্য
@হাতুড়ি কন্যা
জারিফা ও আফরাজের জন্য দোয়া রইলো।
আমাদের সকল পুষ্পরা বিকশিত হোক, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।আর বিকশিত করার জন্য যে প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস, পানি ও সূর্য কিরণের প্রয়োজন তা যেন আমরা শরীয়তের আলোকে ঢেলে দিয়ে ব্যবস্হা করতে পারি। আমিন।
আমাদের সকল পুষ্পরা বিকশিত হোক, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।আর বিকশিত করার জন্য যে প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস, পানি ও সূর্য কিরণের প্রয়োজন তা যেন আমরা শরীয়তের আলোকে ঢেলে দিতে পারি। আমিন। সুম্মা আমিন।
আমি তো শুধু ছবিটায়ই আটকে গেছি... সুবহানআল্লাহ... পড়ে পরে কথা বলবো আরো...ইনশাআল্লাহ!
@রোজা ভাবীর উল্টো...কি যেন বলে ওটাকে...: জি ন্নাহ...আম্রা ফাঁকিবাজ না, আসলে এই লেখাগুলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে সময় নিয়ে পড়ি, মজা/শিক্ষা পাই অন্নেক! তাই কোনো কোনো সময় দেরি হয়ে যায়...বুচ্ছেন এব্বার... আর এছবিটা আসলেই অন্যরকম...
এটা আমাদের ব্যর্থতা যে আমাদের এই পুষ্পদের বিকশিত করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারি না।
ছবিটা আসলেই অনেক বেশি সুইট। অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে।
অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে।
চমৎকার কথাবার্তা সব
যাইহোক আজকে ইমরান দাদা ফেইল
হারিকেনের মাথায়....
অন্তরার কোরআন মুখস্ত করানোর কৌশলটা ভাল লাগলো মাশাল্লাহ
যাযাকাললাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন