করি পুষ্প রে বিকশিত-১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২২ মার্চ, ২০১৪, ১২:১২:৩৯ রাত
মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে ঢুকে কম্পিউটারের সামনে বসে নিজের কাজে মন দিল নায়লা। বাচ্চাদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় সবকিছু করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। বাচ্চারা ভুল করবে, দুষ্টুমি করবে এসব স্বাভাবিক। এসব নিয়ে তাই কোন আপত্তি নেই নায়লার। কিন্তু বাচ্চারা মিথ্যা বলবে বা কোন কিছু গোপন করবে এটাতে প্রচন্ড আপত্তি তার। সবসময়ই স্কুল থেকে ফেরার পর স্কুলে কি কি হয়েছে জানতে চায় বাচ্চাদের কাছে। কিন্তু গতকাল সব কথা বললেও ক্লাসে মারামারি করেছে সেকথা চেপে গিয়েছে মুসআব। আজ স্কুলের টিচারের কাছ থেকে জানতে পেরেছে নায়লা সেই ঘটনা। কেন বাসায় এসে কিছু বলেনি জানতে চাইলে কোন জবাব না দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো মুসআব। সাথে সাথে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো নায়লার। বাচ্চারা মিথ্যা বলে বা গোপন করে যখন বাবা-মাকে সর্বাবস্থায় নিজের আশ্রয় ভাবতে পারে না তখন। কিন্তু সেতো আদর-ভালোবাসা ও মমতার দেবার সাথে সাথে সব ব্যাপারেই ভীষণ রকম আন্তরিক। তাহলে? প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে তাই রুমে চলে এসেছে।
মায়ের পেছন পেছন মুসআবও রুমে ঢুকলো। এমনিতে আম্মুই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। কিন্তু আম্মু যখন রাগ করে তখন খুব ভয় লাগে মুসআবের। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে খুকখুক করে কয়েকবার কাশি দিয়ে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ মুসআব বলল, আম্মু আমি সরি তো! আমি আর কখনো তোমার কাছে কিছু গোপন করবো না। আম্মু ও আম্মু তুমি কথা বলছো না কেন? আমি কিন্তু কান্না করে দেব বলছি। এই যে তুমি শুধু রাগ করো সেজন্যই তো আমি তোমার কাছে বলিনি।
এবার ঘুরে ছেলের দিকে তাকালো নায়লা। আমি কি কোনদিন অকারণে তোমার উপর রাগ করেছি?
আমতা আমতা করে মুসআব বলল, নাতো আম্মু।
তাহলে কেন বললে আমি রাগ করি বলে তুমি কথা গোপন করো?
সব কথা গোপন করি না তো। শুধু ক্লাসে মারামারি করেছি সেটা গোপন করেছি।
নায়লা বলল, ক্লাসে মারামারি করে তুমি একটা অন্যায় করেছো আর সেটা গোপন করে করেছো আরেকটা অন্যায়। আম্মু যদি সেজন্য রাগ করি সেটা ভুল হবে?
মুসআব কাদো কাদো হয়ে বলল, কিন্তু তুমি যখন মুখ কালো করে কথা বলো আমার একটুও ভালো লাগে না।
নায়লা বলল, তাহলে তোমার কাজও তেমন হওয়া উচিত যাতে আম্মু মুখ কালো না করে। ছেলেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নায়লা বলল, আম্মু যখন তোমাকে আদর করি, কোন উপহার দেই তুমি কি খুব আনন্দিত হও?
মুসআব বলল, হ্যা অনেক বেশি।
আর আম্মু রাগ করলে বা বকা দিলে খুব কষ্ট পাও তাই না?
মুহুর্তে চেহারা আবার কাদো কাদো হয়ে গেলো মুসআবের। অনেক অনেক অ-নে-ক বেশি কষ্ট পাই আম্মু।
ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে নায়লা বলল, ঠিক তেমনি তুমি যখন ভালো কাজ করো আম্মু অনেক খুশি হই। আর যখন দুষ্টু কাজ করো আম্মু বিরক্ত হই। এমনটা কেন হয় জানো?
কেন হয় আম্মু?
কারণ ভালো কিছু হলে মানুষ খুশি হবে আর খারাপ কিছু হলে মানুষ কষ্ট পাবে এটা হচ্ছে নিয়ম। আচ্ছা ক্ষুধা পেলে তুমি কি করো?
আমি খাবার খাই।
আর ঘুম পেলে কি করো?
ঘুমাই আম্মু।
একদম ঠিক। এখন দেখো ক্ষুধা পেলে আমরা খাই আর ঘুম পেলে ঘুমাই। আমাদের ঠিক তেমনই আরেকটা স্বভাব হচ্ছে খুশিতে চেহারায় আলো আলো হয়ে উঠে আর রাগে চেহারা কালো হয়ে যায়। বুঝেছো?
হ্যা আম্মু।
কি বুঝেছো?
খুশিতে চেহারায় আলো আলো হয়ে উঠে আর রাগে চেহারা কালো হয়ে যায়।
মাশাআল্লাহ। এই তো তুমি বুঝে ফেলেছো। তারমানে তো এটাও বুঝেছো যে, তোমার দুষ্টু কাজ শুনে আম্মুর চেহারা যে কালো হয় সেটাই স্বাভাবিক?
জ্বী আম্মু।
কিন্তু তুমি যে আম্মুর কাছে কথা গোপন করেছো সেটা অস্বাভাবিক। দেখো সোনা তুমি তো এখনো অনেক ছোট। তুমি দুষ্টুমি করবে, ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি যদি সেসব আমাকে না বলো তাহলে আমি তোমাকে কিভাবে বুঝিয়ে বলবো কোনটা ঠিক আর কোন ভুল? তুমি তো গুডু বয় হতে চাও তাই না?
হ্যা আম্মু।
এখন বলো আম্মুর সাহায্য ছাড়া তুমি কি একা একা গুডু বয় হতে পারবে?
কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে মুসআব বলল, না।
তাহলে তুমি কেন আম্মুকে বলোনি? আম্মু যদি না জানি তাহলে কিভাবে তোমাকে ভুল বুঝিয়ে বলবো?
আমি আর তোমার কাছে কিছু গোপন করবো না আম্মু। প্রমিস।
নায়লা ছেলে কাছে টেনে আদর করে হেসে বলল, ঠিকআছে এখন তুমি যাও পড়তে বোস।
ছেলে চলে গেলে ঘুরে আয়নায় নিজের দিকে তাকালো নায়লা। মনের অনুভূতিগুলো সবসময় চেহারাতে ফুটে ওঠা ঠিক না। বিশেষ করে বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময়। এরআগেও খেয়াল করেছে বাচ্চারা প্রথমেই চেহারার দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে চেষ্টা করে। সুতরাং, এই ব্যাপারে তাকে আরো সতর্ক হতে হবে বুঝতে পারলো। কাজ বন্ধ করে রান্নাঘরের রওনা করলো। বাচ্চাদের জন্য নাস্তা বানাতে হবে। মুসআব পিজা খুব পছন্দ করে। আজ সবার জন্য তাই পিজা বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো নায়লা।
বিষয়: বিবিধ
১৫০০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার সন্তান অনেক গুডবয়। আমার গুডবয়ই ভাল লাগে। কারন তেরা পাবলিক কন্ট্রোল সোজা কাজ নয়।
তবে লেখাটার মধ্যে মাল ছিল। আপনি সাইকিয়াট্রিস্ট মা। আপনার লেখাগুলা সত্যিই উপকারী হবে যাদের বাচ্চা আছে। আপনার জন্যে দোয়ার দরজা খোলা আছে..দোয়া যাচ্ছে...
তবে পিটুনি খেয়েছি
আর বকা ত এখন খাই মজায় আলাদা।
তবে আমরা আম্মুর কাছে এসে বাইরে সব কিছু বলতাম।
আপনার প্রিয় জোসনা গ্রাম থেকে নিজে তুলেছি
জবাটা কেমন??
একগুছ্চ ফুল কিন্তু নাম জানিনা এটার
জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন