গল্পে গল্পে শিশুদের হাদীস শেখা......১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০২ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৩৫:৩৫ বিকাল
ঘুমিয়েছে কিনা দেখার জন্য মেয়ের রুমে উঁকি দিয়ে মেয়েকে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে দরজায় নক করলো সাব্বির। ঘুরে দরজায় বাবাকে দাঁড়ানো দেখে হাসিতে মুখ ভরে গেলো উমরার। ছুটে এসে বাবাকে টানতে টানতে রুমের ভেতর নিয়ে এলো। বিছানায় বসে মেয়েকে পাশে বসিয়ে সাব্বির বলল, এখনো না ঘুমিয়ে জেগে আছে কেন আমার মামণিটা?
উমরা বলল, বাবা আমি তোমার জন্যই বসে ছিলাম। জানো আজ আমাদের ক্লাসে টিচার জানতে চেয়েছিল বড় হয়ে আমরা কে কি হতে চাই।
সাব্বির হেসে বলল, তাই? তা তুমি বলেছো? কি হতে চাও তুমি বড় হয়ে?
সেটাই তো বুঝতে পারছি না বাবা। সেজন্যই তো তোমার জন্য বসে আছি আমি। আমি বড় হয়ে কি হবো বাবা?
হেসে, সেই সিদ্ধান্ত তো তোমার মা। তুমি যা হতে চাইবে বাবা তোমাকে সাহায্য করবো, ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু আমি তো বুঝতে পারছি না। বাবা তুমি আমাকে কি হিসেবে দেখতে চাও বড় হবার পর? টিচার, আর্কিটেক্ট, ডিজাইনার নাকি অন্যকিছু?
আমি দেখতে চাই তুমি এমন একজন আদর্শ মুসলিমাহ হয়েছো যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন।
বেশ অবাক চোখে বাবার দিকে তাকালো উমরা।
সাব্বির মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, যখন আল্লাহ কাউকে ভালোবাসতে শুরু করে তখন কি হয় জানো উমরা?
কি হয় বাবা?
তখন আল্লাহ সেই ব্যক্তির কান হয়ে যায় যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যায় যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যায় যা দিয়ে সে ধরে, তার পা হয়ে যায় যা দিয়ে সে হাঁটা-চলা করে। আর সে যদি তখন আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তাকে সেটা দেন এবং যদি সে আশ্রয় প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে আশ্রয় দেন।
অবাক কণ্ঠে উমরা বলল, সত্যি আল্লাহ কান, চোখ, হাত হয়ে যায় বাবা?
হেসে, রাসূল(সঃ) নিজে এই কথা জানিয়ে গিয়েছেন আমাদের। তাই মিথ্যা হবার তো কোন সুযোগই নেই মা।
উমরা উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল, বাবা তুমি তাহলে আমাকে বলে দাও আমাকে কি কি করতে হবে। কি কি করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসতে শুরু করবেন? আমার কান, চোখ, হাত হয়ে যাবেন? তাড়াতাড়ি বলো বাবা।
সাব্বির হেসে বলল, অবশ্যই তোমাকে বলে দেব মা। জানো রাসূল(সঃ)ছিলেন আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ তাঁর বন্ধু অর্থাৎ, রাসূল(সঃ)কে কষ্ট দিতে মানা করেছেন।
উমরা বলল, রাসূল(সঃ)তো মারা গিয়েছেন আমরা তো চাইলেও উনাকে কষ্ট দিতে পারবো না।
হেসে, হ্যা মা রাসূল(সঃ)মারা গিয়েছেন। কিন্তু মারা যাবার আগে রাসূল(সঃ)আমাদেরকে বলে গিয়েছেন কিভাবে আমাদেরকে জীবনযাপন করতে হবে। যেমন ধরো, আমাদেরকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে, রামাদান মাসে রোজা রাখতে হবে, যাকাত দিতে হবে, গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করতে হবে, উত্তম চরিত্রের মানুষ হতে হবে, সবার সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। আমরা যদি সেভাবে সবকিছু না করি তাহলে রাসূল(সঃ)কে কষ্ট দেয়া হবে এবং আল্লাহ আমাদের উপর রাগান্বিত হবেন। আর যদি করি তাহলে রাসূল(সঃ)এর সাথে সাথে আল্লাহও অনেক খুশি হবেন। কারণ এসব হুকুম আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। রাসূল(সঃ আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
ইনশাআল্লাহ বাবা আমি এমন কোন কাজ করবো না যাতে রাসূল(সঃ) কষ্ট পান। তাহলে তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার উপর রাগ করবেন না তাই না বাবা? আমাকে ভালোবাসতে শুরু করবেন?
সাব্বির হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ। এখন তুমি ঘুমিয়ে পড়ো মা। সকালে আবার তোমার স্কুল আছে। মেয়েকে শুইয়ে দিয়ে সাব্বির নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন,রাসূল (সঃ) বলেছেন,আল্লাহ বলেন,"যে ব্যক্তি আমার বন্ধু কে কষ্ট দেয়,আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দাহ আমার আরোপিত ফরজ কাজের মাধ্যমে,যা আমার নিকট প্রিয় এবং নফল কাজের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এভাবে (এক পর্যায়ে) আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি। আর আমি যখন তাকে ভালোবাসি,তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে,তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে,তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটা-চলা করে। আর যদি সে আমার নিকট কিছু চায়, আমি তাকে দেই এবং যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে,তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দান করি। (বুখারী)
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৭ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক অনেক শুকরিয়া। বারাকাল্লাহু ফীক।
দোয়া করবেন যান থেমে না যাই। অনেক শুকরিয়া।
অনেক শুকরিয়া আপু।
বারাকাল্লাহু ফীক।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন